السلام عليكم
স্মরণ করি:সম্পদে নারীর উত্তরাধিকার : ইসলামই দিয়েছে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা
নারীর উত্তরাধিকার:
ইসলামি
উত্তরাধিকার আইন ন্যায়বিচার ও সুষম বন্টনের উপর প্রতিষ্ঠিত।
বিশেষত:
নারীর উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ইসলাম যুগান্তকারী ও ন্যায়সঙ্গত বিধান দিয়েছে। যেখানে প্রাচীন রোমান সমাজে নারী একজন স্ত্রী হিসেবে কোন অংশ পেত না। ইহুদি বিধানে ছেলে থাকা অবস্থায় নারীর কোন
ধরনের অংশ নেই। আর ইসলামের আবির্ভাব পূর্ব জাহেলি সমাজের দিকে একটু দৃষ্টি
দিলে ভেসে উঠে মায়ের জাতি-নারীর করুণ চিত্র। সম্পদে তার
উত্তরাধিকার তো দূরের কথা বরং বিভিন্ন
ক্ষেত্রে এ নারীকেই মিরাছের সম্পদ হিসেবে পরিগণিত করা হতো। কুরআনুল কারিমে নারীর নামে নামকরণকৃত সূরা আন নিসার ১৯ নং
আয়াত
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آَمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا
হে ঈমানদারগণ,
তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা জোরপূর্বক
নারীদের উত্তরাধিকারি হবে।
এ করুণ
বাস্তবতা ইঙ্গিত বহন করে, অন্যান্য সাধারণ
অবস্থায় নারীকে সমাজের বোঝা মনে করা হতো। যুদ্ধে যেতে পারে না,
জাতীয় অগ্রগতিতে
অবদান রাখতে পারে না, এ জাতীয় অজুহাত দেখিয়ে নারীকে সম্পূর্ণভাবে
মিরাছের সম্পদ হতে বঞ্চিত করা হতো। এমন অবস্থায় ইসলাম সার্বজনীন ও কালজয়ী মানবিক বিধান দিয়ে নারীকে অবহেলা ও লাঞ্ছনার এই অতল গহ্বর
থেকে উদ্ধার করে সম্মানের আসনে বসিয়েছে। দেখিয়েছে নতুন করে
জীবন চলার আলোকিত পথ। কুরআনের
শাশ্বত বাণীতে ঘোষিত হয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে নারীর
প্রাপ্তির ঘোষণা।
প্রাপ্তির ঘোষণা:
বিশিষ্ট
মুফাসসির সাঈদ ইবনে জুবাইর ও ক্বাতাদাহ (রা) বলেন, ইসলামের পূর্বে মুশরিকরা মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ প্রাপ্ত
বয়স্ক পুরুষদের মাঝেই বন্টন করে দিত। নারী ও শিশুদেরকে
কিছুই দিতো না। এরই প্রেক্ষিতে
অবতীর্ণ হয় সূরা আন নিসার ৭ নং আয়াত :
لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ
مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا
تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ نَصِيبًا
مَفْرُوضًا ﴿7﴾
অর্থ : পিতা-মাতা
ও নিকটাত্মীয়দের রেখে যাওয়া সম্পদে পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট অংশ রয়েছে এবং
নারীদেরও রয়েছে সুনির্দিষ্ট অংশ। তা কম হোক কিংবা বেশি ।
পবিত্র
কুরআনের এ ঘোষণার মাধ্যমে নারী উত্তরাধিকার সূত্রে সুনির্দিষ্ট অংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকারই লাভ
করলো। এ বিধান
কোনো কথিত নারীবাদী আন্দোলনে বাধ্য হয়ে প্রণীত হয়নি। বরং মহান প্রজ্ঞাময়
স্রষ্টা মহান আল্লাহ
তাঁর সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক অবগত হয়েই তাদের সার্বিক কল্যাণের জন্য এ বিধান দান করেছেন। এভাবেই নারী তার ব্যক্তি মালিকানার অধিকার পেলো। মা, মেয়ে, স্ত্রী,
বোন,
দাদী, নাতনী
হিসেবে নারীর সুনির্দিষ্ট অংশ ঘোষিত
হলো। এর বাইরেও বন্টনের পর
অবশিষ্টাংশেও বিভিন্ন অবস্থায় রয়েছে নারীর
প্রাপ্যাংশ।
·
নির্দিষ্ট
অংশ পাওয়া নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশী :
ইসলামি
উত্তরাধিকার বিধানে নির্দিষ্ট অংশ পাওনাদার ১২ জন ওয়ারিসের
মধ্যে নারীর সংখ্যা ৮ জন (মা,
মেয়ে, স্ত্রী,
ছেলের মেয়ে, সহোদরা
বোন, বৈমাত্রেয় বোন, বৈপিত্রেয় বোন, দাদী,
নানী) আর পুরুষ হলো ৪ জন, (বাবা,
স্বামী,
দাদা,
মা সম্পর্কীয়
ভাই)। যেখানে ঔরসজাত মেয়ে ও
বোনের জন্য নির্দিষ্ট অংশ বন্টন করা করা
হয়েছে এর বিপরীতে ঔরসজাত ছেলে ও ভাইদের জন্য নির্দিষ্ট কোন অংশ নেই। বরং নির্দিষ্ট অংশধারী
ওয়ারিসদের হিসসা বন্টনের পর আসবে তাদের প্রাপ্তির হিসাব।
প্রসঙ্গ:
পুরুষ
পাবে নারীর দ্বিগুণ, কখন?
এবং কেন?
পবিত্র
কুরআনের সূরা আন নিসার ১১ নং আয়াত لِلذَّكَرِ مِثْلُ
حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ ছেলে পাবে মেয়ের দ্বিগুণ, এ আয়াত
নিয়ে অনেকের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিশেষত যারা প্রতিনিয়ত
ইসলামের দুর্বলতা খুঁজে বের করার নোংরা ব্রতে লিপ্ত। তারা এ
আয়াতের মাধ্যমে এ কথা সাব্যস্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে থাকে
যে, ইসলাম
নারীকে পুরুষের অর্ধেক মনে করে। একটি পূর্ণাঙ্গ সত্তা হিসেবে নারীকে স্বীকৃতি দেয় না। তাই মিরাছের অংশও তাদেরকে পুরুষের অর্ধেক দিয়েছে। কিন্তু
প্রকৃতপক্ষে এ আয়াত যে ইনসাফ ও সুষম বন্টনের এক উজ্জ্বল
দৃষ্টান্ত তা অনেকেই উপলব্ধি করতে
পারে না।
·
দ্বিগুণ
পাওয়া সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়,
কুরআনের
ভাষ্য অনুযায়ী বিধানটি শুধুমাত্র ছেলে-মেয়ে এবং ভাই-বোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অথচ নারী বলতে শুধুমাত্র মেয়ে সন্তান বা বোনদেরকে
বুঝায় না। এরা ছাড়াও অনেক নারী ওয়ারিস রয়েছে যাদের বিপরীতে পুরুষের
দ্বিগুণ পাওয়ার বিধান নেই। এজন্যই এ আয়াতের পরবর্তী আয়াতগুলোতে মা-স্ত্রীসহ অন্যান্য
নারী ওয়ারিসদের নির্দিষ্ট অংশের বর্ণনা এসেছে। সেখানেতো পুরুষ
নারীর দ্বিগুণ পায়নি। তাছাড়া পুরুষদের
পরস্পরের মধ্যেও বিভিন্ন অবস্থায় বিশাল ব্যবধান
হয়ে থাকে। বরং অনেক ক্ষেত্রে
দেখা যায় নারী পুরুষের সমান পাচ্ছে, আবার
অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি পাচ্ছে। একটি তুলনামূলক
পর্যালোচনা তুলে ধরলে ব্যাপারটি আরো পরিস্কার হয়ে যাবে আশা করি।
নারী পুরুষের অংশ প্রাপ্তির একটি তুলনামূলক চিত্র:
মিসরের
জাতীয় ফতোয়া বোর্ড কর্তৃক প্রচারিত এক ফতোয়ায় মিরাছের সম্পদ পাওয়ার
ক্ষেত্রে নারী পুরুষের একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা তুলে ধরা
হয়েছে। তাতে যে
বিস্ময়কর তথ্য এসেছে তার মাধ্যমে অনেকের চোখ খুলে যেতে পারে, বিবেক
পেতে পারে নতুন খোরাক। ঐ পরিসংখ্যানে নারী কখন পুরুষের অর্ধেক পায়, আর কখন
সমান পায়,
আর কখন বেশি পায় তার বর্ণনা এসেছে অত্যন্ত পরিস্কারভাবে। লক্ষ্য করুন:
·
নারী
কেবলমাত্র চার অবস্থায় পুরুষের অর্ধেক পায় :
১. মেয়ে
ও নাতনী(ছেলের মেয়ে) ছেলে ও নাতী (ছেলের ছেলে) থাকা অবস্থায়।
২. ছেলে
সন্তান ও স্বামী বা স্ত্রী না থাকলে "মা" পিতার অর্ধেক পায় ।
৩.
"সহোদরা বোন" সহোদর ভাইয়ের সাথে ওয়ারিস হলে।
৪.
"বৈমাত্রেয় বোন" বৈমাত্রেয় ভাইয়ের সাথে ওয়ারিস হলে।
·
১০
অবস্থায় নারী পুরুষের সমান পায় :
১.পিতা-মাতা
সমান অংশ পাবে ছেলের ছেলে থাকলে।
২.
বৈপিত্রেয় ভাই-বোন সব সময় সমান অংশ পায়।
৩.বৈমাত্রেয়
ভাই-বোন থাকলে সব ধরণের বোনেরা (সহোদরা,
বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়) বৈপিত্রেয় ভাইয়ের সমান পাবে।
৪.শুধুমাত্র
ঔরসজাত মেয়ে ও মৃতের ভাই একসাথে থাকলে উভয়ে সমান অংশ পাবে। (মেয়ে পাবে অর্ধেক আর বাকী অংশ পাবে চাচা)
৫.
"নানী" বাবা ও ছেলের ছেলের সাথে সমান অংশ পায়।
৬. মা ও
বৈপিত্রেয় দুই বোন স্বামী ও সহোদর ভাই এর সাথে সমান অংশ পায়।
৭.
"সহোদর বোন" স্বামীর সাথে ওয়ারিস হলে সহোদর ভাইয়ের সমান অংশ পাবে। অর্থাৎ সহোদর বোনের
পরিবর্তে সহোদর ভাই হলে যে অংশ পেত ঠিক সহোদরাও একই অংশ পাবে। অর্থাৎ মূল সম্পদের অর্ধেক পাবে।
৮.
বৈমাত্রেয় বোন সহোদর ভাইয়ের সমান অংশ পায় যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী, মা, বৈপিত্রেয়
এক বোন এবং একজন সহোদর ভাই থাকে। এ অবস্থায় স্বামী মূল সম্পদের অর্ধেক,
মা এক ষষ্ঠাংশ,
বৈপিত্রেয় ভাই এক ষষ্ঠাংশ এবং বাকী এক ষষ্ঠাংশ
পাবে সহোদর ভাই।
৯. নির্দিষ্ট
অংশধারী ওয়ারিস এবং আসাবা সূত্রে পাওয়ার মত কেউ না থাকলে নিকটতম রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়রা সমান অংশ পাবে। যেমন মেয়ের ছেলে, মেয়ের
মেয়ে, মামা ও খালা ছাড়া অন্য কোন ওয়ারিস না থাকলে এদের সবাই সমান
অংশ পাবে।
১০. তিন
প্রকারের মহিলা এবং তিন প্রকারের পুরুষ কখনো সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয় না। এক্ষেত্রেও নারী পুরুষ
সমান অধিকার ভোগ করছে।
লেখক : মুহাম্মদ আফীফ ফুরকান
http://www.islamhouse.com/
http://www.islamhouse.com/
(স্মরণ করি-২৪৬ পর্ব)
WAMY BANGLADESH
Pioneer Organization for Distinguished
Youth
এটি ওয়ার্ল্ড এসেম্বলী অফ মুসলিম ইয়ুথ (ওয়ামী), বাংলাদেশ অফিসের মিডিয়া ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে একটি কার্যক্রম । কুরআন ও হাদীসের মহান বাণী, সম সাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূ- নিয়ে সাজানো । উদ্দেশ্য সর্বস্তরের মানুষের সাথে সম্পর্কের দৃঢ় বন্ধন তৈরী করা। বিস্তারিত জানতে মেইল করুন wamybangladesh@gmail.com অথবা ভিজিট
করুন http://www.ohioftruth.blogspot.com/
or http://www.facebook.com/Daily.OHI