রমাদান
ম্যানুয়েল-২২:
মসজিদে মহিলাদের
ইতিকাফ প্রসঙ্গে
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করার কথা বললে তিনি তাঁর কাছে (ইতিকাফ করার) অনুমতি
চান। হুজুর অনুমতি প্রদান করেন। হাফসা রা. আয়েশার কাছে হুজুরের অনুমতি এনে দেয়ার অনুরোধ
করলে তিনি তার জন্যও অনুমতি এনে দেন। এ দেখে যয়নব বিনতে জাহাশ রা. (পর্দা টানিয়ে) ঘর
বানানোর নির্দেশ দিলেন। নির্দেশ পালন করে ঘর বানানো হয়।
আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সালাত সম্পন্ন করে নিজ ঘরে প্রবেশকালে এসব ঘর দেখতে পান। জিজ্ঞেস করেন, এগুলো কী? সাহাবিরা জানান, আয়েশা, হাফসা ও যয়নবের ঘর। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে উঠেন- ‘এর মধ্যেই কি তোমরা নেকি দেখলে?
আমি ইতিকাফই করব না।’ একথা বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিকাফ ছেড়ে
চলে গেলেন। অতপর রমজান বিদায় নিয়ে শাবান এলে তিনি দশ দিন ইতিকাফ করেন।
মুসলিমের এক রেওয়াতে
আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইতিকাফ করার ইচ্ছা করতেন। ফজর নামাজ
পড়তেন তারপর ইতিকাফের স্থানে প্রবেশ করতেন। একদা তিনি মসজিদে পর্দা টানাতে আদেশ করলেন।
তেমনি করা হলো। তিনি ইচ্ছে করলেন রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করার। যয়নাব রা.-ও পর্দা টানিয়ে
দিতে বললেন, পর্দা টানানো
হলো।
রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্য বিবিগণও পর্দা টানানোর নির্দেশ দিলে তা পালন করা হলো। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাজ সমাপান্তে যখন পেছন ফেরেন তো এসব পর্দা
দেখতে পান। বলে উঠেন, এতেই কি তোমরা পুণ্য দেখলে? এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের পর্দা খুলে ফেলার নির্দেশ দেন এবং ইতিকাফ ছেড়ে দেন। তারপর শাওয়ালের প্রথম দশকে তা পূর্ণ করেন।
হাদিস থেকে যা শিখলাম :
১. মহিলাদের জন্য
মসজিদে ইতিকাফ করার অনুমতি রয়েছে যদি ফিতনা থেকে নিরাপদ হয়।
২. মহিলাদের জন্য স্বামীর অনুমতি
ছাড়া ইতিকাফ করা বৈধ নয়। এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত। অনুমতি ছাড়া যদি ইতিকাফ করে তাহলে স্বামীর জন্য
তাকে ইতিকাফ থেকে বের করে আনার অনুমতি রয়েছে। স্বামী ইতিকাফের অনুমতি দেয়ার পর যদি
দেখে কোনো কারণে স্ত্রীকে বের করে আনা উচিৎ তাহলে সে তা করতে পারে।
৩. শুরু করার পর
বিশেষ কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে ইতিকাফ ছেড়ে দেয়া জায়িজ আছে।
৪. স্বামীর জন্য নিজ স্ত্রী ও পরিবারকে
আদব শিক্ষা দেয়া, তাদের কিছু
সংশোধনের প্রয়োজন হলে সংশোধন করে দেয়া জায়িজ আছে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম স্ত্রীদের ইতিকাফের অনুমতি দেয়ার পর পরস্পর অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার
আশংকায় তা প্রত্যাহার করে নেন।
৫. নফল ইবাদত শুরু
করার পর তা সম্পন্ন করতে না পারলে তার কাজা করার নিয়ম রয়েছে।
৬. অতিরিক্ত আভিজাত্য দেখানো কুপরিনতি
বয়ে আনে কারণ তা হিংসা থেকে সৃষ্ট। আর হিংসা করা মহাপাপ।
৭. ভালো কাজও ছেড়ে
দেয়া জায়িজ আছে যদি তাতে কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে।
৮. ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদে নির্জনে
ইবাদত-বন্দেগির সুবিধার্থে একটি জায়গা নিজের জন্য বরাদ্দ করে নেয়া জায়িজ আছে যদি এতে
মুসল্লিদের সমস্যা না হয়। আর জায়গাটি নির্ধারণ করা চাই মসজিদের খালি অংশে বা শেষ প্রান্তে
যাতে মুসল্লিরাও সমস্যা বোধ না করে আবার ইতিকাফকারীর নির্জনতাও পূর্ণতা পায়।
৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সুন্দর আখলাক এবং স্ত্রীদের সঙ্গে তার চমৎকার হৃদ্যতা। কারণ
তিনি যখন তাদেরকে ইতিকাফ করতে বারণ করেন শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং তাদের ‘রিয়া’র আশংকায়,
নিজেও তাদের সঙ্গে ইতিকাফ ছেড়ে দেন। অথচ তিনি তাদেরকে বারণ করে নিজে
ইতিকাফ করতে পারতেন। কিন্তু তা করেন নি তাদের প্রতি আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা দেখিয়ে এবং
তাদের মন খুশি করার জন্য। এভাবেই প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য স্ত্রীকে শাসন করার সময়
লক্ষ্য রাখা যে শাসন যেন প্রতিশোধের পর্যায়ে চলে না যায় এবং দাম্পত্য ভালোবাসায় ব্যাঘাত
না ঘটায়।
১০. ইতিকাফরত মহিলার যদি মাসিক
আরম্ভ হয় তাহলে তিনি ইতিফাক ছেড়ে চলে যাবেন এবং পবিত্র হওয়ার পর বাকিটুকু পুরো করবেন।
১১. যদি কোনো ব্যক্তি
নফল ইবাদতের নিয়ত করে কিন্তু তা এখনো শুরু করেনি তাহলে তার জন্য সুযোগ আছে ইবাদতটি
একেবারে ছেড়ে দেয়ার এবং ইচ্ছা করলে পরবর্তী করার।
১২. যে ব্যক্তি কোনো ইবাদতে রিয়ার
উপস্থিতি টের পাবে তার জন্য সে ইবাদত পরিহার করা জায়িজ আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম- এর আমলই তার প্রমাণ। কেননা তিনি স্ত্রীদের মাঝে রাসূলের প্রতি ভালোবাসা
প্রকাশের ধরন দেখে তাতে রিয়ার সম্ভাবনায় ইতিকাফ ভঙ্গ করান। আর নিজের ইতিকাফটিকেও পিছিয়ে
দেন।
১৩. ইতিকাফকালে যথাসম্ভব
স্ত্রী-পরিজন এবং মানব সঙ্গ থেকে দূরে থাকা মুস্তাহাব। তবে জামাতে সালাত আদায়, খাওয়া বা অন্য কোনো প্রয়োজনে এতে দোষ
নেই।
১৪. ইতিফাক করা সুন্নত রমজান মাসে।
তবে অন্য মাসেও ইতিকাফ করা যায়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাওয়ালেও
ইতিকাফ করেছেন। (রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়াহ আর অন্য মাসে
নফল ও কাজা ইতিকাফ করা যায়।)
১৫. মসজিদের ঘরে
যার গেট মসজিদের ভেতরে ইতিকাফ করা যাবে। গেট যদি মসজিদের বাইরে হয় তাহলে সে ঘরে ইতিকাফ
করা যাবে না।
. বুখারি : ১৯৪০
. মুসলিম : ১১৭২
. শরহুন নাবাবি : ৮/৭০, আল মুফহিম : ৩/২৪৮
. ইবনে মুলকিন র. এ ব্যাপারে সকলেন ইজমা নকল করেছেন
তদীয় কিতাব ‘শরহুল উমদা’তে : ৫/৪২৯
. শরহুন নাবাবি : ৮/৭০, মুফহিম : ৩/২৫৪, ফতহুল বারি : ৪/২৭৭
. শরহুন নাবাবি : ৮/৬৯ মুফহিম : ৩/২৪৫
. প্রাগুক্ত
. শরহু ইবনে বাত্তাল : ৪/১২৮, ফতহুল বারি : ৪/২৭৭
. শরহুন নাবাবি : ৮/৬৯
. ইবনে বাত্তাল : ৪/১৭৪, মুগনি : ৪/৪৮৭
. শরহু ইবনে বাত্তাল : ৪/১৮৩
. প্রাগুক্ত
. শরহু ইবনে মুলকিন : ৫/৪৩৫
. ফাতাওয়ায়ে লাজনা : ৬৭১৮
সাওম/রোজা সংক্রান্ত বই |
||
ক্রম
|
বই
|
লেখক
|
১
|
আব্দুর রহমান বিন আব্দুল আযীয আস-সুদাইস
|
|
২
|
সিয়াম রাসুলুল্লাহর(স)
রোযা
|
ডাঃ জাকির নায়েক
|
৩
|
শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
|
|
৪
|
সংকলনঃ মুহাম্মদ নাসীল শাহরুখ
|
|
৫
|
আলী হাসান তৈয়ব
|
|
৬
|
অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলাম
|
|
৭
|
ফয়সাল বিন আলী আল বা'দানী
|
|
৮
|
আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
|
|
৯
|
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন
|
|
১০
|
আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
|
|
১১
|
জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
|
|
১২
|
সংকলনঃ আবুল কালাম আজাদ
|
O.H.I
For More Visit:
বই পড়ুনঃ