Saturday, November 5, 2011

আরাফাহ দিবসের ফজিলত


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
আরাফাহ দিবসের ফজিলত

আরাফাহ দিবস হল এক মর্যাদাসম্পন্ন দিন। যিলহজ মাসের নবম তারিখকে আরাফাহ দিবস বলা হয়। এর ফজিলত ও বিশেষত্বের আলোচনা ইতিপূর্বে যিলহজ মাসের প্রথম দশকের ফজিলত’ অধ্যায়-এ করা হয়েছে।
এ দিনটি অন্যান্য অনেক ফজিলত সম্পন্ন দিনের চেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী। যে সকল কারণে এ দিবসটির এত মর্যাদা তার কয়েকটি নীচে আলোচিত হল :
ইসলাম ধর্মের পূর্ণতা লাভবিশ্ব মুসলিমের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতের পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির দিন। হাদিসে এসেছে
روى الإمام البخاريرحمه اللهبسنده عن طارق بن شهاب : قالت اليهود لعمر : إنكم تقرءون آية لو نزلت فينا لاتخذناها عيدا، فقال عمر : إني لأعلم حيث أنزلت ، وأين أنزلت، وأين كان رسول الله صلى الله عليه وسلم حين أنزلتيوم عرفة وإنا والله بعرفة، (الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًاالمائدة : ৩ رواه البخاري ৪৬০৬
ইমাম বোখারি রহ. তার নিজ সূত্রে তারিক বিন শিহাব রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে ইহুদীরা উমর রা.-কে বলল : আপনারা এমন একটি আয়াত তেলাওয়াত করে থাকেন যদি সে আয়াতটি আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হতো তাহলে আমরা সে দিনটিকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করতাম। উমর রা. এ কথা শুনে বললেন : আমি অবশ্যই জানি কখন তা অবতীর্ণ হয়েছেকোথায় তা অবতীর্ণ হয়েছেআর অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ স. কোথায় ছিলেন। হাসে দিনটি হল আরাফাহ দিবসআল্লাহর শপথ ! আমরা সে দিন আরাফাতের ময়দানে ছিলাম। আয়াতটি হল : আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম ।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে রজব রহ. সহ অনেক উলামায়ে কেরাম বলেছেন যে এ আয়াত নাজিলের পূর্বে মুসলিমগণ ফরজ হিসেবে হজ আদায় করেননি। তাই হজ ফরজ হিসেবে আদায় করার মাধ্যমে দ্বীনে ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি মজবুত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল।
এ দিন হল ঈদের দিন সমূহের একটি দিন। হাদিসে এসেছে :
روى أبو داود عن أبي أمامة أن النبي صلى الله عليه وسلم قاليوم عرفة، ويوم النحر، وأيام التشريق عيدنا أهل الإسلام، وهي أيام أكل وشرب) .صححه الألباني في صحيح أبي داود برقم ২১১৪(
আবু দাউদ সাহাবি আবু উমামাহ রা. থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : আরাফাহ দিবসকোরবানির দিনও আইয়ামে তাশরীক (কোরবানি পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলামের অনুসারীদের ঈদের দিন। আর এ দিনগুলো খাওয়া-দাওয়ার দিন।
في معنى حديث عمر السابق عن ابن عباسرضى الله عنهماأنه قال : فإنها نزلت في عيدين اثنين : في يوم الجمعة ويوم عرفة.) صححه الألباني في سنن الترمذي برقم ২৪৩৮(
ইতিপূর্বে আলোচিত উমর রা. বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রা. বলেন : সূরা মায়েদার এ আয়াতটি নাজিল হয়েছে দুটো ঈদের দিনে। তাহল জুমআর দিন ও আরাফাহ দিবস।
এ হাদিস দুটো দ্বারা বুঝে আসে যে আরাফাহ দিবসকে ঈদের দিনের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়েছে।

আরাফাহ দিবসের রোজা দু বছরের কাফ্ফারা
যেমন হাদিসে এসেছে
 عن أبي قتادة رضى الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم يوم عرفة فقال : (يكفر السنة الماضية والباقية) .) رواه مسلم ১১৬৩(
সাহাবি আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স.-কে আরাফাহ দিবসের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন : বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
আরাফার দিন গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের দিন
যেমন হাদিসে এসেছে
عن عائشة رضى الله عنها قالتإن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ما من يوم أكثر من أن يعتق الله فيه عبداً من النار من يوم عرفة، وإنه ليدنو ثم يباهي بهم الملائكة، فيقول : ما أراد هؤلاء؟
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ স. বলেন : আরাফার দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন : তোমরা কি বলতে পার আমার এ বান্দাগণ আমার কাছে কি চায় ?’
ইমাম নবভী রহ. বলেন : এ হাদিসটি আরাফাহর দিবসের ফজিলতের একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
ইবনে আব্দুল বির বলেন : এ দিনে মোমিন বান্দারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হন। কেননাআল্লাহ রাব্বুল আলামিন গুনাহগারদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন না। তবে তওবা করার মাধ্যমে ক্ষমা-প্রাপ্তির পরই তা সম্ভব। হাদিসে আরো এসেছে:
عن أبي هريرة رضى الله عنه قالقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن الله يباهي بأهل عرفات أهل السماء ، فيقول لهم انظروا إلى عبادي جاؤوني شعساً غبراًأخرجه الإمام أحمد والحاكم واللفظ له، وقال شاكر إسناده صحيح. )المستدرك ১/৪৬৫(
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স. বলেছেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরাফাতে অবস্থানকারীদের নিয়ে আসমানের অধিবাসীদের কাছে গর্ব করেন। বলেন : আমার এ সকল বান্দাদের দিকে চেয়ে দেখ ! তারা এলোমেলো কেশ ও ধুলোয় ধূসরিত হয়ে আমার কাছে এসেছে।

আরাফাহ দিবসে যে সকল আমল শরিয়ত দ্বারা প্রমাণিত
এ দিনে রোজা পালন করা। যেমন হাদিসে এসেছে
 عن أبي قتادةرضى الله عنهأن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ... صيام يوم عرفة احتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده .)...رواه مسلم ১১৬৩(
সাহাবি আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ স. বলেন : আরাফার দিনের সওম আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।
মনে রাখতে হবে আরাফার দিনে সওম তারাই রাখবেন যারা হজ পালনরত নন। যারা হজ পালনে রত তারা আরাফার দিবসে সওম পালন করবেন না। যেমন ইতিপূর্বে আলোচনা হয়েছে।
আরাফার দিনে হজ পালনরত ব্যক্তি রাসূলে কারীম স.-এর আদর্শ অনুসরণ করেই ঐ দিনের সওম পরিত্যাগ করবেন। যেন তিনি আরাফাতে অবস্থানকালীন সময়ে বেশি বেশি করে জিকিরদোয়াসহ অন্যান্য আমলে তৎপর থাকতে পারেন।
আর এদিনে শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোকে সকল হারাম ও অপছন্দনীয় কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। হাদিসে এসেছে
في مسند الإمام أحمد من حديث ابن عباسرضى الله عنهماوفيه (إن هذا اليوم من ملك فيه سمعه وبصره غفر له) )ورواه المستدرك وقال شاكر إسناده صحيح(
মুসনাদে আহমদে ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে যেএ দিনে যে ব্যক্তি নিজ কান ও চোখের নিয়ন্ত্রণ করবে তাকে ক্ষমা করা হবে।
মনে রাখা দরকার যে শরীরের অঙ্গ সমূহ হারাম ও অপছন্দনীয় কাজ থেকে হেফাজত করা যেমন সওমের দাবি তেমনি হজেরও দাবি। কাজেই সর্বাবস্থায় এ দিনে এ বিষয়টির প্রতি যতœবান হতে হবে। আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশ
বাস্তবায়ন ও নিষেধগুলোকে পরিহার করতে হবে।

অধিক পরিমাণে জিকির ও দোয়া করা
নবী কারীম স. বলেছেন :
خير الدعاء دعاء يوم عرفة ، وخير ما قلت أنا والنبيون من قبلي : لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ .)رواه الترمذي ২৮৩৭ ورواه مالك في الموطأ وصححه الألباني(
সবচেয়ে উত্তম দোয়া হল আরাফাহ দিবসের দোয়া। আর সর্বশ্রেষ্ঠ কথা যা আমি বলি ও নবীগণ বলেছেনতাহল : আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন মাবুদ নেই। তিনি একক তার কোন শরিক নেই। রাজত্ব তারই আর সকল প্রশংসা তারই প্রাপ্যএবং তিনি সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্দুল বার বলেন : এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে আরাফা দিবসের দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হবে আর সর্বোত্তম জিকির হল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ 
ইমাম খাত্তাবী বলেন : এ হাদিস দ্বারা বুঝে আসে যে দোয়া করার সাথে সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রশংসা ও তার মহত্ত্বের ঘোষণা দেয়া উচিত। 
be Organized by Holy Islam 
O.H.I 
For More Visit:

বই পড়ুনঃ http://ohilibrary.blogspot.com/