Tuesday, December 6, 2011

মুহররম মাসে মাতম বিষয়ক বিদয়াত


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

মুহররম মাসে মাতম বিষয়ক বিদয়াত

মুহররম মাসের দশম দিবসযে দিবস আশুরা নামে পরিচিতআল্লাহ তা-আলা হুসাইন বিন আলী বিন আবুতালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে শহীদের মর্যাদা দান করেছিলেন. এটা হয়েছিল হিজরি ৬১ সনে . শহীদ হওয়া ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে তার উঁচু সম্মান ও মর্যাদার বিষয়কারণ তিনি এবং তার ভাই হাসান জান্নাতি যুবকদের নেতা. সুউচ্চ মাকাম- সম্মান  অর্জিত হয় পরীক্ষা দ্বারা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল
أي الناس أشد بلاء؟ فقال : الأنبياء ثم الصالحون ثم الأمثل فالأمثل، يبتلى الرجل على حسب دينه، فإن كان في دينه صلابة زيد في بلائه، وإن كان في دينه رقة خفف عنه، ولا يزال البلاء بالمؤمن حتى يمشي على الأرض وليس عليه خطيئة.( رواه أحمد:১৪০০)
সবচে বেশি পরীক্ষা কোন মানুষেরবললেন ‘ নবীগণেরতারপর সৎকর্মশীলদেরতারপর যারা উৎকৃষ্ট তাদের এবং এভাবেই. ব্যক্তিকে তার ধর্মের উপর দৃঢ়তানুযায়ী পরীক্ষা করা হয় যদি সে তার ধর্মে অবিচল থাকে তার পরীক্ষা কঠিন হয়আর যদি সে ধর্মের বিষয়ে নমনীয় হয় পরীক্ষা ও হয় তুলনামূলক সহজআর মুমিনের উপর পরীক্ষানির্যাতন চলতেই থাকবে এরই মাঝে এমন এক সময় আসবেসে জমিনে বিচরণ করছেঅথচ  তার আমলনামাতে একটিও গুনাহ নেই.

হাসান-হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এর মর্যাদা ও সুউচ্চ মাকাম যা  আল্লাহ তা-আলার নিকট পূর্ব থেকেই নির্ধারিত ছিলতাদের পূর্বসূরিদের ন্যায় ইতিপূর্বে তারা কোন পরীক্ষার  সম্মুখীন হন নি।  তাদের জন্ম গৌরবময় ইসলামে হয়েছেলালিত হয়েছেন মহিমান্বিত ইসলামের শীতল ছায়াতলেমুসলিমগণ তাদের সম্মান করতেনমর্যাদা দিতেনপ্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন তখনও তাদের ভালো-মন্দ পার্থক্যের বুঝটুকু পূর্ণতা লাভ করেনিতো এ পরীক্ষা তাদের ওপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহযাতে তারা তাদের পূর্বসূরিদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন. যেমন তাদের থেকে শ্রেষ্ঠআলী বিন আবুতালিব পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেনযে তাঁকে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছিল।

 হুসাইন এর হত্যাকাণ্ড জনগণের মাঝে গোলযোগের ও বিদ্রোহের জন্ম দিয়েছিলযেমন উসমান বিন আফ্ফানের হত্যাকাণ্ড মহা বিপদ ও ফিতনা ছড়িয়েছিল যা আজকে মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির বড় কারণ.

আব্দুর রহমান বিন মুলজিম যখন আমিরুল মুমিনীন আলী বিন আবুতালেব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে হত্যা করলএবং সাহাবা আজমাঈন তার সুযোগ্য সন্তান হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন. যার শানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন
 إن ابني هذا سيد، وسيصلح الله به بين فئتين عظيمتين من المسلمين. ( رواه البخاري:২৫০৫)
আমার এ দৌহিত্র সাইয়্যেদ- নেতা. অচিরেই আল্লাহ তা-আলা এর মাধ্যমে মুসলমানের বৃহৎ দুটি দলে আপোশ করাবেন.’ তিনি অভিভাবক রূপে অবতরণ করলেন এবং আল্লাহ তাকে দিয়ে বৃহৎ দুটি দলে আপোশ করিয়ে দিলেন. অত:পর তিনি ইন্তেকাল করলেনকতিপয় দল হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট পত্র লিখলেনযদি তিনি খেলাফতের দায়িত্ব কবুল করেন তাহলে তারা তাকে সাহায্য সহযোগিতা করবেন বলে প্রতিশ্রতি দিলেনএ লোক গুলো আসলে ভালো লোক ছিল না. বরং যখন তার চাঁচাত ভাইকে তাদের কাছে প্রেরণ করলেনতারা অঙ্গীকার ভঙ্গকরলচুক্তিলংঘন করল. তাঁর বিরুদ্ধে শত্রুকে সহায়তা করল তাঁকে নিধন করতেএবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে.

প্রকৃত বুদ্ধিমান যারা হুসাঈন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ভালোবাসতেনযেমন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসআব্দুল্লাহ ইবনে ওমর প্রমুখতাঁকে আকারে- ইঙ্গিতে বলেছিলেন ও তিনি যেন তাদের কাছে না যান এবং তাদের সহযোগিতা গ্রহণ না করেনতারা মনে করতেন তাদের নিকট তার যাওয়াটা মঙ্গল ও সুখকর হবে নাবাস্তবেও তারা যা বলেছিলেন তাই হয়েছেবস্তুত আল্লাহর নির্ধারিত নিয়তি এমনি ছিল.

যখন হুসাঈন রা. বের হলেন এবং অবলোকন করলেন যে বিষয় সম্পূর্ণ বিপরীতপ্রার্থনা করলেন তারা যেন তাঁকে ছেড়ে দেয় তিনি ফিরে যাবেন অথবা নিকটাত্মীয়দের সাথে সাক্ষাৎ করবেন. তারা উভয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলএবং তাকে অবরুদ্ধ করে তাদের সাথে লড়াই করতে বাধ্য করলতিনি লড়াই করলেন,এক পর্যায় তারা তাকে এবং তার সাথিদের হত্যা করলযুক্ত হলেন আহলে বাইতের অন্যান্য পবিত্র আত্মার সাথে.এবং এ ঘটনায় যারা তার উপর জুলুম করেছে- সীমা লঙ্ঘন করেছে তাদের আল্লাহ তা-আলা লাঞ্ছিত করেন- শাস্তি দেন.

এ হত্যাকাণ্ড মানুষের ক্ষতিকে অপরিহার্য করে তোলেসৃষ্টি হয়অত্যাচারী অজ্ঞ গোষ্ঠীর অর্থাৎ নাস্তিক চাটুকার অথবা বিভ্রান্ত প্রতারক দলের. যারা হুসাইন রা.এর জন্যে বন্ধুত্ব প্রকাশ করেপ্রকাশ করে আহলে বাইতের জন্যআশুরা দিবসকে মৃতের জন্য শোকমাতমবিলাপ দিবস হিসেবে গ্রহণ করেএবং এতে জাহেলী কর্মকাণ্ড প্রকাশ করে. যেমন তাযিয়ামিছিল,মুখে ও শরীরে আঘাতপরিধেয় পোষক ছেঁড়া ইত্যাদি.

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাই-মিয়া বলেন―‘ হুসাইন  রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যাকাণ্ডের কারণে শয়তান মানুষের মাঝে দুটি বিদয়াত চালু করেআশুরা দিবসে শোক প্রকাশ এবং বিলাপ করা. শরীরে আঘাত আহাজারী,কান্নাপিপাসার ভানতাজিয়া-মিছিল করার মাধ্যমে. এবং এর সাথে মিলিত হয়সালাফে সালেহীনদের গালি দেওয়া,অভিশাপ দেওয়াএবং নির্দোষ ব্যক্তিবর্গকে দোষারোপ করা এমকি আবু বকর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মত ব্যক্তিত্বকে গালি দেওয়াঅপমানজনক তথ্য পরিবেশন যা মিথ্যা মিশ্রিত. যে এসব প্রথা চালু করেছে তার উদ্দেশ্য ছিল  উম্মতের মাঝে ফিতনা এবং দলাদলি সৃষ্টি. কারণ মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত মত হলো এসব কর্মকাণ্ড ওয়াজিব মুস্তাহাব কোন পর্যায় পড়ে নাবরং পুরাতন দু:খ,দুর্ঘটনা নিয়ে শোক প্রকাশআহজারীকরা আল্লাহ  এবং তার রসুলের নিষিদ্ধকৃত বস্তুর মধ্য থেকে একটি.

এসবই আল্লাহর শরিয়তের বিরোধীআল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদ - আপদ যদি নতুন হয়সে ক্ষেত্রে  আমাদের বলেছেনধৈর্য ধারণইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠএবং ছাওয়াবের আশা করতে . যেমন আল্লাহ তা-আলা বলেছেন

. . . وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ ﴿১৫৫﴾ الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ﴿১৫৬﴾ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ ﴿১৫৭﴾ البقرة

ঐ সব ধৈর্যশীলকে সু সংবাদ প্রদান করযাদের উপর কোন বিপদ আপতিত হলে তারা বলে: নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্যে এবং নিশ্চয় আমরা তারই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী. এদের উপর তাদের প্রভুর পক্ষ হতে শান্তি ও করুণা বর্ষিত হবে এবং এরাই সুপথগামী.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
ليس منا من لطم الخدود، وشق الجيوب، ودعا بدعوى الجاهلية( رواه البخاري:১২১২)
 শোকে বেহাল হয়ে যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায়কাপড় ছিঁড়ে ফেলে  এবং জাহিলি যুগের মত আচরণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়.’ .

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন
أنا بريء من الصالقة والحالقة والشاقة. ( رواه مسلم:১৪৯)
যে মৃতের জন্যে শোক প্রকাশার্থে আহজারীকরেগালে আঘাতকরেকাপড় ছিঁড়ে আমি তার দায়মুক্ত.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন
النائحة إذا لم تتب قبل موتها تقام يوم القيامة،  وعليها سربال من قطران ودرع من جرب.(رواه مسلم:১৫৫০)
বিলাপ ও রোদনকারী নারী যদি তাওবা না করে মারা যায়তাহলে কিয়ামতের দিন তাকে মরিচাযুক্ত বর্ম এবং আলকাতরার পোশাক পরিহিত অবস্থায় দাঁড় করিয়ে রাখা হবে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  থেকে বিশুদ্ধ সনদে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
ما من مسلم يصاب بمصيبة فيقول : إنا لله وإنا إليه راجعون، أللهم آجرني في مصيبتي، وأخلف لي خيرا منها. إلا آجره  الله في مصيبته وأخلفه خيرا منها. ( رواه ابن ماجة:১৫৮৭)
কোন মুসলমান বিপদ-মুসিবতে আক্রান্ত হয়ে যদি বলে
إنا لله وإنا إليه راجعون، أللهم آجرني في مصيبتي، وأخلف لي خيرا منها.
-নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্যে এবং আমরা সকলে তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। হে আল্লাহ তুমি আমাকে আমার এ মুসিবতে প্রতিদান দাও এবং এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান কর- তাহলে আল্লাহ তা-আলা ঐ মুসিবতের কারণে তাকে ছাওয়াব দেবেন এবং তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করবেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেন :
أربع في أمتي من أمر الجاهلية لايتركونهن : الفخر بالأحساب، والطعن في الأنساب، والاستسقاء بالنجوم، والنياحة. ( رواه مسلم :১৫৫০)
আমার উম্মতের মধ্যে জাহেলী যুগের চারটি প্রথা পাওয়া যাবেতারা এগুলো পরিত্যাগ করবে না। বংশ নিয়ে গৌরবকুল বংশের উপর অপবাদ আরোপনক্ষত্র রাজীর মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা এবং মৃত ব্যক্তির জন্যে বিলাপ-রোদন।

এর সাথে যদি মুমিনদের উপর জুলুম-নির্যাতনঅভিসম্পাত-গালাগাল এবং দ্বীনের মধ্যে ফ্যাসাদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দ্বীন নির্মূলের উদ্দেশ্যে যেসব বেদ্বীন-নাস্তিক প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে তাদের সহযোগিতা করা হয় তাহলে ব্যাপারটি কত মারাত্মক ও বেদনাদায়ক?

আসলে পুরা ব্যাপারটিই হচ্ছে শয়তানের মন্দ কারসাজিসে বিভ্রান্ত ও গুমরাহদের নিকট নিুোক্ত বিষয়গুলোকে সুন্দর করে দেখিয়েছে।

আশুরাকে মাতম ও শোক দিবস হিসাবে গ্রহণ করে বিলাপ-রোদন করাশোক গাঁথা কবিতা রচনা করামিথ্যা সর্বস্ব ঘটনাপুঞ্জী বর্ণনা করা -তাতে অবশ্য অল্পকিছু সত্য আছেকিন্তু ঐ টুকু সত্যতো শুধুমাত্র দুঃখকষ্ট নতুন করে বাড়িয়ে দেয়গোড়ামী ও স্বজন প্রীতি বৃদ্ধি করেশত্রতা ও যুদ্ধের উসকানি দেয়মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ফিতনার উদয় ঘটে এবং (ঐ গুলোর মাধ্যমে) পূর্ববর্তীদের গালাগাল করার রাস্তা তৈরি হয়দ্বীনের মধ্যে মিথ্যাচার ও দন্দের উদ্ভব হয়-।

মুসলমানবৃন্দ ইসলামি ইতিহাসের শুরু থেকে নিয়ে অদ্যাবধি মিথ্যাচারধন্দ-ফিতনা সৃষ্টি এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সাহায্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে এ বিভ্রান্ত দলের চেয়ে অধিক কর্ম তৎপর আর কাউকে পায়নি। তারা ধর্মত্যাগী খারেজিদের চেয়েও নিকৃষ্ট-দুষ্ট।
এদের সম্পর্কেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন,
يقتلون أهل الإسلام ويدعون أهل الأوثان. ( رواه :البخاري:৩০৯৫)
মুসলমানদের হত্যা করবে আর জড়বাদী-পৌত্তলিকদের ছেড়ে দেবে।
তারা নবী পরিবার এবং তাঁর উম্মত-সাধারণ মুমিনদের বিরুদ্ধে ইয়াহুদীখৃষ্টান এবং মূর্তি-পূজক জড়বাদী -মুশরিকদের সহযোগিতা করে আসছে।

যেমন বাগদাদ সহ অন্যান্য স্থানে ইসলাম ও মুসলমানদের চরম শত্রু মুশরিকদেরকে নবী পরিবাররিসালাতের ভাণ্ডারআব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর সহ অন্যান্য আহলে বাইত এবং সাধারণ মুমিনদের হত্যানির্যাতনবন্দীবাড়ি ঘর ভাঙচুরধ্বংস ইত্যাদিতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিল। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের অনিষ্ট ও ক্ষতি এতই ব্যাপক যে একজন সু সাহিত্যিক কথা শিল্পী বর্ণনা করে শেষ করতে পারবে না।

এ দলটিই হচ্ছে (সে দল) যাদের রাফেযী বলা হয়। তারা সর্বজন শ্রদ্ধেয় পুণ্যাত্মা খলিফা-দ্বয় আবু বকর ও ওমর রা. কে গালাগালঅভিসম্পাতঘৃণা করে এবং কাফের বলে মন্তব্য করে বরং এ বিষয়ে ইসলাম বিদ্বেষী সকল দলকে ছাড়িয়ে গেছে। একারণেই ইমাম আহমদকে রাফেযীদের পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে বলেছিলেন,
       الذي يسب أبا بكر وعمرযারা আবু বকর ও ওমর রা. কে গালমন্দ করে।

তাদের রাফেযী বলার আরেকটি কারণ হল,(আরবি শব্দ رفض অর্থ প্রত্যাখ্যান করা ) যায়েদ বিন আলী রহ. আবু বকর ও ওমর রা. কে খলিফা রূপে গ্রহণ করায় তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কারণ তারা খলিফা-দ্বয়কে ঘৃণা করত। তাঁদের প্রতি শত্রতা পোষণ করত। সুতরাং খলিফা দ্বয়ের শত্র তা পোষণ কারীই হচ্ছে রাফেযী।

আবার কেউ কেউ বলেছেনআবু বকর ও ওমর রা. কে প্রত্যাখ্যান করার কারণে তাদেরকে রাফেযী বলা হয়।

রাফেযী ফিরকার উৎপত্তি হয়েছে ধর্মত্যাগী মুনাফেকদের থেকে। আর এর সূচনা করেছে আব্দুল¬হ বিন সাবা। সে আলী রা. কে ইমাম এবং নিষ্পাপ দাবি করেতাঁর ব্যাপারে বাড়বাড়ি করেছিল। আর এর থেকেই মূলত এ মতের উৎপত্তি হয়। যেহেতু রাফেযী ফিরকার উৎপত্তি হচ্ছে নিফাক থেকে তাই সালাফে সালেহীনদের কেউ কেউ বলেছেন,
حب أبي بكر وعمر إيمان، وبغضهما نفاق، وحب بني هاشم إيمان، وبغضهم نفاق.
আবু বকর ও ওমর রা. কে ভালোবাসা হচ্ছে ঈমান এবং তাদের ঘৃণা করা নিফাক। বনী হাশেমকে ভালোবাসা ঈমানতাদের ঘৃণা করা নিফাক।

এ ফিরকার পরিচয় দিতে গিয়ে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাই-মিয়া রহ. বলেন ফেরকায়ে  রাফেযাহ এমন একটি জাতি যাদের কোন সঠিক বোধ-বিচার নেইতাদের সমর্থনে বিশুদ্ধ কোন সনদ নেইগ্রহণযোগ্য কোন ধর্ম ও মতবাদ নেইসাহায্য করা হবে এমন পৃথিবী নেইবরং মূর্খতা ও মিথ্যাচারের দিক থেকে তারা হচ্ছে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় দল। তাদের ধর্মমতে প্রত্যেক ধর্মত্যাগী-যিন্দিক মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। যেমন নাসীরিয়্যাহইসমাঈলিয়্যাহ ইত্যাদি (তাদের মতে) মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ তারা উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের সাথে দুশমনি পোষণ করে এবং আল¬হর দুশমন ইয়াহুদীখৃষ্টান এবং মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে। তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠিতসর্বজন গ্রাহ্যবেধিত সত্যকে চাপা দেয় আর মিথ্যা বানোয়াট বিষয়-বলীকে সমর্থন করে- প্রতিষ্ঠিত করেআল¬মা শাবী রহ. তাদের সম্পর্কে যথার্থই বলেছেন : -তিনি তাদের সম্পর্কে খুব ভাল জানতেন “তারা যদি (মানুষ না হয়ে) চতুষ্পদ জন্তু হত তাহলে হত গাধা আর যদি পাখি হত তাহলে হত শকুন।

বর্তমান সময়ের অবস্থা :
বর্তমান বিশ্বের কোন কোন শহরে মুসলমান নামধারী কিছু ব্যক্তি আছেযারা মুহররম মাসকে দুঃখশোকবিভিন্ন কু-সংস্কার ও বিদয়াত পালনের মাস হিসাবে গ্রহণ করে এবং বাঁশকাঠ দ্বারা একটি কবর তৈরি করে বিভিন্ন রং বেরংয়ের কাগজ দ্বারা সজ্জিত করেএ কবরের নাম দেয় হোসাইনের সমাধি।

অথবা (প্রতীকী) কারবালা নির্মাণ করে তাতে দুটি কবর তৈরি করে এবং তার উপর তাজিয়াকরে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সবুজ বা গোলাপি রংয়ের পোশাক পরে একত্রিত হয়। তাদের বলা হয় হোসাইনের ফকিরবৃন্দ মাসের প্রথম দিনে বাড়ি ঘর ধোয়ামোছা করে পরিষ্কার করা হয়অতঃপর এক জায়গায় কিছু খাবার রাখা হয়। তাতে সূরা ফাতেহাসূরা বাকারার প্রথম কয়েকটি আয়াতসূরা কাফেরূনইখলাসফালাক এবং সূরা নাস অতঃপর দরুদ পড়া হয়। এরপর খাবারের ছাওয়াব মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে (হা দিয়া) পাঠানো হয়।

এ মাসে সাজ-সজ্জাকে নিষিদ্ধ করা হয়ফলে নারীরা সাজ-সজ্জা ও অলংকারাদি খুলে রাখে। লোকেরা গোস্ত খায় না। বৈধ উৎসব ও খানা পেনার আয়োজন করা হয় না বরং এ মাসে বিবাহ শাদি পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয় না। নতুন বিয়ের পর এ মাস আসার পূর্বে দুই বা ততোধিক মাস অতিবাহিত না হলে স্বামী-স্ত্রীকে একত্রিত হতে দেয়া হয় না।

এ মাসে শোক প্রকাশ স্বরূপ বুকচেহারা চপড়ানোজেব-জামা ছেঁড়ামাতম-রোদন ইত্যাদি অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। সাহাবি মুআবিয়াতাঁর সাথিবৃন্দইয়াযীদ এবং সকল সাহাবিদের অভিসম্পাত- ভর্ৎসনা করা হয়।

        মুহররমের প্রথম দশকে  আগুন প্রজ্বলিত করা হয়। লোকজন তার চার পাশে ভিড় জমায়।  ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা মিছিলসহ ইয়া হুসাইনইয়া হুসাইন স্লোগান দিতে দিতে রাস্তা-ঘাট প্রদক্ষিণ করে। তাদের বিশ্বাসএ মাসে জন্ম গ্রহণ কারি প্রতিটি সন্তান ভাগ্যহতকুলক্ষণে। কোথাও কোথাও ঢোলতবলাহারমোনিয়াম ইত্যাদি বাজানো হয়। স্থাপন করা হয় পতাকাকৃত্রিম সমাধি। নারী-পুরুষ ছোট-বড় সকলেই বরকতের জন্য একে স্পর্শ আর এর নীচ দিয়ে আসা-যাওয়া করে। তাদের ধারণাএতে বয়স বৃদ্ধি পায়বিপদ দূর হয়। আবার কোথাও কতক লোক চোখ বেধে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরেসূর্যাস্তের সময় বাড়ি ফিরে।
       
আশু রার দিন বিশেষ ধরনের খানা তৈরি করা হয়। একটি স্থানকে কারবালা নামকরণ করে সেখানে সমাধি স্থাপন করা হয় । গ্রাম ও শহর থেকে সমবেত লোক তার পাশে চক্কর কাটেঢোল-তবলা নিয়ে মত্ত থাকেসূর্যাস্তের সাথে সাথে তা মাটিতে পুতে কিংবা পানিতে নিক্ষেপ করে ঘর মুখী হয় । এদিকে রাস্তায় রাস্তায় পানীয় নিয়ে বসে পড়ে কতিপয় স্বেচ্ছাসেবী। তারা বিনামূল্যে পথিকদের পানি পান করায়। আর কতক ওয়ায়েয হুসাইন রা. এর গুণগান বর্ণনা করে উপদেশ নসিহত প্রদান করেন। মুয়াবিয়া রা. ও ইয়াজিদের কুৎসা রটনা করেন এবং তাদের অভিসম্পাত দেন। আশুরামুহররম ইত্যাদির ব্যাপারে দুর্বলবানোয়াট আর জাল হাদিস বর্ণনা করেন। বড় অংকের টাকা জমা করে আশুরা পরবর্তী চল্লিশায় মাহফিলের আয়োজন এবং বিভিন্ন মহলের লোক দাওয়াত দিয়ে বিশেষ ভোজের ব্যবস্থা করে।

        এ সকল বেদআতের প্রচলন অনেক দেশেই বিদ্যমান। যেমনইরাকইরানবাহরাইন এবং পাকিস্তানহিন্দুস্থানের শিয়া অধ্যুষিত অঞ্চল বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য।

        মুহররম মাসের আশুরা ও তার প্রাক্কালে এ সকল মাহফিলতাজিয়ামর্সিয়াচিত্রাঙ্কন এবং বুক চপড়ানোর দ্বারা তারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং বিগত বৎসরগুলোতে কৃত অপরাধ সমূহ মোচন করতে চায়। অথচ এ সকল কর্ম তাদেরকে আল্লাহর দরবার হতে বিতাড়িত আর তার রহমত হতে বঞ্চিত করছে।
আল্লাহ বলেন,
أَفَمَنْ زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ فَرَآَهُ حَسَنًا فَإِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ.﴿ فاطر  : ৮
যাকে তার মন্দ ও খারাপ কর্মসমূহ সজ্জিত করে দেখানো হয়েছে আর সে তা ভালই জ্ঞান করছে, (সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হতে পারেযে সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা জ্ঞান করতে সক্ষম হয়েছে) সত্যিই আল্লাহ যাকে ইচ্ছে গুমরাহ করেন এবং যাকে ইচ্ছে সৎ পথ প্রদর্শন করেন। (ফাতের : ৮)
আল্লাহ তা-আলা আরো বলেন,
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا. الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا ﴿الكهف : ১০৪
আপনি বলে দিনআমি কি তোমাদের স্বীয় কর্ম ও শ্রমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের কথা জানিয়ে দেব?- পার্থিব জগতে কৃত সমস্ত আমলই যাদের পণ্ডশ্রম হয়েছে। অথচ তাদের ধারণাখুব ভালো কাজই করে যাচ্ছে তারা। (কাহাফ : ১০৩-১০৪)
সমাপ্ত
মুল : আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযিয আহমদ আত-তুয়াইজিরী
অনুবাদক : ইকবাল হোছাইন মাসুম / কামাল উদ্দিন মোল্লা  




be Organized by Holy Islam 
O.H.I 
For More Visit: