Tuesday, May 15, 2012

বিশ্ব মা দিবস : শরয়ী দৃষ্টিভঙ্গি


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা


বিশ্ব মা দিবস : শরয়ী দৃষ্টিভঙ্গি

আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দেশে ও দেশের বাহিরে অনেক দিবস পালন করা হয়ে থাকে। যেমন বিশ্ব নারী দিবসআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসবিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসবিশ্ব আবহাওয়া দিবসবিশ্ব ভালোবাসা দিবসমে দিবসশিশু দিবসতামাকমুক্ত দিবসজাতিসংঘ দিবসপরিবেশ দিবস ইত্যাদি নানা রকম দিবস। এত দিবস যে ইদানীং পালিত হয় যার সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে আছে বলে আমার মনে হয় না।
যে দিবসগুলো আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপন করা হয়তাকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।
এক.
এমন কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে দিবস পালন করাযেগুলোর সাথে কোন ধর্ম বা জাতির সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নেই। মানুষকে এ সকল বিষয়ে সচেতন করার জন্যেই দিবসগুলো উদযাপনের প্রচলন করা হয়েছে। যেমন বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসমাদক বিরোধী দিবসজলবায়ু দিবস ইত্যাদি।
দুই.
এমন কতগুলো দিবস আছেযেগুলোর উৎপত্তি হয়েছে কোন ধর্ম বা জাতির সংস্কৃতি বা বিশ্বাস থেকেকিন্তু পরে এগুলোকে আন্তর্জাতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসমা দিবসনববর্ষ ইত্যাদি।
তিন.
আবার এমন কতগুলো দিবস আছেযেগুলো কোন ঐতিহাসিক বা রাজনৈতিক ঘটনার স্মরণে পালিত হয়ে থাকে। যেমন মে দিবসহিরোশিমা দিবস ইত্যাদি।
প্রথম প্রকারের দিবস সার্বজনীনভাবে পালিত হতে পারেইসলামের দৃষ্টিতে এতে কোন আপত্তি নেই। কারণএতে মানব কল্যাণের বিষয় জড়িত। মানুষকে অকল্যাণ ও অনিষ্টতা থেকে সাবধান করাও কল্যাণউন্নতির দিকে আহ্বান করার ক্ষেত্রে ইসলামের চেয়ে অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদের ভূমিকা বেশি আছে?
তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রকারের দিবস পালন সম্পর্কে অবশ্যই ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি স্বতন্ত্র।
দ্বিতীয় প্রকার দিবস পালন সম্পর্কে কথা হলো : যে ধর্মে এটা প্রচলন হয়েছেযে জাতি এটা প্রচলন করেছেতারা এটা পালন করলে ইসলামের বলার কি আছেইসলাম তো তাদের ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো যদি এটা অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়কিংবা ইসলামের স্কুলে নাম লিখিয়েআবার যদি অন্য স্কুলে ক্লাস করার চেষ্টা করা হয়তাহলে সেটা অবশ্যই সমস্যা সৃষ্টি করার কথা।
এটা যদি মুসলমানগণ পুণ্য কাজ বলে উদযাপন করেনতাহলে দুটো অন্যায় : -
প্রথমত: নব আবিষ্কার বা বিদআত।   
দ্বিতীয়ত: কাফেরদের অনুসরণ।
আর যদি পুণ্য মনে না করে এমনিতেই করে বা সামাজিক দায়বদ্ধতার খাতিরে করেতাহলে কাফেরদের আনুগত্য করারতাদের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বনের অপরাধে অপরাধী হবে।
থেকে গেল তৃতীয় প্রকারের কথা। ঐতিহাসিক বা রাজনৈতিক কোন ঘটনার স্মরণে কোন দিবস পালন করা একটি অনর্থক কাজ। এতে মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট করা হয়অর্থের অপচয় হয়অন্য জাতিধর্ম বা সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণার চর্চা করা হয়। নিজেদের অহংকার করতে শেখায়। তাই এ সকল কারণে ইসলাম এটাকে অনুমোদন করতে পারে না। ইসলামী সংস্কৃতিতে দিবস পালনের কোন অনুমোদন নেই।

মা দিবসের সূচনা যেভাবে :
ঐতিহাসিক ও গবেষকগণ লিখেছেনমা দিবস উদযাপন প্রথম শুরু হয়েছে গ্রিসে। গ্রিকরা তাদের মাতা-দেবীর পূজা করত। যার নাম হল রিয়া। এটা তারা বসন্তকালীন উৎসবের একটি অংশ হিসাবে উদযাপন করত। প্রাচীন রোমেও এ রকম দিবস উদযাপন করা হতো সাইবল দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস মতে সাইবল হল সকল দেব-দেবীর মাতা। খৃষ্টপূর্ব প্রায় ২৫০ সালে রোমে ধর্মীয় উৎসব হিসাবে একটি দিবস পালন করা হতযার নাম ছিল হিলারিয়া। অর্থাৎ দেবী মাতা রিয়ার সম্মানে। এটা উদযাপনের সময় ছিল ১৫ই মার্চ থেকে ১৮ই মার্চ। গ্রিক ও রোমান পৌত্তলিক সমাজে দেব-দেবীর মায়ের প্রতি ধর্মীয়ভাবে শ্রদ্ধা জানাতে এ সব দিবস পালন করা হতএটাই পরবর্তীকালে মা দিবস হিসাবে চালু করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে।
গবেষকগণ তাদের গবেষণায় আরো দেখিয়েছেন যেরোমানরা খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করার ফলে যখন পৌত্তলিক ধর্ম পালনে বাধাগ্রস্ত হলএবং তারাই খৃষ্টধর্মকে বিকৃত করে তাতে অনেক পৌত্তলিক ধ্যান-ধারণা প্রবেশ করালতখন এরই অংশ হিসাবে খ্রিস্টান পাদ্রি ও ধর্মযাজকরা সংস্কার করে এ দিবসকে মাতা মেরী (মরিয়ম আ.) এর প্রতি সম্মান জানানোর জন্য বরাদ্দ করে দিল। এ থেকে মায়ের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য খ্রিস্টান সমাজে একটি দিবসের প্রচলন শুরু হয়। ১৬০০ খৃষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের যুবক-যুবতীরা এ দিনটাকে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনতাদের জন্য উপহার সামগ্রী ক্রয় ও প্রদান করার জন্য বেছে নেয়।
এটা হল ইংল্যান্ডের কথা। আর আমেরিকার ঘটনা একটু ভিন্ন।
আমেরিকার এক নারী চিন্তাবিদনাম অ্যানম জারাফস। নিজের মাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। মায়ের ভালোবাসা অক্ষুণœ রাখতে জীবনে বিবাহ করেননি। সে পড়াশোনা করেছেন পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় চার্চ নিয়ন্ত্রিত একটি স্কুলে। তার মায়ের মৃত্যুর দুবছর বছর পরসে আন্দোলন শুরু করল যেমায়ের স্মরণে একদিন সরকারী ছুটি দিতে হবে। তার অনুভূতি হলমায়েরা সন্তানদের জন্য সারা জীবন যা  করেনতা সন্তানেরা অনুভব করে না। তাই যদি এ উপলক্ষে একটি ছুটি দেয়া হয়একটি দিবস পালন করা হয়তাহলে সন্তানদেরকে মায়ের ভূমিকা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়া সম্ভব যাবে। তার আন্দোলনে আমেরিকান কংগ্রেসের অনেক রাজনীতিবিদ একাত্মতা ঘোষণা করল। এ ধারাবাহিকতায় ১৯০৮ সালের ১০ই মে প্রাথমিকভাবে আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়াফ্লোরিডাওকালাহোমা ও পেনসালভানিয়াতে মা দিবস পালন শুরু হয়। ১৯১০ সালে এ সব অঙ্গরাজ্যে সর কারী ভাবে মা দিবস ও তাতে ছুটি পালন শুরু হয়। এটা হল আমেরিকায় মা দিবস পালনের সূচনা।
এরপর ১৯১১ সাল হতে সমগ্র আমেরিকায় সর কারী ভাবে মা দিবস পালিত হয়। আমেরিকান কংগ্রেস ১৯১৩ সালের ১০ই মে এটা সর কারী ভাবে অনুমোদন করে। তারা মে মাসের প্রথম রবিবারকে মা দিবস পালনের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে। আমেরিকার অনুকরণে মেক্সিকোকানাডাল্যাটিন আমেরিকাচীনজাপান ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে শুরু হয় মা দিবস পালন।
বর্তমানে আমেরিকার আনুগত্যশীল সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের দেশেও এ দিবস পালন প্রচলন করার চেষ্টা করছে।
দেশে দেশে মা দিবস :
যদিও আমেরিকায় এটা পালিত হয় মে মাসের প্রথম রবিবারকিন্তু অন্যান্য দেশে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমননরওয়েতে মা দিবস পালিত হয় মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার। আর্জেন্টিনায় পালিত হয় অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় রবিবারে। লেবাননে পালিত হয় বসন্তের প্রথম দিনে। দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিত হয়  মে মাসের প্রথম রবিবারে। ফ্রান্সে ও সুইডেনে পালিত হয় মে মাসের শেষ রবিবারে। জাপানে পালিত হয় মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারে।
দেখা গেল তারিখে ভিন্নতা থাকলেও রবিবারে মা দিবস পালনে সকলের ঐক্যমত হয়েছে। এরই মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছেএটা খ্রিস্টানদের নিজস্ব সংস্কৃতি। ইসলাম অনুসারীরা কখনো এটা অনুসরণ করতে পারে না। মনে রাখতে হবে আমরা মুসলমান হয়ে আমেরিকার কাছে দায়বদ্ধ নই যেসকল ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্যদাসত্ব ও অন্ধ অনুকরণ বজায় রাখতে হবে। যাদের গোলামী করার মানসিকতা আছে তারাই কেবল এটি করতে পারে। মুসলমানরা নয়।


মুসলমানরা কেন মা দিবস বর্জন করবে -
প্রথমত:
মাকে সম্মান করাভালোবাসাতার সাথে সদাচরণ করাতার সেবা করা ইসলামে একটি ইবাদত। এ ইবাদতের পন্থা-পদ্ধতি ইসলামে নির্ধারিত। এ ক্ষেত্রে নতুন কোন বিষয় বা পদ্ধতি পালন বিদআত বলে গণ্য হবে। ইসলাম মাকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছে অন্য কোন ধর্ম বা সমাজ ততটা দেয় নি। মায়ের জন্য একটি দিবস পালন করলেদায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে বলে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করার মানে হলমাকে সর্বদা গুরুত্ব দেয়ার সময় আমার নেই। অথচ ইসলাম মাকে সর্বদাই গুরুত্ব দিতে বলেছেএমনকি নিজের স্ত্রীসন্তানদের চেয়েও।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন:
من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد. (مسلم ১২/১৬)
যে কেউ এমন আমল করবেযার ব্যাপারে আমাদের কোন নির্দেশ নেইতা প্রত্যাখ্যাত। 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন :
من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد. (رواه البخاري ২৬৯৭ ومسلم)
যে ব্যক্তি আমাদের এ ধর্মে এমন কিছুর প্রচলন করবেযার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেইতা প্রত্যাখ্যাত।

দ্বিতীয়ত:
খ্রিস্টানদের অনুকরণে মা দিবস পালন করার অর্থ হল: তাদের ধর্মীয় বিষয়কে সানন্দে গ্রহণ করাধর্মীয় বিষয়ে তাদের আনুগত্য করাতাদের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করা। এটা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষেধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : من تشبه بقوم فهو منهم.  رواه أبو داود وصححه الألباني
সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্যতা রাখবেসে তাদের দলভুক্ত।  
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: এ হাদীসের বাহ্যিক অর্থ হল: যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যতা রাখবেসে কাফের হয়ে যাবে। যদি এ বাহ্যিক অর্থ (কুফরির হুকুম) আমরা নাও ধরি তবুও কমপক্ষে এ কাজটি যে হারামতাতে সন্দেহ নেই।
মা দিবস পালন যে খ্রিস্টানদের আবিষ্কারএটা উপরের আলোচনায় পরিষ্কার হয়ে গেছে।
মুসলমান হয়েও যারা ইসলাম পছন্দ করে নাতাদের জন্য আমাদের কোন বক্তব্য নেই। আমাদের এ বক্তব্য তাদের জন্য যারা ইসলামকে পছন্দ করেন এবং সামর্থ্যনুযায়ী সে অনুসারে নিজ জীবন পরিচালনায় আগ্রহী।
ইহুদিখ্রিস্টানহিন্দু কিংবা বৌদ্ধতাদের কোন ধর্মীয় আচার বা কৃষ্টি-কালচার মুসলমানদের জন্য অনুসরণ বৈধ নয়। এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদীসে যথেষ্ট বাণীআদেশ-নিষেধ রয়েছে। আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছেযারা জীবনের সকল কিছুকে পাশ্চাত্যকরণ করতে আগ্রহী। এমনকি আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতিকেও। ইসলামের প্রশ্নে তারা হীনমন্যতায় ভুগে। তাদের জন্য আমাদের কোন উপদেশ উপকারে আসবে বলে আমরা মনে করি না।

মা দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা কী -
পাশ্চাত্যের দেশসমূহে নীতি-নৈতিকতার অধঃপতন ও ভোগবাদী চিন্তা-ভাবনা এত প্রবল যেসেখানে মাতা-পিতার খেদমত বা সেবার কথা কল্পনাও করা যায় না। সে সকল দেশে অগণিত প্রবীণ আশ্রম রয়েছে। বৃদ্ধ মাতা-পিতাকে তারা এ সকল আশ্রমে ভর্তি করিয়ে দেয়। তারা শেষ বয়সে এসে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করে। মুসলিম দেশের লোকজন যখন তাদের সম্পর্কে জানার জন্য তাদের মুখোমুখি হয়জিজ্ঞেস করে প্রবীণ আশ্রমে কেমন কাটছে আপনার দিনকালতখন তারা বলেএতো এক নরক। আমরা নরকে আছি। শেষ বয়সে অনেককে মনে পড়ে কিন্তু তাদের দেখতে পাই না।
এ সকল দেশে নৈতিকভাবে অধঃপতিত মানুষেরা যদি বছরের একটি দিন তাদের মা বাবাকে ভালোবাসা জানানোর জন্য বরাদ্দ করে তখন তাতে ক্ষতি কী?
কিন্তু আমরা মুসলিমরা মা দিবস পালন করব কোন দুঃখেআমরাতো আল্লাহর রহমত ও তাঁর করুণায় প্রতিদিন মাকে ভালোবাসিশ্রদ্ধা করিখেদমত করিখোঁজ-খবর নেই। তাকে প্রবীণ আশ্রমে নির্বাসনে পাঠাই না।
আমাদের দেশ ও সমাজে এ দিবসের আমদানি করে কি এ মেসেজ দেয়া হচ্ছে যেমায়ের জন্য এত কিছু করার প্রয়োজন কিএত সময়ই বা কোথায়বছরে একটি দিন তাদের জন্য বরাদ্দ করে দাও! ব্যস তাদের হক আদায় হয়ে যাবে?
আল্লাহ আমাদের মুসলমানদের এ ধরনের অনৈতিক আচরণ ও চিন্তাভাবনা থেকে রক্ষা করুন!
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও তাঁর রাসূল মায়ের প্রতি যতœ ও ভালোবাসা নিতে যা বলেছেন যেভাবে বলেছেন এমন কেহ বলে নিবলতে পারে নি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا. سورة الأحزاب: ১৫
আমি মানুষকে মাতা-পিতার সাথে সুন্দর আচরণের তাগিদ দিয়েছি। তার মা অনেক কষ্টে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং বহু কষ্ট করে ভূমিষ্ঠ করেছে। গর্ভে ধারণ করা ও দুধ পান করানোর (কঠিন কাজের) সময়কাল হলো আড়াই বছর।
তিনি আরো বলেন:
وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ. سورة لقمان: ১৪
আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট স্বীকার করে গর্ভে ধারণ করেছে। আর দুধ ছড়ানো হয় দুবছরের মধ্যে। এ নির্দেশ দিয়েছি যেআমার প্রতি ও তোমার মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
http://tarbeyah.files.wordpress.com/2012/04/1muslim-family.jpg

আবু হুরাইরা রা. বলেন: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করল: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার সুন্দর আচরণের সবচাইতে বেশি হকদার কেতিনি বললেন: তোমার মা। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করলএরপর কেতিনি বললেন: তোমার মা। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করলতারপর কেতিনি বললেন: তোমার মা। সে আবারও জিজ্ঞেস করল এরপর কেতিনি বললেন: তোমার পিতা।
বাহ্য ইবন হাকিম তাঁর পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেন: আমি আরজ করলামইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কার সাথে সবচাইতে বেশি ভালো ব্যবহার করবতিনি বললেন: তোমার মায়ের সাথে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলামতারপর কার সাথেতিনি বললেন: তোমার মায়ের সাথে। তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন: তারপর কার সাথেএবারও তিনি বললেন: তোমার মায়ের সাথে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলামতারপর কার সাথেতিনি বললেন: তোমার পিতার সাথে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের সাথে। 
মিকদাম ইবন মাদিকারুবা রা. থেকে বর্ণিততিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের মায়েদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেনঅর্থাৎ তাদের সাথে সদাচরণ করার আদেশ দিচ্ছেন। একথা তিনি তিনবার বললেন । নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের পিতাদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ পর্যায়ক্রমে নিকটবতীদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন।  (সদাচারের) 
উল্লেখিত কয়েকটি বাণীর প্রতি লক্ষ্য করে দেখুন! এ ধরনের আরো অসংখ্য নির্দেশ রয়েছে মায়ের সাথে সুন্দর আচরণ করার জন্য।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যেশয়তান মানুষের আমলকে বরবাদ করার জন্য ভাল কাজের সাথে এমন কিছু মিশ্রণ ঘটায়যার কারণে তার ভাল কাজটি আল্লাহর কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে যায়। মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে যেয়ে আমরা যেন শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণে লিপ্ত না হয়ে যাই। প্রতি মুহূর্তেপ্রতিদিন আমরা মাকে ভালোবাসবতাকে শ্রদ্ধা করবতার সেবা করবতার কথা মান্য করবতাকে উপহার দেবতার মনে সামান্য কষ্ট লাগে বা তিনি বিরক্ত হন এমন কোন কথা বা কাজ আমরা সর্বদা পরিহার করব। এটা হল মহান রাব্বুল আলামীন ও ইসলামের নবীর নির্দেশ। কোন দিন বা সময়ের সাথে এ নির্দেশটাকে সীমাবদ্ধ করা হয় নি। যদি কেহ করতে চান সেটা হবে সীমা লঙ্ঘন।
http://www.islamhouse.com/ 

be Organized by Holy Islam 

O.H.I