السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-৫
আদালতে মিথ্যা
আজকাল সমাজে এটি প্রচলিত হয়ে গেছে যে, কেউ অন্য কোথাও মিথ্যা কথা না বললেও আদালত ভবনে মিথ্যা বলবেন-ই। সাধারণ মানুষকে তো এ পর্যন্ত বলতে শোনা যায় যে, মিয়া! সত্য সত্য বলে দাও। মিথ্যা বলতে হয় তাহলে কিছুক্ষণ আদালতে দাঁড়াও।
উদ্দেশ্য হলো মিথ্যা বলার স্থান হলো আদালত ভবন। ওখানে গিয়ে মিথ্যা বল। এখানে পারস্পরিক আলোচনা হচ্ছে, এখানে সত্য সত্য বলে দাও। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা সাক্ষীকে শিরক সমতুল্য অপরাধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রত্যয়নপত্র
কারো সম্পর্কে ভালভাবে না জেনে অথবা সত্য জানা থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা বক্তব্যযুক্ত সার্টিফিকেট প্রদান করা, উদাহরণত সুস্থ্য থাকা সত্ত্বেও কাউকে অসুস্থ্য হওয়ার সার্টিফিকেট প্রদান করা অথবা পরীক্ষায় ফেল করা সত্ত্বেও পাশ হওয়ার সার্টিফিকেট প্রদান করা, এসবই হল মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত।
আমার নিকট অনেক লোক তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রত্যয়ন পত্রের জন্য আসেন। সেখানে এ কথা উল্লেখ করতে হয় যে ওমুক প্রতিষ্ঠানটি বাস্তবিক অর্থেই প্রতিষ্ঠিত আছে। ওখানে অমুক ক্লাশ পর্যন্ত লেখা-পড়া হচ্ছে। এ ধরনের প্রত্যয়ন পত্রের উদ্দেশ্য দাতাদেরকে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব সম্পর্কে আশ্বস্ত করা, তাদের কাছে প্রতিষ্ঠানটিকে গ্রহণযোগ্য করে উপস্থাপন করা। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য মনও চায় যে, একটি প্রত্যায়ন পত্র লিখে দিই।
কিন্তু এটা তো একটি সাক্ষী, আর যখন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই তখন আমি কী করে একটি প্রত্যয়ন পত্র লিখতে পারি? এটা তো প্রকাশ্য মিথ্যা সাক্ষী। তবে হ্যাঁ যদি প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে অবগত থাকি তাহলে আমার অবগতির মাত্রানুযায়ী আমি লিখে দিতাম।
বইয়ের ভূমিকা লেখা একটি সাক্ষী
অনেকেই বইয়ের ভূমিকা লিখে নেওয়ার জন্য আসেন, তারা বলেন যে, আপনি লিখে দিন, এ বইটি ভাল ও সঠিক। অথচ কেউ যখন সম্পূর্ণরূপে কোনো বই না পড়বে অথবা তাতে আলোচিত বিষয়ের উপর পূর্ণভাবে অবগত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কিভাবে তা লিখে দেয়া সম্ভব যে, এটা সঠিক বই? কিভাবে বলল যে, এর মধ্যে কোন ভুল নেই?
অনেক লোক এ ধারণাবশত ভূমিকা লিখে দেন যে, এ ভূমিকার ফলে পুস্তক লেখকের ফায়দা হবে, তার মঙ্গল হবে। অথচ ভূমিকা একটি সাক্ষীস্বরূপ এবং তার সাক্ষীতে ভুল থাকাটাকে মানুষ ভুল হিসেবে মনেই করবে না।
অনেকেই বলেন, জনাব! আপনার কাছে তো সামান্য কাজের জন্যই এসেছি। একটু কষ্ট করে যদি দুই কলম লিখে দিতেন, অথবা একটি সার্টিফিকেট দিতেন তাহলে খুব উপকার হতো, আপনারও কোনো ক্ষতি হতো না? লোকটি অথবা বইটি সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে যদি না লিখে দেই তবেই সে মনে মনে বলতে শুরু করে, এই মানুষটি তো খুব খারাপ, কাউকে একটি সার্টিফিকেট পর্যন্ত লিখে দিতে চান না।
অথচ কথা তো তা নয়। মূল বিষয় হচ্ছে, আল্লাহর নিকট জবান থেকে বের হয়ে-আসা প্রতিটি কথারই হিসেব দিতে হবে। যা কলম দ্বারা লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে তা তো আল্লাহর নিকট রেকর্ড হচ্ছেই। জিজ্ঞাসিত হতে হবে যে, তুমি অমুক সুন্দর শব্দসমূহ যা মুখ থেকে বের করেছ তা কোন ভিত্তির উপর করেছ? তা স্বেচ্ছায় প্রনোদিত হয়ে করেছ ; না অনিচ্ছাকৃতভাবে করেছ।
মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা
প্রিয় পাঠক! আমাদের পরিবেশ মিথ্যার এক ভয়াবহ ব্যাধিতে আক্রান্ত। আর এ ব্যাধিটি দ্বীনদার ব্যক্তি, শিক্ষিত ব্যক্তি, নামাযী, বুযুর্গদের সাথে সম্পর্ক রাখেন, জিকির-আযকারে লিপ্ত এমন ব্যক্তিরাও মিথ্যাকে না জায়েয বা খারাপ মনে করেন না। একটি অসত্য সার্টিফিকেট দেয়াকেও তারা পাপ বলে ভাবছেন না। হাদীসে যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাফেকদের নিদর্শন বলতে গিয়ে বলেছেন, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। এ সবই দ্বীনে ইসলামের অংশ। এগুলো দ্বীনের আওতাভুক্ত মনে না করা পথভ্রষ্টতার লক্ষণ। এ জন্য আমাদের এ সব থেকে পরিত্রাণ আবশ্যক।
অসত্য বলার অনুমতি
হ্যাঁ। এমন কিছু বাস্তবতা আছে, যেখানে অসত্য বলার অনুমতি রয়েছে। যেমন যেসকল ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার ব্যাপারে কেউ অপারগ হয়ে পড়ে। মিথ্যা বলা ছাড়া তার অন্য কোনো বিকল্প থাকে না। মিথ্যা না বললে নির্মম অত্যাচারের শিকার হতে হবে যা সহ্য করা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় শরিয়ত অসত্যের আশ্রয় গ্রহণকে অনুমতি দিয়েছে। এখানে কথা হচ্ছে প্রথমত, সরাসরি অসত্য বলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে, বরং এমন ঘোর-প্যাচমূলক শব্দ বলতে হবে যাতে এ মুসিবত দূর হয়ে যায়। যাকে শরিয়তের পরিভাষায় তা'রীজ এবং তাওরিয়া বলা হয়। যার উদ্দেশ্য হল এমন শব্দ প্রয়োগ যাতে বাহ্যত শব্দটি অন্য অর্থ প্রকাশ করে। অর্থাৎ প্রশ্নকারীর দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরে যায়। আর বাস্তবে মনে মনে শব্দের মূল অর্থকেই চিত্রিত করে রাখতে হবে। ঠিক এভাবেই বহুমূখী অর্থ প্রকাশ করে এমন শব্দ বলে নিজেকে সরাসরি অসত্য বলা থেকে রক্ষা করবে।
মূলঃশামসুল হুদা আযীযুল হক
Collected From: http://www.islamhouse.com/
be Organized by Holy Islam
O.H.I
For More Visit: