Monday, April 2, 2012

মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-১


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-

 

সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করিতাঁরই কাছে সাহায্য চাই এবং ক্ষমা প্রার্থনা করি। তাঁরই উপর বিশ্বাস স্থাপন করি এবং তাঁরই উপর ভরসা করি। আল্লাহর নিকট পানাহ চাই নফসের সমস্ত অনিষ্টতা ও কর্মকাণ্ডের কু পরিণতি থেকে। আর আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যেআল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেইতিনি এক। তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যেমুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাঁর ও তাঁর পরিজনসাহাবা-ই-কেরাম -রাদিয়াল্লাহু আনহুম- সকলের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।
আবু হুরায়রা -রাদিয়াল্লাহু আনহু- হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনমুনাফেকের নিদর্শন তিনটি। যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলেযখন সে অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করেআর তার নিকট কোন আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে। অন্য বর্ণনায় এসেছেযদিও সে রোযা রাখেযদিও সে নামায পড়ে এবং মনে করে সে একজন মুসলিম। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৫৩৬]
মুনাফেক এর তিন নিদর্শন
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনতিনটি চরিত্র এমন যা মুনাফেক হওয়ার নিদর্শনস্বরূপ। অর্থাৎ এ চরিত্রগুলো মুসলিমের মধ্যে থাকতে পারে না। যদি থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে সত্যিকার মুসলিম নয়মুনাফেক। নিদর্শন তিনটি হলো (১) যখন সে কথা বলেমিথ্যা বলে (২) যখন কোনো অঙ্গীকার করেখেলাপ করে ও (৩) তার নিকট কোনো জিনিস আমানত হিসেবে রাখা হলে খেয়ানত করে। এধরনের ব্যক্তি নামেই কেবল মুসলিম। হোক সে নামাযীঅথবা রোযাদার কেননা মুসলিম হওয়ার জন্য যেসকল গুণাবলি দরকারসে তা অর্জন করেনি বরং বর্জন করে চলেছে।
ইসলাম একটি ব্যাপক ধর্ম
আল্লাহই ভাল জানেনকোত্থেকে আমাদের চিন্তায় এ ধারণা উপস্থিত হলো যেদ্বীন শুধু নামায-রোযার নামকেউ যদি নামায আদায় করে যায়রোযা রেখে যায় তাহলেই সে মুসলিম হয়ে গেলএর অতিরিক্ত আমাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেইএজাতীয় বিশ্বাস যেন সবার মধ্যে ঠাঁই করে বসেছে। সুতরাং এ ধরনের লেবাসদারি মুসলিমরা যখন বাজারে যাচ্ছে, মিথ্যা ও প্রতারণার ছলে অন্যের সম্পদ হস্তগত করছে। হারাম-হালাল একাকার করে ভক্ষণ করছে। কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। আমানত (গচ্ছিত সম্পদ) দ্বিধাহীনভাবে ভক্ষণ করছে। অধিকার পুরণের কোনো বালাই নেই। মানুষের ধারণা এমন হয়ে গিয়েছে যেইসলাম শুধু নামায রোযার নাম। এটা খুবই ভুল ধারণা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঐ ব্যক্তি ‌‌(যদিও নামায পড়েরোযা রাখে এবং নিজেকে মুসলিম হিসেবে ভাবে।) অর্থাৎ তার মধ্যে মুসলিম হওয়ার কোনো যোগ্যতাই বাকি থাকে না। তবে হ্যাঁ, তার উপর কুফর এর ফতোয়া প্রদান করা যাবে না।)
এ প্রবন্ধে উপরে উল্লিখিত তিনটি বিষয়ের উপর স্বল্প পরিসরে গঠনমূলক আলোচনার প্রয়াস পাব বলে আশা রাখি। মানুষের জীবনে ব্যাপক পরিসরে এ বিষয়গুলো হাজির থাকা সত্ত্বেও যেহেতু এ বিষয়ে তাদের ধারণা সীমিত তাই কিছু ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি।
জাহেলি যুগে মিথ্যা
হাদীসে উল্লিখিত তিনটি বিষয়ের মধ্যে প্রথমটি হলো মিথ্যা বলা। মিথ্যা বলা হারাম। শুধু কেবল আমাদের ক্ষেত্রে হারাম এমন নয়বরং অতীতের সকল জাতির জন্যেই তা হারাম ছিল। যেমনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রোম সম্রাটের প্রতি ইসলামের দাওয়াতপত্র প্রেরণ করলেনপত্র পাঠান্তে সম্রাট তার সভাসদদের উদ্দেশ্যে বললেনএমন কেউ কি আছে যিনি ঐ ব্যক্তি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে অবগত?
ঘটনাক্রমে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ব্যবসায়িক কাজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাকে বাদশার দরবারে উপস্থিত করা হলো। শুরু হলো প্রশ্নোত্তর। এক পর্যায়ে বাদশা জিজ্ঞাসা করলেন, তার বংশ মর্যাদা কেমনআবু সুফিয়ান উত্তরে বললেন: তিনি অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন বংশের। তিনি কুরাইশ বংশের এবং সমগ্র আরববাসীর কাছে কুরাইশ বংশের মর্যাদা স্বীকৃত।
পুনরায় প্রশ্ন করা হলোতাঁর অনুসারীগণ কি বড় বড় ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি না সাধারণ মানুষউত্তরে তিনি বললেনতার অধিকাংশ অনুসারী সাধারণ ও দুর্বল মানুষ। বাদশা সম্মতি জ্ঞাপন করে বললেননবীগণের অনুসারীগণ দুর্বল ও সামর্থ্যহীন লোকেরাই হয়ে থাকেন।
সম্রাট পুনরায় প্রশ্ন করে বললেনতোমাদের মধ্যে যখন যুদ্ধ হয় তখন কে জয়লাভ করে? উত্তরে তিনি বললেনকখনো আমরাআবার কখনো তারা জয়ী হয়। (তখনও যেহেতু মাত্র দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এবং উহুদ যুদ্ধে মুসলিমরা কিছুটা হলেও বিপর্যস্ত হয়েছিলেন)।
মিথ্যা বলতে অপারগতা
আবু সুফিয়ান রা. মুসলিম হওয়ার পর বলেন, আমি তখন কাফের ছিলামতাই আমার একবার মনে হল যেমুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এমন কোনো শব্দ উচ্চারণ করবযাতে তাঁর সম্পর্কে বাদশার বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হয়। কিন্তু বাদশা যে ধরনের প্রশ্নাবলি উত্থাপন করলেনপ্রত্যুত্তরে সে মুহূর্তে এমন কিছু বলার সুযোগ ছিল নাকেননা তিনি যা জিজ্ঞেস করছিলেন তার উত্তর আমাকে দিতে হচ্ছিল এবং মিথ্যা বলার কোন সুযোগই ছিল না। আমি যে সকল উত্তর দিয়েছিলাম সবগুলোই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে গুণকীর্তন স্বরূপ হচ্ছিল।
অতঃপর বুঝা যাচ্ছে জাহেলি যুগেও মিথ্যা বলার রীতি চালু ছিল নাএমতাবস্থায় একজন মুসলিমমুসলিম হওয়ার দাবি করা সত্ত্বেও কি করে মিথ্যা বলতে পারে তা ভাববার বিষয়।
মূলঃশামসুল হুদা আযীযুল হক
Collected From: http://www.islamhouse.com/


be Organized by Holy Islam 

O.H.I 

For More Visit: