রামাদান ম্যানুয়াল-১
কেন এই ম্যানুয়েল?
প্রতি বছরই মাস পরিক্রমায় আমাদের কাছে আসে রহমত,বরকত ও মাগফিরাতের মাস রামাদান। কুরআন নাযিলের মাস রামাদান, কুরআন বিজয়েরও মাস রামাদান। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা, উপযুক্ত তত্বাবধান এবং পরিকল্পিত প্রচেষ্টার অভাবে রামাদানের পরিপূর্ণ ফায়দা হাসিল করা থেকে আমরা বঞ্চিত হই।
ওয়ামী বাংলাদেশ অফিস রামাদানের সময় গুলোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার ও তার সুফল অর্জনের লক্ষ্যে ওয়ামী পরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য বর্তমান ম্যানুয়েলটি তৈরী করেছে। প্রথমে ম্যানুয়েলটি মনোযোগ দিয়ে পাঠ করুন, অনুধাবন করুন। তারপর পরিকল্পনা অংশ পূরণ করুন। অতঃপর আন্তরিকতার সাথে ম্যানুয়েলে বর্ণিত কাজগুলো নিয়মিত আদায় করুন। নির্দিষ্ট সময়ের (২৫শে রামাদান) মাঝে এই ম্যানুয়েলের সবগুলো কাজ করে প্রতিবেদনের অংশটি পূরণ করে ওয়ামী বাংলাদেশ অফিসে প্রেরণ করুন। এই ম্যানুয়েলের উদ্দেশ্য এর ব্যবহারকারীদের সচেতন করা, তাদের মাঝে প্রতিযোগিতার মনোভাব জন্ম দেয়া এবং আল্লাহর ভয়ে ভীত জবাবদীহিতা সম্পন্ন সৎ মানুষ তৈরী করা। আল্লাহ আমাদের এই প্রয়াস কবুল করুন।
আসুন পরিকল্পনা নিই
একটি সঠিক পরিকল্পনা যে কোন কাজ বাস্তবায়নে অর্ধেক সমাধানের ভূমিকা পালন করে। সে দিকটি বিবেচনায় এনে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিজেকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে আসুন রামাদানের প্রতিটি সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগাই, এই ম্যানুয়েলের প্রতিটি কলাম পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করি। নিজেকে আল্লাহর নেক বান্দাহ হিসাবে গড়ে তুলি।
আল্লাহ আমাদের এই প্রয়াস কবুল করুন।
বিষয়ভিত্তিক আল-কোরআন ও আল-হাদীস অধ্যয়ন
বিষয়: সিয়াম
সূরা বাক্বারাহ: ১৮৩-১৮৫
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ (১৮৩) أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ وَأَن تَصُومُواْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ (১৮৪) شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ (১৮৫)
১৮৩) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল। এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাক্ওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে। ১৮৩
১৮৪) এ কতিপয় নির্দিষ্ট দিনের রোযা। যদি তোমাদের কেউ হয়ে থাকে রোগগ্রস্ত অথবা মুসাফির তাহলে সে যেন অন্য দিনগুলোয় এই সংখ্যা পূর্ণ করে। আর যাদের রোযা রাখার সামর্থ্য আছে (এরপরও রাখে না) তারা যেন ফিদিয়া দেয়। একটি রোযার ফিদিয়া একজন মিসকিনকে খাওয়ানো। আর যে ব্যক্তি সেচ্ছায় ও সানন্দে কিছু বেশী সৎকাজ করে, তা তার জন্য ভালো। তবে যদি তোমরা সঠিক বিষয় অনুধাবন করে থাকো ১৮৪ তাহলে তোমাদের জন্য রোযা রাখাই ভালো।
১৮৫) রামাদানের মাস, এ মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানব জাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য-সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়। কাজেই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাসের সাক্ষাত পাবে তার জন্য এই সম্পূর্ণ মাসটিতে রোযা রাখা অপরিহার্য এবং যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত হয় বা সফরে থাকে, সে যেন অন্য দিনগুলোয় রোযার সংখ্যা পূর্ণ করে। ১৮৬ আল্লাহ তোমাদের সাথে নরম নীতি অবলম্বন করতে চান, কঠোর নীতি অবলম্বন করতে চান না। তাই তোমাদেরকে এই পদ্ধতি জানানো হচ্ছে, যাতে তোমরা রোযার সংখ্যা পূর্ণ করতে পারো এবং আল্লাহ তোমাদের যে হিদায়াত দান করেছেন সে জন্য যেন তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে ও তার স্বীকৃতি দিতে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো। ১৮৭
আয়াত সমূহের ব্যাখ্যাঃ
১৮৩. ইসলামের অন্যান্য বিধানের মতো রোযাও পর্যায়ক্রমে ফরয হয়। শুরুতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলামনদেরকে মাত্র প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ রোযা ফরয ছিল না। তারপর দ্বিতীয় হিজরীতে রামাদান মাসের রোযার এই বিধান কুরআনে নাযিল হয়। তবে এতে এতটুকুন সুযোগ দেয়া হয়, রোযার কষ্ট বরদাশত করার শক্তি থাকা সত্ত্বেও যারা রোযা রাখবেনা তারা প্রত্যেক রোযার বদলে একজন মিসকিনকে আহার করাবে। পরে দ্বিতীয় বিধানটি নাযিল হয়। এতে পূর্ব প্রদত্ত সাধারণ সুযোগ বাতিল করে দেয়া হয়। কিন্তু রোগী, মুসাফির, গর্ভবর্তী মহিলা বা দুগ্ধপোষ্য শিশুর মাতা এবং রোযা রাখার ক্ষমতা নেই এমন সব বৃদ্ধদের জন্য এ সুযোগটি আগের মতোই বহাল রাখা হয়। পরে ওদের অক্ষমতা দূর হয়ে গেলে রামাদানের যে ক'টি রোযা তাদের বাদ গেছে সে ক'টি পূরণ করে দেয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দেয়া হয়।
১৮৪. অর্থাৎ একাধিক মিসকিনকে আহার করায় অথবা রোযাও রাখে আবার মিসকিনকেও আহার করায়।
১৮৫. দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধের আগে রামাদানের রোযা সম্পর্কে যে বিধান নাযিল হয়েছিল এ পর্যন্ত সেই প্রাথমিক বিধানই বর্ণিত হয়েছে। এর পরবর্তী আয়াত এর এক বছর পরে নাযিল হয় এবং বিষয়বস্তুর সাদৃশ্যের কারণে এর সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়।
১৮৬. সফররত অবস্থায় রোযা না রাখা ব্যক্তির ইচ্ছা ও পছন্দের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরে যেতেন। তাঁদের কেউ রোযা রাখতেন আবার কেউ রাখতেন না। উভয় দলের কেউ পরস্পরের বিরুদ্ধে আপত্তি উঠাতেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও সফরে কখনো রোযা রেখেছেন, কখনো রাখেননি। এক সফরে এক ব্যক্তি বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলো। তার চারদিকে লোক জড়ো হয়ে গেলো। এ অবস্থা দেখে নবী সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাপার কি জিজ্ঞেস করলেন। বলা হলো, এই ব্যক্তি রোযা রেখেছে। জবাব দিলেন: এটি সৎকাজ নয়। যুদ্ধের সময় তিনি রোযা না রাখার নির্দেশ জারী করতেন, যাতে দুশমনের সাথে পাঞ্জা লড়বার ব্যাপারে কোন প্রকার দূর্বলতা দেখা না দেয়। হযতর উমর (রা) রেওয়ায়াত করেছেন, “দু’বার আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে রামাদান মাসে যুদ্ধে যাই। প্রথমবার বদরে এবং শেষবার মক্কা বিজয়ের সময়। এই দু’বারই আমরা রোযা রাখিনি”। ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেছেন, মক্কা বিজয়ের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন: هذا يوم قتال فأفطروا “এটা কাফেরদের সাথে লড়াইয়ের দিন, কাজেই রোযা রেখো না”। অন্য হাদীসে নিম্নোক্তভাবে বলা হয়েছে:إنكم قد دنوتم عدوكم فأفطروا أقوى لكم “শত্রুর সাথে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কাজেই রোযা রেখো না। এর ফলে তোমরা যুদ্ধ করার শক্তি অর্জন করতে পারবে”।
সাধারণ সফরের ব্যাপারে কতটুকুন দূরত্ব অতিক্রম করলে রোযা ভাঙ্গা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন বক্তব্য থেকে তা সুস্পষ্ট হয় না। সাহাবায়ে কেরামের কাজও এ ব্যাপারে বিভিন্ন। এ ব্যাপারে সঠিক বক্তব্য হচ্ছে এই যে, যে পরিমাণ দূরত্ব সাধারণ্যের সফর হিসেবে পরিগণিত এবং যে পরিমাণ দূরত্ব অতিকক্রম করলে মুসাফিরী অবস্থা অনুভূত হয়, তাই রোযা ভাঙ্গার জন্য যথেষ্ট।
যেদিন সফর শুরু করা হয় সেদিনের রোযা না রাখা ব্যক্তির নিজের ইচ্ছাধীন, এটি একটি সর্বসম্মত বিষয়। মুসাফির চাইলে ঘর থেকে খেয়ে বের হতে পারে আর চাইলে ঘরে থেকে বের হয়েই খেতে নিতে পারে। সাহাবীদের থেকে উভয় প্রকারের কাজের প্রমাণ পাওয়া যায়।
কোন শহর শত্রুদের দ্বারা আক্রান্তহলে সেই শহরের অধিবাসীরা নিজেদের শহরে অবস্থান করা সত্ত্বেও জিহাদের কারণে রোযা ভাঙতে পারে কি না এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মত পোষণ করেন। কোন কোন আলেম এর অনুমতি দেননি। কিন্তু আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (র) অত্যন্ত শক্তিশালী প্রমাণের ভিত্তিতে এ অবস্থায় রোযা ভাঙ্গাকে পুরোপুরি জায়েয বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন।
১৮৭. অর্থাৎ আল্লাহ রোযা রাখার জন্য কেবল রামাদান মাসের দিনগুলোকে নির্দিষ্ট করে দেননি। বরং কোন শরীয়াত সমর্থিত ওজরের কারণে যারা রামাদানে রোযা রাখতে অপারগ হয় তারা অন্য দিনগুলোয় এই রোযা রাখতে পারে, এর পথও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। মানুষকে কুরআনের যে নিয়ামত দান করা হয়েছে তার শুকরিয়া আদায় করার মূল্যবান সুযোগ থেকে যাতে কেউ বঞ্চিত না হয় তার জন্যই এই ব্যবস্থা।
এ প্রসংগে এ কথাটি অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে যে, রামাদানের রোযাকে কেবলমাত্র তাক্ওয়ার অনুশীলনই গণ্য করা হয়নি বরং কুরআনের আকারে আল্লাহ যে বিরাট ও মহান নিয়ামত মানুষকে দান করেছেন রোযাকে তার শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যম হিসেবেও গণ্য করা হয়েছে। আসলে একজন বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও সুবিবেচক ব্যক্তির জন্য কোন নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের এবং কোন অনুগ্রহের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সর্বোত্তম পদ্ধতি একটিই হতে পারে। আর তা হচ্ছে, যে উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য সেই নিয়ামতটি দান করা হয়েছিল তাকে পূর্ণ করার জন্য নিজেকে সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত করা। কুরআন আমাদের এই উদ্দেশ্যে দান করা হয়েছে যে, আমরা এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ জেনে নিয়ে নিজেরা সে পথে চলবো এবং অন্যদেরকেও সে পথে চালাবো। এই উদ্দেশ্যে আমাদের তৈরী করার সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে রোযা। কাজেই কুরআন নাযিলের মাসে আমাদের রোযা রাখা কেবল ইবাদাত ও নৈতিক অনুশীলনই নয় বরং এই সংগে কুরআনের মত নিয়ামতের যথার্থ শুকরিয়া আদায়ও এর মাধ্যমে সম্ভব হয়।
বিষয়ভিত্তিক হাদীস: ০১
عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ " بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ الْبَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ". رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ، وَمُسْلِمٌ ،
আবু আব্দির রহমান আব্দুল্লাহ ইবনে উমার ইবনে আল-খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “পাঁচটি জিনিসের উপর ইসলামের বুনিয়াদ রাখা হয়েছে সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্যকোন সত্য মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা এবং রমাদানের সওম পালন করা।” [বুখারী ও মুসলিম]
নির্বাচিত
আয়াত মুখস্তকরণ
মুখস্ত করণ: প্রথম আয়াত
১-৩ রামাদান: ৩ দিন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلا تَنَابَزُوا بِالأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (১১)
হে ঈমানদারগণ, পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের বিদ্রুপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। আর মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের বিদ্রুপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরকে বিদ্রুপ করো না এবং পরস্পরকে খারাপ নামে ডেকো না। ঈমান গ্রহণের পর গোনাহর কাজে প্রসিদ্ধি লাভ করা অত্যন্ত জঘন্য ব্যাপার। যারা এ আচরণ পরিত্যাগ করেনি তারাই জালেম। সূরা হুজুরাত: ১১
নির্বাচিত
আল-হাদীস মুখস্তকরণ
মুখস্থকরণ: প্রথম হাদীস
১-৯ রামাদান
عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَيْضًا قَالَ " بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ذَاتَ يَوْمٍ، إذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ، شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعْرِ، لَا يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ، وَلَا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ. حَتَّى جَلَسَ إلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم . فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إلَى رُكْبَتَيْهِ، وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخْذَيْهِ، وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنْ الْإِسْلَامِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الْإِسْلَامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إنْ اسْتَطَعْت إلَيْهِ سَبِيلًا. قَالَ: صَدَقْت . فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقُهُ! قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ الْإِيمَانِ. قَالَ: أَنْ تُؤْمِنَ بِاَللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ. قَالَ: صَدَقْت. قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ الْإِحْسَانِ. قَالَ: أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّك تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاك. قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ السَّاعَةِ. قَالَ: مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنْ السَّائِلِ. قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَاتِهَا؟ قَالَ: أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ. ثُمَّ انْطَلَقَ، فَلَبِثْنَا مَلِيًّا، ثُمَّ قَالَ: يَا عُمَرُ أَتَدْرِي مَنْ السَّائِلُ؟. قَلَتْ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: فَإِنَّهُ جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُم". رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উমার (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসেছিলাম, এমন সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, যার কাপড় ছিল ধবধবে সাদা, চুল ছিল ভীষণ কালো; তার মাঝে ভ্রমণের কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতে পারেনি। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে গিয়ে বসে, নিজের হাঁটু তার হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে নিজের হাত তার উরুতে রেখে বললেন: “হে মুহাম্মাদ, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “ইসলাম হচ্ছে এই- তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত আদায় কর, রামাদানে সওম সাধনা কর এবং যদি সামর্থ থাকে তবে (আল্লাহর) ঘরের হজ্জ কর।”
তিনি (লোকটি) বললেন: “আপনি ঠিক বলেছেন”। আমরা বিস্মিত হলাম, সে নিজে তার নিকট জিজ্ঞাসা করেছে আবার নিজেই তার জবাবকে ঠিক বলে ঘোষণা করছে। এরপর বলল: “আচ্ছা, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন”।
তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- আল্লাহর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও আখেরাতর উপর ঈমান আনা এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনা”।
সে (আগন্তুক) বলল: “আপনি ঠিক বলেছেন”। তারপর বলল: “আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন”।
তিনি বলেন: “তা হচ্ছে এই- তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ, আর তুমি যদি তাঁকে দেখতে না ও পাও তবে তিনি তোমাকে দেখছেন”।
সে (আগন্তুক) বলল: “আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে বলুন”। তিনি (রাসূল) বললেন: “যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সে জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশী কিছু জানে না”। সে (আগন্তুক) বলল: “আচ্ছা, তার লক্ষণ সম্পর্কে বলুন”।
তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- দাসী নিজের মালিককে জন্ম দেবে, সম্পদ ও বস্ত্রহীন রাখালগণ উঁচু উঁচু প্রাসাদ তৈরি করে দম্ভ করবে”।
তারপর ঐ ব্যক্তি চলে যায়, আর আমি আরো কিছুক্ষণ বসে থাকি। তখন তিনি (রাসূল) আমাকে বললেন: “হে উমর, প্রশ্নকারী কে ছিলেন, তুমি কি জান? আমি বললাম: “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক ভাল জানেন”। তিনি বললেন: “তিনি হলেন জিবরীল। তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে তোমাদের কাছে এসেছিলেন”। [সহীহ মুসলিম]
Ramadan plan
Ramadan plan
be Organized by Holy Islam
O.H.I