Saturday, April 7, 2012

মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-৪


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-

 

অসত্য চারিত্রিক সার্টিফিকেট
বর্তমানে এর ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়েছে। এমনকি দ্বীনদার শিক্ষিত লোকেরাও এক্ষেত্রে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। মানুষ হয়ত নিজের নামে মিথ্যা চারিত্রিক সার্টিফিকেট সংগ্রহ করছেঅথবা অন্যদের লিখে দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কারো একটি চারিত্রিক সনদ প্রয়োজন। সে কারো নিকট এসে উপস্থিত হলো এবং একটি চারিত্রিক সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে ফেলল। লেখক হয়ত লিখে দিলেনআমি তাকে দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ দেখেছি। সে খুব ভাল লোক। তার চরিত্র খুবই সুন্দর।
আফসোসের বিষয় একবারের জন্যেও ভেবে দেখলেন না যে তিনি একটি নাজায়েয কাজ করলেনবরং এর উল্টো হয়ত তিনি ভেবে নিয়েছেন যে তিনি একটি ভাল কাজ করলেন। কেননা প্রার্থীর জন্য তা খুবই প্রয়োজন ছিল। সে অভাব তিনি পূরণ করে দিলেন। কারো অভাব দূর করে দেয়া পুণ্যের কাজ। এধরণের ভাবনা নিয়ে মিথ্যে একটি সনদ দিয়ে দিলেনঅথচ ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। অথবা কোনো পরিচয়-ই নেই। এহেন অবস্থায় সার্টিফিকেট দাতা যেমন গোনাহগার হবে তদ্রূপ গ্রহীতাও গোনাহগার হবে সমানভাবে।
চরিত্র সম্পর্কে অবগতির দু'টি পন্থা
উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সামনে এক ব্যক্তি এসে তৃতীয় একজন সম্পর্কে বলতে লাগল যেঅমুক ব্যক্তি খুব ভাল মানুষ। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে জিজ্ঞেস করলেনআচ্ছা বলুন তো আপনার কি ঐ ব্যক্তির সাথে কোনো লেনদেন হয়েছেলোকটি বললনা। পুনরায় প্রশ্ন করলেনআপনার কি তার সাথে কোনো ভ্রমন হয়েছেলোকটি বললনা। অতঃপর উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনতাহলে আপনি কিভাবে অবগত হলেন যেতার চাল-চলন ও চরিত্র খুব ভাল।
একজন মানুষের চরিত্র সম্পর্কে তখনই অবগতি লাভ করা যায় যখন তার সাথে কোনো লেন-দেন করা হয়। দ্বিতীয় পথ হলো তার সাথে ভ্রমন করা। আর ভ্রমনের সময় একজন মানুষ সম্পর্কে একটি চরিত্র-চিত্র ফুটে উঠে। তার চরিত্রতার কাজ-কর্মতার সঠিক অবস্থানতার আগ্রহ, তার চিন্তা-চেতনা সবকিছুই ভেসে উঠে।
আপনি যদি তার সাথে কোন লেন-দেন করতেন বা ভ্রমন করতেন কেবল তখনই তার সম্পর্কে আপনার এ ভাল মন্তব্য যথাযথ বলে মনে করা হত। কিন্তু যখন আপনার সাথে এ দু'টির একটিও সংগঠিত হয়নি তাই তার সম্পর্কে চুপ থাকাই শ্রেয়। ভাল-মন্দ কোনোটাই বলার দরকার নেই। তাই কারো সম্পর্কে কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে যেসে কেমনতখন উত্তরে কেবল ততটুকুই বলুন যতটুকু তার সম্পর্কে জানেন। আপনি যদি তাকে নামায পড়তে দেখেন তাহলে কেবল এতটুকু বলুন যে নামায পড়ার সময় তো মসজিদে তাকে দেখেছিতবে এতদভিন্ন অন্যান্য অবস্থা সম্পর্কে আমি অবগত নই।

সার্টিফিকেট একটি সাক্ষীস্বরূপ
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে -
إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
(তবে তারা ছাড়া যারা জেনে বুঝে সত্য সাক্ষী দেয়) [সূরা আয-যুখরুফ : ৮৬]
স্বরণ রাখা চাই, যিনি সার্টিফিকেট এর উপর স্বাক্ষর করছেন তিনি প্রকৃতপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করছেন। উপরে বর্ণিত আয়াতের আলোকে সাক্ষী দেয়া তখনই জায়েয হবে যখন সে ঐ বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকেফহাল হবে। অন্যথায় সাক্ষী দেয়া বৈধ নয়। বর্তমানে অহরহ এমন হচ্ছে যেকোনো ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার আদৌ কোনো ধারণা নেই অথচ তাকে একটি চারিত্রিক সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছেন। এটা তো প্রকাশ্য মিথ্যাগোনাহ। আর মিথ্যা সাক্ষী তো এমন ভয়ঙ্কর পাপ যেনবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শিরক এর সঙ্গে একত্রে উল্লেখ করেছেন।
মিথ্যা সাক্ষী শিরক সমতুল্য
হাদীসে এসেছেএকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেলান দিয়ে বসে ছিলেন এ অবস্থায় তিনি সাহাবাদের বললেনবড় গোনাহ সম্পর্কে কি আমি তোমাদের বলবসাহাবাগণ বললেনইয়া রাসূলাল্লাহ! বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনবড় গোনাহের অন্তর্ভুক্ত হল কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা তথা শিরক করামাতা-পিতার নাফরমানী করা। অতঃপর সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেনমিথ্যা সাক্ষী দেওয়া। (একথা তিনবার বললেন)।
এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলোপ্রথমত মিথ্যা সাক্ষীকে তিনি শিরক এর সমপর্যায়ভুক্ত করেছেনদ্বিতীয়তকথাটি তিনবার উল্লেখ করেছেন এবং হেলান দেয়া থেকে সোজা হয়ে বসে বলেছেন। কুরআন মাজীদেও একে শিরক এর সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে।
সার্টিফিকেট প্রদানকারীও গোনাহগার হবে
মিথ্যা সাক্ষী প্রদান করা, মিথ্যা বলার চেয়েও গুরুতর এবং ভয়ঙ্কর। কেননা এতে কয়েক প্রকার গোনাহ হয়ে থাকে। প্রথমতমিথ্যা বলার গোনাহ। দ্বিতীয়তঅন্যকে বিভ্রান্ত করার গোনাহ।
মিথ্যা সার্টিফিকেট যখন অন্যের নিকট পৌঁছবে তখন ঐ ব্যক্তি মনে করবে সে তো খুব ভাল লোক এবং সে কারণে তার সাথে হয়ত কোনো ভালো লেন-দেনও করে বসবে। ফলে তার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। আর সে ক্ষতিগ্রস্থতার দায়ভার ঐ মিথ্যা সার্টিফিকেটপ্রদানকারীর ওপরই বর্তাবে। সুতরাং মিথ্যা সাক্ষীর ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদেরকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। এটা কঠিন ও শক্ত গোনাহ।
মূলঃশামসুল হুদা আযীযুল হক
Collected From: http://www.islamhouse.com/
 (স্মরণ করি-২৩৩ পর্ব)


be Organized by Holy Islam 

O.H.I 

For More Visit: