দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
রামাদান ম্যানুয়েল-১৩: সফর অবস্থায় রোযা রাখা না রাখা
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত,
أنَّ
حَمزَةَ بنَ عَمْروٍ الأَسلَميِّ قَالَ للنَّبيِّ صلى الله عليه وسلم : أَأَصُومُ في السَّفَرِ؟
وَكَانَ كَثيرَ الصِّيامِ، فقَالَ: إنْ شِئْتَ فَصُمْ وإنْ شِئْتَ فَأَفْطِرْগ্ধ رواه الشيخان
হামজাহ
ইবনে আমর আসলামী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রশ্ন করলেন, সফর অবস্থায় আমি কি রোযা রাখব?
উল্লেখ্য তার অধিক রোযা রাখার অভ্যাস ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বললেন : তোমার ইচ্ছা, রাখতে পার, নাও রাখতে পার।
ইবনে আব্বাস রা. থেকে রা. বর্ণিত,
سَافَرَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم في
رَمَضَانَ فَصَامَ حَتَّى بَلَغَ عُسْفَانَ، ثُم دَعَا بإِناءٍ مِنْ مَاءٍ
فَشَرِبَ نَهَاراً لِيرَاهُ النَّاسُ، فَأَفْطَرَ حَتَّى قَدِمَ مَكَّةَ، وَكَانَ
ابنُ عَباسٍ يَقُولُ: صَامَ رَسُولُ الله ﷺ في
السَّفَرِ وَأَفْطَر، فَمَنْ شَاءَ صَامَ ومَنْ شَاءَ أَفْطَر
রমজানে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা অবস্থায় সফর করে আসফান নামক স্থানে
পৌঁছলেন। অতঃপর পান পাত্র চাইলেন দিনের বেলায় মানুষকে দেখায়ে পান করলেন। রোযা না রাখা
অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করলেন। ইবনে আব্বাস রা. বলতেন: সফর অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা রেখেছেন এবং ভেঙ্গেছেন, দুটিই করেছেন। অতএব যার ইচ্ছে হবে রোজা
রাখবে, যার ইচ্ছে হবে না রোজা রাখবে না।
আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন:
كُنَّا
نُسَافِرُ مَعَ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَم يَعِبِ الصَّائِمُ على
المُفْطِرِ ولا المُفْطِرُ عَلى الصَّائِمِ متفق
عليه
আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের সাথে সফর করছিলাম, রোযাদার এবং ভোজদার কেউ কাউকে কিছু বলেনি।
আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন:
كُنَّا
نَغْزُو مَعَ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم في رَمَضَانَ فَمنَّا الصَّائِمُ
ومنَّا المُفطِرُ، فلا يَجِدُ الصَّائمُ على المُفطِرِ، ولا المُفطِرُ على
الصَّائِمِ، يَرونَ أنَّ مَنْ وَجَدَ قُوَّةً فصَامَ فَإِنَّ ذَلكَ حَسَنٌ،
ويرَونَ أنَّ من وَجَدَ ضَعْفَاً فَأَفْطَرَ فَإِنَّ ذَلكَ حَسَن رواه مسلم
আমরা
রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যুদ্ধ করছিলাম আমাদের
মধ্যে কেউ রোযা রেখে ছিল কেই রোযা রাখেনি। রোযাদার বেরোযাদার কেউ কাউকে কিছু বলেনি।
তারা মনে করছিল যার শক্তি আছে সে রোযা রাখবে, বরং তার জন্য এটাই ভাল, আর যে দুর্বলতা
অনুভব করবে সে রোযা ভঙ্গ করবে, বরং তার জন্য এটাই ভাল।
আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন :
سافَرْنا
مَعَ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم إلى مكَّةَ ونَحْنُ صِيامٌ، فنَزَلْنَا
مَنْزِلاً فَقَالَ رَسُولُ الله ﷺ: إنَّكُم
قدْ دَنَوتُم من عَدُوِّكُم والفِطْرُ أَقْوَى لَكُمْ، فكانَتْ رُخصَةً، فمِنَّا
مَنْ صَامَ، ومنَّا مَنْ أَفطَر، ثُم نَزَلْنَا مَنْزِلاً آخَرَ فقَالَ: إِنَّكُم
مُصَبِّحُو عدُوِّكُم والفِطرُ أَقْوَى لكم فأفْطِرُوا، وكَانَت عَزْمَةً
فَأَفْطَرنَا، ثم قَالَ: لقَد رَأَيْتُنَا نَصُومُ مَعَ رَسُولِ الله صلى الله
عليه وسلم بَعْدَ ذَلكَ في السَّفَرِ رواه
مسلم.
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে রোযা অবস্থায় মক্কায়
গমণ করলাম, আমরা এক স্থানে অবতরন করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন : তোমরা তোমাদের শত্র“দের কাছাকাছি পৌঁছে গেছ এখন রোজা
না রাখা তোমাদের শক্তি বৃদ্ধির কারণ হবে। রাসূলের এ কথা অনুমতি ছিল, আমাদের ভিতর কেউ রোযা রাখল কেউ ভেঙ্গে ফেলল। অতঃপর আর এক স্থানে আমরা অবতরন
করলাম, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন
: তোমরা তোমাদের শত্র“দের সামনা সামনি হচ্ছো রোযা ভেঙ্গে ফেলা
তোমাদের শক্তির কারণ হবে তোমরা রোযা ভেঙ্গে ফেল আর এ নির্দেশ ছিল কঠোর, আমরা রোযা ভেঙ্গে ফেললাম। আবু সাঈদ রা. বলেন, এরপরও
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সফরে আমরা রোযা রাখতাম।
হাদীসে
থেকে যা শিখলাম :
১. ইসলামের মহানুভবতা এবং ইসলামী শরীয়াতের ছাড় ও বিশেষ দায়িত্বে
নিয়োজিতদের জন্য আলাদা সুযোগ।
২. রোযা রাখা না-রাখা মুসাফির ব্যক্তির ইচ্ছাধীন। যা সহজ
তাই তার জন্য সুন্নত।
৩. সফর অবস্থায় রোযা রাখতে কষ্ট হলে ভেঙ্গে ফেলাই উত্তম।
আর সফর অবস্থায় রোযাতে সমস্যা না হলে, রোযা রাখাই
উত্তম।
৪. বিভিন্ন কাজের দরুন, যিনি
সর্বদা সফরে থাকেন বা অধিক হারে সফর করেন, যেমন যানবাহনে যারা
চাকরী করেন, তারা সফর অবস্থায় ফরজ রোযা রাখবেন, যদি রোযা তাদের জন্য কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর না হয়, নতুবা তারা দায়মুক্ত হবে কিভাবে? বরং তাদের কাজা
করার সুযোগ না থাকলে সফর অবস্থায় রোযা রাখা ফরজ। সে ব্যক্তির সফর করাই যার পেশা।
৫. দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তির উচিত শরীয়তের দায়িত্ব যথাসাধ্য
পালনের চেষ্টা করা।
৬. সফর অবস্থায় রোযা রাখা বা না-রাখার ক্ষেত্রের নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত অনুসরণ করাই উত্তম।
৭. হামজাহ আসলামী রা. এর হাদীস দ্বারা এ কথারও প্রমাণ মিলে
যে, হালাল হারাম বিষয়ে যে ব্যক্তি জানে তার কাছে প্রশ্ন করে
জেনে নেয়া। এটাই সাহাবাদের অভ্যাস ছিল।
৮. মুসলিম শাসক কোন বৈধ কাজের নির্দেশ দিলে তা পালন করা ফরজ।
হ্যা, গোনাহের নিদের্শ হলে তার আনুগত্য করা যাবে না।
৯. ইমামের দায়িত্ব হল অধীনদের প্রতি নম্রতা দেখানো এবং তাদের দুর্বলদের প্রতি লক্ষ রাখা। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলকে রোজা না রাখার কথা বলেছেন, যাতে
শত্র“র মোকাবেলায় সকলে শক্তি পায়, যদিও তাদের মধ্যে এমন লোক ছিল রোজার কারণে যাদের ক্ষতি হত না।
১০. যে সব বিধি-বিধানে দু’ধরেনর
সুযোগ সুবিধা রয়েছে, সেখানে একটিতে অবদারিত করে দেয়ার অধিকার
কারো নেই। তদ্রুপ মত বিরোধপূর্ণ মাসআলার বিষয়টিও। যার নিকট যে বিষয়টি স্পষ্ট নয় সে
তা করতে বাধ্য নয়।
১১. শরীয়তের রুখসত বা কোন আয়াত বা হাদিসের দুর্বোধ্য বিষয়ে
কারো সাথে শত্র“তা পোষণ করা যাবে না।
১২. এ হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাহবাদের পরস্পরের মাঝে ভাতৃত্ববোধ ও ভালবাসা বিদ্যমান ছিল, আরো ছিল তাদের দ্বীনের ব্যাপ্যারে গভীর জ্ঞান। যেমন রোজাদার ভোজদার কেউ
কাউকে দোষারূপ করেনি। যেহেতু সকলেই শরীতের উপর নির্দেশিত পন্থা অনুসরণ করেছে।
১৩. রমজান মাসে সফর করা বৈধতার প্রমাণ মিলে। যেহেতু রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইুহ ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের জন্য রমজান মাসেই সফর করেছিলেন।
১৪. যে ব্যক্তি আগামীকাল সফর করবে তার জন্য রোজা না রাখার
নিয়তে রাত্রিযাপন সঠিক নয়, কেননা নিয়তের দ্বারা মুসাফের হবে না যতক্ষণ
না সে সফরে বের হবে।
১৫. সফরের নিয়ত করে ঘরে অবস্থানরত অবস্থায় রোজা ভঙ্গ করা
বৈধ নয়। তখনই রোযা তার ইচ্ছাধীন হবে যখন সে সফরের জন্য বের হবে বা বাহনে আরোহন করবে।
·
বুখারী ১৮৪১ মুসলিম ১১২১
।
·
বুখারী৪০২৯ মুসলিম ১১১২।
·
বুখারী ১৮৪৫ মুসলিম ১১১৮
।
·
মুসলিম ১১১৬ তিরমিজী ৭১৩
আহমাদ ১২/৩
·
মুসণিম ১১২০ আবু দাউদ ২৪০৬
আহমাদ ২৮৪/৩
·
আত্ তামহীদ ৪৮/ ২২
·
আত্ তামহীদ ৪৯/ ২২।
Collected from Islamhouse.com
O.H.I
For More Visit:
বই পড়ুনঃ