দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
রামাদান ম্যানুয়েল-১৪: রোযাদারের জন্য স্ত্রীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করার বিধান
আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূল সা. রোযা অবস্থায় (স্ত্রীকে) চুমু দিতেন এবং আলিঙ্গন
করতেন। কিন্তু আপন (জৈবিক) চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন তোমাদের মধ্যে সবচে’
বেশি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অধিকারী।
অপর বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল সা. রমজান মাসে রোযা অবস্থায় (স্ত্রীদের) চুম্বন করতেন।
অন্য এক বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেন, তোমাদের মাঝে কে নিজের চাহিদা পূরনের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা রাখে যেমন
নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা রাখতেন রাসূলুল্লাহ সা.।
আবু দাউদের এক বর্ণনায় আয়েশা রা. হতে বর্ণিত
হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূল
সা. আমাকে এমন অবস্থায় চুমু দিতেন যখন আমরা উভয়ে রোজাদার।
ইবনে হিব্বানের বর্ণনায়
এসেছে, আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান আয়েশা রা. হতে বর্ণনা করেন-
তিনি বলেছেন, রাসূল সা. নিজ স্ত্রীদের রোযা অবস্থায় চুমু দিতেন।
আমি আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেস করলাম ফরজ এবং নফল সব ধরনের রোযা অবস্থায়? তিনি বললেন, ফরজ-নফল সব ধরনের রোযা অবস্থায়।
হাফসা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল তাকে রোযা অবস্থায়
চুমু দিতেন।
ওমর বিন আবু সালমা রা. হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সা. কে জিজ্ঞাসা করেন রোজাদারের জন্য চুমু দেয়া বৈধ কিনা?
রাসূল সা. বলেন, তুমি এ বিষয় উম্মে সালমা
রা. কে জিজ্ঞাসা কর। উম্মে সালমা তাকে জানান, রাসূল সা. তা
(স্ত্রী-চুম্বন) করতেন। ওমর বিন আবু সালমা বলেন, হে আল্লাহর
রাসূল, আল্লাহ তা’আলা আপনার অগ্র-পশ্চাতের
সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন (আপনার কথা ভিন্ন)। রাসূল সা. তাকে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের মধ্যে
সর্বাধিক আল্লাহভীরু এবং তোমাদের মধ্যে সবচে’ বেশি পরহেজগার।
ওমর ইবনে খাত্তাব রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রোজা অবস্থায় চিত্ত
বিনোদন করতে গিয়ে স্ত্রীকে চুমো দিলাম। তারপর বললাম, হে আল্লাহর
রাসূল, আজ এক জঘন্য অপরাধ করে ফেলেছিÑ রোযা থেকে আমি স্ত্রীকে চুম্বন করেছি। নবী সা. বললেন,
বলত দেখি যখন তুমি পানি দ্বারা কুলি কর তার বিধান কি? উত্তর দিলাম, এতে কোন অসুবিধা নাই। তিনি বললেন,
তবে তুমি কী এমন অপরাধে লিপ্ত হয়েছে? অর্থাৎ
এটা কোন অপরাধই নয়।
হাদিসগুলো থেকে যা শিখলাম :
১. রোজাদারের জন্য চাই সে যুবক হোক বা বৃদ্ধ স্ত্রীকে চুমো
দেয়া এবং আলিঙ্গন করা জায়েজ যদি যৌন তাড়নার বশবর্তী হয়ে সহবাসে লিপ্ত বা বীর্যপাত হবে
না বলে নিজের ওপর দৃঢ় আস্থা থাকে। চাই তার রোজা নফল হোক বা ফরজ, রমজানে হোক বা অন্য কোন মাসে।
২. হাদীসে আলিঙ্গন দ্বারা উদ্দেশ্য গায়ে গা মিলানো। যেমন-
স্পর্শ করা বা জড়িয়ে ধরা। আলিঙ্গন এখানে স্ত্রী সহবাস উদ্দেশ্য নয়। কারণ স্ত্রী সহবাস
অবশ্যই রোযাভঙ্গকারী।
৩. রমজান মাসে কোন রোজাদার যদি আপন স্ত্রীকে চুমু দেয় অথবা
স্পর্শ করে কিংবা আলিঙ্গন করে আর এতে তার বীর্যস্খলন হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তবে
এরপরও তাকে সারাদিন রোজাবস্থায় থাকতে হবে। এবং রোজা কাজা করতে হবে তাওবা-ইস্তেগফারসহ।
কারণ আল্লাহ তায়ালা হাদীসে কুদসীতে বলেন, একজন রোজাদার
তার চাহিদা এবং খানা-পিনা আমার কারণেই ছাড়ে। অপর এক বর্ণনায় রাসূল সা: বলেন,
সে তার স্বাদ গ্রহণ আমার জন্যই ত্যাগ করে এবং তার স্ত্রী আমার জন্যই
ছাড়ে। তবে যদি ‘মজি’ বের হয় তাতে
রোযা ভঙ্গ হবে না। আলেমদের বিশুদ্ধ মতানুসারে এতে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না তবে
তার জন্য উচিত হলো যৌন উত্তেজক আচরণ যেগুলো হারামে পতিত করার সম্ভাবনা রাখে তা হতে
বিরত থাকা।
৪. হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় চুমু দেয়া বৈধ হওয়া রাসূল সা:-এর
বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্য নয় বরং সমগ্র উম্মতের জন্য এটি বৈধ। যদি এমতাবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ
তথা সহবাস বা বীর্জপাত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে।
৫. রাসূল সা: সবচে’ বেশি আল্লাহকে
ভয় করতেন। কারণ আল্লাহকে তিনিই সবচে’ জানতেন। সবচে’
ভালো করে চিনতেন।
৬. হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি, অতিভক্তি ও অতিরঞ্জন পরিহার করা অত্যাবশ্যক। বিশেষ করে উল্লেখিত হাদিসে
‘রোজাবস্থায় রাসূলের সা: জন্য স্ত্রীদের চুমু দেয়া বৈধ হলেও
উম্মতের জন্য তা অবৈধ- এ ধরনের আকীদা পোষণ করার কোন অবকাশ নেই। কারণ রাসূল সা: কে জিজ্ঞাসা
করা হলে তিনি তা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেননি। বরং তিনি বলেন, সাবধান! আমি তোমাদের সবারচেয়ে বেশি আল্লাহভীরু ও মুত্তাকী। অন্য হাদিসে
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর বিধান সম্মর্কে তোমাদের চেয়ে অধিক
জ্ঞান রাখি।
৭. হালাল-হারাম সম্পর্কে জানার ব্যাপারে সাহাবীদের আগ্রহ, আল্লাহকে তারা কী পরিমাণে ভয় করতেন এবং ইবাদত-বন্দেগী নষ্ট হওয়া বা ত্র“টিপুর্ণ হওয়ার আশঙ্কায় তারা যে কত সর্তকতা অবলম্বন করতেন হাদীসটি তার জ্বলন্ত
প্রমাণ।
৮. এ হাদিসে যে সকল সূফী এ আকীদা পোষণ করে যে, যারা ঈমান ও আমলে পরিপূর্ণতা লাভ করেছেন, তারা
শরীয়তের বিধান পালন করার বাধ্যবাধকতা হতে মুক্ত, তাদের সম্পূর্ণ
প্রত্যাখ্যান করা হলো। কারণ রাসুল সা: যিনি ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে সকল মানুষের চেয়ে
কামেল তিনি নিজেই শরীয়তের বিধান সর্বাধিক বেশি
গুরুত্ব সহকারে পালন করতেন। এছাড়া হাদিসে স্পষ্ট প্রমাণ হয়- যারা মনে করে যাদের ক্ষমা
ঘোষণা করা হয়েছে তাদের জন্য কোন কোন নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়া শিথিলতার সাথে দেখা হবে
এবং এতে তাদের কোন গুনাহ হবে না তা ভুল।
৯. ওমর বিন খাত্তাবের হাদীসে কিয়াস ও একই বিধানে দুটি বিষয়
একত্র করা সাব্যস্ত হয়। যদি উভয়ে পরস্পর একই সাদৃশ্যের বা একই কারণের হয়ে থাকে। কারণ
যেমনিভাবে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া কারণ হয়ে থাকে পানি গলায় বা পেটে প্রবেশ করার
তা সত্তেও তাতে রোযাভঙ্গ হয় না অনুরূপভাবে স্ত্রীদের চুমু দেয়া সহবাসের কারণ হয়ে থাকে
যদ্বারা রোযা ভঙ্গ হয়। কিন্তু যেহেতু উল্লেখিত প্রথমটি দ্বারা যেহেতু রোযাভঙ্গ হয় না
তাহলে অপরটির বিধানও একই হবে।
·
বুখারী ১৮৪১ মুসলিম ১১২১
।
·
eyLvwi :1826 gymwjg 1106 Avey `vD`: 2384 Avngv`: 6/44
·
gymwjg:1108
·
d‡Zvqv web evh wKZveyZ`vIqv : 164 /2 gvRgy d‡Zvqv: 268-315/15
·
kiû Be‡b evËvj 56/4 wgbnvZzj evix:364/4
Collected from
Islamhouse.com
O.H.I
For More Visit:
বই পড়ুনঃ