Tuesday, October 18, 2011

রাসূলুল্লাহ যেভাবে হজ করেছেন-১০


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

রাসূলুল্লাহ যেভাবে হজ করেছেন-১০

তাওয়াফে ইফাযা তথা বায়তুল্লাহ্‌র ফরয তাওয়াফ আদায়

১০০- অতপর রাসূলুল্লাহ (সা) বাহনে সওয়ার হয়ে বাইতুল্লাহ গেলেন এবং (বায়তুল্লাহর ফরয) তাওয়াফ 

করলেন। সাহাবীগণও তাওয়াফ করলেন।
১০১- রাসূলের সাথে যারা কিরান হজ করেছিলেন তাঁরা সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করেননি।[1]

১০২- অতপর তিনি মক্কায় যোহরের সালাত আদায় করলেন।
১০৩- তারপর আবদুল মুত্তালিব বংশের কাছে এলেন, ‘তারা[2] যমযমের পানি পান করাচ্ছিল। তিনি বললেন,


انْزِعُوا بَنِى عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَلَوْلاَ أَنْ يَغْلِبَكُمُ النَّاسُ عَلَى سِقَايَتِكُمْ لَنَزَعْتُ مَعَكُمْ


হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! বালতি ভর্তি করে পানি তুলে তা (হাজীদেরকে) পান করাও। 

তোমাদের কাছ থেকে পানি পান করানোর দায়িত্ব কেড়ে নেয়ার ভয় না থাকলে আমিও নিজ 

হাতে তোমাদের সাথে বালতি ভরে পানি তুলে তা পান করাতাম।[3]

১০৪- অতপর তারা তাঁকে বালতি ভরে পানি দিলেনআর তিনি তা পান করলেন।

হজের পর আয়েশা রা. এর উমরা পালন

১০৫- জাবের রা. বলেন, ‘আয়েশা রা. ঋতুবতী হলেন। তখন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া তিনি হজের আর সব আমল সম্পন্ন করলেন।[4]

১০৬- তিনি বলেন, ‘যখন তিনি পবিত্র হলেনতখন কাবার তাওয়াফ করলেন এবং সাফা-মারওয়ায় সাঈ করলেন।

১০৭- অতপর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন,

قَدْ حَلَلْتِ مِنْ حَجِّكِ وَعُمْرَتِكِ جَمِيعًا
তুমি তোমার হজ ও উমরা উভয়টি থেকে হালাল হয়ে গিয়েছ।[5]
১০৮- আয়েশা রা. বললেনহে আল্লাহর রাসূল, ‘আপনারা সবাই হজ ও উমরা করে যাবেন আর আমি কি শুধু হজ করে যাব?’[6] 

তিনি বললেন

إِنَّ لَكِ مِثْلَ مَا لَهُمْ
তোমারও তাদের মতই হজ ও উমরা হয়ে গিয়েছে।[7]

১০৯- আয়েশা রা. বললেন, ‘আমি মনে কষ্ট পাচ্ছিকেননাআমি তো শুধু হজের পরে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছি।[8]

১১০- জাবের রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা) নরম স্বভাবের লোক ছিলেন। যখন আয়েশা. কিছু কামনা করতেনতিনি সেদিকে লক্ষ্য রাখতেন।[9]

১১১- রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন,
فَاذْهَبْ بِهَا يَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ فَأَعْمِرْهَا مِنَ التَّنْعِيمِ
হে আবদুর রহমান! তুমি তাকে নিয়ে যাও এবং তাকে তানঈম থেকে উমরা করাও।[10]
১১২- অতপর, ‘আয়েশা রা. হজের পরে উমরা করলেন।[11] ‘তারপর ফিরে এলেন।[12] ‘আর এটা ছিল হাসবার রাতে[13][14]

১১৩- জাবের রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা) বিদায় হজে নিজের বাহনে আরোহন করে বায়তুল্লাহর 

তাওয়াফ করলেন এবং নিজের বাঁকা লাঠি দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলেনযাতে লোকজন তাঁকে 

দেখতে পায় এবং তিনি ওপরে থেকে তাদের তত্ত্বাবধান করতে পারেন। আর যাতে তারা তাঁর কাছে 

জিজ্ঞেস করতে পারে। কেননা লোকজন তাঁকে ঘিরে রেখেছিল।[15]

১১৪- জাবের রা. বলেন, ‘এক মহিলা তার একটি বাচ্চা তাঁর সামনে উঁচু করে ধরে বললেনহে আল্লাহর 

রাসূলএর কি হজ হবে

তিনি বললেন,

نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ
হ্যাঁআর তোমার জন্য রয়েছে পুরস্কার।[16]




[1]. আবূ দাউদতাহাবী।

[2]. দারমী।

[3]. অর্থাৎ

[4]. বুখারীমুসনাদে আহমদ।

[5]. মুসলিমআবূ দাউদনাসাঈ।

[6]. বুখারীমুসনাদে আহমদ। অন্য হাদীসে রয়েছেলোকেরা দুই ইবাদাতের নেকী নিয়ে ফিরবে আর আমি কি এক 

কাজের নেকী নিয়ে ফিরবো? 

[7]. মুসনাদে আহমদ।

[8]. মুসলিমআবূ দাউদনাসাঈমুসনাদে আহমদ।

[9]. মুসলিম।

[10]. ইবন আববাস রা. বলেন আল্লাহর শপথ! মুশরিকদের প্রথা বাতিল করার জন্য রাসূলুল্লাহ  আয়েশা রা. কে 

যিলহজ মাসে উমরা করিয়েছেন। কুরাইশ গোত্র ও তাদের অনুসারীরা বলতো, ‘যখন উটের লোম গজিয়ে বেশি হবে

পৃষ্ঠদেশ সুস্থ হবে এবং সফর মাস প্রবেশ করবে তখনই উমরাকারির উমরা সহীহ হবে। তারা যিলহজ ও মুহররম শেষ 

হওয়ার পূর্বে উমরা হারাম মনে করত’ (আবূ দাউদ : ১৯৮৭)।

[11]. বুখারীমুসনাদে আহমদ।

[12]. মুসনাদে আহমদ।

[13]সেটি হচ্ছে আইয়ামে তাশরীকের পরের রাত্রি। অর্থাৎ ১৪ তারিখের রাত। এটাকে মুহাস্সাবের রাতও বলা হয়। 

রাসূলুল্লাহ ও সাহাবীগণ ১৪ তারিখের রাত এ স্থানে যাপন করেছিলেন। যেসব জায়গায় পূর্বে শিরক বা কুফরী কর্ম অথবা 

আল্লাহর শত্রুতা প্রকাশ করা হত সেসব জায়গায় রাসূলুল্লাহ ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেছেন। এই

মর্মে তিনি মিনায় বলেন, ‘আমরা আগামীকাল বনূ কিনানার খায়ফে (অর্থাৎ মুহাস্সাব তথা হাসবা নামক স্থানে) যেতে চাচ্ছি,

যেখানে তারা কুফরীকর্মের ওপর অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিলআর তা ছিল এই যেকুরাইশ ও বনূ কিনানাবনূ হাশিম ও বনূ 

আবদুল মুত্তালিবের বিরুদ্ধে এই মর্মে শপথ করেছিল যেতাদের সাথে তারা বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করবে নাবেচাকেনা 

করবে নাযতক্ষণ না তারা নবীকে তাদের কাছে সোপর্দ করে (বুখারী :১৫৯০)। ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, ‘এটাই ছিল 

রাসূলুল্লাহ এর অভ্যাস যেতিনি কুফরের নিদর্শনের স্থানসমূহে তাওহীদের নিদর্শন প্রকাশ করতেন (যাদুল মাআদ)।

[14]. মুসলিম।

[15]. মুসলিমআবূ দাউদমুসনাদে আহমদ।

[16]. তিরমিযীইবন মাজা। বাচ্চাটিকে বহন করা এবং তাকে মুহরিমরা যেসব কাজ থেকে বিরত থাকে সেসব কাজ থেকে 

বিরত রাখার বিনিময়ে এই নেকী (নাববী রহ.)। 
For More Visit:

বই পড়ুনঃ http://ohilibrary.blogspot.com/