দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
রামাদান ম্যানুয়েল-৮: কতক্ষণ পর্যন্ত সাহরি গ্রহণ করা যায়?
আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল স. ইরশাদ করেন-
রাত্রিকালে বেলাল
আজান দেয়, তোমরা (তার আজান শুনে)
পানাহার জারি রাখতে পার যাবৎ না আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম আজান দেয়।
অতপর আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন,
তিনি ছিলেন একজন
অন্ধ মানুষ। যতক্ষণ কেউ তাকে ‘সকাল হয়েছে, সকাল হয়েছে’ না বলে তিনি আজান দেন না।
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দু’জন
মুয়াজ্জিন ছিল বেলাল এবং অন্ধ আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন,
বেলাল রাত্র বাকি
থাকতেই আজান দেয় সুতরাং তার আজানের পরও তোমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পার যতক্ষণ না
ইবনে উম্মে মাকতুম আজান দেয়। রাবি বলেন, এ দু’জনের আজানের মধ্যে এতটুকু ব্যবধান হতো যে
একজন (মিনার থেকে) নামতেন তো অপরজন মিনারে উঠতেন।
সামুরা বিন জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেন,
তোমাদেরকে যেন বেলালের আজান বা আকাশ দিগন্তের এমন লম্বা
রেখা সাহরি গ্রহণ থেকে বিরত না রাখে যতক্ষণ না তা এভাবে ছড়িয়ে যায়। রাবি বলেন, অর্থাৎ আড়াআড়িভাবে
(সে রেখা ছড়িয়ে না যায়।)
নাসায়ীর এক রেওয়ায়েতে আছে,‘তোমাদের যেন বেলালের আজান বা (দিগন্তের) এই
শুভ্রতা যেন ধোকায় পতিত না করে যাবৎ না রেখা এভাবে এভাবে বিক্ষিপ্ত না হয়ে পড়ে অর্থাৎ
আড়াআড়িভাবে।
আবু দাউদ তয়ালিসি বলেন, একথা
বলে তিনি হাত প্রসারিত করে ডানে বামে দেখালেন।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেন
তোমাদের কেউ যদি হাতে আহার-পাত্র
হাতে নেয়া মাত্র আজান শুনতে পায় সে যেন প্রয়োজন সেরে তবেই সে পাত্র হাত থেকে রাখে।
আহমদের বর্ণনায় অতিরিক্ত আরো বলা হয়েছে, ‘এবং মুয়াজ্জিন আজান দিচ্ছিল যখন সুবহে সাদিকের আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছিল।’
হাদিস
থেকে যা শিখলাম :
১. সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সহবাসসহ সব ধরনের রোজা পরিপন্থি কাজ বৈধ।
২. অন্ধ লোক যদি সালাতের ওয়াক্ত জানতে পারে অথবা কেউ তাকে
জানিয়ে দেয় তাহলে তার জন্য আজান দেয়া জায়িজ আছে।
৩. ফজরের আজান দু’বার দেয়া বৈধ।
একবার ফজরের পূর্বলগ্নে দ্বিতীয়বার ফজর উদয় হওয়া মাত্র।
৪. সাহরি গ্রহণের আগেই রোজার নিয়ত করা জায়িজ এবং নিয়ত করার
পর খেলে রোজার নিয়ত ভঙ্গ হয় না। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর পর্যন্ত
পানাহারের অনুমতি দিয়েছেন সুতরাং বুঝা গেল, নিয়ত আগেই করা
হয়েছে এবং এর পর খাওয়া-দাওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। সুতরাং রোজা পালনেচ্ছু যদি দুপুর রাতে
রোজার নিয়ত করে আর সাহরি খায় একদম শেষ মুহূর্তে তাহলে তার নিয়ত ভঙ্গ হবে না।
৫. ফজর উদয়ে সংশয় বোধ করলে সাহরি খাওয়া জায়িজ আছে। কারণ নিচের
আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে রাত অবশিষ্ট থাকাটাই স্বাভাবিক। “তোমরা পানাহার করতে থাক যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা থেকে কালো রেখা সুস্পষ্ট
আলাদা না হয়ে যায়।” আর যে সন্দেহে দোদুল্যমান
তার কাছে তো ব্যাপারটি অস্পষ্ট। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে সহি সনদে বর্ণিত হয়েছে
তুমি খেতে থাক যতক্ষণ সংশয়বোধ কর যাবৎ না তোমার কাছে বিষয়টি স্পষ্ট প্রতিভাত হয়। এটি প্রযোজ্য কেবল সে ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে ফজরের
প্রতীয়ক্ষায় আছে এবং ফজর উদয়ের ব্যাপারে সংশয়ে ভুগছে। পক্ষান্তরে যদি সে ব্যক্তি আজান
বা ঘড়ির ওপর নির্ভর করে তাহলে তার জন্য কোনো সন্দেহ ধর্তব্যের মধ্যে নয় কারণ সে অন্যকে
জিজ্ঞেস করে বা ঘড়িতে সময় দেখে নিশ্চিত হতে
পারে।
৬. সাহরি করা মুস্তাহাব এবং বিলম্বে সাহরি গ্রহণ করাও মুস্তাহাব।
৭. উল্লেখিত বাক্যাংশ-‘দু’জনের আজানের মধ্যে এতটুকু ব্যবধান হতো যে একজন (মিনার থেকে) নামতেন তো অপরজন
মিনারে উঠতেন।’ এর ব্যাখ্যায় ইমাম নববি র. বলেন, বেলাল রা. ফজরের আগেই আজান দিতেন তারপর মিনারায় বসে বসে দুআ-দরুদ পড়তে থাকতেন
আর অপেক্ষা করতেন উদয়ের। অবশেষে যখন ফজর উদয়ের সময় ঘনিয়ে আসত সেখান থেকে নেমে আসতেন
এবং ইবনে উম্মে মাকতুম রা.কে জাগাতেন। ইবনে উম্মে মাকতুম রা. অজু-ইস্তেঞ্জা সারতেন
তারপর ফজরের ওয়াক্ত হওয়া মাত্র মিনারে উঠে আজান দিতেন।
৮. বুঝা গেল, ফজরের পরের
সময়কে সকাল বলা হবে রাত নয়।
৯. মানুষকে তার মায়ের দিকে সম্বন্ধ করে ডাকাও বৈধ যদি সে
ওই নামে খ্যাত হয়ে যায়।
১০. ‘ফাজরে আউয়াল’
এবং ‘ফাজরে ছানি’-র মাঝে তিনটি পার্থক্য রয়েছে। যথা প্রথম পার্থক্য. ‘ফাজরে আউয়াল’ হলো, দিগন্তে
আড়াআড়ি রেখা অর্থাৎ উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রলম্বিত রেখা। আর ‘ফাজরে ছানি’ হলো, দিগন্তে
লম্বালম্বিভাবে প্রসারিত অর্থাৎ পুর্ব থেকে পশ্চিমে প্রসারিত আলোকরেখা।
দ্বিতীয় পার্থক্য, ‘ফাজরে ছানি’
র পরে আর অন্ধকার থাকে না বরং সূর্যোদয় পর্যন্ত আলো ক্রমশ ফুটে উঠতে
থাকে পক্ষান্তরে ‘ফাজরে আউয়াল’ তার
ইষৎ আলো ছড়ানোর পর অন্ধকার হয়ে যায়।
তৃতীয় পার্থক্য. ‘ফাজরে ছানি’
র শুভ্রতা দিগন্তের সঙ্গে লাগোয়া দেখা যায় আর ‘ফাজরে আউয়াল’ এর শুভ্রতা এবং দিগন্তের মাঝখানে হালকা অন্ধকার থাকে।
১১. মুয়াজ্জিন যদি এমন মুহূর্তে ফজরের আজান দেয় রাখতে ইচ্ছুক
ব্যক্তি যখন সাহরি গ্রহণের জন্য পাত্র হাতে নিয়েছে তাহলে তার জন্য খাবার শেষ করার অনুমতি
রয়েছে। এটা হলো শরিয়ত প্রবর্তকের পক্ষ থেকে বিশেষ ছাড়। সুতরাং শুকরিয়া দয়াময় সে রবের
জন্য।
তথ্যসুত্রঃ
. বুখারি : ৫৯২, মুসলিম
: ১০৯২
. মুসলিম : ১০৯৪, আবু দাউদ : ২৩৪৬, তিরমিযি : ৭০৬, নাসায়ী : ৪/১৪৮
. আবু দাউদ : ২৩৫০, আহমদ : ২/৫১০, দারে কুতনি : ২/১৬৫, বাইহাকি : ৪/২১৮
. মুসনাদে আহমদ
: ২/৫১০ তাবরানি : ২/১৭৫, বাইহাকি : ৪/২১৮
. আল মুফহিম : ৩/১৫০, শরহে নাববি : ৭/২০৪, ফাতহুর বারি : ২১/৯৯-১০০,
আদ দিবাজ : ৩/১৯৩
. মজমু : ৬/৩১৩, যখিরাতুল আকবী : ২০/৩৫৫
. আর মুফহিম : ৩/১৫১, শরহু নাবাবি : ৭/২০৪ আদ দিবাজ
: ৩/১৯৪
. আল মুফহিম : ৩/১৫১, ফতহুল বারি : ২/১০১
. ফতহুল বারি :
২/১০১
. ফিকহুল ইবাদাত
: ১৭২-১৭৩
. আল মিন্নাহ লিল
আলবানি : ৪১৭-৪১৮
Collected
from Islamhouse.com
O.H.I
For More Visit: