السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-২
অসত্য মেডিকেল সার্টিফিকেট
পরিতাপের বিষয়, বর্তমান যুগে মিথ্যার ব্যাপকতা এতোই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, যারা হারাম-হালাল, জায়েয-নাজায়েয এবং শরীয়তের ওপর চলতে চেষ্টা করেন তারাও এ নিকৃষ্ট ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, মিথ্যার বহু আকার-ধরনকে তারা মিথ্যার আওতা-বহির্ভূত করে রেখেছেন।
অথচ সে মিথ্যাকাজ করে দ্বিগুণ গোনাহ উপার্জন করছে। প্রথমত, মিথ্যা বলার গোনাহ, দ্বিতীয়ত, গোনাহকে গোনাহ মনে না করার গোনাহ।
একবার এক ব্যক্তি, যিনি অত্যন্ত নেককার, নামায রোযার পাবন্দ ছিলেন, যিকির-আযকারেও লিপ্ত থাকতেন, বুযুর্গদের সহবতেও থাকতেন। তিনি দেশের বাইরে থাকতেন। তিনি একবার দেশে এলেন এবং আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কখন কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছেন? উত্তরে তিনি বললেন ০৮/১০ দিন পর ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা রাখি। আমার ছুটিও শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে আমি গতকালই অতিরিক্ত ছুটির জন্য একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দিয়েছি।
দ্বীন কি শুধু নামায রোযার নাম ?
মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রেরণের কথাটি এমনভাবে তিনি বললেন যেন এটা কোনো ব্যাপারই নয়। এটা বরং খুবই সাধারণ বিষয়। তার মধ্যে চিন্তিত হওয়ার নুন্যতম লক্ষণটিও প্রকাশ পেতে দেখলাম না। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কীভাবে মেডিকেল সার্টিফিকেট পাঠালেন। উত্তরে বললেন, অতিরিক্ত ছুটি আদায়ের জন্য প্রেরণ করেছি। যদি এমনিই ছুটি চাইতাম তাহলে ছুটি মিলত না। এ সার্টিফিকটের কল্যাণে আমি ছুটি পেয়ে যাব। আমি পুনরায় প্রশ্ন করলাম, আপনি মেডিকেল সার্টিফিকেটে কি লিখেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, তাতে লেখা আছে, আমি এতটুকু অসুস্থ যে এ অবস্থায় আমার পক্ষে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। আমি বললাম, জনাব! দ্বীন কি শুধু নামায রোযার নাম? যিকিরে মশগুল থাকার নাম? আপনার তো বুযুর্গদের সাথে সুসম্পর্কও রয়েছে। এতদসত্ত্বেও কি করে এ মেডিকেল সার্টিফিকেট পাঠালেন? অথচ আপনি তো সুস্থ ব্যক্তি।
তিনি তৎক্ষণাৎ পরিস্কারভাবে বলে দিলেন, আজই প্রথম আমি আপনার মুখ থেকে এ ধরনের কথা শুনলাম, এও একটি মিথ্যা কাজ? আমি বললাম, জনাব! তাহলে আর মিথ্যা কাকে বলে? উনি জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে অতিরিক্ত ছুটি কিভাবে নেব? আমি বললাম আপনার যতদিন ছুটি একান্ত প্রয়োজন ততদিন ছুটি নেবেন। অতিরিক্ত প্রয়োজন হলে বিনা বেতনে ছুটি গ্রহণ করুন, তাহলে তো আপনাকে এ মিথ্যা সার্টিফিকেট প্রদানের প্রয়োজন পড়ে না।
আজকাল মানুষ মনে করে, মিথ্যা মেডিকেল সার্টিফিকেট পাঠানো মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত নয়, আর দ্বীন তো শুধু নামায রোযা, যিকির-আযকারের নাম। জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অহরহ মিথ্যা বলার দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
মিথ্যা সুপারিশ
একজন বিজ্ঞ, জ্ঞানী ও বুযুর্গ ব্যক্তির একটি সুপারিশ-নামা আমার নিকট আসল। আমি তখন জেদ্দায় অবস্থান করছিলাম। পত্রে তিনি লিখেছেন, পত্রবাহক ওমুক দেশের নাগরিক। তবে তিনি আপনার দেশে যেতে চান। অতএব আপনি দূতাবাসে একটি সুপারিশ লিখে দেন, তাকে যেন আপনার দেশের একটি পাসপোর্ট প্রদান করা হয়, এ সূত্রে যে তিনি আপনার দেশেরই নাগরিক এবং তার পাসপোর্ট হারিয়ে গিয়েছে। এ মর্মে আপনার দেশের দূতাবাসে একটি দরখাস্তও জমা দেয়া আছে। অতএব, আপনি তার সুপারিশটি করে দেবেন।
পাঠকবৃন্দ! আপনারাই বলুন : ওখানে উমরা পালন হচ্ছে, হজ্জ আদায় হচ্ছে, তাওয়াফ ও সায়ী হচ্ছে, সে দেশে অবস্থান করা সত্ত্বেও এধরনের মিথ্যা ও ধোঁকাবাজির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। মনে হয় যেন এসব ব্যাপার তাদের কাছে দ্বীনের কোনো অংশই না। আসল ব্যাপার হল দ্বীনের সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক খুবই ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
মানুষ এটা ধারণা করে নিয়েছে যে, ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যাকে মিথ্যা মনে করে বললেই কেবল মিথ্যা হবে। আর ডাক্তারের কাছ থেকে মিথ্যা মেডিকেল সার্টিফিকেট বানিয়ে নেওয়া, মিথ্যা সুপারিশনামা লিখিয়ে নেয়া অথবা মিথ্যা মামলা দায়ের করা, এগুলো যেন কোনো মিথ্যাই নয়। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন :
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
(সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তার কাছে সদা উপস্থিত সংরক্ষণকারী রয়েছে।) [সূরা কাফ : ১৮]
অর্থাৎ তোমাদের মুখ থেকে যা কিছু উচ্চারিত হয় তা তোমাদের আমলনামায় রেকর্ড করা হচ্ছে।
মূলঃশামসুল হুদা আযীযুল হক
Collected From: http://www.islamhouse.com/
be Organized by Holy Islam
O.H.I
For More Visit: