Tuesday, October 4, 2011

রাসূলুল্লাহ ﷺ যেভাবে হজ করেছেন


السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা


 রাসূলুল্লাহ  যেভাবে হজ করেছেন[1]

১- জাবের রা.[2] বলেনরাসূলুল্লাহ  মদীনায় বসবাসকালে দীর্ঘ নয় বছর পর্যন্ত হজ করেননি।[3]
২- হিজরী দশম বছরে চারিদিকে ঘোষণা দেয়া হলরাসূলুল্লাহ  এ বছর[4] হজ করবেন।

৩- অসংখ্য লোক মদীনায় এসে জমায়েত হল। বাহনে চড়া অথবা পায়ে হাঁটার সামর্থ রাখে এরকম কোন ব্যক্তি অবশিষ্ট রইল না[5]। সবাই এসেছেন রাসূলুল্লাহ -এর সাথে বের হওয়ার জন্য[6]। সবার উদ্দেশ্যরাসূলুল্লাহ এর অনুসরণ করে তাঁর মতই হজের আমল সম্পন্ন করা। 

৪- জাবের রা. বলেনরাসূলুল্লাহ  আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন[7] এবং বললেন,

مُهَلُّ أَهْلِ الْمَدِينَةِ مِنْ ذِى الْحُلَيْفَةِ وَ [مُهَلُّ أَهْلِ] الطَّرِيقُ الآخَرُ الْجُحْفَةُ وَمُهَلُّ أَهْلِ الْعِرَاقِ مِنْ ذَاتِ عِرْقٍ وَمُهَلُّ أَهْلِ نَجْدٍ مِنْ قَرْنٍ وَمُهَلُّ أَهْلِ الْيَمَنِ مِنْ يَلَمْلَمَ.

মদীনাবাসিদের ইহরাম বাঁধার স্থান হচ্ছেযুল-হুলাইফা।[8] অন্যপথের (লোকদের ইহরাম বাঁধার স্থান) আল-

জুহফা[9]ইরাকবাসিদের ইহরাম বাঁধার স্থান যাতু ইরক[10]। নজদবাসিদের ইহরাম বাঁধার স্থান করন এবং  
ইয়ামানবাসিদের ইহরাম বাঁধার স্থানইয়ালামলাম[11][12]

৫- তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ  যিলকদ মাসের পাঁচ দিন অথবা চার দিন অবশিষ্ট থাকতে বের হলেন[13]

৬- এবং হাদী তথা কুরবানীর পশু পাঠিয়ে দিলেন[14]

৭- আমরা তাঁর সাথে বের হলাম। আমাদের সাথে ছিল মহিলা ও শিশু[15]

৮- যখন আমরা যুল-হুলাইফাতে[16] পৌঁছলাম। তখন আসমা বিন্ত উমায়েস রা. মুহাম্মদ ইবন আবূ বকর নামক এক সন্তান প্রসব করলেন।

৯- অতপর তিনি রাসূলুল্লাল্লাহ  এর কাছে লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন যেআমি কী করব?

১০- তিনি বললেন,

اغْتَسِلِى وَاسْتَثْفِرِى بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِى

তুমি গোসল কররক্তক্ষরণের স্থানে একটি কাপড় বেঁধে নাও এবং ইহরাম বাঁধ।

১১- এরপর রাসূলুল্লাহ  মসজিদে সালাত আদায় করলেন এবং চুপচাপ রইলেন[17]  

চলবে...



[1]. রাসূলুল্লাহ  মদীনায় হিজরত করার পর মোট চার বার উমরা করেছেন। ১ম বার : ৬ষ্ঠ হিজরীতে যা হুদায়বিয়া নামক স্থানে কুরাইশ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হবার ফলে তিনি সম্পন্ন করতে পারেননি। এবার তিনি শুধু মাথা মুন্ডন করে হালাল হয়ে যান এবং সেখান থেকেই মদীনায় ফেরত আসেন। ২য় বার : উমরাতুল কাযা ৭ম হিজরীতে। ৩য় বার : জিইররানা থেকে ৮ম হিজরীতে। ৪র্থ বার : বিদায় হজের সময় ১০ম হিজরীতে। তবে রাসূলুল্লাহ  উমরার উদ্দেশ্যে হারাম এলাকার বাইরে বের হয়ে উমরা করেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই (বিস্তারিত দেখুন : যাদুল মাআদ : ২/৯২-৯৫)।
[2]. জাবের রা. উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন একজন সাহাবী। হজ সম্পর্কিত সবচে’ বড় হাদীসটির বর্ণনাকারী।
[3]. নাসাঈবিশুদ্ধ মতানুযায়ী হিজরী ৯ম অথবা ১০ম সালে হজ ফরয হয়। হজ ফরয হওয়ার পর বিলম্ব না করে রাসূলুল্লাহ  ও তাঁর সাহাবীগণ হজ করেন। দ্র. ইবনুল কায়্যিমযাদুল মাআদ।
[4]. নাসাঈ।
[5]. নাসাঈ।
[6]. নাসাঈ।
[7]. বুখারীমুসলিম ও মুসনাদে আহমদের বর্ণনা অনুসারে রাসূল সা. এ ভাষণ দিয়েছিলেন মসজিদে নববীতে। সময়টা ছিল মদীনা থেকে হজের সফরে বের হওয়ার পূর্বে।
[8]. মদীনা থেকে ৬ মাইল দূরে অবস্থিত (কামূস)হাফিজ ইব্ন কাছীর রহ.-এর মতে, ‘৩ মাইল দূরে অবস্থিত’ (হিদায়া : ৫/১১৪)ইবনুল কায়্যিম রহ.-এর মতেএক মাইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত (যাদুল মাআদ : ২/১৭৮)।
[9]. মক্কা থেকে ৩ মারহালার দূরত্বে অবস্থিত। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেনএটি একটি প্রাচীন শহর। এর নাম ছিল মুহাইমা। এটি বর্তমানে পরিত্যক্ত স্থান। যারা পশ্চিম থেকে হজ করতে আসেন এটি তাদের মীকাত। যেমন মিশর ও শামবাসী। আর পশ্চিমের লোকেরা যখন মদীনা হয়ে মক্কা গমন করেন যেমন তারা বর্তমানে করে থাকেনতখন তারা মদীনাবাসীর মীকাত থেকেই ইহরাম বাঁধবেন। কারণতাদের জন্য সবার ঐক্যমতে এটিই মুস্তাহাব (মাজমু‘ রাসাইল কুবরা’ মানাসিকুল হাজ্জ : ২/৩৫৬)।
[10]. যাতু ইরক ও মক্কার মধ্যে ৪২ মাইলের দূরত্ব (ফাত্হ)।
[11]. মক্কা থেকে ত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত।
[12]. মুসলিম।
[13]. নাসাঈ। রাসূলুল্লাহ  ও তাঁর সাহাবীরা মাথায় তেল ব্যবহার করে চুল আচড়িয়ে জামা-কাপড় পরে বের হন। তিনি এক্ষেত্রে জাফরান ব্যবহৃত কাপড় ছাড়া অন্য কোন কাপড় যেমন পাজামা বা চাদর ইত্যাদি পরতে নিষেধ করেননি। বুখারীতে যেমন ইব্ন আববাস রা. সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ইবন আববাস রা. সূত্রে বর্ণিত হাদীস থেকে মীকাতের আগেই ইহরামের কাপড় পরার অনুমতি বুঝা যায়। অথচ অনেকেই এটাকে অনুমোদিত বলে মনে করেন না। তবে নিয়ত এর ব্যতিক্রম। কারণগ্রহণযোগ্য মতানুসারে নিয়ত করতে হবে মীকাত থেকে আর বিমানে ভ্রমণ করলে ইহরামের নিয়ত ছুটে যাবার সম্ভাবনায় মীকাতের কাছাকাছি কোনো স্থান থেকে।
মনে রাখবেননিয়ত কখনো মুখে উচ্চারণ করার বিধান নেইইহরামেও না সালাতসিয়াম প্রভৃতি ইবাদাতেও না। নিয়ত সব সময়ই করবেন কলব বা অন্তরে। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা মূলত বিদআত। তবে ইহরামে لبيك اللهم عمرة وحجا পড়েছেন বলে যা সহীহ হিসেবে বর্ণিত হয়েছেতার উত্তরে বলা হয় তিনি শুধু এতটুকুই বলেছেনএর অতিরিক্ত কিছু বলেননি (শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. আন-নিয়্যাহ’ মজমু‘ রাসাইল কুবরা : ১/২৪৪-২৪৫)।
[14]. ইরওয়াউল গালীল।
[15]. মুসলিম।
[16]. যুল-হুলাইফা মসজিদে নববী থেকে ৬ মাইল দূরে অবস্থিত।
[17]. নাসাঈ। অর্থাৎ এখানে আর তালবিয়া পড়লেন না। এরপর তালবিয়া পড়া শুরু করেন তাঁর উটনীটি বাইদা নামক স্থানে পৌঁছার পরযেমনটি সামনে আসছে।
be Organized by Holy Islam 
O.H.I 
For More Visit:

বই পড়ুনঃ http://ohilibrary.blogspot.com