Wednesday, November 23, 2011

হজের পর করণীয় কী?


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

হজের পর করণীয় কী?

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার জন্য, যিনি তার বান্দাদের সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন এবং দরূদ ও সালাম নবী মুহাম্মদের ওপর, যিনি হাউযে কাউসার ও মহান মর্যাদার অধিপতি এবং তার পরিবার ও সাথীদের ওপর, আর সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর তাদের অনুসরণকারী প্রত্যেকের ওপর।

সম্মানিত হাজি সাহেব,
যখন আপনারা বাড়ি ফিরার ইচ্ছা করেন আপনাদের মনে পড়ে পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন ও বন্ধু-বান্ধবদের কথা। তাদের জন্য বিভিন্ন উপহার সংগ্রহ করেন। যার সামর্থ্য রয়েছে, ব্যবসার জন্য অতিরিক্ত জিনিস পত্র খরিদ করেন। এতে কোন সমস্যা নেই, কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَبۡتَغُواْ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكُمۡۚ فَإِذَآ أَفَضۡتُم مِّنۡ عَرَفَٰتٖ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ عِندَ ٱلۡمَشۡعَرِ ٱلۡحَرَامِۖ وَٱذۡكُرُوهُ كَمَا هَدَىٰكُمۡ وَإِن كُنتُم مِّن قَبۡلِهِۦ لَمِنَ ٱلضَّآلِّينَ ١٩٨ ﴾ [البقرة: ١٩٨] 
“তোমাদের উপর কোন পাপ নেই যেতোমরা ‎‎তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে। সুতরাং যখন তোমরা আরাফা থেকে বের হয়ে আসবেতখন মাশআরে হারামের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তাকে স্মরণ কর যেভাবে তিনি ‎‎তোমাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যদিও ‎‎তোমরা এর পূর্বে অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে” [সূরা বাকারা: (১৯৮)]
ইমাম কুরতুবি রহবলেন“এ আয়াত প্রমাণ করে যে, হাজি সাহেব হজ পালন করার সাথে ব্যবসাও করতে পারবেন, এ নিয়ত শিরক হিসেবে গণ্য হবে না এবং এ জন্য তার ফরয ইখলাস ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ইমাম দারাকুতনি তার সুনান গ্রন্থে আবু উমামাহ তাইমি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: আমি ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করেছি: “আমি হজের সফরে ভাড়ার কাজ করি (যেমন উট ইত্যাদি ভাড়া দেই), কতক লোক বলে: তোমার হজ নেই। ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল, যেরূপ তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছ, তিনি চুপ থাকলেন, অতঃপর নাযিল হল:
﴿ لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَبۡتَغُواْ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكُمۡۚ ١٩٨ ﴾ [البقرة: ١٩٨] 
“তোমাদের উপর কোন পাপ নেই যেতোমরা ‎‎তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে...” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “নিশ্চয় তোমার হজ রয়েছে”। অর্থাৎ তোমার হজ বিশুদ্ধ।

প্রিয় হাজি সাহেব,
প্রয়োজন অনুযায়ী দুনিয়া গ্রহণ করলে ইখলাস ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, তবে হাজি সাহেব, আপনি যখন ঐ পবিত্র নিদর্শনগুলো বিদায় জানিয়ে প্রস্থান করছিলেন তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়েছিল? হাজি সাহেব, আপনি অবশ্যই জানেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন তওয়াফে বিদা (বিদায়ী তওয়াফ) ব্যতীত মক্কা প্রস্থান না করে। ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “লোকেরা (হজ শেষে) নিজ নিজ রাস্তা গ্রহণ করত, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
 لا ينفرن أحد حتى يكون آخر عهده بالبيت.
“কেউ প্রস্থান করবে না, যতক্ষণ না তার শেষ কর্ম হয় তওয়াফে বিদা”। [মুসলিম]

প্রিয় হাজি ভাই,
এরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথীদেরকে যখন তারা পবিত্র কাবা প্রস্থান করার ইচ্ছা করেছিল; যাতে তারা মক্কা থেকে চলে আসার সময়ে সর্বশেষ কর্ম হিসেবে তওয়াফ বিদা সম্পন্ন করার মাধ্যমে সে ঘরের বড়ত্ব ও মর্যাদা দ্বারা তাদের দৃষ্টি ও অন্তর পূর্ণ হয়। আল্লাহ তার মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করুন।

আর আপনি প্রিয় হাজি ভাই,
যখন বাড়ি ফিরার প্রস্তুতি নিয়ে পবিত্র কাবা ঘর বিদায় জানাচ্ছিলেন তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়েছিল? ভাই, কোন সন্দেহ নেই ঐ পবিত্র ঘর বিদায় জানানো সত্যিই কঠিন, বিশেষ করে যে অন্তর হজের পুরো সময়ে একমাত্র তার রবের ধ্যানে নিবিষ্ট ছিল, তার কাছে বিদায় ঘণ্টা সত্যিই বেদনাদায়ক!

প্রিয় হাজি ভাই,
স্মরণ করুন, এখন আপনি পবিত্র কাবা ঘরকে শেষ বারের মত সম্মান করছেন, অথচ ইতোপূর্বে আপনি অবস্থান করছিলেন ইবাদতের দিনগুলোয় ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পুণ্য মৌসুমে। সত্যি হজের সারাক্ষণ ও প্রতি মুহূর্ত খুব ভাগ্যবান! কিন্তু প্রিয় ভাই, একটি জিজ্ঞাসা: আপনি যখন বাড়ি ফিরবেন ইবাদতের ধারাবাহিকতা কি বন্ধ হয়ে যাবে? অথচ আপনি স্মরণ করবেন মহান ও পবিত্র ঘর কাবার নিকট আল্লাহর সান্নিধ্যে আপনার উপস্থিতির কথা, আপনি স্মরণ করবেন আরাফার দিন ও তার বড়ত্বের কথা এবং মিনার দিনগুলো ও তার সম্মানের কথা!

প্রিয় ভাই,
এরপর কীভাবে আপনি আপনার পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবেন! বরং ইবাদতে আত্মনিয়োগ করুন; জীবনের জন্য নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করুন; যেন মাবরুর হজকারীদের গুণাগুণ আপনি অর্জন করতে সক্ষম হন। হাসান বসরি রহ. বলেছেন: “হজ্জে-মাবরুর হচ্ছে ব্যক্তির (হাজির) দুনিয়াত্যাগী ও আখিরাতমুখী হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করা”
কেউ বলেছেন: হজ্জে মাবরুর এর নিদর্শন: “হজ শেষে এর আলামত স্পষ্ট হয়, যদি আগের চেয়ে ভালো অবস্থা নিয়ে বাড়ি ফিরে, বুঝা যাবে তার হজ মাবরুর”।
আরেকটি বিষয় প্রিয় হাজি ভাই: আপনি যখন পবিত্র কাবা ঘর বিদায় জানাচ্ছেন, দোয়া করুন এটাই আপনার শেষ সাক্ষাত না হয়। কেননা, ইবাদতের পর ইবাদতে মগ্ন থাকা যেমন দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার আলামত, অনুরূপ পাপের পর পাপে লিপ্ত থাকা গোমরাহি ও পথভ্রষ্টতার নিদর্শন।

ভাই,
ইবাদতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করুন, মনে রাখবেন কিয়ামতের দিন আপনার সফলতার চাবিকাঠি এটাই। দেখুন আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:
أي العمل أحب إلى الله؟  قالأدومه وإن قلّ.
“কোন আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন: “ধারাবাহিক আমল, যদিও তা কম হয়”। [মুসলিম]

প্রিয় হাজি ভাই,
নেককার হওয়ার আলামত হচ্ছে নিয়মিত ইবাদত করা যদিও তার পরিমাণ হয় সামান্য। তাই প্রিয় ভাই, এ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আপনাকে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি: আপনি নেক আমলকে আঁকড়ে ধরুন, তা থেকে কখনো বিচ্যুত হবেন না। যত ছোট হোক কোন আমলকে তুচ্ছ জ্ঞান করবেন না, আল্লাহ আপনাকে খাতেমা বিল খায়ের তথা শুভ সমাপ্তি দান করবেন এবং আপনার হজের বরকত আপনার জন্য অক্ষত রাখবেন, ইনশাআল্লাহ

হাজি ভাই,
আপনি কখনো তাদের মতো হবেন না, যারা নির্দিষ্ট মৌসুম ব্যতীত ইবাদতের কথা মনে করে না; এসব মৌসুম শেষ হলে তারা তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। আলকামা রহ. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করেন: “হে উম্মুল মুমেনিন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল কেমন ছিল? তিনি কি ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন নির্বাচন করতেন? তিনি বললেন: না, তার আমল ছিল নিয়মিত তোমাদের কার সে রকম সামর্থ্য রয়েছে, যেরূপ সামর্থ্য ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের?!”। [বুখারি]
মুহাম্মদ ইব্‌ন কাসেম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন, যখন তিনি কোন আমল করতেন, তাতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেন।

প্রিয় হাজি ভাই,
ধৈর্যসহ ইবাদতে অবিচল থাকা জরুরী। আপনি আপনার হজ পরবর্তী জীবন নতুনভাবে আরম্ভ করুন। পাপ থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরুন। আল্লাহর আনুগত্য ও পাপ থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা নিঃসন্দেহে মুমিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার আলামত। মায়মুন ইব্‌ন মেহরান রহ. বলেছেন: “সবর দু’প্রকার: মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করা ভাল, কিন্তু তার চেয়ে অধিক ভাল পাপ থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা”।

সম্মানিত হাজি ভাই,
আপনি কখনো তাদের মতো হবেন না, যাদের সম্পর্কে ইমাম ইব্‌নুল কাইয়ূম রহ. বলেছেন: “পাপিষ্ঠ ও হতভাগারা তাদের প্রবৃত্তি ও নফসের অনুসরণে অধিক ধৈর্যশীল, কিন্তু তাদের রবের আনুগত্যে তারা সবচেয়ে অধৈর্য। তারা শয়তানের আনুগত্যের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ধৈর্যের পরীক্ষা দেয়, কিন্তু আল্লাহর আনুগত্যে ন্যূনতম ধৈর্য প্রদর্শন করে না। তারা স্বীয় শত্রুকে খুশি করার জন্য প্রবৃত্তির অনুসরণে কঠোর পরিশ্রম করে, কিন্তু তাদের রবের সন্তুষ্টির জন্য সামান্য কষ্ট স্বীকার করে না। তারা শয়তানের আনুগত্য ও নফসের হুকুম তামিলে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে, কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ পালন ও রাসূলের অনুসরণে তারা পুরোপুরি অক্ষমতা প্রদর্শন করে। এরাই কপালপোড়া ও হতভাগা। তারা কখনো আল্লাহর নিকট সম্মান পাবে না কখনো তারা সেসব নেককার লোকদের কাতারে দাঁড়াতে পারবে না, যাদেরকে আল্লাহ কিয়ামতের জনসমুদ্রে আহ্বান করবেন: “কোথায় মুত্তাকীগণ” বলে, যেন উপস্থিত সবাই তাদের মর্যাদা প্রত্যক্ষ করে, তাদের শ্রেষ্ঠত্বের সাক্ষী দেয়
অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ


be Organized by Holy Islam 
O.H.I 
For More Visit: