Monday, June 25, 2012

শাবান মাসঃ বিবিধ আলোকপাত



السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

শাবান মাসঃ বিবিধ আলোকপাত


শাবান হিজরী সালের অষ্টম মাসের নাম। এই নামকরণের কতিপয় কারণ পাওয়া যায়। যথা :
·        এ মাসে আরবরা দলবদ্ধ হয়ে পানির অনুসন্ধানে ছড়িয়ে পড়ত।
·        যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য দলবদ্ধ হত।
শাবান মাসে রোযা পালন
عن عائشة رضي الله عنها قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصوم حتى نقول لا يفطر، ويفطر حتى نقول لا يصوم، وما رأيت رسول الله استكمل صيام شهر إلا رمضان، وما رأيته أكثر صياما منه في شعبان. رواه البخاري:১৮৩৩ومسلم : ১৯৫৬
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এ মাসে এতো বেশি পরিমাণে রোযা পালন করতেন যে, আমাদের মনে হত, তিনি রোযা ত্যাগ করবেন না। আবার যখন রোযা ত্যাগ করতেন, আমাদের মনে হত, এবার আর রোযা পালন করবেন না। এবং আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামকে রমযান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে পরিপূর্ণ রোযা পালন করতে দেখিনি ; এবং শাবান মাসের মত এতো বেশি পরিমানে রোযা অন্য কোন মাসে পালন করতে দেখিনি। বুখারী : ১৮৩৩, মুসলিম : ১৯৫৬

http://www.zamzamacademy.com/wp-content/uploads/2011/07/Shaban.jpg
ওলামায়ে কিরামের একটি দল, যাদের মাঝে আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারকও রয়েছেন, প্রাধান্য দিয়েছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসে পরিপূর্ণ মাস রোযা পালন করেন নি। তবে অধিকাংশ সময় রোজা পালন করেছেন। এ পক্ষের জোড়ালো প্রমাণ পাওয়া যায়
عن عائشة رضي الله عنها قالت: ما علمته تعني النبي صلى الله عليه وسلم صام شهراً كله إلا رمضان. صحيح مسلم.

আয়েশা রা.-এর বর্ণনা থেকে জানা যায়, তিনি বলেনআমার জানা মতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযান ছাড়া অন্য কোন মাসে পুরো মাস রোযা পালন করেন নি।  (মুসলিম)
আয়েশা রা. হতে অপর একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে
ما رأيته صام شهرا كاملا منذ قدم المدينة إلا أن يكون رمضان.
মদিনায় গমন করার পর রমযান ছাড়া অন্য কোন মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামকে পুরো মাস রোযা পালন করতে আমি দেখিনি।
وفي الصحيحين عن ابن عباس قال: ما صام رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا كاملا غير رمضان.
ছহীহ বুখারী এবং মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনরমযান ছাড়া অন্য কোন মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরো মাস রোযা রাখেন নি। বুখারী : ১৯৭১, মুসলিম : ১১৫৭
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস স্বয়ং রমযান ব্যতীত অন্য কোন মাসে পুরো মাস রোযা পালনকে অপছন্দ করতেন।
قال ابن حجر رحمه الله: كان صيامه في شعبان تطوعاً أكثر من صيامه فيما سواه وكان يصوم معظم شعبان.
ইবনে হাজার রহ. বলেনশাবান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম-এর রোযা পালন ছিল নফল স্বরূপ। তবে, অন্যান্য মাস হতে এ মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোযা পালন করতেন।
عن أسامة بن زيد رضي الله عنهما قال: قلت يا رسول الله لم أرك تصوم من شهر من الشهور ما تصوم من شعبان، فقال: ذاك شهر تغفل الناس فيه عنه، بين رجب ورمضان، وهو شهر ترفع فيه الأعمال إلى رب العالمين، وأحب أن يرفع عملي وأنا صائم. رواه النسائي، صحيح الترغيب والترهيب ص ৪২৫، وفي رواية لأبي داود ২০৭৬ قالت كان أحب الشهور إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم  أن يصومه شعبان ثم يصله برمضان. صححه الألباني، صحيح سنن أبي داود: ২/৪৬১
উসামা বিন যায়েদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম)! শাবান মাসে আপনি অধিকহারে রোযা পালন করেন ; অন্য কোন মাসে তো এরূপ দেখি না ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম উত্তরে বললেন : শাবান, রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী মাস, এ মাসের ফযিলতকে মানুষ উপেক্ষা করে। এই মাসে বিশ্ব প্রতিপালকের কাছে আমল পেশ করা হয়। আর আমি পছন্দ করি যে, রোযা পালনাবস্থায় আমার আমল পেশ করা হোক। নাসায়ী, ছাহীহ তারগীব তারহীব পৃষ্ঠা ৪২৫
সূনানে আবু দাউদের এক বর্ণনায় এসেছে, শাবান মাসে রোযা রাখা এবং রমযানের সাথে মিলিয়ে নেয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের অত্যন্ত প্রিয় ছিল। ছহীহ সুনানে আবু দাউদ ৪৬১/২
আল্লামা ইবনু রাজাব র. বলেন : শাবান মাসে রোযা পালন আসহুরুল হুরুমেরনিষিদ্ধ পবিত্র মাসচেয়েও শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম নফল হল রমযান মাসের নিকটবর্তী দিবসের রোযা। আগে হোক কিংবা পরে।  ফরয রোযার তুলনায় এ সকল রোযার স্থান ফরজ নামাযের আগে-পরে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহর অনুরূপ। এগুলো ফরয সমূহের অসম্পূর্ণতাকে পরিপূর্ণতা দান করে। রমযানের আগে-পরে নফল রোযার কাজও তাই। সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ যেমন অন্যান্য সাধারণ নফল হতে শ্রেষ্ঠ তেমনিভাবে রমযান মাসের আগে-পরের রোযা অন্য সময়ের নফল রোযা হতে শ্রেষ্ঠ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর বাণী :
شعبان شهر يغفل الناس عنه بين رجب ورمضان.
শাবান মাস রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী হওয়ার কারণে মানুষ এ মাস সম্পর্কে উদাসীন থাকে।
এ মাসের ফযিলতকে মানুষ উপেক্ষা করে, মাসটি রাজাব ও রমযানের মধ্যবর্তী মাস হওয়ার ফলেএর মাধ্যমে মূলত বুঝানো হচ্ছে, শাবান মাসকে যেহেতু দুটি সম্মানিত মাস বেষ্টন করেছে, সে জন্য মানুষ ঐ দুই মাসের আমলে ব্যস্ত হয়ে শাবান মাসকে অবহেলা করে। পক্ষান্তরে, অনেক মানুষ মনে করে, শাবান মাসের রোযার তুলনায় রজব মাসের রোযার মর্যাদা অধিক। কারণ, রজব হচ্ছে নিষিদ্ধমাস। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি এমন নয়।
পূর্বের হাদীস থেকে আমরা আরো বুঝতে পারি, কতিপয় স্থান, সময়, এবং ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, প্রসিদ্ধ হলেও, এর বাইরেও শ্রেষ্ঠ বিষয় থাকতে পারে।
এতে আরো প্রমাণ করে, মানুষ যে সব সময়ের ব্যাপারে উদাসীন ঐ সব সময়কে এবাদতের মাধ্যমে কাজে লাগানো পছন্দনীয়। যেমন, সালাফেসালেহীনের একটি জামাত মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে আমল করা খুব পছন্দ করতেন এবং তারা বলতেন, এ সময়টি মানুষের কাছে উপেক্ষিত। এমনিভাবে, বাজারে আল্লাহকে স্মরণ করা। কারণ, সেখানে মানুষ আল্লাহর যিকির হতে উদাসীন থাকে।
উদাসীন সময়গুলোতে আল্লাহর বন্দেগীর মাঝে অনেক উপকার রয়েছে। তন্মধ্যে
(১)      নেক কাজে গোপনীয়তা রক্ষা। নফল ইবাদতে গোপনীয়তা উত্তম, বিশেষত: রোযার ক্ষেত্রে। কারণ, এ হচ্ছে আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে গোপন বিষয়। এজন্য বলা হয়: রোযা পালনে লৌকিকতা প্রকাশ পায় না। কতিপয় সালাফে সালেহীন বছরের পর বছর রোযা পালন করতেন, অথচ কেউ জানতো না। বাড়ি হতে বাজারের উদ্দেশ্যে বের হতেন, হাতে দুটুকরা রুটিপথে তা দান করে দিতেন এবং রোযা পালন করতেন। পরিবারের লোক মনে করত তিনি খেয়েছেন। আর বাজারের লোক মনে করত তিনি বাড়িতে খাবার গ্রহণ করে এসেছেন। সালাফে সালেহীনের আরো পছন্দ ছিল যে, রোযাদার ব্যক্তি তার গোপন বিষয় প্রকাশ না করুক।
عن أبن مسعود أنه قال: إذا أصبحتم صياما فأصبحوا مدهنين وقال قتادة : يستحب للصائم أن يدهن حتى تذهب عنه غبرة الصيام.
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রোযার দিবসে তোমাদের ভোর যেন শরীরে তৈল মর্দনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। কাতাদাহ বলেন: রোযাদার ব্যক্তির পছন্দনীয় কাজ হল, সে তার শরীরে তৈল মালিশ করবে যাতে রোযার কারণে সৃষ্ট মলিনতা দূর হয়ে যায়।
এমনিভাবে অবহেলিত বা অমনোযোগী অলস সময়ে নেককাজ নিজের কাছে কষ্টকর মনে হয়। আর আমল শ্রেষ্ঠ হওয়ার কারণগুলোর মাঝে একটি হল অনিচ্ছা সত্ত্বেও নেক কাজ করা।
عن معقل بن يسار قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: العبادة في الهرج كالهجرة إلي. رواه مسلم: ২৯৮৪
মাকাল বিন ইয়াসার রা.  থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: কষ্টের মাঝে ইবাদত আমার নিকট হিজরতের সমতুল্য। মুসলিম : ২৯৮৪।
কারণ, তখন মানুষ প্রবৃত্তির পুজায় লিপ্ত থাকে। ঐ সময় নেক আমলের সাথে সম্পৃক্ত থাকা মানেই হচ্ছে সে একটি কঠিন কাজ সম্পাদন করছে।
শাবান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিক পরিমাণ রোযা পালনের কারণ সম্পর্কে বিদ্বানদের বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়।
(১)      সফর ও অন্যান্য ব্যস্ততায় প্রতি মাসের তিনটি নফল রোযা পালনে বিঘœ সৃষ্টি হত। তাই ঐ সব রোযা শাবান মাসে কাযা করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন নফল শুরু করলে তা পূর্ণ করতেন। কোন কারণে ছুটে গেলে পরে কাযা করতেন।
(২)     রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ রমযানের রোযা শাবানে কাযা করতেন। এ জন্য তিনিও তাদের সাথে নফল রোযা পালন করতেন। এরূপ একটি বর্ণনা আয়েশা রা. থেকে পাওয়া যায়, তিনি বলেন : তিনি রমযানের রোযার কাযা শাবান মাস পর্যন্ত বিলম্ব করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় অন্য সময় তা সম্ভব হয়ে উঠত না। 
(৩)     সাধারণত মানুষ এ মাসের ফযিলত সম্পর্কে উদাসীন থাকে, তাই তাদের শিক্ষাদানের নিমিত্তে রোযা পালন করতেন। এ মতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কারণ, এ মতের পক্ষে উসামা বিন যায়েদের পূর্বে উল্লেখিত হাদিসের সমর্থন পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়েছে : এটা ঐ মাস যা সম্পর্কে মানুষ উদাসীন থাকে, রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী মাস। নাসায়ী, ছহীহ তারগীব তারহীব পৃষ্ঠা : ৪২৫
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শাবান মাস আসত তখন থেকে যাওয়া নফল রোযাগুলো আদায় করতেন, যাতে রমযান মাস আসার পূর্বেই নফল রোযাগুলো পরিপূর্ণ হয়। যেমনটি তিনি নফল নামায ও কিয়ামুল লাইল কারণ বশতঃ ছুটে গেলে কাযা করতেন। আয়েশা রা. এ সুযোগ ব্যবহার করে ঋতুস্রাবের কারণে রমযান মাসের যে সব রোযা বাদ যেত তা কাযা করতেন। অন্য সময় রাসূলের সাথে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন বলে সম্ভব হতো না।
অতএব, যাদের উপর অতীত রমযান মাসের রোযা বাকী আছে তার কাযা আদায়ের ব্যাপারে সতর্ক করা, সতর্কত হওয়া প্রয়োজন। যে ব্যক্তি রমযান মাসের পূর্বে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কাযা আদায় করে নি, সে তাওবাহসহ কাযা আদায় করবে এবং প্রত্যেক দিনের জন্য একজন করে মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করবে। এটা ইমাম মালেক, ইমাম শাফী, ইমাম আহমদ রহ.-এর মত।
এমনিভাবে, শাবানে রোযা রাখা দ্বারা অন্য উপকারও আছে। তাহল, শাবানে রোযা পালনের মাধ্যমে রমযান মাসের রোযা পালনের অনুশীলন হয়। এতে রমযান মাসে রোযা পালনে কষ্ট অনুভব হয় না।  বরং, এর মাধ্যমে রোযা রাখার অনুশীলন ও অভ্যাস সৃষ্টি হয়। ফলে রমযান মাসে রোযা পালনে উৎসাহ ও আনন্দ বৃদ্ধি পায়।
শাবান যেহেতু রমযানের ভূমিকা, তাই রমযানের কতিপয় কাজ এ মাসেও করা যায়রোযা পালন, কোরআন তিলাওয়াত, দান-ছদকা ইত্যাদি। সালমা বিন সোহাইল বলতেনশাবান তিলাওয়াতকারীদের মাস। হাবীব বিন আবু সাবেত শাবান মাস সমাগত হলে বলতেন : এটা তিলাওয়াতকারীদের মাস। আমর বিন কায়েস আল মুলায়ী শাবান মাসে দোকান বন্ধ রাখতেন এবং কোরান তিলাওয়াতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করতেন।
শাবানের শেষ দিকে রোযাপালন
ثبت في الصحيحين عن عمران بن حصين رصي الله عنه، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لرجل هل صمت من سرر هذا الشهر شيئا. قال: لا، قال: فإذا أفطرت فصم يومين
ইমরান বিন হোসাইন থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন : এই মাসের শেষ দিকে কি কোন রোযা পালন করেছ ? সে বলল, না। উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যদি রোযা ভঙ্গ করে থাক তাহলে অন্তত দুই দিন রোযা পালন কর। বুখারী, মুসলিম।
وفي رواية البخاري: أظنه يعني رمضان.
বোখারির বর্ণনায় এসেছে, বর্ণনাকারী বলেন: আমার ধারণা এতে রমযান মাস উদ্দেশ্য ছিল।
وفي رواية لمسلم هل صمت من سرر شعبان شيئا؟
অর্থ : মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে তুমি কি শাবানের শেষ অংশে কোন রোযা পালন করেছ ? বুখারী-২০০/৪, মুসলিম-১১৬১
سرار  সারার শব্দের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। প্রসিদ্ধ মত হলো মাসের শেষাংশকে সারার বলা হয়। মাসের শেষাংশে চাঁদ গোপন থাকায় আরব গণ মাসের শেষ অংশকে سرار বলতো। কারো আবু হুরায়রা রা. এর নিম্ন বর্ণিত হাদিসে প্রশ্ন জাগতে পারে-
عن أبي هريرة رصي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم  قال : لا تقدموا رمضان بيوم أو يومين، إلا من كان يصوم فليصمه.
অর্থ- আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন রমযানের এক বা দুই দিন পূর্বে রোযা পালন শুরু করো না। তবে যে আগে থেকেই ঐ দিন রোযা রাখে (কাকতালীয়ভাবে ঐ দিন যদি রমযানের পূর্ব দিন হয়) তবে কোন অসুবিধা নেই। বুখারী- ১৯৮৩, মুসলিম- ১০৪৮২। উভয় হাদিসের মাঝে কি ভাবে সমন্বয় করা হবে ?
বেশিরভাগ হাদিস বিশারদ বলেছেন- যে ব্যক্তিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি জানতেন এ ব্যক্তির অভ্যাস ছিল এ দিনগুলোতে রোযা পালন করার অথবা তার মানত ছিল তাই রোযা পালন করতে বলেছেন।
এ মাসয়ালার বিষয় বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। সংক্ষেপে বলা যায় শাবান মাসের শেষের দিন রোযা পালনের তিন অবস্থা-
(১) সতর্কতা মূলক রমযানের নিয়তে শাবানের শেষ দিন রোযা রাখা হারাম।
(২) মানতের নিয়তে অথবা রমযানের কাযা অথবা কাফ্ফারার রোযা পালন জামহুর ওলামা জায়েয বলেছেন।
(৩) সাধারণ নফল নিয়তে রোযা পালন অপছন্দনীয়। এটা ঐ সকল বিদ্বানদের মত, যারা বলেছেন শাবান ও রমযানের মাঝে রোযা না রেখে খাবার গ্রহণের মাধ্যমে প্রার্থক্য করার জন্য। যদিও এ তারিখে রোযা পালন তার পূর্ব অভ্যাসের সাথে মিলে যায়। এমতের পক্ষে ইমাম হাসান রহ. রয়েছেন।
ইমাম মালেক ও তার অনুসারীগণ অনুমতি দিয়েছেন এবং ইমাম শাফেয়ী আওযায়ী আহমদ প্রমুখ পূর্ব অভ্যাসগত হলে জায়েয বলেছেন। অন্যথায় নয়।
সংক্ষেপে বলা যায়, আবু হুরায়রার হাদীসের উপর অনেক আলেমই আমল করেন, এবং যার পূর্ব থেকে অভ্যাস নেই, সে রমযানের এক দুই দিন পূর্বে সতর্কতামূলক রোযা পালন করাকে তারা অপছন্দ করেন। কারো প্রশ্ন জাগতে পারে যাদের অভ্যাস নেই তাদের জন্য কেন নিষেধ করা হলো ?
উত্তর(১) যাতে রমযানের রোযার সংখ্যা বৃদ্ধি না হয়। এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্দেহের দিন রোযা পালন করতে নিষেধ করেছেন এবং রোযা পালনকারীকে তার অবাধ্য বলে ঘোষনা করেছেন। সন্দেহের দিন কাকে বলা হয় ?
(ক) ঐ দিনকে, যাকে মানুষ সন্দেহ করে রমযান না কি শাবানের দিন। (খ) যে ব্যক্তি সংবাদ দিয়েছে সে চাঁদ দেখেছে কিন্তু মানুষ তার কথা গ্রহণ করে নি, তার জন্য সন্দেহের দিন। (গ) মেঘলা দিনকে অনেকে সন্দেহের দিন বলেছেন এবং রোযা পালনে নিষেধ করেছেন। এটা বেশীর ভাগ বিদ্বানদের মত।
(২) ফরজ ও নফল রোযার মাঝে পৃথক করার জন্য। ফরজ ও নফলের মধ্যে পার্থক্য করা শরীয়তসম্মত। এজন্য ঈদের দিন রোযা পালন হারাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরজ নামাযকে অন্য কোন নামাযের সাথে মিশ্রণ করতে নিষেধ করেছেন। সালাম অথবা কথার মাধ্যমে পর্থক্য করতে বলেছেন। বিশেষত ফজরের পূর্বেকার সুন্নাত। এ জন্য ফজরের সুন্নাত ঘরে পড়া এবং আদায়ের পরে কিছুক্ষণ শয়ন করা বৈধ।
 ولما رأى النبي صلى الله عليه وسلم رجلا يصلي وقد أقيمت صلاة الفجر، قال له : آلصبح أربعا. رواه البخاري: ৬৬৩
অর্থ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন এক ব্যক্তি নামায পড়ছে। এ দিকে ফজর নামাযের ইকামত হচ্ছে। রাসূল বললেন : ফজর কি চার রাকাত ? বুখারী-৬৬৩
অনেক অজ্ঞ লোক মনে করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের পূর্বে রোযা রাখার নিষিদ্ধের আদেশ দ্বারা উদ্দেশ্য খাবার গ্রহণের জন্য সুযোগ দান। যাতে রমযান এসে খাবার গ্রহণের পথ বন্ধ করার পূর্বে আত্মা তার চাহিদা পুরণ করতে পারে। যারা এটা ধারণা করে, তাদের ধারণা ভুল।
আল্লাহ ভালো জানেন।


লেখক : কামাল উদ্দিন মোল্লা
http://www.islamhouse.com/ 




be Organized by Holy Islam 

O.H.I 

Wednesday, June 20, 2012

হিরাক্লিয়াস ও আবু সুফিয়ান


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা


হিরাক্লিয়াস ও আবু সুফিয়ান


আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন যে আবু সুফিয়ান ইবনে হারব আমাকে জানালেন যে,

তিনি যখন কুরাইশদের এক কাফেলা নিয়ে গিয়েছিলেন, হিরাক্লিয়াস তার কাছে এক সংবাদবাহক পাঠালেন। তারা শাম দেশে (সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, লেবানন, জর্ডান) ব্যবসা করছিলেন, এবং সেই সময়ে আল্লাহর রাসূলের সাথে আবু সুফিয়ান ও কুরাইশদের সন্ধি চুক্তি ছিল।

অতএব আবু সুফিয়ান ও তার সঙ্গীরা ইলিয়াতে (জেরুসালেমে) গেলেন হিরাক্লিয়াসের সাথে দেখা করতে। হিরাক্লিয়াস তাকে দরবারে ডেকে পাঠালেন যেখানে সব উচ্চ পদমর্যাদার রাজপুরুষেরা ছিল।

তিনি তার দোভাষীকে ডেকে পাঠালেন, যে হিরাক্লিয়াসের প্রশ্ন শুনে তাদেরকে শোনাল: তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তির সবচেয়ে নিকটাত্মীয় কে যে নবী বলে দাবী করেছে?

আবু সুফিয়ান উত্তর দিলেন: আমি তাঁর নিকটাত্মীয়।

হিরাক্লিয়াস আদেশ দিলেন: একে আমার কাছে আন এবং তার সঙ্গীদের তার পিছনে দাঁড় করিয়ে দাও।

হিরাক্লিয়াস তার দোভাষীকে বললেন আবু সুফিয়ানের সঙ্গীদের বুঝিয়ে দিতে যে, তিনি ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আমাকে কিছু প্রশ্ন করবেন, যদি আমি মিথ্যা বলি তাহলে সঙ্গীরা যেন তার প্রতিবাদ করে।



আবু সুফিয়ান আরো যোগ করলেন: আল্লাহর কসম, যদি আমি আমার সঙ্গীরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে এই ভয় না করতাম, নবী সম্পর্কে আমি মিথ্যা বলতাম।

প্রথম যে প্রশ্ন তিনি তাঁর সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন তা ছিল: তোমাদের মাঝে তাঁর বংশ মর্যাদা কিরূপ?”

আমি উত্তর দিলাম, তিনি আমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান।

হিরাক্লিয়াস আরো জিজ্ঞাসা করলেন: তোমাদের মধ্যে থেকে তাঁর পূর্বে আর কেউ কি নবুওয়াতের দাবী করেছে?”

আমি উত্তর দিলাম: না।  তিনি বললেন: তার পূর্বপুরুষের কেউ কি রাজা ছিল?”  আমি বললাম: না।

হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞাসা করলেন: তাঁর অনুসরণকারীরা কি ধনী না দরিদ্র?”

আমি উত্তর দিলাম: দরিদ্ররাই তাঁর অনুসরণ করে।

তিনি বললেন: তার অনুসারীদের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে?”

আমি উত্তর দিলাম: তারা বাড়ছে। 

তিনি তখন জিজ্ঞাসা করলেন: তার ধর্ম গ্রহণকারীদের কেউ কি এই ধর্মে অখুশী এবং পরে পরিত্যাগ করেছে?”

আমি উত্তরে বললাম: না।”  হিরাক্লিয়াস বললেন: তোমরা কি তাঁর দাবীর পূর্বে তাঁকে কখনও মিথ্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছো?” আমি বললাম: না।”  হিরাক্লিয়াস বললেন: তিনি কি তাঁর প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন?” আমি উত্তর দিলাম: না। আমরা তাঁর সাথে চুক্তিবদ্ধ, তবে আমরা জানি না এ ব্যাপারে তিনি কি করবেন।

আমি তাঁর বিরুদ্ধে বলার কোন সুযোগ পাইনি তখন ছাড়া যখন হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞাসা করলেন: তোমরা কি তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছ কখনো?” আমি উত্তর দিলাম, হ্যাঁ।
তখন তিনি বললেন, এই যুদ্ধের ফলাফল কি ছিল?” আমি বললাম, কখনো তিনি জিতেছেন, কখনো আমরা।
হিরাক্লিয়াস বললেন, তিনি তোমাদের কি করতে বলে থাকেন?”

আমি বললাম, তিনি আমাদের শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদাত করতে বলেন, তাঁর সাথে আর কাউকে ইবাদাতে শরীক করতে নিষেধ করেন, এবং আমাদের পূর্বপুরুষেরা যা বলেছেন তা সবই পরিত্যাগ করতে বলেন। তিনি আমাদের সালাত আদায় করতে বলেন, সত্য কথা বলতে, পবিত্র থাকতে ও আত্মীয়স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করতে বলেন।

হিরাক্লিয়াস দোভাষীকে বললেন পরবর্তী বক্তব্য আমাকে জানিয়ে দিতে: আমি তোমাকে তাঁর বংশমর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তুমি বলেছ যে তিনি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান। আসলে প্রত্যেক নবীই নিজ জাতির সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকেই হয়ে থাকেন। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি তোমাদের মধ্যে আর কেউ এ দাবী করেছে কিনা, তোমার উত্তর ছিল না বোধক। যদি উত্তর হ্যাঁ বোধক হতো, আমি সন্দেহ করতাম যে এই লোকটি তার পূর্বের লোকের দাবীর অনুসরণ করছে।

তারপর আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি যে তার পূর্বপুরুষেরা রাজা ছিল কিনা। তোমার উত্তর না বোধক ছিল ; এবং যদি তা হ্যাঁ বোধক হতো, আমি মনে করতাম সে তার রাজত্ব ফিরে পেতে চাইছে। আমি আরো জিজ্ঞাসা করেছি তার দাবীর পূর্বে কখনো সে মিথ্যাবাদী হিসাবে অভিযুক্ত হয়েছে কিনা। এবং তোমার উত্তর ছিল না বোধক। সুতরাং আমি অবাক হচ্ছি কিভাবে একটি লোক আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে যে কখনো মানুষের সম্পর্কে কোন মিথ্যা বলেনি।

আমি তারপর তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি তাকে ধনীরা বা দরিদ্ররা, কারা অনুসরণ করে। তুমি বলেছে দরিদ্ররাই তাঁর অনুসারী, এবং আসলে নবীদের অনুসরণকারীরা দরিদ্র শ্রেণী থেকেই হয়ে থাকে। তারপর আমি জিজ্ঞাসা করেছি তাঁর অনুসারীরা সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে, তুমি উত্তর দিয়েছ বাড়ছে, এবং সত্য হচ্ছে যে এটাই সত্য বিশ্বাসের লক্ষণ, যতক্ষণ না তা সবদিকে পরিপূর্ণ হবে। আমি আরো জিজ্ঞাসা করেছি এমন কেউ আছে কি না, যে তাঁর ধর্ম গ্রহণ করে অখুশী হয়ে তা পরিত্যাগ করেছে। তোমার উত্তর ছিল না বোধক, এবং আসলে এটাই সত্য বিশ্বাসেরই লক্ষণ, যখন তার আনন্দ অন্তরে প্রবেশ করে এবং তা সম্পূর্ণভাবে সত্তায় মিশে যায়।

আমি জিজ্ঞাসা করেছি তিনি কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন কিনা, তুমি না বোধক উত্তর দিয়েছ এবং সত্যিই নবীরা কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেন না। তারপর আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি তিনি তোমাদের কি করতে বলেন। তুমি উত্তরে বলেছ যে তিনি তোমাদেরকে শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদাত করতে বলেন এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করতে এবং মূর্তিপূজা করতে নিষেধ করেন এবং সালাত আদায় করতে, সত্য বলতে, অবৈধ উপায়ে ব্যভিচার না করতে বলেন।

যদি তুমি যা বলেছ তা সত্যি হয়, তিনি খুব শীগগিরই আমার পায়ের নীচের এই ভূমি দখল করবেন এবং আমি কিতাব থেকে জানি যে তাঁর আসার সময় হয়েছে, তবে আমি জানি না যে তিনি তোমাদের মধ্য থেকে আসবেন, এবং আমি যদি নিশ্চিত হতে পারতাম যে আমি তাঁর কাছেই যাচ্ছি, তাহলে আমি এখনি তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য যেতাম এবং যদি আমি তাঁর সাথে থাকতাম, আমি নিশ্চয়ই তাঁর পা ধুয়ে দিতাম।
*[অন্য রেওয়াতে আরও এসেছে, আবু সুফিয়ান মুহাম্মদ সম্পর্কে এমন কিছু বলতে চাচ্ছিল যাতে করে হিরাক্লিয়াস এর কাছে তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। তিনি রাসুলল্লাহ সাঃ এর মেরাজের দাবীর ব্যাপারটা বলতে চাইলেন। তার দৃষ্টিতে এটা ছিল একটা ডাহা মিথ্যা কথা। তিনি ভেবেছিলেন এই ঘটনাটি বললে সকলেই মুহাম্মদ সাঃ কে মিথ্যাবাদী বলে মনে করবে। তিনি সুযোগ বুঝে দরবারে উক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করলেন।

ইলিয়ার নামের একজন যাজক যিনি বাইতুল মুকাদ্দাসের সর্বপ্রধান যাজক, তিনি দরবার হলেই উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বললেন, আমি সে রাত্রি সম্পর্কে জানি!
দরবারের সকলেই তার দিকে কৌতুহলের দৃষ্টিতে তাকাল। রোম সম্রাট বললেন আপনি এই সম্পর্কে যা জানেন বলুন।

তিনি বললেন, আমার অভ্যাস ছিল যে, বাইতুল মুকাদ্দাসের সব দরজা বন্ধ না করা পর্যন্ত আমি য্যা গ্রহণ করতাম না। এক রাত্রিতে আমি আমার অভ্যাস অনুযায়ী সব দরজা বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু একটি দরজা বন্ধ করা আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হল না। আমি আমার কর্মচারীদের কে ডেকে এনে সম্মিলিতভাবে দরজাটি বন্ধ করতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমাদের সকলের পক্ষে ও দরজাটি বন্ধ করা সম্ভব হল না। দরজাটি এমন ভাবে শক্ত অবস্থান করছিল যেন আমরা কোন পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা দিচ্ছি।

আমরা কর্মকার এনে দরজাটি বন্ধ করতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কর্মকাররা বলল, দরজার উপরে প্রাচীরের বোঝা চেপে গেছে। এখন ভোর না হওয়া পর্যন্ত দরজাটি বন্ধ করার কোন উপায় নাই। আমি বাধ্য হয়ে ফিরে আসলাম আর দরজাটি খোলাই থেকে যায়।

সকাল হওয়া মাত্র আমি বাইতুল মোকাদ্দাসে আসি। দেখি দরজাটির পার্শ্বে একটি প্রস্তর খন্ড পড়ে রয়েছে তাতে ছিদ্র করা ছিল। মনে হয়েছিল যেন এখানে কোন জন্তু বাঁধা হয়েছিল। তখন আমি আমার সঙ্গীদের কে বললাম আল্লাহ তায়ালা হয়তবা এ কারণেই সে রাতে এই দরজাটি বন্ধ করতে দেন নি। হয়তবা সে রাতে আল্লাহ তায়ালার কোন প্রিয় বান্দা এসেছিলেন।]*

হিরাক্লিয়াস তারপর দাহিয়া কর্তৃক আনীত বুরার গভর্নরের কাছে প্রদত্ত আল্লাহর রাসূলের চিঠিটি আনতে বললেন। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল নিম্নরূপ:
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে। এই চিঠিটি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে বাইজানটাইনের শাসনকর্তা হিরাক্লিয়াসের প্রতি। তার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক যে সঠিক পথ অনুসরণ করে। তারপর আমি আপনাকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানাই, যদি আপনি মুসলিম হন আপনি নিরাপদ, এবং আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দেবেন, এবং যদি আপনি দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেন আপনি আপনার অধীনস্তদের পথভ্রষ্টতার পাপের ভাগী হবেন: হে আহলে কিতাব! সে কথার উপরে আস, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো উপাসনা করি না, কোন কিছুকেই তাঁর অংশী করি না এবং আমাদের কেউ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাকেও প্রতিপালক রূপে গ্রহণ করে না। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, ‘আমরা আত্মসমর্পণকারী, তোমরা সাক্ষী থাক।
আবু সুফিয়ান তারপর যোগ করল, যখন হিরাক্লিয়াস তার বক্তব্য শেষ করলেন এবং চিঠিটি পড়লেন, দরবারে বিরাট শোরগোল শুরু হলো। তাই আমাদেরকে দরবার থেকে বের করে নেওয়া হলো। আমি আমার সঙ্গীদেরকে বললাম যে আবি-কাবশার (নবীকে হেয় করার জন্য ব্যবহৃত ডাক নাম) ঘটনাটি এত লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে যে বাইজানটাইনের বাদশাও তার ভয়ে ভীত, তখন থেকে আমি নিশ্চিত হতে শুরু করলাম যে অদূর ভবিষ্যতে তিনি বিজয়ী হবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম।
পরবর্তী বর্ণনাকারী যোগ করেছেন:
ইবনে আন-নাতুর জেরুজালেমের গভর্নর ছিলেন এবং হিরাক্লিয়াস জেরুজালেম সফর করছিলেন, তিনি সকালে বিষণ্ন মনে জেগে উঠলেন। তাঁর কিছু পাদ্রী জিজ্ঞাসা করল তাঁর মন খারাপের কারণ কি?
হিরাক্লিয়াস একজন ভবিষ্যদ্বক্তা ও জ্যোতিষী ছিলেন।
তিনি বললেন, এক রাত্রে আমি যখন তারাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, আমি দেখলাম খাতনাকারীদের নেতা আবির্ভূত হয়েছেন। তারা কারা, যারা খাতনা করেন?”
লোকেরা উত্তর দিল, ইহুদীরা ছাড়া আর কেউ খাতনা করে না, সুতরাং আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই। শুধু এই হুকুম দিয়ে দিন যে এই দেশে যত ইহুদী আছে সবাইকে হত্যা করা হোক।
এই আলোচনার সময় গাসসানের রাজার কাছ থেকে আল্লাহর রাসূলের খবর নিয়ে দূত এলো। সংবাদ শুনে তিনি লোকজনকে বললেন সংবাদবাহক খাতনা করা কিনা সন্ধান করতে। লোকজন অনুসন্ধান করে হিরাক্লিয়াসকে খবর দিল যে সে খাতনাকারী।
হিরাক্লিয়াস তখন তাকে আরবদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। সংবাদবাহক বলল, আরবরাও খাতনা করে থাকে।
এই কথা শুনে হিরাক্লিয়াস মন্তব্য করলেন যে আরবদের সার্বভৌমত্বের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। হিরাক্লিয়াস তারপর হোমস গেলেন এবং সেখানে থাকাকালীন তাঁর চিঠির উত্তরে তাঁর বন্ধুর কাছ থেকে তাঁর ধারণা সমর্থন করে এই মর্মে এক চিঠি পেলেন যে আরবে একজন আবির্ভূত হয়েছেন এবং তিনি সত্যিই নবী।
তখন হিরাক্লিয়াস হোমসে অবস্থিত তাঁর প্রাসাদে বাইজানটাইনের সব প্রধানদের একত্রিত হওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। যখন তারা সমবেত হলো, তিনি প্রাসাদের সব দরজা বন্ধ করার হুকুম দিলেন।
তারপর তিনি এসে বললেন: হে বাইজানটাইনগণ, যদি সাফল্য তোমাদের আকাঙ্খা হয়ে থাকে এবং তোমরা সঠিক নির্দেশনা চাও এবং তোমাদের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে চাও তাহলে এই নবীর প্রতি আনুগত্যের শপথ নাও!
একথা শুনে লোকজন প্রাসাদের দরজার দিকে বন্য গাধার মত ছুটতে লাগলো, কিন্তু সব বন্ধ দেখতে পেলো। হিরাক্লিয়াস ইসলামের প্রতি তাদের ঘৃণা অনুভব করলেন এবং যখন তাদের ইসলাম গ্রহণের আর আশা রইল না, তিনি তাদেরকে পুনরায় একত্র করতে আদেশ দিলেন। বললেন: আমি এই মাত্র যা বলেছি তা তোমাদের বিশ্বাসের দৃঢ়তা পরীক্ষা করার জন্য এবং আমি তা দেখেছি।লোকেরা তার সামনে সিজদা করল এবং তাঁর উপর সন্তুষ্ট হলো, এবং এখানেই হিরাক্লিয়াসের কাহিনীর শেষ (তার বিশ্বাস সম্পর্কিত)
তথ্যসুত্রঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৩তম খন্ড ৩১০ পৃষ্ঠা

(স্মরণ করি-২৫১ পর্ব)

be 
Organized by Holy Islam 

O.H.I