Saturday, November 19, 2011

শিশুর অধিকার -২


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

শিশুর অধিকার -২

৩। বৈধভাবে জন্মগ্রহণ করার অধিকার
জন্মগত বৈধতা ইসলামের পরিবার গঠনের ভিত্তি এবং শিশুর ন্যায্য অধিকার। অবৈধ সন্তান না হবার জন্য নানারূপ সাবধনতা অবলম্বন করতে হবেএ ক্ষেত্রে  অবৈধ যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা অবৈধ যৌনমিলনের ফলে মাবনদেহে নানারকম রোগ-ব্যাধির সৃষ্টি হয়। উপরন্ত এতে অবৈধ সন্তান জন্মের আশংকা  থাকে। এতে কোন সন্দেহ নেই যেঅবৈধ  সন্তান মানবিক অধিকার হতে অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয় এবং তার জীবন ধারণ ও লালন পালনের সুযোগ-সুবিধা সহজলভ্য হয় না। যদিও পিতা-মাতার অপরাধ সন্তানের উপর বর্তায় না তবুও সমাজ অবৈধ সন্তানকে পূর্ণ সামাজিক মর্যাদা দিতে সম্মত নয়।[1] এটা যথেষ্ট নয় যে কোন শিশু তার পিতার নামে পরিচিত। এটা সত্যা হলেও চলবে নাবরং সকল সত্যের উর্ধ্বে  এটা সত্য হতে হবে। শিশুকে যেন এ বিষয়ে লজ্জিত হতে না হয়। জাহেলিয়া বা অজ্ঞতার যুগে সন্দেহজনক পিতৃত্ব নিয়েও কোন কোন হতভাগ্য শিশুকে চলতে হতো। একাধিক ব্যক্তি একটি শিশুর পিতা বলে দাবী করত এবং দাবীর সমর্থনে যুক্তিও পেশ করত।  বিষয়টি রাসুল (সা.) কে অত্যন্ত ব্যাথিত করে। তিনি ঘোষণা করেন ‘‘যে পিতার শয্যায় (বা সংসারে) সন্তান জন্ম গ্রহণ করেশিশু সেই শয্যারই।’’[2] ইসলামের বিধান হলো যে পরিবারে সন্তান জন্ম গ্রহণ করেসন্তান সেই পরিবারের যদি না বিষয়টি চ্যালঞ্জ হয়।
এরূপ একটি সীদ্ধান্ত প্রচলিত আছে যেবিয়ের ৬ মাসের মধ্যে যে শিশু জন্ম গ্রহণ করে তার জন্মের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করা বৈধ নয়। যদি কোন পিতা তার স্ত্রীর আনুগত্যহীনতার কারণে সন্তানকে নিজের সন্তান বলে পরিচয় দিতে না চায়তাহলে তাকে  অবশ্যই অবিশ্বাস করা যায় না,তাকে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে হবে। যদি সে সাক্ষী উপস্থিত করতে ব্যর্থ হয়তবে তাকে লিয়ান[3] পদ্ধতি অবলম্বন করতে  হলেও শিশুর পিতার পরিচয় সন্দেহমুক্ত করতে হবে। লিয়ান এর পদ্ধতি সম্পর্কে  আল-কুরআনে এরশাদ হয়েছে:
﴿وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَأۡتُواْ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَ فَٱجۡلِدُوهُمۡ ثَمَٰنِينَ جَلۡدَةٗ وَلَا تَقۡبَلُواْ لَهُمۡ شَهَٰدَةً أَبَدٗاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤ إِلَّا ٱلَّذِينَ تَابُواْ مِنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَ وَأَصۡلَحُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥ وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ أَزۡوَٰجَهُمۡ وَلَمۡ يَكُن لَّهُمۡ شُهَدَآءُ إِلَّآ أَنفُسُهُمۡ فَشَهَٰدَةُ أَحَدِهِمۡ أَرۡبَعُ شَهَٰدَٰتِۢ بِٱللَّهِ إِنَّهُۥ لَمِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ﴾ [النور: 6- 9]
‘‘যারা নিজেদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে যেনার অভিযোগ উত্থাপন করেঅথচ নিজেরা ব্যতীত তাদের (প্রয়োজনীয় সংখ্যক) সাক্ষী নাইতাদের  প্রত্যেকের সাক্ষ্য এই হবে যেসে (স্বামী) আল্লাহর  নামে চারবার শপথ করে বলবে যেসে অবশ্যই সত্যবাদী এবং পঞ্চম বারে বলবেসে মিথ্যাবাদী হলে তার নিজের উপর আল্লাহর অভিশাপ পড়বে। তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হবে যদি সে (স্ত্রী) আল্লাহর নামে চারবার শপথ করে সাক্ষ্য দেয় যেতার স্বামী মিথ্যাবাদীএবং পঞ্চম বারে বলবেতার স্বামী সত্যবাদী হলে তার নিজের উপর আল্লাহর অভিশাপ পড়বে।’’[4]
৪। সুন্দর নাম পাবার অধিকার
নাম একটি জাতির স্বকীয়তা ও পরিচয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামক মাধ্যম। এ প্রসঙ্গে উইলিয়াম হাজলিটের (William Hajlitt)  সাবলীল বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন:
A mane fast anchored in the deep abyss of time is like a star twinkling in the firmament cold, distant, silent, but eternal and sublime.”[5]
নাম কালের অতল তলে আবদ্ধ নোঙরযেন দূর নীলিমায় মিটিমিটি তারকাশান্তসুদূর সমাহিতকিন্তু শাশ্বত সুউন্নত। একটি সুন্দর বা উত্তম নাম পাওয়া প্রতিটি সন্তানের পিতা-মাতা তার হক বা অধিকার হিসেবে শরিয়ত স্বীকৃতি দেয়। হযরত আবু হুরায়রা (রা.)এ প্রসঙ্গে এক হাদীস উল্লেখ করেন:
রাসূল (সা) বলেছেনপিতা-মাতার প্রতি সন্তানের হক হচ্ছে প্রথমত: তিনটি
1.         জন্মের পরে তার জন্য একটি উত্তম নাম রাখতে হবে।
2.        জ্ঞান বুদ্ধি হলে তাকে উত্ত শিক্ষা দিতে হবে।
3.        পূর্ণবয়স্ক হলে তার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।[6]
ইবন আববাস (রা) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে তিনি বলেনতারা বললোইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা অবগত হয়েছি যেপিতার হক কিকিন্তু সন্তানের হক কিতিনি বললেনপিতা (সন্তানকে) সুন্দর নাম ও সুশিক্ষা প্রদান করবে।[7]
ইবন আববাস ও আবু সাঈদ (রা.) অন্যত্র বর্ণনা করেন-রাসূল (সা.) এরশাদ করেনযার সন্তান জন্মগ্রহণ করে সে যেন সুন্দর নাম ও সুশিক্ষা দেয় এবং সাবালক হলে তার বিয়ে দেয়।[8]
ইসলামে নামের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তাওআলা প্রথম মানব হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম তাকে নামই শিক্ষা দিয়েছিলেন। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে:
﴿وَعَلَّمَ ءَادَمَ ٱلۡأَسۡمَآءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمۡ عَلَى ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ فَقَالَ أَنۢبِ‍ُٔونِي بِأَسۡمَآءِ هَٰٓؤُلَآءِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٣١﴾ [البقرة: 31]
‘‘আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেনতৎপর সে সমুদয় ফিরিশতাদের সম্মুখে প্রকাশ করলেন এবং বললেন, ‘এ সমুদয়ের নাম আমাকে বলে দাও।[9] পরবর্তী আয়াতে দেখা যায় এরপর ফেরেস্তাদের কাছে এ সকল জিনিসের নাম জানতে চাইলে তারা অজ্ঞতা প্রকাশ করে। তখন আদম (আ.)কে জিজ্ঞাস করলে তিনি তা বলে দেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাওআলা আদম (আ.) কে ফেরেস্তাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন।[10] নামের গুরুত্ব বুঝা যায়  যখন সকল কাজের শুরুতে আল্লাহর নাম উচ্চারণের নির্দেশ আসে। এর মধ্যে কিছু কাজ আছে যা আল্লাহর নামে শুরু করা ফরজ। যেমনসালাততায়াম্মুম ও পশু যবেহ ইত্যাদি। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের নির্দেশ এসেছে এভাবে:
‘‘আপনি আপনার প্রতিপালকের নাম স্বরণ করুণ এবং একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন থাকুন।[11] তাফসীরকারদের মতে এ আয়াতে তাকবীরে তাহরীমার কথা বলা হয়েছেযার আগে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা ফরজ। শুধু কি কাজের আগেই বরং পবিত্র কুরআনে নাযিলকৃত প্রথম আয়াতের নির্দেশও ছিল মহান আল্লাহ্ তাআলার নামে পাঠ করার। যেমন এরশাদ হয়েছে:
﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ [العلق:8]
‘‘পাঠ করুন আপনার প্রতিপালকের নামে।[12] এতে বুঝা গেল যেকিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাজ শুরুর আগে আল্লাহর নাম উচ্চারণ ফরজ। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে আল্লাহর নাম উচ্চারণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। হাদীস শরীফের সূত্রে আহকামুল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- খাবার সময় বান্দাহ যদি আল্লাহর  নাম উচ্চরণ করেতাহলে শয়তান তার সাথে খেতে বসতে পারে না। আর নাম উচচারণ না করলে অবশ্যই তার খাবারে শয়তান শরীক হবে। মুশরিকরা তাদের কাজ-কর্ম শুরু করে তাদের দেব-দেবী মূর্তির নামেযাদের তারা পূজা করেওদের বিরোধিতা করা হবে যদি আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে কাজ শুরু করা হয়।[13]
সুতরাং নাম কোন ক্ষুদ্র বিষয় নয়যে রাখতে হয় তাই রাখা। বরং এর মাধ্যমে পরিচয়ের এক শাশ্বত ধারার সূচনা ঘটে। ফলে বিশ্ব মণীষীরাও নামের গুরুত্ব না দিয়ে পারে নি। কিন্তু তা অর্থবোধকশ্রুতিমধুর বা অন্য  কোন আঙ্গিকে বিবেচনার সুযোগ রয়েছেএ বিষয়ে মতান্তরের অবকাশ লক্ষ করা যায়। সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে মুসলমানদের গাফলতির সুযোগ নেই। তাই শিশুকে সার্বিক দিক থেকে সুন্দর নাম দিতে হবে। যে ধরনের নাম নিয়ে অন্যরা হাসাহাসি করেসে ধরনের নামে শিশুকে ডাকা যাবে না। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন: ‘‘তোমরা সুন্দর নাম রাখ।’’[14]
ড. হুসাইন আহমাদ
চলবে...


[1] . আফীক আব্দুল ফাত্তাহ তাববারাঅনু. ইসলামী দৃষ্টিতে অপরোধ, (ঢাকা: ইফাবাপৃ. ১৯৮৬)পৃ. ১০৯।
[2] . আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবন ইসমাইল আল-বুখারীসহীহ বুখারী(দিল্লী: কুতুবখানা রশীদিয়াহতা.বি)পৃ. ৭৮৭।
[3] . লিয়ান’ স্বামী যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধে যিনার অভিযোগ উত্থাপন করে এবং উহার অনুকুলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক( ৪ জন) সাক্ষী না থাকেঅথবা সে যদি স্ত্রী গর্ভস্থ সন্তানকে তার ঔরসজাত নয় বলে দাবী করেতবে এ অবস্থায় তাদের উভয়কে বিশেষ পন্থায় আদালতের সামনে যে শপথ করতে হয় তাকে লিয়ান’ বলে। (ইসলামী আইন বিধিবদ্ধকরণ বোর্ডবিধিবদ্ধ ইসলামী আইন, (ঢাকা: ইফাবাখৃ. ১৯৯৫)পৃ. ৬৭৬।
[4] . আল-কুরআন২৪:৬-৯।
[5] . Willian Hajlitt. Ibid
[6] . ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী প্রকাশিত গণশিক্ষা শীর্ষক পুস্তকপৃ. ১০৩।
[7] . বাযহাকীএ হাদীসটিকে কেউ কেউ দুর্বল বর্ণনা মনে করলেও বক্তব্যের দিক থেকে এ সংক্রান্ত মৌলিক বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধায় গ্রহণীয় হতে পারে।
[8] . প্রাগুক্ত।
[9] . আল-কুরআন২:৩১
[10] . আল-কুরআন২:৩৩।
[11] . আল-কুরআন৭৩:৮।
[12] . প্রাগুক্ত৯২:১।
[13] . আল্লামা আবু বকর আহমাদ আল-জাস্সাস(র.) আহকামুল কুরআন, খ. ১অনুবাদ মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম, (ঢাকা: ইফাবাখৃ. ১৯৮৮)পৃ. ২৩।
[14] . আবু দাউদ সুলাইমান ইবন আশআস সিজিস্তানীসুনানু আবি দাউদ,দিল্লী: কুতুবখানা রশিদিয়াহতা.বি)পৃ. ৫২। 

be Organized by Holy Islam 
O.H.I 
For More Visit: