Saturday, October 8, 2011

রাসূলুল্লাহ যেভাবে হজ করেছেন-২


السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা


রাসূলুল্লাহ যেভাবে হজ করেছেন-২

ইহরাম
১২- অতপর কাসওয়া[1] নামক উটনীতে সওয়ার হলেন। উটনীটি তাঁকে নিয়ে বাইদা নামক জায়গায় গেলে তিনি ও তাঁর সাথিগণ হজের তালবিয়া পাঠ করলেন[2]

১৩- জাবের রা. বলেনআমি আমার দৃষ্টি যতদূর যায় তাকিয়ে দেখলামতাঁর সামনে কেবল আরোহী ও পায়ে হেঁটে[3] যাত্রারত মানুষ আর মানুষ। তাঁর ডানে অনুরূপ,তাঁর বামেও অনুরূপ তাঁর পেছনেও অনুরূপ মানুষ আর মানুষ। আর রাসূলুল্লাহ আমাদের মাঝে অবস্থান করছিলেন। তাঁর ওপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয়। তিনিই তো তার ব্যাখ্যা জানেন। তাই তিনি যে আমল করছিলেন আমরা হুবহু তাই আমল করছিলাম।[4]
১৪- তিনি তাওহীদ সম্বলিত [5]তালবিয়া পাঠ করেন,

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَشَرِيكَلَكَلَبَّيْكَ ، إِنَّالْحَمْدَوَالنِّعْمَةَ لَكَوَالْمُلْكَ ، لاَشَرِيكَلَكَ.

(লাববাইক আল্লাহুম্মা লাববাইকলাববাইকা লা শারীকা লাকা লাববাইকইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুল্কলা শারীকা লাক)।

আমি হাযিরহে আল্লাহআমি হাযির। তোমার কোন শরীক নেইআমি হাযির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্বওতোমার কোন শরীক নেই।[6]

১৫- আর মানুষেরাও যেভাবে পারছিল এই তালবিয়া পাঠ করছিল। তারা কিছু বাড়তি বলছিল। যেমন,

لَبَّيْكَ ذَا الْمَعَارِجِ,لَبَّيْكَ ذَا الْفَوَاضِلِ.

(লাববাইকা যাল মাআরিজিলাববাইকা যাল ফাওয়াযিলি) কিন্তু রাসূলুল্লাহ তাদেরকে তা রদ করতে বলেননি।[7]

১৬- তবে তিনি বারবার তালবিয়া পাঠ করছিলেন।

১৭- জাবের রা. বলেনআমরা বলছিলামلَبَّيْكَ اللَّهُمَّ(লাববাইক আল্লাহুম্মা) لَبَّيْكَ ِبالحَجِ (লাববাইকা বিল-হাজ্জ)। আমরা খুব চিৎকার করে তা বলছিলাম। আর আমরা কেবল হজেরই নিয়ত করছিলাম। তখনো আমরা হজের সাথে উমরার কথা জানতাম না।[8]
১৮- আর আয়েশা রা. উমরার নিয়ত করে এলেন। সারিফ[9] নামক স্থানে এসে তিনি ঋতুবতী হয়ে গেলেন।[10]
চলবে...

[1]. এটি রাসূলুল্লাহ -এর উটনীর নাম। এর আরও নাম রয়েছে যেমন : আযবা’ এবং জাদ। কারো কারো মতে কাসওয়া তাঁর উটের নাম (নাববীশারহ)।
[2]. ইবন মাজা।
[3]. ইমাম নাববী রহ. বলেনএ থেকে সবাই একমত যে আরোহন করে এবং পায়ে হেঁটে- উভয়ভাবে হজ করা বৈধ। তবে উভয়টির মধ্যে উত্তম কোনটি সে বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। অধিকাংশ আলিমের মতে বাহনে করে হজই উত্তম। কারণ, (ক) নবী  এমনটি করেছেন (খ) বাহনে করে হজ করা হজের কার্যাদি আদায়ে সহায়ক এবং(গ) এতে খরচও বেশি হয়। তবে দাউদ জাহেরী প্রমুখ হেঁটে হজ করাকে উত্তম বলেছেন। তার মতে এতে বেশি কষ্ট হয় বলে তা উত্তম। তার এ মত সঠিক নয়। এ থেকে বুঝা যায় বিমানে সফর করে হজে যাওয়া জায়িয বরং মুস্তাহাব। তবে কেউ কেউ যে হাদীস বর্ণনা করেন, ‘বাহনে হজকারির প্রতিটি কদমে সত্তরটি নেকি লেখা হয় আর হেঁটে হজকারির প্রতি কদমে সাতশ নেকি লেখা হয়’ এটি সম্পূর্ণ জাল ও বানোয়াট হাদীস। (দেখুন : সিলসিলাতুল আহাদীস আদ-দাঈফা : ৪৯৬-৪৯৭)।ইবন তাইমিয়া রহ. বলেনএ ব্যাপারটি নির্ভর করবে হজকারির ওপর। কারো কারো জন্য বাহনে হজ উত্তম আবার কারো কারো জন্যে হেঁটে হজ উত্তম। এটিই সঠিক মত।
[4]. জাবির রা.-এর কথার মধ্যে এ কথার প্রতি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সাহাবীদের সামনে পবিত্র কুরআন তুলে ধরতেন। একমাত্র তিনিই কুরআনের যথার্থ তাফসির ও ব্যাখ্যা জানতেন। তিনি ছাড়া অন্যরা এমনকি খোদ তাঁর সাহাবীরাও তাঁর ব্যাখ্যার মুখাপেক্ষী ছিলেন।
[5]তাওহীদ ও শিরক বিপরীতমুখী দুটি বিষয় যা কোনদিন একত্রিত হতে পারে না। এ-দুয়ের একটির উপস্থিতির অর্থ অন্যটির বিদায়। ঠিক রাত-দিন অথবা আগুন-পানির বৈপরিত্বের মতই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَتِمُّواْ ٱلۡحَجَّ وَٱلۡعُمۡرَةَ لِلَّهِۚ
তোমরা হজ ও উমরা আল্লাহর জন্য সম্পন্ন করো।’ রাসূলুল্লাহ এর জীবনে তাওহীদ সবচেবেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি তাওহীদকে তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য বানিয়েছেন। হজে নিম্নবর্ণিত আমলসমূহ সম্পাদনে তাওহীদের প্রতি তাঁর গুরুত্ব বিশেষভাবে প্রকাশ পেয়েছে। যেমন১. তালবিয়া পাঠ। ২.লোক-দেখানো ও রিয়া থেকে মুক্ত হজ পালনের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ। ৩. তাওয়াফ শেষে দুরাকআত সালাত আদায় করার সময় তাওহীদ সম্বলিত সূরা আল-কাফিরূন’  সূরা ইখলাস’ পাঠ। ৪. সাফা ও মারওয়ায় তাওহীদনির্ভর দুআ পাঠ। ৫. আরাফার দুআ ও যিকরসমূহেও তাওহীদ সম্বলিত বাণী উচ্চারণ ৬. হাদী বা কুরবানীর পশু যবেহের সময় তাকবীর পাঠ। ৬. জামরায় পাথর নিক্ষেপের সময় তাকবীর পাঠ ইত্যাদি। তাই প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্যতাওহীদের হাকীকত সম্পর্কে সচেতন হওয়া। শিরক ও বিদআত থেকে সতর্ক থাকা।
[6]. বুখারী : ৫৯১৫মুসলিম: ১১৮৪।
[7]. ইবরাহীম আ. এর তালবিয়া ছিল তাওহীদ সম্বলিত। সর্বপ্রথম আমর ইবন লুহাই খুযাঈ জাহেলী যুগে তালবিয়াতে শিরক যুক্ত করে বলে,
إِلاَّ شَرِيكًا هُوَ لَكَ تَمْلِكُهُ وَمَا مَلَكَ.
কিন্তু একজন শরীক যার তুমিই মালিক এবং তার যা কিছু রয়েছে তারও’ (উমদাতুল কারী : ২৪/৬৫আযরাকীআখবারে মক্কা :১/২৩২)।
তার অনুসরণে মুশরিকগণ হজ ও উমরার তালবিয়া পাঠে উক্ত শিরক সম্বলিত বাক্য যুক্ত করত। রাসূলুল্লাহ তালবিয়ায় তাওহীদের স্পষ্ট ঘোষণা দিলেন এবং তা থেকে শিরকযুক্ত বাক্য দূর করে দিলেন(মুসলিম : ১১৮৫)।
[8]. ইবন মাজা।
[9]. এই জায়গাটি তানঈমের কাছাকাছি বায়তুললাহ থেকে ১০ মাইল দূরে উত্তর দিকে অবস্থিত।
[10]. মুসলিম।

be Organized by Holy Islam 
O.H.I 
For More Visit:

বই পড়ুনঃ http://ohilibrary.blogspot.com