Wednesday, July 13, 2011

আপনার সন্তানকে সালাতের নির্দেশ দিন

السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা


আপনার সন্তানকে সালাতের নির্দেশ দিন


আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেন,

أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهْوَ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهْوَ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْؤُولَةٌ عَنْهُمْ وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهْوَ مَسْؤُولٌ عَنْهُ أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ.
তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর সবাই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে নিজ দায়িত্ব সম্পর্কেইমাম তথা জনতার নেতা একজন দায়িত্বশীল; তিনি তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেনপুরুষ দায়িত্বশীল তার পরিবারের; সে জিজ্ঞাসিত হবে তার দায়িত্ব সম্পর্কেস্ত্রী দায়িত্বশীল তার স্বামীর গৃহ ও সন্তানের; সে জিজ্ঞাসিত হবে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কেমানুষের (দাস) ভৃত্য দায়িত্বশীল মুনিবের সম্পদের, সে জিজ্ঞাসিত হবে তার মুনিবের সম্পদ সম্পর্কেঅতএব, সতর্ক থেকো, তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে’ (বুখারী : ৭১৩৮; মুসলিম : ৪৮২৮; আবূ দাউদ : ২৯৩০)

ইমাম নববী রহ. বলেন, তিনিই পূর্ণ দায়িত্বশীল’, যিনি রক্ষণাবেক্ষণকারী, বিশ্বস্ত, নিজ দায়িত্ব ও নজরাধীন বিষয়ের কল্যাণ ও স্বার্থ সম্পর্কে সজাগএ থেকেই বুঝা যায়, তার নজরাধীন যত বিষয় রয়েছে, তার কাছে সে বিষয়ে ইনসাফ কাম্যতার দুনিয়া ও আখিরাত এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কল্যাণ কাম্য।

আজকাল অনেক বাবা-মাই মনে করেন সন্তানের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা পর্যন্তই তাদের দায়িত্ব সীমিতকখনো খেলাধুলা ও বস্তুগত আরও কিছুকে এর সঙ্গে যোগ করা হয়অথচ তারা তাদের সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনতে পারেন নাকারণ তাদের গুরুত্বের সবটুকু জুড়ে থাকে শারীরিক প্রতিপালন, কখনো বুদ্ধিবৃত্তিক লালনকেও এর সঙ্গে যোগ করা হয়তবে রুহ তথা আত্মার খোরাক সম্পর্কে উদাসীনতা দেখানো হয়অথচ বাস্তবে মানুষ প্রথমে রূহ, তারপর বুদ্ধি অতপর দেহ

সন্তানকে দুনিয়াদারির সঙ্গে সঙ্গে আখিরাতের প্রস্তুতির শিক্ষা দিতে হবে। জাগতিক সব শিক্ষা-দীক্ষার পাশাপাশি পারলৌকিক জ্ঞানও দিতে হবে। শরীয়তের যাবতীয় হুকুম-আহকামের ইলম শেখাতে হবে। শুধু ধারণা দেয়াই যথেষ্ট নয়; সার্বিক তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে তার অনুশীলনও করাতে হবে। মৌলিক দীনী জ্ঞান এবং আমল-ইবাদত শেখাতে হবে। আর ঈমানের পর সবচে গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক চর্চিত আমল হলো সালাত। সন্তানকে তাই সালাত আদায় করা শেখাতে হবে। শিক্ষা দিতে হবে সালাত আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইলম

সালাতের অপরিসীম গুরুত্বের কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৈশব-কৈশোর থেকেই সন্তানকে সালাতে অভ্যস্ত করাতে বলেছেন। অথচ সাধারণ মুসলিমরা তো দূরের কথা, আমরা যারা নিয়মিত সালাত আদায় করি, শরীয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে জীবন যাপনের চেষ্টা করি, তারাও এ ব্যাপারে কর্তব্যে অবহেলা করি। নিজে ঘুম থেকে জেগে ফজরের সালাত আদায় করতে মসজিদে যাই অথচ পাশের ঘরে ঘুমিয়ে থাকা সন্তানকে ডেকে সঙ্গে নিয়ে যাই না।

অনেকে সন্তানের ঘুম ভাঙ্গানোকে ভালোবাসার অন্তরায় ভেবে এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখান। তারা কি জানেন, সাহাবীদের বাণী হিসেবে অনেক সময় বলা হয়ে থাকে, কিয়ামতের দিন সন্তানরা পিতামাতার পেছনে লেগে থাকবেতারা চিৎকার করে বলবে, হে পিতা, আপনি আমাকে ধ্বংস করেছেন কেন?!! তারপরও কিভাবে পিতা-মাতারা কলিজার টুকরা সন্তানদের জাহান্নামের জ্বালানি হিসেবে বেড়ে উঠতে দেন?!! বরং তারা জাহান্নামে পৌঁছার সব সামগ্রী তাদের জন্য ক্রয় করে দেনএমনটি হবার কারণ সাধারণ পিতা-মাতার ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা আর যারা ইসলাম সম্পর্কে জানেন, তাদের ইসলামের নির্দেশনা মতো সন্তানের লালন-পালন সম্পর্কে না জানাএর সিংহভাগই সন্তানের প্রতি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কেএ কারণেই পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক দায়িত্ব, যা সীমাহীন গুরুত্বের দাবি রাখেতাই মুসলিম নর-নারীকে এ দায়িত্বের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা উচিতমুসলিম বিদ্যালয়গুলোর কর্তব্য আগামী প্রজন্মকে এ দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলাতাদেরকে এ দায়িত্বের সঙ্গে যথাযথভাবে পরিচিত করা

কখন সন্তানকে সালাতের নির্দেশ দেয়া হবে
১. সাবরা বিন মাবাদ জুহানী থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مُرُوا الصَّبِىَّ بِالصَّلاَةِ إِذَا بَلَغَ سَبْعَ سِنِينَ وَإِذَا بَلَغَ عَشْرَ سِنِينَ فَاضْرِبُوهُ عَلَيْهَا.
বাচ্চাদের সালাতের নির্দেশ দাও, যখন তাদের বয়স হয় সাত বছর এবং যখন তাদের বয়স দশ বছর হয় তখন এ জন্য তাদের প্রহার করো’ (আবূ দাউদ : ৪৯৪)

২. আমর বিন শুয়াইব তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مُرُوا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِينَ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِى الْمَضَاجِعِ.
তোমাদের সন্তানদের সাত বছর হলে তাদের সালাতের নির্দেশ দাও, তাদের বয়স দশ বছর হলে এ জন্য তাদের প্রহার করো এবং তাদের পরস্পরে বিছানা পৃথক করে দাও’ (আবূ দাউদ : ৪৯৫; মুসনাদ আহমদ : ৬৬৮৯)

৩. মু‘আয বিন আব্দুল্লাহ বিন হাবীব আল-জুহানী সূত্রে হিশাম বিন সাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,  
دَخَلْنَا عَلَيْهِ ، فَقَالَ لاِمْرَأَتِهِ: مَتَى يُصَلِّي الصَّبِيُّ؟ فَقَالَتْ: كَانَ رَجُلٌ مِنَّا يَذْكُرُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَ: إِذَا عَرَفَ يَمِينَهُ مِنْ شِمَالِهِ، فَمُرُوهُ بِالصَّلاَةِ.
আমরা হিশামের কাছে গেলামতিনি তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, শিশু কখন সালাত আদায় করবে? তিনি বললেন, আমাদের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলতেন তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলএর উত্তরে তিনি বলেন, ‘যখন সে তার ডানকে বাম থেকে আলাদা করতে পারবে, তখন তাকে সালাতের নির্দেশ দাও’ (আবূ দাউদ : ৪৯৭; বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ৫২৯৬)

অর্থাৎ শিশু যখন ডান ও বামের মাঝে পার্থক্য করতে পারবেআর সাধারণত এ যোগ্যতা সপ্তম বছরে পৌঁছার পরই হয়’ (আউনুল মাবুদ : ২/১৬৫)
৪. আব্দুল মালেক বিন রবীবিন সাবরা তার বাবা থেকে এবং তিনি দাদা সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,  
عَلِّمُوا الصَّبِىَّ الصَّلاَةَ ابْنَ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُ عَلَيْهَا ابْنَ عَشْرٍ.
বাচ্চাকে সালাত শিক্ষা দাও যখন সে সাত বছর বয়সী হয় এবং এর জন্য তাকে প্রহার করো যখন সে দশ বছর বয়সী হয়’ (তিরমিযী : ৪০৭; ইবন খুযাইমা : ১০০২; তাবরানী, আল-মুজামুল কাবীর : ৬৪১৮)

৫. আমর বিন শুয়াইব তার পিতা থেকে এবং পিতা দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مُرُوا أَبْنَاءَكُمْ بِالصَّلَاةِ لِسَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا لِعَشْرِ سِنِينَ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ.
সাত বছর বয়সে তোমাদের সন্তানদের সালাতের নির্দেশ দাও এবং দশ বছর বয়সে এর জন্য তাদের প্রহার করো আর তাদের পরস্পরের বিছানা পৃথক করে দাও’ (মুসনাদ আহমদ : ৬৭৫৬; মুসান্নাফ, আবদুর রাযযাক : ৭২৯৫)
৬. আবূ রাফে রাদিয়াল্লাহু তা‌আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
وَجَدْنَا صَحِيفَةً فِي قِرَابِ سَيْفِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَعْدَ ، وَفَاتِهِ فِيهَا مَكْتُوبٌ: بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، فَرِّقُوا بَيْنَ مَضَاجِعِ الْغِلْمَانِ وَالْجَوَارِي، وَالإِخْوَةِ وَالأَخَوَاتِ لِسَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوا أَبْنَاءَكُمْ عَلَى الصَّلاةَ إِذَا بَلَغُوا أَظُنُّهُ تِسْعًا.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর আমরা তাঁর তরবারীর খাপের মধ্যে একটি ছহীফা দেখতে পেলামতাতে লিখা আছে : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে, সাত বছর বয়সে ছেলেদের ও মেয়েদের এবং ভাইদের ও বোনদের বিছানা পৃথক করে দাওআর তোমাদের সন্তানদের সালাতের জন্য প্রহার করো যখন তারা (আমার ধারণা তিনি বলেছেন) নয় বছরে পৌঁছে’ (মুসনাদ বাযযার : ৩৮৮৫)
কাতারে বাচ্চাদের অবস্থান
আবূ মালেক আশআরী রাদিয়াল্লাহু তা‌আলা আনহু থেকে বর্ণিত,
أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ بِصَلاَةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم؟ قَالَ: فَأَقَامَ الصَّلاَةَ، وَصَفَّ الرِّجَالَ وَصَفَّ خَلْفَهُمُ الْغِلْمَانَ، ثُمَّ صَلَّى بِهِمْ فَذَكَرَ صَلاَتَهُ، ثُمَّ قَالَ : هَكَذَا صَلاَةُ - قَالَ عَبْدُ الأَعْلَى: لاَ أَحْسَبُهُ إِلاَّ قَالَ: صَلاَةُ أُمَّتِي -.
আমি কি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত সম্পর্কে বলব না? তিনি বলেন, অতপর তিনি সালাত কায়েম করেনপুরুষদের কাতার করেন, তাদের পেছনে বাচ্চাদের কাতার করেন এবং তাদের নিয়ে সালাত আদায় করেনঅতপর তিনি তাঁর সালাতের উল্লেখ করেন এবং বলেন, এমনই সালাতআব্দুল আলা বলেন, আমার মনে তিনি বলেছেন, (এমনই) আমার উম্মতের সালাত(আবূ দাউদ : ৬৭৭; তাবরানী)
হাদীসটি এ কথা প্রমাণ করে যে, পুরুষের কাতার হবে শিশুদের কাতারের আগে আর শিশুদের কাতার হবে নারীদের কাতারের আগেতবে শিশুর সংখ্যা দুই বা ততোধিক হলে এ কথা প্রযোজ্যঅন্যথায় শিশু একজন হলে সে পুরুষদের কাতারে ঢুকে পড়বেকাতারের পেছনে সে একা দাঁড়াবে নাইমাম সাবকী এই মত প্রদান করেছেন
সালাতের গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলা আমাদের ওপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেনআল্লাহ তাআলা আমাদের যা-ই নির্দেশ দিয়েছেন, তার সুফল ও উপকারিতা আমরা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে লাভ করিসালাতের উপকারিতার মধ্যে রয়েছে : আত্মিক প্রতিপালন, খাদ্য ও পানীয় দেহের বৃদ্ধি ঘটায়আর রূহের বৃদ্ধি ঘটে যখন সে তার স্রষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, রোজা, হজ, জিকির, দুআ ও ইবাদতের মাধ্যমে

আর সালাত হলো আত্মার পরিচর্যার সর্বোত্তম মাধ্যমএ কারণে আল্লাহ তাআলা আমাদের ওপর দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেনযাতে রূহের সঙ্গে তার রবের যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন থাকে এবং তা দুর্বল না হয়ে পড়েসাথে সাথে যাতে দেহ তার কামনা ও রিপুসহ ব্যক্তির ওপর বিজয়ী না হয়আল্লাহ তাআলা দেহকে সৃষ্টি করেছেন রূহের একটি বাহন হিসেবেরূহ যখন মানুষের দেহকে পরিচালনা করে তখন মানুষ সত্যিকার মানুষে পরিণত হয়পক্ষান্তরে রূহ যখন দেহের অনুগত হয়ে পড়ে মানুষ তখন তার মনুষ্যত্ব থেকে শূন্য হয়ে পড়ে

এখানেই সালাতের গুরুত্ব নিহিতসালাত তাই দীনের স্তম্ভ যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে সে যেন কাফির হয়ে পড়েএ থেকেই সন্তানকে সালাতের প্রশিক্ষণ দেয়ার গুরুত্ব বুঝা যায়সন্দেহ নাই এর গুরুত্ব কুরআন, লেখাপড়া ও হিসাব-নিকাশ শেখানোর চেয়ে বেশিপিতা-মাতারা কি এর গুরুত্ব অনুধাবন করেন? কত অভিভাবকই তো আছেন যারা তাদের সন্তানকে দশ বছর যাবৎ বিদ্যালয়ে আনা-নেয়া করেই ক্লান্তকখনো তারা তাদের হোমওয়ার্ক করাতে গিয়ে রাত্রি জাগরণও করেনঅথচ সন্তানদের সালাতের গুরুত্ব সম্পর্কে অধিকাংশ পিতা-মাতাই বেখবরঅনেক উদাসীন মুসলিম মনে করেন তার সন্তান বড় হলে ঠিকই সালাত আদায় করবেসাবালক না হওয়া পর্যন্ত তার আর সালাত কী! অথচ অধিকাংশ পিতা-মাতাকেই দেখা যায় তাদের সাবালক সন্তানের সালাতের ব্যাপারেও গাফেলতাদেরকে সালাতের জন্য কোনো কথাই বলেন নাআর সন্তানদের দেখা যায় বাবা-মার সঙ্গে সালাতের ব্যাপারে চালাকি ও ধুর্তামি করতেতারা মনে করে এখন কেন আমরা তো বুড়ো বয়সে তারা সালাত কায়েম করবো।  

সাত বছরে কেন সালাতের নির্দেশ?
সাত বছর বয়সে মানুষ তার জীবনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করেএকে বলা হয় শৈশবের সমাপ্তিকাল অথবা বুদ্ধির বিকাশকালএ পর্বের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছেযেমন :
১. বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় শিশুর বুদ্ধির দিগন্ত প্রসারিত হয়সে নিত্য অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং তার সামাজিক পরিবেশের ব্যপ্তি ঘটে
২. এ পর্বে শিশু প্রশংসা ও স্তুতি পছন্দ করেএ প্রশংসা ও ধন্যবাদ পেতে সে তার বড়দের (পিতামাতা, শিক্ষক) সন্তুষ্ট করতে চায়বোধসম্পন্ন শিশুকে যা মুরুব্বিদের সামনে বিনম্র করেসে তাদের অবাধ্য হয় নাবরং গুরুত্ব দিয়ে তাকে যা নির্দেশ দেয়া হয় সে তা বাস্তবায়ন করে
৩. জীবন সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় সম্পর্কে সে জানতে পারেধারণা পেতে থাকে সে চারিত্রিক মাপকাঠি, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি গঠন, দায়িত্ব বহনের জন্য প্রস্তুতি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণসহ প্রভৃতি বিষয়এ জন্যই এ পর্বকে সামাজিক অধ্যয়নের সবচে উপযুক্ত পর্ব হিসেবে গণ্য করা হয়

৪. সাত বছরের সমাপ্তি অবধি পিতা-মাতা পর্যন্তই শিশুর শিক্ষাগ্রহণ সীমিত থাকেপ্রাথমিক শিক্ষার প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত শিশু তার শিক্ষকের চেয়ে পিতামাতা থেকেই বেশি গ্রহণ করে থাকেবিদ্যালয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত শিশু তার পিতা-মাতার কাছ থেকে তার সব কৌতূহল নিবারণ করতে চায়ফলে তার পিতা-মাতা তাকে যা-ই বলেন, সেটাকে সে সঠিক বলেই মনে করেএ পর্বের পর শিশু ক্রমশ পিতামাতার সুদৃঢ় প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেঅষ্টম ও নবম বছরে পৌঁছে স্বার্থক শিক্ষকের প্রভাব পিতা-মাতার প্রভাবের সমান হয়ে যায়আর বয়োসন্ধির সূচনায় পিতামাতার কর্তৃত্ব থেকে তার স্বাধীন হয়ে যাওয়াই প্রমাণ করে যে সেদিনের শিশুটি আজ সাবালক হয়ে পড়েছে

৫. যেহেতু সপ্তম বছরে পদার্পণ করে শিশু ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে শুরু করে এবং প্রশংসা ও সুনাম কুড়ানোর মানসে পিতামাতাকে সন্তুষ্ট করতে সচেষ্ট হয়, তাই এ বয়সে যদি তাকে সালাতের নির্দেশ প্রদান করা হয়, তবে সে হৃষ্ট চিত্তে ও খুশি মনে নির্দেশ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবেপক্ষান্তরে একাদশ ও তার পরবর্তী বছরগুলোতে বিনা বাক্য ব্যয়ে পিতা-মাতার নির্দেশ মেনে নেয়াকে সে এখনো শিশু থাকার প্রমাণ বলে ভাবে, যা সে ছেড়ে আসতে চায়আর সাবালক হবার পর অনেক সন্তান তার পিতামাতার বিরুদ্ধাচারণকে তাদের যৌবন ও তারুণ্যের প্রতীক মনে করে

৬. শৈশবের সূচনা ও সমাপ্তিকাল অতিক্রমকালে শিশু চায় বড়দের অনুকরণ করে নিজেকেও বড় হিসেবে প্রকাশ করতেএ সময় তাকে ছোট বলা হলে সে ব্যথিত হয়এ কারণে আপনি তাদের দেখবেন তারা সতীর্থদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে যেতে এবং বড়দের মতো মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতে আগ্রহী থাকে

শিশুকে কখন সালাত শেখাতে হবে
বলাবাহুল্য যে শিশুকে সালাতের নির্দেশ দানের আগে তাকে তা শেখাতে হবেসে যা চেনে না আমরা তার নির্দেশ দেই কী করে? তাইতো ইবন আবিদ্দুনইয়া রহ. আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তা‌আলা আনহু সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে, তিনি শিশুদের সালাত শেখাতেন যখন তারা ডান থেকে বাম শিখতজুনদুব বিন আবী ছাবেত থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (সাহাবীদের) শিশুরা যখন বিশ পর্যন্ত গুনতে শিখতো তখনই তাঁরা তাকে সালাত শিক্ষা দিতেন(আল-ইয়াল : ১/৪৭৩)   

শিশু পঞ্চম বছরে পৌঁছলে তাকে অযূর ফরয, সালাতের রুকন শেখাতে হবেসূরা ফাতিহা মুখস্থ করাতে হবেরুকূও সিজদা শেখাতে হবেশিশু হলো আদর্শ অনুকরণকারীসে যখন তার পিতামাতাকে সালাত আদায় করতে দেখবে, তখন সেও তাদের অনুকরণ করতে শুরু করবেএ জন্য পিতামাতার উচিত নিজেদের সালাতকে শুদ্ধ করা এবং সুন্নত তরীকায় ও সঠিক পদ্ধতিতে সালাত আদায় করা আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে সঠিক পদ্ধতিতে নিজে সালাত আদায় করা এবং সন্তানদের সালাত শিক্ষা দেবার তাওফীক দান করুন। আমাদের সন্তানগুলোকে সাহাবীদের সন্তানের মতো আদর্শ মানুষ বানিয়ে দিন। আমীন।
আগত রামাদানে স্কুল পড়ুয়া শিশুদের নিয়ে অনলাইন প্রতিযোগিতাঃ


বিস্তারিতঃ http://www.muslimville.com/our-projects/ramadan-competition.html

be Organized by Holy Islam 


O.H.I 

For More Visit: