Monday, January 30, 2012

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যথার্থ অনুসরণ করা হল ভালবাসার দাবি


السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যথার্থ অনুসরণ করা হল ভালবাসার দাবি

                     

আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সা.কে কেন রাসূল হিসাবে প্রেরণ করলেনতার প্রতি আমাদের করণীয় কিআল্লাহ তাআলা রাসূলকে এ জন্য পাঠিয়েছেন আমরা যেন তার অনুসরণ করি। তার নির্দেশনা মত আল্লাহর হুকুম মান্য করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন -
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ
আমি রাসূলকে এ জন্যই পাঠিয়েছি যেআল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তার আনুগত্য করা হবে। (সূরা আন-নিসা: ৬৪)
আল্লাহর রাসূল সা.কে ভালবাসা ও তাকে মুহাব্বত করা হবে ঈমানের দাবী। যার মধ্যে রাসূলের ভালবাসা নেই সে ঈমানদার নয়। রাসূলের ভালবাসার পরিচয় দেবেন কিভাবেএর দুটি পদ্ধতি রয়েছে।  এক. আল্লাহর নির্দেশ মত জীবনের সর্বক্ষেত্রে তার অনুসরণ করে  ও এর জন্য যে কোন ত্যাগ ও কুরবানী স্বীকারে প্রস্তুত থেকে। দুই. তাঁকে অনুসরণ না করে তার গুণগান ও প্রশংসাকীর্তনে ব্যস্ত থেকেমীলাদ পড়েমীলাদুন্নবী উদযাপন করে।

আসলে ভালবাসা প্রমাণ করার কোন পদ্ধতিটি সঠিকআমার মনে হয় মতলববাজ ব্যতিত সকল মানুষ উত্তর দেবে সঠিক হল প্রথমটিই।
আবু লাহাব রাসূলুল্লাহ সা.কে ভালবাসতেন। এতটাই ভালবাসতেন যে তাঁর জন্মগ্রহণের সুসংবাদ যে ক্রীতদাসীর কাছে শুনলেন আনন্দের অতিশয্যে সে ক্রীতদাসী সুয়াইবাকে মুক্ত করে দিলেন। এবং নবুয়্যত পূর্ব পুরো চল্লিশ বছর তার ভালবাসা ছিল অক্ষত। কিন্তু রাসূলের আনুগত্য না করার কারণে পাল্টে গেল আবু লাহাবের পুরো চেহারা।
আবু তালেবের কথা কারো অজানা নয়। আল্লাহর রাসূলের একেবারে শৈশব থেকে পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত তাকে নিজ সন্তানের মত ভালবেসেছেন। লালন-পালন করেছেন আদরস্নেহমমতাভালবাসা দিয়ে। আর এ ভালবাসতে গিয়ে অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন। দীর্ঘ তিন বছর খেয়ে না খেয়ে উপোষ থেকে শোআবে আবু তালেব উপত্যকায় নির্বাসিত জীবন-যাপন করেছেন তাঁরই জন্য। ছায়ার মত সাথে থেকেছেন বিপদ-আপদে। রাসূল মুহাম্মাদের অনুসরণ করা দরকার এটা মুখে স্বীকারও করেছেন। কবিতাও রচনা করেছেন তাঁর উদ্দেশ্যে। কিন্তু অনুসরণ করলেন না তাঁর আনীত দাওয়াত ও পয়গামের। ফলে সব কিছুই বৃথা গেল। তার জন্য দুআ-প্রার্থনা করতেও নিষেধ করা হল।
পশ্চিমা বহু লেখক ও চিন্তাবিদরা মুহাম্মাদ সা.কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বলে স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি যে সকল মানুষের জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয় নির্ভুল আদর্শতাঁর নির্দেশিত পথই একমাত্র মুক্তির পথএ বিষয়টি তাদের কাছে বোধগম্য হয়ে উঠে না।
গ্যেটে কারলাইল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি অতি সাম্প্রতিক মাইকেল হার্ট (দি-হান্ড্রেড লেখক) পর্যন্ত বহু লেখকগবেষকচিন্তাবিদ ও রাজতৈনিক নেতা মুহাম্মাদ সা. সম্পর্কে অনেক সপ্রশংস- উক্তি,  সীমাহীন ভক্তির নৈবদ্য পেশ করেছেনঅকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করেছনআবহমান পৃথিবীর সর্বকালীন প্রেক্ষাপটে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সর্বোত্তম  ব্যক্তি।
কিন্তু প্রশ্ন হল তাদের এ প্রশংসাও ভালবাসার দাবি কি কোন কল্যাণে আসবে?
আজকে যারা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বত ও ভালবাসার দাবি নিয়ে তাঁরই নির্দেশ লংঘন করে বিভিন্ন বেদআতি কাজ-কর্মের প্রসারে লিপ্ত। তার ধর্মে যা তিনি অনুমোদন করে যাননি তা যারা অনুমোদন করতে ব্যস্ত তাদের পরণিতি কি হবেএর আলোকে বিষয়টি বিবেচনা করার দাবি অসংগত হবে না।
এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি বাণী পেশ করা যেতে পারে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
ألا وإني فرطكم على الحوض وأكاثر بكم الأمم، فلا تسودوا وجهي، ألا وإني مستنقذ أناسا ومستنقذ مني أناس، فأقول يا رب أصيحابي! فيقول إنك لا تدري ما أحدثوا بعدك. (رواه ابن ماجه، وصححه الألباني في صحيح سنن ابن ماجه)
শুনে রাখো! হাউজে কাউছারের কাছে তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে আমি গর্ব করব। সেই দিন তোমরা আমার চেহারা মলিন করে দিওনা। জেনে রাখো! আমি সেদিন অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাব। কিন্তু তাদের অনেককে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব: হে আমার প্রতিপালক! তারা তো আমার প্রিয় সাথী-সংগীআমার অনুসারী। কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছেতিনি উত্তর দেবেন: আপনি জানেন না,আপনার চলে আসার পর তারা ধর্মের মধ্যে কি কি নতুন বিষয় আবিস্কার করেছে। (ইবনে মাজাহ)

অবশ্যই রাসূল সা.কে ভালবাসতে হবে। তার জন্য বেশী বেশী করে দরূদ ও সালাম পেশ করতে হবে। তার প্রশংসা করতে হবে। সর্বোপরি তাঁর সকল আদর্শ ও সুন্নাতের অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে। কিন্তু এগুলো করতে যেয়ে তিনি যা নিষেধ করেছেন আমরা যেন তার মধ্যে পতিত না হই। যদি হই তাহলে বুঝে নিতে হবে ভাল কাজ করতে গিয়ে শয়তানের ফাঁদে আমরা পা দিয়েছি।

একটি সংশয় নিরসন
যারা বেদআতে লিপ্ত তারা অনেক সময় তাদের বেদআতি কাজকে সঠিক বলে প্রমাণ করার জন্য কুরআন বা হাদীস থেকেও উদ্ধৃতি দেনযদিও তার পন্থা-পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য নয়। ঈদে মীলাদের ব্যাপারে তাদের অনেকে বলেন ঈদে মীলাদ বা রাসূলে কারীম সা.  এর জন্ম দিন পালন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাদীসটি হল:
عن أبي قتادة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم يوم الاثنين، فقال:  ذلك يوم ولدت فيه ويوم بعثت فيه أو أنزل علي فيه.  رواه مسلم
সাহাবী আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সা. কে সোমবারে রোযা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত দেয়া হয়েছে বা আমার উপর কুরআন নাযিল শুরু হয়েছে (বর্ণনায় : মুসলিম)
তারা এ হাদীস পেশ করে বলতে চান যে আল্লাহর রাসূল সা.  সোমবার দিনে জন্মগ্র্রহণ করেছেন বলে ঐ দিনে রোযা পালন করে তা উদযাপন করাকে সুন্নাত করেছেন। তাই জন্মদিন পালন এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
জ  ও  য়া  ব
এক. আল্লাহর রাসূল সা.  শুধু জন্ম দিনের কারণে সোমবার রোযা রাখতে বলেননি। বরং বৃহস্পতিবারও রোযা রাখাকে সুন্নাত করেছেন। সেটা তাঁর জন্মদিন নয়।
হাদীসে এসেছেঃ
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: تعرض الأعمال يوم الاثنين والخميس، فأحب أن يعرض عملي وأنا صائم.  رواه الترمذي رواه مسلم بغير ذكر الصوم
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সা.  বলেছেনঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কাজেই আমি পছন্দ করি যখন আমার আমল পেশ করা হবে তখন আমি রোযাদার থাকব (বর্ণনায়: মুসলিম ও তিরমীজি)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝে আসে। তা হল:
দুই. যদি জন্মদিবসের কারণে রোযা রাখার বিধান হত তাহলে  শুধু সোমবারে রোজা রাখা সুন্নাত হত। কিন্তু তা হয়নিবরং বৃহস্পতিবার ও সোমবার সপ্তাহে দুদিন রোযা রাখাকে সুন্নাত করা হয়েছে। তাই এ রোযার কারণ শুধু জন্ম দিবস নয়।
তিন. এ দু দিনে রোযা সুন্নাত হওয়ার কারণ হল আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমল পেশ হওয়া।
চার. সোমবারের ফজীলত দু কারণে। জন্মদিন ও নবুওয়াত প্রাপ্তি বা কুরআন নাযিল। শুধু জন্ম দিন হিসেবে নয়।
পাঁচ. রাসুলে কারীম সা.  তার জন্মদিন সোমবারে ঈদ পালন করতে বলেননি বরং ঈদের বিরোধীতা করে রোযা রাখতে বলেছেন।
ছয়. রোযা হল ঈদের বিপরীত। রোযা রাখলে সে দিন ঈদ করা যায় নাঈদ ও রোযা কোন দিন এক তারিখে হয় না। হাদীসের দাবি হল রাসূলুল্লাহ সা. এর জন্মদিনে রোযা রাখা। কিন্তুরোযা না রেখে তার বিপরীতে পালন করার পেছনে কি যুক্তি থাকতে পারে?
সাত. তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া যায় যে এ হাদীসটিতে রাসূলের জন্মদিন পালনের ইঙ্গিত রয়েছে। তাহলে হাদীস অনুযায়ী প্রতি সোমবার কেন ঈদ পালন করা হচ্ছে নাসোমবারেও নয় বরং ঈদ পালন করা হচ্ছে  বছরে একবার রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে। সে দিন সোমবার না হলেও পালিত হয়। এ হাদীসে কি ১২ই রবিউল আউয়ালে জন্মদিন পালন করতে বলা হয়েছে?
আট. যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া হয় উল্লেখিত হাদীসটি রাসূল সা.  এর জন্মদিন পালন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে তা হলে আমি বলব হ্যাঁ,হাদীসটিতে  জন্মদিবস কিভাবে পালন করতে হবে তাও বলে দেয়া হয়েছে। তা হল ঐ দিনে রোযা রাখা। কিন্তু ঐ দিনে রোযা না রেখে বেশী খাওয়া দাওয়া করা হয়। ঈদ নাম দিয়ে রোযা রাখার বিরোধিতা করা হয়। তা হলে তাদের কাছে রোযা রাখার সুন্নাতের চেয়ে খাওয়া-দাওয়া বেশী প্রিয়মনে রাখা উচিত প্রেম  মুহাব্বাতের সত্যিকার প্রমাণ হল ত্যাগ ও কুরবানী করাউপোস থাকাকষ্ট স্বীকার করা। খাওয়া-দাওয়া ও আমোদ-ফুর্তি নয়। মুখে নবী প্রেমের দাবি ও কাজ-কর্মে তার আদর্শের বিরোধিতা করার নাম কখনো মুহাব্বাত হতে পারে না। বরং বলা চলে ধোকাবাজি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করার তাওফীক দান করুন!
মূল: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
Collected from: http://www.islamhouse.com/

be Organized by Holy Islam 
O.H.I 
ভিজিট করুন