Wednesday, December 7, 2011

মানুষের প্রাণ বাঁচাতেই কিসাস বা প্রাণদণ্ড-১


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

মানুষের প্রাণ বাঁচাতেই কিসাস বা প্রাণদণ্ড-

সম্প্রতি সৌদি আরবে আট বাংলাদেশী মুসলিম ভাইকে ইসলামী দণ্ডবিধান তথা কিসাস হিসেবে শিরোচ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এ নিয়ে এক শ্রেণীর মিডিয়া বুঝে না বুঝে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করার প্রয়াস পাচ্ছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় আইন যা মূলত কুরআনের আইন- এর আওতায় এদের শিরোচ্ছেদ কার্যকর করা হয়েছে। উপযুক্ত সাক্ষী-প্রমাণ ও দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর্ব শেষে এ শাস্তি কার্যকর করা হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টাও সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে জাতিকে ব্রিফ করেছেন। 

তারপরও সাধারণ মুসলিম ভাই-বোনদের ইসলামের দণ্ডবিধি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে বিভ্রান্ত করার তথা ইসলাম থেকে তাদের শ্রদ্ধা তুলে নেবার একটি অপপ্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ অপ্রপ্রচারের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে ইসলামের শান্তিময় যৌক্তিক এবং পরিপূর্ণ মানবিক এই কিসাস বিধান সম্পর্কে কিছু লিখা জরুরী মনে হয়েছে। আশা করি এটি পড়লে মুসলিম ভাই-বোনদের মধ্যে ঈমানের দৃঢ়তা আসবে এবং সকল সন্দেহ-সংশয় কেটে যাবে। আল্লাহই তাওফীকদাতা। 

প্রথমেই বুঝতে হবে ‘কিসাস’ জিনিসটা কী? আল কুরআনের পরিভাষায় কিসাস’ শব্দের অর্থ হলো প্রাণের বদলে প্রাণ কেউ একজনকে অন্যায়ভাবে খুন করেছে বলে তা বিচারে প্রমাণিত ব্যক্তিকে সমমানের শাস্তি প্রদান ইসলামের বিধান। এ মর্মে পবিত্র কুরআনের যে আয়াতে মৃত্যুদণ্ডের বিধানটি বর্ণিত হয়েছে তা হলোআল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِصَاصُ فِي ٱلۡقَتۡلَىۖ ٱلۡحُرُّ بِٱلۡحُرِّ وَٱلۡعَبۡدُ بِٱلۡعَبۡدِ وَٱلۡأُنثَىٰ بِٱلۡأُنثَىٰۚ فَمَنۡ عُفِيَ لَهُۥ مِنۡ أَخِيهِ شَيۡءٞ فَٱتِّبَاعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَأَدَآءٌ إِلَيۡهِ بِإِحۡسَٰنٖۗ ذَٰلِكَ تَخۡفِيفٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَرَحۡمَةٞۗ فَمَنِ ٱعۡتَدَىٰ بَعۡدَ ذَٰلِكَ فَلَهُۥ عَذَابٌ أَلِيمٞ ١٧٨ وَلَكُمۡ فِي ٱلۡقِصَاصِ حَيَوٰةٞ يَٰٓأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٧٩ ﴾ [البقرة: ١٧٨،  ١٧٩] 

‘হে মুমিনগণনিহতদের ব্যাপারে তোমাদের উপর কিসাস ফরয করা হয়েছে। স্বাধীনের বদলে স্বাধীনদাসের বদলে দাসনারীর বদলে নারী। তবে যাকে কিছুটা ক্ষমা করা হবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকেতাহলে সততার অনুসরণ করবে এবং সুন্দরভাবে তাকে আদায় করে দেবে। এটি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সহজীকরণ ও রহমত। সুতরাং এরপর যে সীমালঙ্ঘন করবেতার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর হে বিবেকসম্পন্নগণকিসাসে রয়েছে তোমাদের জন্য জীবনআশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৭৮-১৭৯} 

প্রাণনাশের বদলায় প্রাণদণ্ডের মধ্যে রয়েছে জীবনের নিরাপত্তা কারণযৌক্তিকভাবেই তার কার্যকারিতা প্রমাণিত। যেমন ধরা যাককয়েক বছর আগে বাংলাদেশে এরশাদ শিকদার নামে এক ব্যক্তিকে তার জীবনে ৬০টি হত্যাকাণ্ড ঘটাবার অপরাধে দেশের বিচার বিভাগ তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে এবং সেটি কার্যকরও করা হয়। এক্ষেত্রে যদি প্রথম হত্যাকাণ্ডের পরেই পবিত্র কুরআনের দণ্ডবিধি মোতাবেক বিচার করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতোতাহলে ৫৯টি নিরপরাধ মানুষের প্রাণ রক্ষা পেত। কিন্তু কুরআনের এ নিরপেক্ষ অপরাধ-দণ্ডবিধি সমাজে চালু নেই বলেই সব সমাজে অপরাধপ্রবণতা আজ ক্রমবর্ধমান। এই আইনের বিকল্প হিসেবে মানব রচিত অপরাধ-দণ্ডবিধিসমূহ অপরাধ নির্মূল এবং তা হ্রাসে আজ পর্যন্ত তেমন কার্যকর ও সফল প্রমাণিত হয়নি। বস্তুত এ কারণেই যখন প্রতি বছর সারা বিশ্বের অপরাধমূলক ঘটনার পরিসংখ্যান বের হয় তখন দেখা যায়অন্যান্য দেশের তুলনায় সৌদি আরবে হত্যাকাণ্ডসহ অপরাধমূলক ঘটনাবলীর সংখ্যা সবচেয়ে কম

বিশ্বের যেসব দেশ মৃত্যুদণ্ডকে অমানবিক’ বলে আখ্যায়িত করেতাদের কাছে জিজ্ঞাসাসংশ্লিষ্ট খুনি অন্যকে হত্যা করে কোন মানবিক কাজটি করেছিলতার এই বর্বরতাপূর্ণ অপরাধের শাস্তি হিসেবেই তো সংশ্লিষ্ট অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড বা নির্দিষ্ট মেয়াদ ও মাত্রায় কারাদণ্ড প্রদানের বিধান করা হয়েছে। যারা কুরআনের আইনের বিপরীতে হত্যা বন্ধের বিকল্প ব্যবস্থা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে তারা লক্ষ্য অর্জনে তেমন সফলতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধের মাত্রা সেসব দেশে দ্রুত বেড়েই চলেছে। 

আসলে মানবাধিকার বা মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা তাদের উদ্দেশ্য নয় যারা কারণে অকারণে মানুষেরই সৃষ্টিকর্তা এবং মানুষের ওপর সবচে দয়াবান সত্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিধানকে কথায় কথায় নানা কুযুক্তি দিয়ে ‘অমানবিক’ বলার মতো অমনুষত্ব দেখায়। মানুষের প্রতি যদি সত্যিই তাদের দরদ থাকত তাহলে খোঁড়া অজুহাতে আফগান ও ইরাকে হামলা করে এই তথাকথিত মানবতাবাদী পশ্চিমারা লাখ লাখ নিরপরাধ নারী ও শিশুকে হত্যা করত না। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে ন্যক্কারজনকভাবে সমর্থন করত না। নিরপরাধ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর তাদের হামলাকে সমর্থন করত না। তারা এর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে প্রকারান্তরে জায়নবাদী ইসরাইলকেই সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে।  

কিসাস দণ্ডাদেশ বা মৃত্যু দণ্ডাদেশ প্রকাশ্যে কার্যকর করার ক্ষেত্রেও অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। তাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকেও নিষ্ঠুর বা অমানবিক বলে থাকে। আসলে তারা অপরাধের শাস্তি বিধানে ইসলামী আইনের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন নয়। মূলত ইসলামের শাস্তি আইনের লক্ষ্য শুধু অপরাধীকে শাস্তি দেয়াই নয়বরং যাতে এ ধরনের অপরাধ ভবিষ্যতে আর সংঘটিত না হয়এজন্য মানুষকে সাবধান করাও ইসলামী আইনের লক্ষ্য। দণ্ডাদেশ বা মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রকাশ্যে কার্যকর হলে এবং হাজার হাজার মানুষ তা দেখার সুযোগ পেলে মানুষ এ শাস্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে সাবধান ও সংশোধন হতে পারে। এবং তার ফলে এ ধরনের অপরাধ সমাজ থেকে হ্রাস পেতে পারে। যিনার মতো একটি ঘৃণ্য অপরাধের শাস্তির কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,  

﴿ ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي فَٱجۡلِدُواْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖۖ وَلَا تَأۡخُذۡكُم بِهِمَا رَأۡفَةٞ فِي دِينِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۖ وَلۡيَشۡهَدۡ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٞ مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢ ﴾ [النور : ٢] 
‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশটি করে বেত্রাঘাত কর। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক তবে আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের আযাব প্রত্যক্ষ করে।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত : ০২} 

মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি পরম অনুগ্রহশীল এবং তিনি চান না যেতাঁর বান্দারা কোনো অন্যায় অবিচার ও পাপ কাজে দণ্ডিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হোক। তাই তিনি এ জাতীয় চরম শাস্তি থেকে তাদের রক্ষার নানান বিকল্প ব্যবস্থাও রেখেছেন। কোনো খুনির এই প্রান্তিক শাস্তির বেলায়ও তাই দেখা যায় তিনি এই বিধান করেছেন যেনিহত ব্যক্তির অভিভাবকরা যদি খুনি থেকে রক্তমূল্য হিসেবে ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দেয় অথবা রক্তমূল্য ছাড়াই তাকে ক্ষমা করে দেয়তাহলে এটারও তিনি অবকাশ রেখেছেন। কিন্তু নিহত ব্যক্তির অভিভাবকরা যদি রক্তমূল্য না নিয়ে খুনিকে মাফ না করেতাহলে তাকে কুরআনের কিসাস’ আইন মোতাবেক মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং অপরাধের তারতম্য হিসেবে জরিমানা প্রদান অথবা বিভিন্ন মেয়াদে সে কারাদণ্ড ভোগ করে

সব ধরনের বৈষম্যবোধের ঊর্ধ্বে মানবস্রষ্টা মহান আল্লাহ তাঁর সব বান্দার শাস্তি-নিরাপত্তা বিধানে খুন ও যাবতীয় অপরাধ দমনে যেসব বিধান প্রদান করেছেনন্যায়বিচারের দিক থেকে তা অতুলনীয় ও অনন্য। যে কোনো মুসলমান এমন কি ন্যায়বিচারকামী যে কোনো মানুষই বিনাবাক্যে তা তা স্বীকার করে নিতে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে ভাষাবর্ণগোত্রঅঞ্চল ইত্যাদি দৃষ্টিকোণ থেকে এ আইনের ব্যাপারে বিরূপ মানসিকতা পোষণ ও তার ব্যাপারে সমালোচনা নিঃসন্দেহে ঈমানী চেতনারই পরিপন্থী নয়সাধারণ মানবিক চেতনারও তা পরিপন্থী। বিচারে বৈষম্য বিলোপ করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 

«إِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ ، وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الْحَدَّ وَايْمُ اللهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ ابْنَةَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا».

‘নিশ্চয় তোমাদের পূর্ববর্তী কওমের লোকেরা ধ্বংস হয়েছে এ কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোনো বংশীয় লোক চুরি করত, তারা তাকে ছেড়ে দিতো (শাস্তি প্রদান করত না)। আর তাদের মধ্যে গরীব কেউ যখন চুরি করতো, তার ওপর তারা হদ কায়েম করত। আল্লাহর শপথ, মুহাম্মদের মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করত, তবে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দিতাম।’ [বুখারী : ৩৪৭৫] 

অপরাধীদের সঙ্গে আত্মীয়তাভাষাবর্ণগোত্রঅঞ্চলের সম্পর্কজনিত কারণে এই দণ্ডাদেশ ও তা কার্যকরকরণে কারও অন্তরে দুঃখ-কষ্টের অনুভব অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে দণ্ডের শিকার আপনজন কেউ হলে সেখানে মনস্তাত্ত্বিক কারণেই এমন মানসিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কিন্তু অভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে যদি চিন্তা করা যায় যেঅপর কোনো দেশেরকোনো ভাষা বা গোত্রের কেউ আমার কোনো আপনজন ও দেশের কোনো ভাইকে এভাবে খুন করলেতখন বিষয়টি আমরা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবসেই অবস্থাটা সামনে নিয়ে ভেবে দেখতে হবে

মানব সভ্যতার বর্তমান চরম উত্কর্ষের যুগেও অপরকে হত্যার মতো এই বর্বরতা কেনযারা খোদায়ী নিরপেক্ষ ও ন্যায় বিধানের সমালোচনা করে অথচ মানবাধিকার মৌলিক অধিকারগণতন্ত্রস্বাধীনতা ও মানবিক মূল্যবোধের বড় বড় নীতিকথা উচ্চারণ করেতারা নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে যখন অন্যায় অসত্য অভিযোগে কোনো দেশের ওপর অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় কিংবা কোথাও পরোক্ষ গৃহযুদ্ধের উস্কানি দিয়ে কোনো দেশে হাজারও মানুষের জীবন কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র চালায় অথবা নিজেরাই ড্রোন হামলা করে মুহূর্তের মধ্যে নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ হাজারও নিরাপরাধ মানুষ নির্বিচারে হত্যা করেতখন তারা কিংবা তাদের মতাবলম্বীদের কেউ প্রাণদণ্ডের ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের কোনো ন্যায় বিধান সম্পর্কে বিরূপ মানসিকতা দেখালেসেটা সর্বোতভাবেই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার উপযোগী। বলা বহুল্যসারা বিশ্বময় বর্তমানে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইসলামের আন্তর্জাতিক বৈরী শক্তি ও তাদের স্থানীয় দোসররা যেই সার্বিক অভিযান চালাচ্ছেতার একমাত্র কারণ হলোবিশ্বে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের বস্তুবাদী জীবন-দর্শনের সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাবে গোটা মানবগোষ্ঠী ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় ইসলামের খোদায়ী বিধানের দিকেই ধাবিত হয়ে তখন ওই সব শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করবে। তাই যেখানেযেই দেশে মানব রচিত আইনের ফলে প্রায়ই অন্যায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়ে হাজারো মায়ের কোল খালি হচ্ছেশত শত নারী বিধবা হচ্ছেগুম করা লাশ টুকরো টুকরো করে মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে এবং প্রকাশ্যে নির্মমভাবে মানুষ মেরে লাশের ওপর নৃত্য করা হচ্ছেসেক্ষেত্রে কিসাসের একটি আইনের প্রয়োগে আরও অগণিত মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি ওঠার কথাসেক্ষেত্রে এর বিরূপ সমালোচনা যেমন উদ্দেশ্যমূলক তেমনি নিঃসন্দেহে বিবেকবোধহীন ও ইসলামবিদ্বেষ প্রসূত। 

সম্প্রতি সৌদি আরবে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে ৮ বাংলাদেশীর প্রাণদণ্ডের বিষয়টি নিয়ে শান্ত ও স্থির মস্তিষ্কে আমাদের ভেবে দেখা উচিত। সৌদি আরবের যে কেইসে একই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আরও দুজন সৌদি নাগরিককেও একইভাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছেসেক্ষেত্রে ওই বিচারের ব্যাপারে বৈষম্য চিন্তার সুযোগ আছে বলে মনে করা যায় না। বরং এ ধরনের সমালোচনা আমাদের মতো দেশেযেখানে হত্যাগুম ক্রমবর্ধমান গতিতে অগ্রসরমানসেখানে সম্পূর্ণভাবেই বেমানান। তাতে এটাই প্রমাণিত হবে যেআমরা কুরআনের আইনের প্রতি অনাগ্রহীই নইবরং সাধারণ ন্যায় নীতিবোধ থেকেও বঞ্চিত। আমাদের দেশের কিছু যুবকের ভুল ও অপরাধের কারণে এই প্রান্তিক শাস্তির শিকার হওয়ায় আমরা বৈষয়িক দিক থেকে অনুতপ্ত ও লজ্জিত এবং মানবিক কারণে ব্যথিত। কিন্তু নানান প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আল-কুরআনুল কারীমের কিসাস বিধানের ওপর অটল থেকে মানবতাকে হত্যা প্রবণতার হাত থেকে রক্ষার যে আইনানুগ চর্চা হয়েছে তার প্রতি আমরা আপত্তি ও ক্ষোভ জানাতে পারি না
চলবে
আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী 





be Organized by Holy Islam 
O.H.I 
For More Visit: