Tuesday, April 10, 2012

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আত্মরক্ষা


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-

 

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আত্মরক্ষা
হিজরতের সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মদীনার পানে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। মক্কাবাসীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ধরে নিয়ে আসার জন্য সর্বত্র গোয়েন্দা নিয়োগ করেছিল এবং এ ঘোষণাও দেয়া হয়েছিল যেযে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ধরে এনে দিতে পারবে তাকে একশত উট পুরস্কার দেয়া হবে। ফলে মক্কার প্রায় সকল মানুষইএ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
এমতাবস্থায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে চেনে এমন এক লোকের সাথে দেখা হয়ে যায়। কিন্তু ঐ ব্যক্তিটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনত না। আগত ব্যক্তিটি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলোআপনার সাথী লোকটি কেআবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু চাচ্ছিলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিচয় কেউ না পাকশত্রুরা তার অবস্থান সম্পর্কে অবগত না হোক। এমতাবস্থায় তিনি যদি সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিচয় দিয়ে দেন তবে মারাত্মক হুমকির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আর যদি পরিচয় না দেয়া হয় তাহলে অসত্য বলা ভিন্ন অন্য কোনো উপায় থাকে না। তাই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু অত্যন্ত কৌশলে বললেন, "তিনি আমার পথ প্রদর্শকযিনি আমাকে পথ দেখান।" [বুখারী: ৩৯১১] এখানে প্রশ্নকারী উত্তর শুনে ভাবলসাধারণত ভ্রমনের সময় যেমন পথপ্রদর্শক থাকে ঐ লোকটিও তাই। কিন্তু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু মনে মনে অর্থ করলেন যে তিনি আমায় দ্বীনের পথ দেখান, জান্নাতের এবং মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য অর্জনের পথ দেখান।
এখানে লক্ষ্যণীয় যেসরাসরি মিথ্যা বলা থেকে কিভাবে নিজেকে হিফাজত করা হয়েছে। এখানে এমন শব্দ বলা হয়েছে যাতে উপস্থিত সমস্যাও দূর হয়ে গেল এবং অসত্যও বলা হলো না। সার কথা এই যেকেউ যদি ইচ্ছা করে যে সে অসত্য বলবে না তাহলে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন।
মিথ্যা বলা পাপ এ বিষয়ে বাচ্চাদের মানসিকতা গড়ে তোলা।
বাচ্চাদেরকে সত্যবাদী করে গড়ে তুলতে হবেমিথ্যাকে যেন তারা ঘৃণা করে সেধরণের মানসিকতা গঠন করতে হবে। বাচ্চাদের সাথে এমনভাবে কথা বলতে হবে যেন তারা মিথ্যা বলার ইচ্ছাপোষণ থেকে বিরত হয়ে যায়। সত্যের প্রতি তাদের আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি হয়। এ জন্য বাচ্চাদের সামনে কেউ যেন কখনো মিথ্যার আশ্রয় না নেয়। কেননা বাচ্চারা মাতা পিতার অনুসরণ করে। মাতা পিতা মিথ্যা বললে বাচ্চারাও মিথ্যাকে স্বাভাবিক ভাববে। তারা মনে করবে মিথ্যা বলা কোনো অন্যায় নয়কোনো পাপ নয়।
বাচ্চাদেরকে ছোটবেলা থেকেই মিথ্যা থেকে দূরে রাখতে হবে। কেননা বাচ্চাদের হৃদয়ে যা অঙ্কিত হয় তা যেন পাথরে অনেপনীয়ভাবে অঙ্কিত হয়তা কখনো মুছে যায় না।
ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় নবুয়্যতের মর্যাদার পরে উচুস্থান হলো "সিদ্দীক" এর স্থান। সিদ্দীক শব্দের অর্থ হলো নিরেট সত্যবাদী। যার কথা ও কাজে বাস্তবতার বিরোধী কিছু থাকে নাথাকার সম্ভাবনা নেই।

কাজের মাধ্যমেও মিথ্যা প্রকাশ পায়
মিথ্যা যেমন মুখের কথায় প্রকাশ পায়তেমনি অনেক সময় কাজের মাধ্যমেও প্রকাশ পায়। অনেক সময় মানুষ এমন আচরণ করেযা বাস্তবে প্রকাশ্য মিথ্যা। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
(‌‌‌যা তাকে দেয়া হয়নি এমন বিষয় সম্পর্কে যদি কেউ (দেওয়া হয়েছে বলে) পরিতৃপ্তি প্রকাশ করে তাহলে সে যেন মিথ্যার পোশাক পরিধান করল।) [বুখারী: ৫২১৯মুসলিম: ২১২৯]
কোনো ব্যক্তি নিজের কাজের মাধ্যমে এমন ভাব প্রকাশ করে যা বাস্তবে সত্য নয়। তার উদ্দেশ্যবাস্তবে সে যা নয় তা কাজের মাধ্যমে বা অন্য কোন মাধ্যমে প্রকাশ করা। এটি গোনাহ। যেমন কোনো ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ধনী নয়। কিন্তু তার উঠা-বসা, চলা-ফেরায়আচার-আচরণে এমন অবস্থা প্রদর্শন করে যেসে অর্থশালীসম্পদশালী বলে প্রতিভাত হয়। একে বলে কাজের মাধ্যমে মিথ্যা প্রকাশ। এর বিপরীতে এমন ব্যক্তিও পাওয়া যায় যে বাস্তবে খাওয়া দাওয়ায় খুব ভালঅন্যান্য ক্ষেত্রেও খারাপ নয়। কিন্তু এমন ভাব প্রকাশ করে যেতার নিকট কোন কিছুই নেই। সে অত্যন্ত মুখাপেক্ষী ও দরিদ্র ব্যক্তি। অথচ সে ধনী। একে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাজের মিথ্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুতরাং কাজের ক্ষেত্রেও এমন কোনো আচরণ করা অনুচিত না যা অন্যের কাছে বাস্তবতাবিরোধী ধারণা সৃষ্টি করেযা মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত।
নামের পূর্বে বিভিন্ন উপাধির ব্যবহার
অনেককে দেখা যায়নিজের নামের পূর্বে এমনসব উপাধি লেখে যা বাস্তবসম্মত নয়। যেহেতু প্রচলন হয়ে আসছে এ জন্য কোন যাচাই ছাড়া লেখা শুরু করে দেয়। যেমন কেউ কারো নামের পূর্বে সৈয়দ লেখা আরম্ভ করে দিল। আসলে সে সৈয়দ নয়।
সৈয়দ তো বলা হয়পিতার বংশনামার দিক থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশধর হওয়া। অনেক মানুষ মায়ের দিক দিয়েও সৈয়দ লেখা আরম্ভ করে। এটি ভুল। যতক্ষণ পর্যন্ত সৈয়দ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হবেততক্ষণ তা লিখা উচিৎ নয়। আর নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি খুবই কঠিন।
নামের পূর্বে প্রফেসর বা মাওলানা লেখা
অনেককে দেখা যায় বাস্তবে সে প্রফেসর নয়কিন্তু নামের সাথে প্রফেসর লেখা আরম্ভ করে দেয়। মূলতপ্রফেসর একটি নির্দিষ্ট পরিভাষা যা বিশেষ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অথবা কেউ তার নামের পূর্বে শায়খ বা মাওলানা লিখা আরম্ভ করল। উদ্দেশ্যসে মাদরাসায় পড়ায় বা দ্বীনি কাজের সাথে জড়িত এ কথা প্রকাশ করা। অথচ সে কোনো দ্বীনি মাদারাসায় পড়া-লেখা করে নি। বর্তমানে অনেকেই আছে যারা নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা অর্জন করে নিঅথচ নামের পূর্বে মাওলানা লিখেশায়খ লিখে। এটা বাস্তবতার বিরোধী হওয়ায় মিথ্যা বলে গণ্য হবে। সমাজে একে মিথ্যা মনে করা হয় না। এবং গোনাহের কাজও মনে করা হয় না। এজন্য আমাদের এ সমস্ত অসত্য শব্দ প্রয়োগ থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ সমস্ত গোনাহ হতে হেফাজত করুন। আ-মী-ন।


মূলঃশামসুল হুদা আযীযুল হক
Collected From: http://www.islamhouse.com/


be Organized by Holy Islam 

O.H.I 

For More Visit: