السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
রামাদান ম্যানুয়াল-৩
বিষয়ভিত্তিক আল-কোরআন ও আল-হাদীস অধ্যয়ন
০৩ রামাদান
বিষয়: তাওহীদ
সূরা আল্ বাক্বারাহ: ২৫৫-২৫৭
اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ (২৫৫) لاَ إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىَ لاَ انفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (২৫৬) اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُواْ يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوُرِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ أَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُوْلَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (২৫৭)
২৫৫) আল্লাহ এমন এক চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা, যিনি সমগ্র বিশ্বজাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই।২৭৮ তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না।২৭৯ পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সবই তাঁর।২৮০ কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে ?২৮১ যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কেও তিনি অবগত। তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না।২৮২ তাঁর কর্তৃত্ব ২৮৩ আকাশ ও পৃথিবীব্যাপী। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত করে না। মূলত তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ঠ সত্তা।২৮৪
২৫৬) দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই।২৮৫ ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। এখন যে কেউ তাগুতকে ২৮৬ অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হয় না। আর আল্লাহ (যাকে সে অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে ) সবকিছু শোনেন ও জানেন।
২৫৭) যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী ও সহায়। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে নিয়ে আসেন।২৮৭ আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে তাদের সাহায্যকারী ও সহায় হচ্ছে তাগুত।২৮৮ সে তাদের আলোক থেকে অন্ধকারের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। এরা আগুনের অধিবাসী। সেখানে থাকবে এরা চিরকালের জন্য।
আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা
২৭৮. অর্থাৎ মূর্খতা নিজেদের কল্পনা ও ভাববাদিতার জগতে বসে যত অসংখ্য উপাস্য, ইলাহ্ ও মাবুদ তৈরী করুক না কেন আসলে কিন্তু সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিপত্তি ও শাসন কর্তৃত্ব নিরংকুশভাবে একমাত্র সেই অবিনশ¡র সত্তার অংশীভূত, যাঁর জীবন কারো দান নয় বরং নিজস্ব জীবনী শক্তিতে যিনি স্বয়ং জীবিত এবং যাঁর শক্তির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে এই বিশ্বজাহানের সমগ্র ব্যবস্থাপনা। নিজের এই বিশাল সীমাহীন রাজ্যের যাবতীয় শাসন কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক তিনি একাই। তাঁর গুণাবলীতে দ্বিতীয় কোন সত্তার অংশীদারীত্ব নেই। তাঁর ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও অধিকারেও নেই দ্বিতীয় কোন শরীক। কাজেই তাঁকে বাদ দিয়ে বা তার সাথে শরীক করে পৃথিবীতে বা আকাশে কোথাও আর কাউকে মাবুদ, ইলাহ্ ও প্রভু বানানো হলে তা একটি নিরেট মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই হয় না। এভাবে আসলে সত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
২৭৯. মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর সত্তাকে যারা নিজেদের দূর্বল অস্তিত্বের সদৃশ মনে করে এবং যাবতীয় মানবিক দুর্বলতাকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করে, এখানে তাদের চিন্তা ও ধারণার প্রতিবাদ করা হয়েছে। যেমন বাইবেলের বিবৃতি মতে, আল্লাহ ছয় দিনে পৃথিবী ও আকাশ তৈরী করেন এবং সপ্তম দিনে বিশ্রাম নেন।
২৮০. অর্থাৎ তিনি পৃথিবী ও আকাশের এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিক। তাঁর মালিকানা, কর্তৃত্ব ও শাসন পরিচালনায় কারো এক বিন্দু পরিমাণও অংশ নেই। তাঁর পরে এই বিশ্বজাহানের অন্য যে কোন সত্তার কথাই চিন্তা করা হবে সে অবশ্যই হবে এই বিশ্বজগতের একটি সৃষ্টি। আর বিশ্বজগতের সৃষ্টি অবশ্যই হবে আল্লাহর মালিকানাধীন এবং তাঁর দাস। তাঁর অংশীদার ও সমকক্ষ হবার কোন প্রশ্নই এখানে ওঠে না।
২৮১. এখানে এক শ্রেণীর মুশরিকদের চিন্তার প্রতিবাদ করা হয়েছে, যারা বুযুর্গ ব্যক্তিবর্গ, ফেরেশতা বা অন্যান্য সত্তা সম্পর্কে এই ধারণা পোষণ করে যে, আল্লাহর ওখানে তাদের বিরাট প্রতিপত্তি রয়েছে। তারা যে কথার ওপর অটল থাকে, তা তারা আদায় করেই ছাড়ে। আর আল্লাহর কাছ থেকে তারা যে কোন কার্যোদ্ধার করতে সক্ষম। এখানে তাদেরকে বলা হচ্ছে, আল্লাহর ওখানে প্রতিপত্তির তো কোন প্রশ্নই ওঠে না, এমনকি কোন শ্রেষ্ঠতম পয়গম্বর এবং কোন নিকটতম ফেরেশতাও এই পৃথিবী ও আকাশের মালিকের দরবারে বিনা অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস রাখে না।
২৮২. এই সত্যটি প্রকাশের পর শিরকের ভিত্তির ওপর আর একটি আঘাত পড়লো। ওপরের বাক্যগুলোয় আল্লাহর অসীম কর্তৃত্ব ও তার সাথে সম্পর্কিত ক্ষমতাবলী সম্পর্কে একটা ধারণা পেশ করে বলা হয়েছিল, তাঁর কর্তৃত্বে স্বতন্ত্রভাবে কারো অংশীদারীত্ব নেই এবং কেউ নিজের সুপারিশের জোরে তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতাও রাখে না। অত:পর এখানে অন্যভাবে বলা হচ্ছে, অন্য কেউ তাঁর কাজে কিভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে যখন তার কাছে এই বিশ্বজাহানের ব্যবস্থাপনা এবং এর অন্তর্নিহিত কার্যকারণ ও ফলাফল বুঝার মতো কোন জ্ঞানই নেই? মানুষ, জ্বিন ফেরেশতা বা অন্য কোন সৃষ্টিই হোক না কেন সবার জ্ঞান অপূর্ণ ও সীমিত। বিশ্বজাহানের সমগ্র সত্য ও রহস্য কারো দৃষ্টিসীমার মধ্যে নেই। তারপর কোন একটি ক্ষুদ্রতর অংশেও যদি কোন মানুষের স্বাধীন হস্তক্ষেপ অথবা অনড় সুপারিশ কার্যকর হয় তাহলে তো বিশ্বজগতের সমগ্র ব্যবস্থাপনাই ওলট-পালট হয়ে যাবে। বিশ্বজগতের ব্যবস্থাপনা তো দূরের কথা মানুষ নিজের ব্যক্তিগত ভালোমন্দ বুঝারও ক্ষমতা রাখে না। বিশ্বজাহানের প্রভু ও পরিচালক মহান আল্লাহই এই ভালোমন্দের পুরোপুরি জ্ঞান রাখেন। কাজেই এক্ষেত্রে জ্ঞানের মূল উৎস মহান আল্লাহর হিদায়াতও পথনির্দেশনার ওপর আস্থা স্থাপন করা ছাড়া মানুষের জন্য দ্বিতীয় আর কোন পথ নেই।
২৮৩. কুরআনে উল্লিখিত মূল শব্দ হচ্ছে 'কুরসী'। সাধারণ এ শব্দটি কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও রাষ্ট্রশক্তি অর্থে রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (বাঙলা ভাষায় এরই সমজাতীয় শব্দ হচ্ছে ‘গদি’। গদির লড়াই বললে ক্ষমতা কর্তৃত্বের লড়াই বুঝায়)।
২৮৪. এই আয়াতটি আয়াতুল কুরসী নামে খ্যাত। এখানে মহান আল্লাহর এমন পূর্ণাংগ পরিচিতি পেশ করার হয়েছে, যার নজীর আর কোথাও নেই। আর হাদীসে একে কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এখানে কোন্ প্রসংগে বিশ্বজাহানের মালিক মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী আলোচনা করা হয়েছে? এ বিষয়টি বুঝতে হলে ৩২ রুকু’ থেকে যে আলোচনাটি চলছে তার ওপর আর একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিতে হবে। প্রথমে মুসলমানদের ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ধন-প্রাণ উৎসর্গ করে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বনী ইসরাঈলরা যেসব দূর্বলতার শিকার হয়েছিল তা থেকে দূরে থাকার জন্য তাদের জোর তাগিদ দেয়া হয়। তারপর তাদেরকে এ সত্যটি বুঝানো হয় যে, বিজয় ও সাফল্য সংখ্যা যুদ্ধাস্ত্রের আধিক্যের ওপর নির্ভর করে না বরং ঈমান, সবর, সংযম, নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ও সংকল্পের দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করে। অত:পর যুদ্ধের সাথে আল্লাহর যে কর্মনীতি সম্পর্কিত রয়েছে সেদিকে ইংগিত করা হয়। অর্থাৎ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনা অক্ষুন্ন রাখার জন্য তিনি সবসময় মানুষদের একটি দলের সাহায্যে আর একটি দলকে দমন করে থাকেন। নয়তো যদি শুধুমাত্র একটি দল স্থায়ীভাবে বিজয় লাভ করে কর্তৃত্ব ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতো তাহলে দুনিয়ায় অন্যদের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়তো।
আবার এ প্রসংগে অজ্ঞ লোকদের মনে আরো যে একটি প্রশ্ন প্রায়ই জাগে তারও জবার দেয়া হয়েছে। সে প্রশ্নটি হচ্ছে, আল্লাহ যদি তাঁর নবীদেরকে মতবিরোধ খতম করার ও ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে ফেলার জন্য পাঠিয়ে থাকেন এবং তাদের আগমনের পরও মতবিরোধ ও ঝগড়া-বিবাদ খতম না হয়ে থাকে তাহলে কি আল্লাহ এতই দূর্বল যে, এই গলদগুলো দূর করতে চাইলেও তিনি দূর করতে পারেননি? এর জবাবে বলা হয়েছে, বলপূর্বক মতবিরোধ বন্ধ করা এবং মানব জাতিকে জোর করে একটি বিশেষ পথে পরিচালনা করা আল্লাহর ইচ্ছা ছিল না। যদি এটা আল্লাহর ইচ্ছা হতো তাহলে তার বিরুদ্ধাচরণ করার কোন ক্ষমতাই মানুষের থাকতো না। আবার যে মূল বিষয়বস্তুর মাধ্যমে আলোচনার সূচনা করা হয়েছিল একটি বাক্যের মধ্যে সেটিকেও ইংগিত করা হয়েছে। এরপর এখন বলা হচ্ছে, মানুষের আক্বীদা-বিশ¡াস,আদর্শ,মতবাদ ও ধর্ম যতই বিভিন্ন হোক না কেন আসলে ও প্রকৃত সত্য যার ওপর আকাশ ও পৃথিবীর সমগ্র ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত, এই আয়াতেই বিবৃত হয়েছে। মানুষ এ সম্পর্ক ভুল ধারণা করলেই বা কি, এ জন্য মূল সত্যের তো কোন চেহারা বদল হবে না। কিন্তু লোকদেরকে এটা মানতে বাধ্য করানো আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়। যে ব্যক্তি এটা মেনে নেবে সে নিজেই লাভবান হবে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২৮৫. এখানে দ্বীন বলতে ওপরের আয়াতে বর্ণিত আয়াতুল কুরসীতে আল্লাহ সম্পর্কিত আক্বীদা ও সেই আক্বীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত জীবন ব্যবস্থাকে বুঝানো হয়েছে। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, ‘ইসলাম’ এর এই আক্বীদাগত এবং নৈতিক ও কর্মগত ব্যবস্থা কারো ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া যেতে পারেনা। যেমন কাউকে ধরে তার মাথায় জোর করে একটা বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়, এটা তেমন নয়।
২৮৬. আভিধানিক অর্থে এমন প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে ‘তাগুত’ বলা হবে, যে নিজের বৈধ অধিকারের সীমানা লংঘন করেছে। কুরআনের পরিভাষায় তাগুত এমন এক বান্দাকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই প্রভু ও খোদা হবার দাবীদার সাজে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজের বন্দেগী ও দাসত্বে নিযুক্ত করে। আল্লাহর মোকাবিলায় বান্দার প্রভুত্বের দাবীদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার তিনটি পর্যায় আছে। প্রথম পর্যায় বান্দা নীতিগতভাবে তাঁর শাসন কর্তৃত্বকে সত্য বলে মেনে নেয় কিন্তু কার্যত তার বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে। একে বলা হয় ফাসেকী। দ্বিতীয় পর্যায়ে সে আল্লাহর শান কর্তৃত্বকে নীতিগতভাবে মেনে না নিয়ে নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় অথবা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করতে থাকে। একে বলা হয় কুফরী। তৃতীয় পর্যায়ে সে মালিক ও প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তার রাজ্যে এবং তার প্রজাদের মধ্যে নিজের হুকুম চালাতে থাকে। এই শেষ পর্যায়ে যে বা যারা পৌঁছে যায় তাকেই বলা হয়া ‘তাগুত’। কোন ব্যক্তি এই তাগুতকে অস্বীকার না করা পর্যন্ত কোনদিন সঠিক অর্থে আল্লাহর মু’মিন বান্দা হতে পারে না।
২৮৭. অন্ধকার মানে মূর্খতা ও অজ্ঞতার অন্ধকার। যে অন্ধকারে পথ হারিয়ে মানুষের নিজের কল্যাণ ও সাফল্যের পথ থেকে দূরে সরে যায় এবং সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করে নিজের সমস্ত শক্তি ও প্রচেষ্টাকে ভুল পথে পরিচালিত করে, সেই অন্ধকারের কথা এখানে বলা হয়েছে।
২৮৮. “তাগুত” শব্দটি এখানে বহুবচন (তাওয়াগীত) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মানুষ একটি তাগুতের শৃংখলে আবদ্ধ হয়না বরং বহু তাগুত তার ওপর ঝেঁকে বসে। শয়তান একটি তাগুত। শয়তান তার সামনে প্রতিদিন নতুন নতুন আকাশ কুসুম রচনা করে তাকে মিথ্যা প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে রাখে। দ্বিতীয় তাগুত হচ্ছে মানুষের নিজের নফস। এই নফস তাকে আবেগ ও লালসার দাস বানিয়ে জীবনের আঁকাবাঁকা পথে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। এ ছাড়া বাইরের জগতে অসংখ্য তাগুত ছড়িয়ে রয়েছে। স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন, পরিবার, বংশ, গোত্র, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন, সমাজ, জাতি, নেতা, রাষ্ট্র, দেশ, শাসক ইত্যাকার সবকিছুই মানুষের জন্য মূর্তিমান তাগুত। এদের প্রত্যেকেই তাকে নিজের স্বার্থের দাস হিসেবে ব্যবহার করে। মানুষ তার এই অসংখ্য প্রভুর দাসত্ব করতে করতে এবং এদের মধ্যে থেকে কাকে সন্তুষ্ট করবে আর কার অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করবে এই ফিকিরের চক্করে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়।
বিষয়ভিত্তিক হাদীস-০৩
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ صَخْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ مَا نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ فَاجْتَنِبُوهُ، وَمَا أَمَرْتُكُمْ بِهِ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ، فَإِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ كَثْرَةُ مَسَائِلِهِمْ وَاخْتِلَافُهُمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ. [رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَمُسْلِمٌ .]
আবু হুরায়রা আব্দুর রহমান ইবন সাখর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: আমি তোমাদেরকে যেসব বিষয় নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাক। আর যেসব বিষয়ে আদেশ করেছি, যথাসম্ভব তা পালন কর। বেশী বেশী প্রশ্ন করা আর নবীদের সথে মতবিরোধ করা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংস করে দিয়েছে। [বুখারী ও মুসলিম]
নির্বাচিত
আয়াত মুখস্তকরণ
মুখস্ত করণ: প্রথম আয়াত
১-৩ রামাদান: ৩ দিন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلا تَنَابَزُوا بِالأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (১১)
হে ঈমানদারগণ, পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের বিদ্রুপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। আর মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের বিদ্রুপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরকে বিদ্রুপ করো না এবং পরস্পরকে খারাপ নামে ডেকো না। ঈমান গ্রহণের পর গোনাহর কাজে প্রসিদ্ধি লাভ করা অত্যন্ত জঘন্য ব্যাপার। যারা এ আচরণ পরিত্যাগ করেনি তারাই জালেম। সূরা হুজুরাত: ১১
নির্বাচিত
আল-হাদীস মুখস্তকরণ
মুখস্থকরণ: প্রথম হাদীস
১-৯ রামাদান
عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَيْضًا قَالَ " بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ذَاتَ يَوْمٍ، إذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ، شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعْرِ، لَا يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ، وَلَا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ. حَتَّى جَلَسَ إلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم . فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إلَى رُكْبَتَيْهِ، وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخْذَيْهِ، وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنْ الْإِسْلَامِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الْإِسْلَامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إنْ اسْتَطَعْت إلَيْهِ سَبِيلًا. قَالَ: صَدَقْت . فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقُهُ! قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ الْإِيمَانِ. قَالَ: أَنْ تُؤْمِنَ بِاَللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ. قَالَ: صَدَقْت. قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ الْإِحْسَانِ. قَالَ: أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّك تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاك. قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ السَّاعَةِ. قَالَ: مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنْ السَّائِلِ. قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَاتِهَا؟ قَالَ: أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ. ثُمَّ انْطَلَقَ، فَلَبِثْنَا مَلِيًّا، ثُمَّ قَالَ: يَا عُمَرُ أَتَدْرِي مَنْ السَّائِلُ؟. قَلَتْ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: فَإِنَّهُ جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُم". رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উমার (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসেছিলাম, এমন সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, যার কাপড় ছিল ধবধবে সাদা, চুল ছিল ভীষণ কালো; তার মাঝে ভ্রমণের কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতে পারেনি। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে গিয়ে বসে, নিজের হাঁটু তার হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে নিজের হাত তার উরুতে রেখে বললেন: “হে মুহাম্মাদ, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “ইসলাম হচ্ছে এই- তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত আদায় কর, রামাদানে সওম সাধনা কর এবং যদি সামর্থ থাকে তবে (আল্লাহর) ঘরের হজ্জ কর।”
তিনি (লোকটি) বললেন: “আপনি ঠিক বলেছেন”। আমরা বিস্মিত হলাম, সে নিজে তার নিকট জিজ্ঞাসা করেছে আবার নিজেই তার জবাবকে ঠিক বলে ঘোষণা করছে। এরপর বলল: “আচ্ছা, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন”।
তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- আল্লাহর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও আখেরাতর উপর ঈমান আনা এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনা”।
সে (আগন্তুক) বলল: “আপনি ঠিক বলেছেন”। তারপর বলল: “আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন”।
তিনি বলেন: “তা হচ্ছে এই- তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ, আর তুমি যদি তাঁকে দেখতে না ও পাও তবে তিনি তোমাকে দেখছেন”।
সে (আগন্তুক) বলল: “আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে বলুন”। তিনি (রাসূল) বললেন: “যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সে জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশী কিছু জানে না”। সে (আগন্তুক) বলল: “আচ্ছা, তার লক্ষণ সম্পর্কে বলুন”।
তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- দাসী নিজের মালিককে জন্ম দেবে, সম্পদ ও বস্ত্রহীন রাখালগণ উঁচু উঁচু প্রাসাদ তৈরি করে দম্ভ করবে”।
তারপর ঐ ব্যক্তি চলে যায়, আর আমি আরো কিছুক্ষণ বসে থাকি। তখন তিনি (রাসূল) আমাকে বললেন: “হে উমর, প্রশ্নকারী কে ছিলেন, তুমি কি জান? আমি বললাম: “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক ভাল জানেন”। তিনি বললেন: “তিনি হলেন জিবরীল। তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে তোমাদের কাছে এসেছিলেন”। [সহীহ মুসলিম]
be Organized by Holy Islam
O.H.I