Monday, February 6, 2012

নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) র বৈশিষ্ট্য


   السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) র বৈশিষ্ট্য

  •  তিনি আদম সন্তানের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও তাদের নেতা। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমার পালনকর্তার নিকট আদম-সন্তানদের মধ্যে আমিই সর্বাধিক সম্মানিতএতে অহংকারের কিছু নেই। (তিরমিযী)http://www.quraneralo.com/wp-content/uploads/2011/10/Muhammad.jpg
  • তিনি নবী-রাসূলদের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কিয়ামতের দিন আমিই হব নবীগণের ইমাম (নেতা)তাঁদের মুখপত্র এবং তাঁদের সুপারিশ কারীএতে কোন অহংকার নেই। (বুখারী ও মুসলিম)
  • তিনি সর্বপ্রথম পুনরুত্থিত হবেন। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “সকলের আগে আমিই কবর থেকে উত্থিত হব। অতঃপর আমাকে জান্নাতের একজোড়া পোশাক পরানো হবে। যখন সকল মানুষ আল্লাহর দরবারে একত্রিত হবেতখন আমি তাদের ব্যাপারে বক্তব্য পেশ করব। তারা যখন নিরাশ ও হতাশা গ্রস্থ হবে তখন আমিই তাদেরকে সুসংবাদ প্রদানকারী হব। সেদিন প্রশংসার পতাকা আমার হাতেই থাকবে। (তিরমিযী)
  • তিনি সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
  • তিনি হাশরের মাঠে সর্ব প্রথম শাফায়াত করবেন এবং সর্ব প্রথম তাঁর শাফায়াত গ্রহণ করা হবে।
  • আল্লাহ তাআলা যেমন করে ইবরাহীম (আঃ)কে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন। তেমনি নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
  • তিনি এবং তাঁর উম্মতকে ছয়টি বিষয় দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছেযা অন্যান্য নবীদেরকে দেয়া হয়নি। “আমাকে ছয়টি জিনিস প্রদান করে অন্যান্য নবীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। ১) অল্প কথায় অধিক অর্থপ্রকাশ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ২) ভীতি দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। ৩) গনীমতের সম্পদ আমার জন্য বৈধ করা হয়েছে। ৪) পৃথিবীর মাটি আমার জন্য মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম করা হয়েছে। ৫) আমাকে সৃষ্টিকুলের সকলের জন্য রাসূল করে পাঠানো হয়েছে। ৬) আমার মাধ্যমেই নবীদের ধারাবাহিকতা শেষ করা হয়েছে। (মুসলিম)
  • হাশরের মাঠে নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাউয সর্ববৃহৎ। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আমি আপনাকে হাউযে কাওছার প্রদান করেছি। (সূরা      কাওছার-১)
  • তিনি নিষ্পাপ। তাঁর পূর্বের এবং পরের সমস্ত- ত্রুটি মার্জনা করা হয়েছে।  وَيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا  যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটি সমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা ফাতাহ-২) আমি লাঘব করেছি আপনার বোঝা। (সূরা শারাহ-২)
  • আল্লাহর নিকট তিনি ছিলেন সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত।
  • নবীজীর কথা মেনে চলা মানেই আল্লাহকে মানা। আল্লাহ বলেন, “যে রাসূলের আনুগত্য করলসে আল্লাহরই আনুগত্য করল। (সূরা নিসা- ৮০)

নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বংশ পরিচয়:

তাঁর বংশ পরিচয় হচ্ছেতাঁর নাম মুহাম্মাদ পিতার নাম আবদুল্লাহ দাদার নাম আবদুল মুত্তালিব। তাঁর বংশের নাম কুরাইশ। এই বংশ আরবের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এ বংশের উৎপত্তি হয়েছে ইবরাহীম পুত্র ইসমাঈল (আঃ) থেকে।

নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নাম:

১) মুহাম্মাদ।
২) আহমাদ।
৩) আল হাশের। যাঁর নিকট কিয়ামতের মাঠে সমসমস্তমানুষ একত্রিত হবে।
৪) আল মাহী। যাঁর দ্বারা আল্লাহ তাআলা কুফরের অন্ধকার মিটিয়ে দিয়েছেন।
৫) আল আক্বেব। যাঁর পরে আর কোন নবী আসবে না।
৬) নবীউত্‌ তাওবাহ্‌। (তওবার নবী)
৭) নবীউল মালাহিম। (বীরশ্রেষ্ঠ নবী)
৮) নবীউর রহমাহ। (রহমতের নবী)

নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দৈহিক গঠন:

  • তিনি দীর্ঘকায় ছিলেন না এবং বেঁটেও ছিলেন। বরং মানুষের মাঝে মধ্যম আকৃতির ছিলেন।
  • তাঁর গায়ের রং অতিরিক্ত ফর্সাও ছিল না এবং কালোও ছিল নাবরং সাদা-লাল মিশ্রিত গৌরবর্ণের ছিলেন।
  • তাঁর মাথার চুল কোঁকড়ানোও ছিল না এবং সোজাও ছিল না। বরং কিছুটা ঢেউ খেলানো ছিল।
  • মাথা বিরাটকায় ছিল। (এটা বীরপুরুষদের পরিচয়)
  • তাঁর মুখমণ্ডল ছিল সর্বাধিক সুন্দর। এক ব্যক্তি বারা বিন আযেব (রা:)কে জিজ্ঞেস করলেনরাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চেহারা মোবারক কি তরবারির ন্যায় চকচকে ছিলতিনি বললেননা বরং চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল ও সুন্দর ছিল। (বুখারী) তাঁর মুখাবয়ব সম্পূর্ণ গোলাকার ছিল নাবরং কিছুটা গোলাকার ছিল। (তিরমিযী)
  • উভয় স্কন্ধের মধ্যবর্তী সন্তান  প্রশস্ত ছিল।
  • দাড়ি ঘন সুন্দর বক্ষ দেশ ছেয়ে প্রলম্বিত ছিল।

নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্বভাব-চরিত্র:

  • তিনি সর্বোচ্চ  ও সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁর সচ্চরিত্রের প্রশংসা করে এরশাদ করেননিশ্চয় আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা ক্বলম-৪)
  • তিনি ছিলেন অতীব বিনয়ী। যে বিষয়ে আল্লাহ কাউকে অধিকার দেননি এমন বিষয়ে কোন দাবী তিনি করতেন না। আল্লাহ্‌ বলেন,

·         ]قُلْ لَا أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ [

  • আপনি বলুন: আমি তোমাদেরকে বলি না যেআমার কাছে আল্লার ভাণ্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি গায়েব সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখি না। আমি এমনও বলি না যে আমি ফেরেশতা। আমি তো ঐ ওহীরই অনুসরণ করিযা আমার কাছে আসে। (সূরা আনআম- ৫০)
  • কারো সাথে কথা বললে সম্পূর্ণভাবে তার দিকে মুখ ফিরিয়ে রাখতেন এবং গুরুত্ব সহকারে তার কথা শুনতেন।
  • ইসলামী বিষয়ে তিনি কখনই নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বলতেন না। আল্লাহ্‌ বলেনতিনি নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বলেন না। যা বলেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর নিকট ওহী করা হয়। (সূরা নজম-৩/৪)
  • তিনি অশ্লীল বাক্যালাপ করতেন না। তাঁর স্বভাবেকথায়কাজে ও আচরণে কখনো অশ্লীলতা প্রকাশ পায়নি।
  • হাটে-বাজারে গেলে কখনো উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতেন না।
  • কেউ অসদাচরণ করলে তার প্রতিশোধ নিতেন না। তার সাথে অসদাচরণ করতেন নাবরং ক্ষমা করে দিতেন।
  • আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ক্ষেত্র ছাড়া কখনো কোন নারী বা ভৃত্যকে প্রহার করেননি।
  • তাঁর উপর কেউ অন্যায় করলেও নিজের সাহায্যের জন্য কিছু করতেন না।   কিন্তু আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয় লঙ্ঘিত হলে তিনি তাকে ছাড়তেন না।
  • দুটি বিষয়ের মাঝে স্বাধীনতা দেয়া হলেসহজ বিষয়টিই গ্রহণ করতেন- যদি তাতে কোন গুনাহ না থাকে।
  • তিনি মুমিনদের প্রতি ছিলেন খুবই করুণাময়:

·         لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ

  • নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের কাছে একজন রাসূল আগমন করেছেন। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামীমুমিনদের প্রতি স্নেহশীলদয়াময়। (সূরা তওবা-১২৮)

·          فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنْ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ

  • আল্লাহর করুণায় আপনি তাদের জন্য নম্র ব্যবহার করেন। (সূরা আল ইমরান- ১৫৯)
  • মানুষ যা পছন্দ করে না এমন চেহারা নিয়ে তিনি তাদের সম্মুখবর্তী হতেন না।
  • দুনিয়াবী বিষয়ের কোন কিছু চাইলে কখনো না’ বলেন নি।
  • তিনি ছিলেন সম্মানিত দানশীল। এমনকি তাঁর দানের হস- দ্রুতগতিতে প্রবহমান ঝড়ের চাইতেও ক্ষিপ্র ছিল।
  • তিনি হাদিয়া-উপহার গ্রহণ করতেন এবং তার জন্য দুআ করতেন।
  • তিনি ছিলেন খুবই লাজুক প্রকৃতির। এমনকি ঘরের কোনে লুকায়িত লজ্জাবতী কুমারী নারীর চাইতেও অধিক লাজুক ছিলেন।
  • কোন কিছু অপছন্দ করলে তার লক্ষণ মুখমণ্ডলে ফুটে উঠত।
  • তাঁর কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত বিষয় ছিল মিথ্যা বলা।
  • তিনি হাসি-ঠাট্টা করতেন। কিন্তু কখনই অবান্তর কথা বলতেন না।
  • অধিকাংশ সময় মুচকি হাসতেন। কখনো কখনো অট্টহাসি দিতেন এবং এতে সম্মুখের দাঁত প্রকাশ পেতকিন্তু এরূপ খুবই কম হত।
  • তিনি সর্বোত্তম সুগন্ধির অধিকারী ছিলেন। আর আতর-সুগন্ধি তিনি ভালবাসতেন।
  • পানি পান করলে তিন শ্বাসে পান করতেন।
  • খাদ্য খাওয়ার পর আঙ্গুল সমূহ চেটে খেতেন।
  • কখনো হেলান দিয়ে খাদ্য খেতেন না।
  • পরিধেয় লুঙ্গি থাকত সর্বদা অর্ধ হাঁটু বরাবর।
  • তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও ভদ্র।
  • এগারতম হিজরীতে ১২ই রবিউল আওয়াল সোমবার দিবসে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। সে সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহি ওয়া আছহাবিহি ওয়া সাল্লামা তাসলীমান কাছীরা)

হে আল্লাহ! রোজ কিয়ামতে তোমার নবীর শাফায়াত নছীব করো এবং তাঁর পবিত্র হাত থেকে হাউযে কাওছারের পানি পান করার তাওফীক দাও। আমীন॥


সংকলন ও অনুবাদ:  শাইখ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্‌ আল্‌ কাফী
দাঈজুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,
পো: বক্স নং ১৫৮০জুবাইল- ৩১৯৫১ সঊদী আরব।
Collected from: http://www.quraneralo.com/
(স্মরণ করি-২০৯ পর্ব)


be Organized by Holy Islam 
O.H.I 
ভিজিট করুন