Saturday, August 6, 2011

রামাদান ম্যানুয়েল-৫: জান্নাতে সাওম পালনকারীর মর্যাদা


السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

রামাদান ম্যানুয়েল
-৫
জান্নাতে সাওম পালনকারীর মর্যাদা



be Organized by Holy Islam 
     O.H.I 
      For More Visit:

বই পড়ুনঃ http://ohilibrary.blogspot.com/

রামাদান ম্যানুয়েল-৪: ফরজ রোজার নিয়ত


السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

রামাদান ম্যানুয়েল-: ফরজ রোজার নিয়ত


হাফসা বিনতে উমর রা.  থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন :

مَنْ لم يُجْمِعِ الصِّيامَ قَبلَ الفَجْرِ فَلا صِيامَ لَهগ্ধ رَوَاهُ أَبو داودَ (২৪৫৪) والترمذيُّ (৭৩০) والصوابُ وقفه.

যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে রোজার নিয়ত করল না, তার কোন রোজা নেই ।

ইমাম নাসায়ি অপর এক রেওয়ায়েতে বর্ণনা করেন :

مَنْ لم يُبَيِّتْ الصِّيامَ قَبْلَ الفَجْرِ فَلا صِيامَ لَهُ رواه النسائي (৪/১৯৬)

যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে রাত থেকে রোজা আরম্ভ করল না, তার কোন রোজা নেই ।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন : সে ব্যক্তি রোজাদার নয় যে সুবহে সাদেকের  পূর্ব থেকে রোজা আরম্ভ করল না।

ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন : ওলামায়ে কেরামের নিকট এ হাদিসের অর্থ হচ্ছে : রমজান মাসের রোজার সময় অথবা রমজানের কাজা রোজার সময় অথবা মান্নতের রোজার সময় যে ব্যক্তি সুবহে সাদেকের আগে, রাত বিদ্যমান থাকাবস্থায় রোজার নিয়ত করল না, তার রোজা বৈধ হবে না।  হ্যাঁ, নফল রোজার ক্ষেত্রে ভোর হওয়ার পরও নিয়ত করা বৈধ। ইমাম শাফি, আহমদ এবং ইসহাক এ অভিমত পেশ করেছেন।

হাদিস থেকে যা শিখলাম
১. রোজা একমাত্র আল্লাহর  এবাদতের উদ্দেশ্যে  পালন করতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ডাক্তারের পরামর্শ, পানাহারের ইচ্ছা না থাকার দরুন বা অন্য কোন কারণে পানাহার থেকে বিরত থাকে, তার সে বিরত থাকাকে রোজা বলা হবে না এবং এ জন্য সে কোন সওয়াবও পাবে না।
২. নিয়ত হচ্ছে অন্তরের আমল। যে ব্যক্তির অন্তরে এ কথার উদ্রেক হল যে, আমি আগামীকাল রোজা রাখব, তার নিয়ত যথাযথ।
৩. ওয়াজিব রোজা যেমন রমজান, মান্নত ও কাফ্ফারার রোজার ক্ষেত্রে পূর্ণ দিন রোজার নিয়তে থাকা জরুরি। এ জন্য সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে থাকা আবশ্যক। আর যে ব্যক্তি দিনের কোন অংশে রোজার নিয়ত করল, এবং তার নিয়তে পূর্ণ দিন অন্তর্ভুক্ত করল না , তার রোজাও হবে না। এ জন্য ওয়াজিব রোজার সময় সুবহে  সাদেক  উদিত হওয়ার আগেই নিয়ত করা জরুরি।
৪. রাতের যে কোন অংশে ফরজ বা নফল রোজার নিয়ত করা বৈধ। নিয়ত করার পর যদি রোজার পরিপন্থি কোন কারণ সংঘঠিত হয়, তবুও নিয়ত নষ্ট হবে না এবং নতুন করে নিয়ত করার প্রয়োজন হবে না।

be Organized by Holy Islam 
     O.H.I 
      For More Visit:

বই পড়ুনঃ http://ohilibrary.blogspot.com/ 

রামাদান ম্যানুয়েল-৩: রোজার আদব


السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
রামাদান ম্যানুয়েল-: রোজার আদব


عن أبي هريرة رصي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: الصيام جنة، فإذا كان أحدكم صائما فلا يرفث ولا يجهل، فإن امرؤ شاتمه فليقل : إني صائم، إني صائم. رواه الشيخان

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
সিয়াম হল ঢাল। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে সিয়াম পালন করবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও মুর্খতাসুলভ কথা ও কাজে লিপ্ত না হয়। যদি তাকে কেউ গালি দেয়, তাহলে তাকে বলে দেবে আমি সিয়াম পালনকারী, আমি রোজাদার।
অন্য বর্ণনায় এসেছে :
وإذا كان يوم صوم أحدكم فلا يرفث  ولا يصخب، فإن سابه أحد أو قاتله فليقل إني امرؤ صائم.

তোমাদের কারো যখন রোজার দিন এসে যায় সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল না করে। যদি তাকে কেহ গালি দেয় বা তার সাথে মারামারি করতে চায় তাহলে তাকে বলে দেবে আমি একজন রোজাদার।
আরেক বর্ণনায় এসেছে :
لا تساب وأنت صائم، وإن سابك أحد فقل : إني صائم، وإن كنت قائما فاجلس.

রোজা রেখে তুমি কাউকে গালি দিবে না। যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় তাহলে তাকে বলবে আমি রোজাদার। আর তখন যদি তুমি দাঁড়িয়ে থাকো তাহলে বসে যাবে।

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم :من لم يدع قول الزور والعمل به والجهل فليس لله حاجة أن يدع طعامه وشرابه .

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।

عن عائشة رضي الله عنها عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: الصيام جنة من النار، فمن أصبح صائما فلا يحهل يومئذ، وإن امرؤ جهل عليه فلا يشمته، ولا يسبه، وليقل : إني صائم.

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারীম  সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
সিয়াম হল জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল, যে ব্যক্তি রোজা রাখা শুরূ করে সে যেন সেদিন মুর্খতা সুলভ আচরণ না করে। যদি কোন ব্যক্তি তার সাথে মূর্খতা সুলভ আচরণ করতে চায় তাহলে তাকে মন্দ বলবে না, গালি-গালাজ করবে না। বরং তাকে বলে দেবে আমি রোজাদার।

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি ও তার সহচরগণ যখন রোজা রাখতেন তখন মসজিদে বসে থাকতেন আর বলতেন, আমরা আমাদের রোজাকে পবিত্র রাখছি।

হাদীসসমূহ থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. জাহান্নাম থেকে মুক্তির একটি মাধ্যম হল রোজা। কারণ রোজা কুপ্রবৃত্তির সকল প্রকার চাহিদা পূরণ থেকে মানুষকে দূরে রাখে। আর জাহান্নামতো কু-প্রবৃত্তির পর্দা দিয়ে আবৃত।

দুই. বৈধ-অবৈধ সকল প্রকার অশ্লীলতাই রোজাদারের জন্য নিষিদ্ধ। অশ্লীল কথা, যা কিছু প্রবল যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করে তার সকল কিছুই নিষিদ্ধ।

তিন. মুর্খতাসুলভ সকল প্রকার আচরণ নিষিদ্ধ। যেমন চেঁচামেচি, শোরগোল, বকাঝকা, ঝগড়া-ফাসাদ, গালি-গালাজ ও অযথা বিতর্ক ইত্যাদি।

চার. যদি রোজাদার করো গালিগালাজ, চিৎকার-শোরগোল এর সম্মুখীন হয় তাহলে তার করণীয় হল :
(ক) সে এ সকল কাজের কোন প্রতি-উত্তর করবে না। ধৈর্য ধারণ করবে।
(খ) কথাবার্তা সতর্কভাবে বলবে। একান্ত প্রয়োজন না হলে কথা বলবে না। কথা কম বললে ভুল কম হবে।
(গ) যে তাকে এগুলোতে লিপ্ত করতে চায় তাকে বলে দেবে আমি রোজাদার। এতে সে সতর্ক হয়ে যাবে। তাকে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত করতে প্রচেষ্টা চালাবে না।
(ঘ) যদি প্রতিপক্ষ বিরত না হয় তাহলে তাকে বার বার বলতে হবে আমি রোজাদার।
(ঙ) এ ধরনের পরিস্থিতিতে যদি রোজাদার দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে তাকে বসে যেতে হবে। এতে সে প্রতিপক্ষের আচরণে উত্তেজিত হওয়া থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে।

পাঁচ. এ সকল হাদীস থেকে এ কথা বুঝে নেয়ার অবকাশ নেই যে, অশ্লীলতা, গালিগালাজ, মুর্খতাসুলভ আচরণ, অসার ও অযথা বিতর্ক শুধু রোজা রাখা অবস্থায় নিষেধ, অন্য সময় নিষিদ্ধ নয়। বরং এর উদ্দশ্য হল, সর্বাবস্থায় এগুলো অবশ্যই নিষিদ্ধ বরং রোজা রাখা অবস্থায় এগুলোতে লিপ্ত হওয়া আরো জঘন্য অন্যায় এবং  রমজান - রোজার শিক্ষা-বিরোধী।

ছয়. ইসলামী জীবন-দর্শনের মহত্ব প্রমাণিত। কিভাবে মুর্খ, অভদ্র আচরণের মোকাবেলায়  অহিংস, সুন্দর আচরণ করতে হয় তার শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম তার অনুসারীদের।

সাত. এ হাদীসের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, যদি রোজাদারের উপর কেউ জুলুম-অত্যাচার করে তবে তার প্রতিকার করা যাবে না, বিচার চাওয়া যাবে না। তার উপর কেহ জুলুম অত্যাচার করলে অবশ্যই এর যথাযথ প্রতিকার করা বৈধ।

আট. রোজা যথাযথভাবে কবুল হওয়ার জন্য অবশ্যই যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে  মুখ, লজ্জাস্থান ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গকে রক্ষা করতে হবে। বিরত থাকতে হবে মিথ্যা কথা ও কাজ, অশ্লীলতা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, গীবত, পরনিন্দা, দুর্নীতি, খাদ্যে ভেজাল, মাপে কম দেয়া ইত্যাদি অন্যায় কাজ থেকে। এগুলো যে মুর্খতাসুলভ কাজ, তাতে কারো দ্বিমত নেই।

নয়. অধিকাংশ আলেম এ ব্যাপারে একমত যে, গীবত, পরনিন্দা, মিথ্যা কথা, মুর্খতাপূর্ণ আচরণ ইত্যাদি কাজগুলো রোজা নষ্ট করে না। তবে তার সওয়াব অবশ্যই কমিয়ে দেয়। এবং এগুলোতে লিপ্ত হওয়ার অপরাধের শাস্তি আছেই।
দশ. এ হাদীসসমূহ থেকে আরো প্রমাণিত হলো যে, রোজার উদ্দেশ্য শুধু ক্ষুধা-পিপাসা সহ্য করা নয়। যত রকম অনাচার, অন্যায়, অভদ্র আচরণ, মুর্খতা সুলভ কথা ও কাজ  আছে তার সব কিছু থেকেই দূরে থাকতে হবে। যদি এগুলো থেকে বিরত থাকা না হয় তাহলে রোজা রেখে যেন কোন ফলই লাভ করা গেল না।
এগার. এ হাদীসসমূহ থেকে আরো প্রমাণিত হল, মিথ্যা কথা ও মিথ্যা নির্ভর কাজই হলো সকল অন্যায়ের মূল।
এ জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ
অতএব তোমরা প্রতিমার অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকো এবং বেঁচে থাকো মিথ্যা থেকে।
এ আয়াতে আল্লাহ পৌত্তলিকতার অপরাধের সাথে মিথ্যাকে উল্লেখ করেছেন। মিথ্যার ভয়াবহতা বুঝাতে এটাই যথেষ্ট।

তথ্যসুত্রঃ
  • সহীহ আল-বুখারী হাদীস নং ১৭৯৫, সহীহ মুসলিস হাদীস নং ১১৫১
  • সহীহ আল বুখারী হাদীস নং ১৮০৫
  • নাসায়ী সনানে কুবরা ৩২৫৯, ইবনে কুযাইমা হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন হাদীস নং ১৯৯৪
  • সহীহ আল-বুখারী হাদীস নং ৫৭১০, আবু দাউদ হাদীস নং ২৩৬২, তিরমিজী হাদীস নং ৭০৭, নাসায়ী হাদীস নং ৩২৪৫
  • নাসায়ী হাদীস নং  ১৬৭/৪, তাবারানী হাদীস নং ৪১৭৯, আল-বানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
  • আহমাদ যুহদ অধ্যায় হাদীস নং ১৭৮, আবু নঈম হুলইয়াতে হাদীস নং ৩৮২/১
  • সূরা আল-হজ, আয়াত ৩০

be Organized by Holy Islam 
O.H.I 
For More Visit:

বই পড়ুনঃ http://ohilibrary.blogspot.com/