Sunday, August 7, 2011

রামাদান ম্যানুয়েল-৬: রোজা পাপ মোচনকারী


السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

রামাদান ম্যানুয়েল-রোজা পাপ মোচনকারী


বিষয়টি বুঝার সুবিধার্থে প্রথমে আমরা কুরআন ও হাদীসের কিছু উদ্ধৃতি জেনে নেই।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَاللَّهُ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ ﴿التغابن:

তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো পরীক্ষা বিশেষআল্লাহ তাআলার কাছেই রয়েছে মহাপুরস্কার।

وَنَبْلُوكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ ﴿الأنبياء:

আমি তোমাদিগকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার নিকটই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। আয়াতদ্বয়ে উল্লেখিত ফিৎনা” শব্দটি পরীক্ষা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
ইবনে আব্বাস রা. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন :

نبتليكم بالشدة والرخاء، والصحةِ والسقم، والغِنى والفقر، والحلال والحرام، والطاعة والمعصية، والهدى والضلال.(ابن كثير৩-২৮৬)

আমি তোমাদেরকে সুখ-দুঃখসুস্থতা-অসুস্থতাপ্রাচুর্য-দারিদ্রহালাল-হারামপাপ-পূণ্য এবং হেদায়েত-গোমরাহীর মাধ্যমে পরীক্ষা করব।

হুজাইফা রা. বলেনআমি ওমর রা. কে বলতে শুনেছি :
مَنْ يحفظ حَدِيثا عَن النَّبىِّ صلى الله عليه وسَلَّم فِى  الفتنَةِ؟  قال حُذيفةُ : أنا سمعتُه يقُولُ : فتنةُ الرجل فى أهله وماله وجاره تكفرها الصلاة والصيام والصدقةُ. (رواه الشيخان)

ফেৎনা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বলা হাদীস কার মনে আছেহুজাইফা রা. বলেনআমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিব্যক্তির ফিৎনা হল তার পরিবার-পরিজনেমাল-সম্পদে ও তার প্রতিবেশীর মধ্যে। আর এ ফেৎনা মোচনকারী হচ্ছে সালাতসিয়াম ও সদকা।

আবু হুরাইরা রা. হাদীসে কুদসীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন :
لكل عَمَلٍ كفّاَرةٌ، والصوم لي وأنا أجزي به ...  (البخاري

প্রত্যেক আমলের জন্য কাফ্ফারা রয়েছেআর রোজা হচ্ছে আমার জন্যআমিই এর প্রতিদান দেব।
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে :
كل العمل كفارة والصوم لي وأنا أجزي به ...( أحمد والطيالسي
প্রত্যেক আমলই হচ্ছে কাফ্ফারাআর রোজা হচ্ছে আমার জন্যআমিই এর প্রতিদান দেব।
মুসনাদে আহমদের আরেকটি বর্ণনায় আছে :
كل العمل كفارة إلا الصوَم لي وأنا أجزي به ...
রোজা ব্যতীত প্রত্যেক আমলই হচ্ছে কাফ্ফারাতবে রোজা আমার জন্যআমিই এর প্রতিদান দেব।
আবু হুরাইরাহ রা. বর্ণনা করেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন :

الصَّلوَاتُ الخمسُ، والجمعة إلى الجمعة، ورمضان إلى رمضان، مكفراتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إذا اجتنبتْ الكبائرُ (مسلم

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজএক জুমআ’ থেকে আর এক জুমআ’, এক রমজান থেকে আর এক রমজানমধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ। যদি কবীরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকা হয়।

আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি  
مَنْ صَامَ رمضانَ وعَرَفَ حُدُودَهُ وَتَحْفَظ مما كان ينبغي له أنْ يتحفَظَ فيه كفَرَ ما قبلَهُ (أحمد وصححه ابن حبان)
যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল এবং এর সীমারেখা ঠিক রাখলআর ঠিকমত পালন করলযা রোজা অবস্থায় ঠিকমত পালন করা উচিতপূর্বকৃত সব কিছুর জন্য তা কাফ্ফারা স্বরূপ।

হাদিস থেকে যা শিখলাম
১. মানুষ কল্যাণ-অকল্যাণ উভয়ের দ্বারাই ফিৎনায় পতিত হতে পারে। কল্যাণ দ্বারা যেমন- সম্পদ অধিক পরিমাণে হওয়া ও নিয়ামত আসতে থাকা। অকল্যাণের ফিৎনা যেমন- বিপদ-আপদ দুঃখ-বেদনা রোগ-ব্যাধি লেগেই থাকা।
২.  সন্তান এবং সম্পদ মানুষের জন্য ফিৎনা আর তা এভাবে যেমানুষ তাদের কারণে আল্লাহর অধিকার নষ্ট করেতাদের ভালবাসার দাবি পূরণ করার নিমিত্তে বা তাদের কারণেই কৃপণতা করে আর এটাই তার পরকালে শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিবার পরিজন আরো ফিৎনার কারণ হতে পারে যেমন- শরীয়ত তাদের অনেক অধিকার দিয়েছে সেগুলি সঠিকভাবে আদায় না করাতাদের ভরন-পোষন লেখা-পড়া লালন-পালন সঠিকভাবে না করা ইত্যাদি। এগুলি পালন না করলে অথবা পালনে ত্রটি করলে সে গোনাহগার হবে।
৩. অবাধ্যতা-পাপকর্মও ফিৎনার অন্তর্ভুক্ত। যেমন- বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়াহারাম মাল থেকে বিরত না থাকাঅনেক সময় ভাল মানুষও এর থেকে বিরত থাকতে পারে না।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :

إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ ﴿الأعراف:

 ‘প্রকৃতপক্ষে যারা মুত্তাকী তাদের অবস্থা এমন যেশয়তানের প্ররোচণায় কোন খারাপ ধারণা যদি তাদেরকে স্পর্শ করেতারা সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক ও সজাগ হয়ে যায় এবং তাদের জন্য সঠিকভাবে কল্যাণকর পথ ও পন্থা কী তা তারা সুস্পষ্টভাবে দেখতে পায়।
আল্লাহ বলেন :
وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ ﴿آل عمران:

আর যাদের অবস্থা এমন যেতাদের দ্বারা যদি কোন অশ্লীল কাজ সংগঠিত হয় কিংবা তারা কোন গুনাহ করে নিজেদের উপর জুলুম করে বসেতবে সঙ্গে সঙ্গেই তারা আল্লাহর কথা স্মরণ করে এবং তাঁর নিকট তারা নিজেদের পাপের ক্ষমা চায়। কেননা আল্লাহ ছাড়া গুনাহ মাফ করতে পারে এমন আর কে আছেএই লোকেরা জেনে বুঝে নিজেদের অন্যায় কাজের পূনরাবৃত্তি করে না।

৪. যে কোন গুনাহে পতিত হয়ে বার বার করতে থাকে তার উচিত সওয়াবের কাজ বেশি বেশি করা। কেননা সওয়াবের কাজ গুনাহের কালিমা মুছে দেয়। আল্লাহ বলেন :
إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ(هود:

অবশ্যই সৎকর্মসমূহ সকল অন্যায় কর্মকে দূর করে দেয়।’ হতে পারে অধিক পরিমাণ সওয়াবের কাজ তার ঐ গুনাহের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসার কারণ হবে। আল্লাহ তাআলা তার আনুগত্যের কারণে তাকে খালেছ তওবা করার তওফিক দিবেন।


৫. উপরোল্লখিত হাদীসগুলি প্রমাণ এই কথার যে রোজা কাফ্ফারা। আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত এক হাদীসে যে রোজা কাফ্ফারা নয় বলা হয়েছেতার অর্থ হলরোজা ছাড়া সমস্ত আমল কাফ্ফারা। কেননারোজা শুধু কাফ্ফারা নয় বরং তার চেয়ে বড় কিছু। আর এ ফজিলত ঐ রোজারই হতে পারে যা একনিষ্ঠ হবে এবং লোক দেখান ও সব ধরনের সন্দেহ মুক্ত হবে।

৬. ইমাম নববী রহ. বলেন কখনও কখনও প্রশ্ন তোলা হয় অযু যদি গোনাহের কাফ্ফারা হয় তাহলে নামায কিসের কাফ্ফারা হবেআর নামায যদি কাফ্ফারা হয় তাহলে জামাতের নামায কি হবেরমজানের রোজাআরাফা দিবসের রোজাআসুরার রোজাফেরেস্তাদের আমিন বলার সাথে বান্দার আমিন এক হয়ে যাওয়া এ সব কিছু সম্পর্কে বলা হয়েছে যে কাফ্ফারা। আলেমগণ এর উত্তর এভাবে দিয়েছেন যেউপরোল্লখিত সবগুলি আমলই কাফ্ফারার যোগ্যযদি কাফ্ফারার মত কোন ছোট গোনাহ পায় তাহলে তার কাফ্ফারা হবে আর যদি কাফ্ফারার মত ছোট বড় কোন গুনাহ না পায় তবে তার দ্বারা নেকী লিখে দেয়া হয় এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। যদি তার কোন কবীরা গোনাহ থেকে থাকে আমাদের আশা যে কবীরা গোনাহ হালকা করা হবে।

৭. এই সমস্ত আমলের দ্বারা বান্দার হক মাফ হবে নাকোন নেক আমলই সেগুলোর কাফ্ফারা হবে না তা সেটা ছোট হোক বা বড় হোক। অবশ্যই বান্দা থেকে অথবা তার নিকটজন থেকে দায়মুক্তি নিতে হবে।


৮. রোজার ফজিলতই গোনাহের কাফ্ফারার কারণ।


৯. কাফ্ফারা হওয়ার এই ফজিলত তার জন্যই প্রযোজ্য হবে যে তার রোজাকে এমন জিনিস থেকে হিফাজত করবে যা রোজা নষ্ট করে দেয়। আবু সাঈদ খুদরী রা. এর হাদীস তার দলীল :

وعَرَفَ حُدُدَهُ وتَحَفَّظَ ممَا كَانَ ينْبَغِي لهُ أنْ يتَحَفَّظَ فِيه
রোজার সীমারেখা ঠিক রাখল এবং রোজা অবস্থায় যা পালন করা উচিততা পালন করল।

সার কথামুসলমান রমজানের প্রত্যেক রাত ও দিনকে হারাম কথা বলা যেমন- পরনিন্দা বা গীবত থেকে হিফাজত করবে। হারামের দিকে দৃষ্টি দেয়া থেকে বিশেষ করে প্রচার মাধ্যমে যা প্রচার করা হয় নাটকসিনেমাহারাম বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ইত্যাদি থেকে হিফাজত করবে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে রমজানে এ সব বিষয়ের সংখ্যা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেড়ে যায়। আল্লাহ তাআলার নিকট আমাদের জন্য এবং সব মুসলমানের জন্য হিদায়েত ও সঠিক পথের দিশা প্রার্থনা করছি।

তথ্যসুত্রঃ


  •   নাসায়ি - আল-কুবরা - :৩২৮৬, তাবরানি - আল-কাবির- : ৮/১৫৭ হাদিস নং ৭৬৬৭, শামিদের মুসনাদ : হাদিস নং ৫৭৭, বায়হাকি : ৪/২১৬, সহিহ ইবনে খুজাইমা : ১৯৮৬, সহিহ ইবনে হিব্বান : ৭৪৯১ এবং সহিহ হাকেম, সে বলেছে : ইমাম মুসলিমের শর্তমোতাবেক হাদিসটি বর্ণিত হয়েছেঠ, শব্দও তার। ইমাম জাহাবি তার সাথে একমত পোষণ করেছে ১/৫৯৫
  •   ইবনে কাইয়্যিম, আর-রূহ,  পৃ. ৫৭। লালেকায়ি, আস্সুন্নাহ,  ৬/১১২৭, ইমাম বায়হাকি,  ইসবাতে আজাবুল কাবর, পৃ  ১/১১০
  •   আর-রূহ : ৫২- ইবনে কায়্যিম রহ. প্রণিত। মাজমুউল ফতোয়া : ৪/২৮২



be Organized by Holy Islam 
O.H.I 
For More Visit:

বই পড়ুনঃ http://ohilibrary.blogspot.com