দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
রমাদান ম্যানুয়েল-১৮: রোযা ফরযের ধাপসমূহ
রোযার সূচনাকালে ক্রমান্বয়ে রোযা ফরয হওয়ার অনেক তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। কোন ব্যক্তি পুরোদিন রোযা পালন করল, কারণ বশত সূর্যাস্তের পর ইফতার না করে ঘুমিয়ে পড়ল, তা হলে তার জন্য ঐ রাত এবং পরবর্তী পুরোদিন পানাহার, স্ত্রীগমন ছিল হারাম। অথবা সূর্যাস্তের পর শুধু ইফতার গ্রহণ করে ঘুমিয়ে পড়ল, তাহলেও তার জন্য পানাহার, স্ত্রীগমন ছিল হারাম।
অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর কোন কারণে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে তার জন্য সকল প্রকার পানাহার ঐ রাতে এবং পরবর্তী দিনের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত ছিল নিষিদ্ধ। কাইস বিন সিরমাতাল আনসারি রাদিআল্লাহু আনহু, পুরোদিন রোযা পালন শেষে, ইফতার গ্রহণের জন্য গৃহে প্রবেশ করে স্ত্রীর কাছে খাবার চাইলে উত্তরে স্ত্রী বলল: খাবার নেই তবে আমি ব্যবস্থা করছি। এরি মধ্যে স্ত্রী খাবার নিয়ে এসে দেখে সারা দিনের ক্লান্ত সাহাবী ঘুমিয়ে গেলেন। স্ত্রী বলল: আপনার আর খাওয়া হলনা।
ক্লান্ত সাহাবি পুরোরাত এবং পরবর্তী দিনের দুপুর শেষে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। নবীজী সা. কে বিষয়টি অবগত করানো হল। অত:পর আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেন
‘রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমারা তাদের পরিচ্ছদদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্মপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অত:পর তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যাকিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরণ কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিস্কার দেখা যায়।’
এতে করে সাহাবায়ে কিরাম খুব খুশি হলেন।
রোযা আমরা যে পদ্ধতিতে পালন করি, এ নিয়ম রোযার সূচনাকালে ছিল না। মদিনায় যাওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি মাসের তিন দিন এবং মহররামের দশ তারিখ আশুরা দিবসে রোযা পালন করতেন।
এর পর আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করলেন
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। গণনার কয়েকটি দিনের জন্য। অত:পর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোযা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য কষ্টদায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে’
ফলে কেউ রোযা পালন করত আবার যার ইচ্ছে হতো একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করত এতে করে তার দায়িত্ব আদায় হয়ে যেতো।
এরপর আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেছেন
‘রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের হিদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।
কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এমাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে..........,
এ আয়াতের ভিত্তিতে রমযান মাসের রোযা, মুকীম সুস্থ ব্যক্তির উপর ফরয করা হয়েছে। এবং অসুস্থ ও মুসাফির ব্যক্তিকে পরে আদায়ের অবকাশ দেওয়া হয়েছে । অতিবৃদ্ধ যিনি রোযা পালনে অক্ষম শুধু তার জন্য রোযার পরিবর্তে খানা খাওয়ানোর নিয়ম স্থির রাখা হয়েছে।
এ আলোচনা থেকে আমরা যা শিখলাম :
১. ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে রোযার আজকের এ চুড়ান্ত রূপ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর মুমিন বান্দার উপর বিশেষ অনুগ্রহ। কারণ ইতি পূর্বেকার রোযা পালন ছিল কষ্টসাধ্য যা আমরা কাইস বিন সাবরামার ঘটনা থেকে জানতে পারি। এ জন্য আল্লাহর শোকর আদায় করা।
২. স্বামীর খেদমত করা এক জন ভাল স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য এবং একান্ত হিতাকাঙ্খি হওয়ার আলামত।
৩. এতে সাহাবাদের ধর্ম পরায়নতা, আল্লাহর আদেশের কাছে তাদের নতি স্বীকার করা, তাঁর বিরোধীতাকে ভয় করা এবং প্রকাশ্য অপ্রকাশ্যে আল্লাহকে স্মরণ করার দৃষ্টান্ত রয়েছে।
৪. আল্লাহর পক্ষ থেকে রুখসত তথা শিথিল বিধান পেয়ে খুশি প্রকাশ করার বৈধতা প্রমাণিত হয়। আবশ্যক বিধান ও শিথিল বিধান উভয় আল্লাহর পক্ষ থেকে। তিনি উভয় বিধানদানকে পছন্দ করেন। শিথিল বিধান আবশ্যক বিধান গ্রহণের পরিপন্থি নয়।
৫. আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার উপর রহমত যে, তিনি তাদের এমন এক বিধান দান করেছেন যা তাদের জন্য উপকারী, আত্মপরিশুদ্ধ কারী।
৬. আল্লাহ অনভ্যস্ত বিষয়ে বিধান দানে বিভিন্ন ধাপ গ্রহণ করেন যেমন নামায তিন ধাপে ফরয করেছেন রোযাও তেমনি তিন ধাপে ফরয করেছেন। এমনি ভাবে মদ নিষিদ্ধ করণ বিধান।
৭. রোযার ফরয বিধান ক্রমান্বয় এসেছে, কারণ ইসলামের সূচনা কালে মানুষ রোযায় অভ্যস্ত ছিলেন না।
৮. রোযার ফরয তিন ধাপে হয়েছে :
ক. প্রতিমাসে তিন দিন এবং আশুরার রোযা
খ. রমযানের রোযা পালন অথবা খানা খাওয়ানো, উভয়ের যে কোন একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল।
গ. রমযানের রোযা সুস্থ ব্যক্তির উপর ফরয এবং রোযার পরিবর্তে খাদ্য দানের বিধান বৃদ্ধব্যক্তির জন্য যে রোযা পালনে সক্ষম নয় এতে অন্তর্ভূক্ত হবে ঐ রোগী ও যে আরোগ্যের আশা করে না।
· বুখারি, ১৮১৬, আবুদাউদ ২৩১৪ তিরমিযি,২৯৬৮।
· বুখারি ১৮১৬।
· সূরা বাকারা . ১৮৩।
· আবুদাউদ, ৫০৭, আহমদ ২৪৬/৫ তিবরানি ২৭০ হাকেম, ৩০১/২ প্রভৃতি হাদিস গ্রন্থে আলোচ্য বিষয়টি বিশদভাবে এসেছে।
সাওম/রোজা সংক্রান্ত বই | ||
ক্রম
|
বই
|
লেখক
|
১
|
আব্দুর রহমান বিন আব্দুল আযীয আস-সুদাইস
| |
২
|
সিয়াম রাসুলুল্লাহর(স) রোযা
|
ডাঃ জাকির নায়েক
|
৩
|
শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
| |
৪
|
সংকলনঃ মুহাম্মদ নাসীল শাহরুখ
| |
৫
|
আলী হাসান তৈয়ব
| |
৬
|
অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলাম
| |
৭
|
ফয়সাল বিন আলী আল বা'দানী
| |
৮
|
আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
| |
৯
|
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন
| |
১০
|
আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
| |
১১
|
জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
| |
১২
|
সংকলনঃ আবুল কালাম আজাদ
|
O.H.I
For More Visit:
বই পড়ুনঃ