Saturday, March 3, 2012

ইন্টারনেট ইমান, আখলাক ও বুদ্ধি-বিবেকের পরীক্ষা


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

ইন্টারনেট ইমানআখলাক ও বুদ্ধি-বিবেকের পরীক্ষা

ইন্টারনেট তথ্যজগতে একটি বিশাল আন্দোলন নিঃসন্দেহে। তবে এই তথ্যজগতটি ইমান আখলাক এমনকী  বিবেক-বুদ্ধি পরীক্ষার একটি বিশাল ময়দানও বটে। যা শুভ  ও কল্যাণকর তাও এখানে  পুরোরূপে উন্মুক্তযা অশুভ-অকল্যাণকর তাও এখানে নানা ব্যঞ্জনে উপস্থাপিত। যে ইন্টানেট ব্যবহার করে সে তার জিহ্বা নির্বাধভাবে ছেড়ে দিতে পারে,  সে তার দৃষ্টি যেখানে ইচ্ছা সেখানেই ঘুরাতে পারেসে তার হাত দিয়ে যা চায় তাই লিখতে পারে। তাকে নিবারণকারী কেউ নেইতাকে ধমক দেওয়ারও কেউ নেইনা আছে কেউ থামিয়ে দেয়ার।
সে যদি ঊর্ধ্বে উঠতে সক্ষম হয়পরিণামের প্রতি দৃষ্টি দেয়তার প্রতিপালক তাকে দেখছেন এই বিশ্বাস হৃদয়ে জাগ্রত রাখেতবে সে সফলতার সাথে প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সামনে এগুতে সক্ষম হবে।
আর যদি সে নিজের লাগাম ছেড়ে দেয়তার খায়েশ যেদিকে তাড়িত করে সেদিকে ধাবমান হয়ইমান ও তাকওয়ার প্রহরী তার হৃদয় থেকে বিতারিত হয়তাহলে আবর্জনার স্তুপে ঢুকে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা থেকে যায়আর এর অশম্ভাবী পরিণতি হল  অপদস্ততাসুভদ্রতার মৃত্যুনিকৃষ্টতা ও পঙ্কিলতায় নাক ঘর্ষণ।
ইন্টারনেট ও তার ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য কিছু  পথ-পদ্ধতি রয়েছেনিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হল।
১- ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার
বুদ্ধিমানের কাজ হল ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার করা। নিজেকে অতিরঞ্জিত আকারে বিশ্বাস না করাকেননা এ-ধরনের অতিবিশ্বাস নিজেকে  ফেতনায় নিপতিত করতে পারেযার করালগ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়া হয়ত অসম্ভব হয়ে ওঠবে।
যদি  কেউ ইন্টারনেটে  কোনো কিছু পেশ করতে চায়অথবা কোনো মন্তব্য ইত্যাদি করতে চায়তাহলে উচিত হবে প্রথমে বিবেচনা করে দেখাএর দ্বারা কোনো উপকার হবে কি-নাতাকে সতর্ক হতে হবে এর দ্বারা যেন মুমিনদের কোনো কষ্ট না পৌঁছে,  মুমিনদের কোনো ক্ষতি না হয়। অতঃপর মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়ানোর সকল  আকার-প্রকৃতি থেকে তাকে বিরত থাকতে হবে। অহেতুক কথা-বার্তা থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। মানুষের অনুভূতি নিয়ে তামাশায় লিপ্ত হওয়াএকে অপরকে অপবাদ দেওয়ার ডালি খুলে-বসাএকদলকে অন্যদলের উপর চড়াও করে দেওয়া ইত্যাদি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। 
কোনো মন্তব্য অথবা কারো কথা খণ্ডন করতে হলে ইলমনির্ভরআদবসদয়ভাব ও শালীন ভাষায় করা জরুরি। কোনো কিছুতে অংশ নিতে চাইলে তা যেন হয় নিজস্ব ও সরাসরি নামে। সরাসরি নিজের নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভয় হলে উচিত হবে এমন কোনো বিষয় না লেখা যা অবৈধঅশিষ্ট। যে দিন মানুষের অন্তরাত্মা উন্মুক্ত করে সবকিছু সম্মুখে নিয়ে আসা হবে সেদিন আল্লাহর  সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার বিষয়টি হৃদয়ে সজাক রাখতে হবে।
২- শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে দূরে থাকা
বুদ্ধিমানের উচিত শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে দূরে অবস্থান করাশয়তান মানুষকে  গোমরাহ করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে সারাক্ষণ। সকল পথ ও পদ্ধতি সে ব্যবহার করে যায় তার কর্মসিদ্ধির উদ্দেশ্যে। শয়তান মানুষের চিরশত্রযে শত্র মানুষকে গোমরাহ করার মাকসদ নিয়ে যাপন করে প্রতিটি মুহূর্ত। আল্লাহ তাআলা আল কুরাআনের একাধিক জায়গায় বলেছেন, { তোমরা শয়তানের পদাক্সক অনুসরণ করো নানিশ্চয় সে তোমাদের স্পষ্ট শত্র}
বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনোই তার শত্রর প্রতি আস্থা রাখে না। ফেতনার থাবায় নিজেকে কখনো সঁপে  দেবে না।  ফেতনায় পড়বে না বলে অধিক আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়বে নাজ্ঞানেদীন ও ইল্মে সে যে পর্যায়েই থাক না কেন।
বুদ্ধিমান ব্যক্তি বরং ফেতনা থেকে অবস্থান করে বহু দূরে। ফেতনার কাছাকাছি যাওয়া থেকে  সে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে। এসবের পরে যদি সে কখনো নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেতনায় নিপতিত হয়তবে তা থেকে নিস্কৃতির জন্য আল্লাহর সাহায্য আসে। আল্লাহর করুণা তার সঙ্গ দেয়। আর যদি সে নিজের উপর অতিমাত্রায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠেনিজের নখর দিয়ে নিজের  গোর নির্মাণ করে চলেতবে তার উপর থেকে আল্লাহর লুতফ-করুণা সরিয়ে নেওয়া হয়।  ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে একা।
ইউসুফ আলাইহিসসালাম নিজ থেকে ফেতনায় নিপতিত হন নিফেতনাই বরং তার মুখোমুখি হয়েছেআর তখন তিনি আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছেন। ফেতনার বিপদ থেকে  বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় চেয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে আল্লাহ যদি নারীদের ষড়যন্দ্র থেকে তাকে রক্ষা না করতেন তবে তিনি জাহেলদের দলভুক্ত হয়ে যেতেন। আল্লাহর উপর তাঁর প্রচণ্ড ভরসার কারণেই আল্লাহর করুণা তার সঙ্গ দিয়েছে,  ফলে তিনি ভয়াবহ বিপদ থেকে রেহাই পেতে সক্ষম হয়েছেন।
৩- সময় নির্ধারণ  ও উদ্দেশ্য নির্ণয়
ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার একটি উপায়সময় নির্ধারণ ও সুনির্দিষ্টভাবে  কীভাবে  কি কাজ করতে যাচ্ছে  তা নির্ণয় করে নেওয়াউদ্দেশ্য স্থির করে নেওয়া।
এর বিপরীতে অনির্দিষ্টভাবে যদি একটির পর একটি  পেইজ ওপেন করে চলেএক সাইটের পর অপর সাইট ভিজিট করে চলেতবে অযথা সময় নষ্ট ব্যতীত  অন্য কিছু আশা করা যায় না। যদি কোনো উপকার আহরণে সক্ষম  হয় তবে তা হবে খুবই ক্ষীণ। 
৪- পরিণাম দর্শন
ইন্টারনেটের  ফেতনা থেকে বাঁচার  জন্য বুদ্ধিমান ব্যক্তির উচিত হবে তার কৃতকর্মের পরিণামের প্রতি দৃষ্টি রাখা। নিজেকে দমন করানিজের প্রবৃত্তি-খায়েশের ঘারে লাগাম লাগানো। ইবনুল জাউযি রা. বলেন, ‘হে তাকওয়ার দ্বারা সম্মানের আসনে  সমাসীন ব্যক্তিতুমি তাকওয়ার সম্মানকে গুনাহের অপদস্ততার বিনিময়ে বিক্রি করো না। যে জিনিসের প্রতি তোমার খায়েশ জন্মেছে তা বর্জন করে তোমার প্রবৃত্তির তৃষ্ণা মেটাওযদিও তা কষ্টদায়ক হয়জ্বালা দেয়।
তিনি আরো বলেছেন, ‘প্রবৃত্তিকে দমনের শক্তিতে এমন স্বাদ বয়েছে যা সকল স্বাদকে অতিক্রম করে যায়তুমি কি দেখো নাযারা প্রবৃত্তিতে আরোপিত তারা কীভাবে অপদস্ত হয়কেননা তারা পরাজিত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি প্রবৃত্তিকে দমন করে তার  ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টোকেননা সে শক্তিমান হওয়ার স্বাক্ষর রাখেকারণ  প্রবৃত্তিকে দমন করায়  সে পারঙ্গমতার পরিচয় দেয়।
৫- যৌন আবেদনময়  সকল বিষয় থেকে দূরে থাকা আবশ্যক
যৌন আবেদন-সুরসুরি সৃষ্টিকারী সকল বিষয় থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে দূরে থাকতে হবে। খারাপ ও পর্নো সাইটগুলো অবশ্যই  বর্জন করতে হবে। যেসব ব্লগ-সাইটে ফাহেশ-অশালীন কথাবার্তা বলা হয়যেসব প্রবন্ধে প্রবৃত্তি উসকিয়ে দেওয়ার মেটার রয়েছেতা বর্জন  করা ইমান ও আখলাকের দাবি। আবেদনময় চিত্র-ছবিকামনা-বাসনা উসকিয়ে দেয় এমন  ফুটেজ থেকে দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজমানুষের মন- সৃষ্টিগতভাবে প্রবৃত্তির প্রতি আসক্তপ্রবৃত্তি যেদিকে টানে সেদিকেই সে চলতে শুরু করে। মানুষের মন বারুদ অথবা  প্রেট্রোলতুল্যযা জ্বলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। এসব বস্তু প্রজ্জ্বলনকারী বস্তু থেকে যতক্ষণ দূরে থাকেশান্ত থাকেজ্বলার আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকে। এর অন্যথা হলেই তা জ্বলে উঠেজ্বলে উঠা স্বাভাবিক।
মানুষের মনও অভিন্ন প্রকৃতির। মানুষের মন শান্ত-নিরব থাকে। তবে যখন তা  উসকিয়ে দেওয়ার মত  কোনো কিছুর নিকটবর্তী হয়দুষ্টপ্রবৃত্তিকে জাগিয়ে দেওয়ার মত  কোনো শ্রব্যদৃশ্যপাঠ্যঅথবা শুঁকার বিষয়ের স্পর্শে আসে তখন তার ঘুমন্ত প্রবৃত্তি দানবের মত জেগে ওঠেতার ব্যাধিগুলো আন্দোলিত হয়ে ওঠেতার খায়েশ-আসক্তি বাধভাঙ্গা জোয়ারের মত হয়ে হাজির হয়। তাই এসব প্রবৃত্তিউদ্দীক বিষয় থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরি।
চলবে
মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহী আল হামদ
অনুবাদক : আবু শআইব মুহাম্মাদ সদ্দিীক
Collected From: http://www.islamhouse.com/



be Organized by Holy Islam 

O.H.I 

For More Visit: