Sunday, April 22, 2012

মানব ও সমাজসেবায় ইসলামের প্রেরণা-১


السلام عليكم

মানব ও সমাজসেবায় ইসলামের প্রেরণা-১

 

‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি এ জীবন মন সকলি দাও
তার মত সুখ কোথাও কি আছে আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’
অন্যের ব্যথায় সমব্যথী হওয়া এবং পরের বিপদে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা একটি মহৎ গুণ। এক ধরনের নেকীর কাজ। হিতৈষী মনোভাব ও সহমর্মিতার গুণ ছাড়া মানবিকতা ও মহানুভবতার বিকাশ পূর্ণতা পায় না।
আমি তিনবেলা পেট পুরে খেতে পারি। একাধিক পদের তরকারি ছাড়া আমার খাবার রোচে না। বিচিত্র স্বাদ আস্বাদন ছাড়া আমার রসনা তৃপ্ত হয় না। বাসার নৈশ প্রহরী কুকুরকে নিত্য টাটকা গোশত খাওয়াই। দুই বেলা শাহী খাবার খেতে দেই। শ্যাম্পু ছাড়া ওর গোসল হয় না। অথচ পাশের বস্তিতে খাবার না পেয়ে অবোধ শিশুরা চিৎকার করে কাঁদে। জঠরজ্বালা সইতে না পেরে কত বনী আদম পথের ধারে উপুড় হয়ে কাতরায়। ফল-ফ্রুটস খেতে খেতে আমার আদরের দুলালের অরুচি ধরে যায়। অথচ বাড়ির বুয়ার অভুক্ত সন্তানদের মুখে মৌসুমী ফলটি পর্যন্ত ওঠে না। ক্ষুদে মাছির লঘু পদভার পড়ামাত্র সুডৌল আপেল, রসে টইটুম্বর আঙ্গুর ও টসটসে কমলা ওরা প্রায়শই নিক্ষেপ করে ডাস্টবিনে। অথচ এরা পঁচা ও উচ্ছিষ্ট ফল খাওয়ার জন্য ইতর প্রাণীর সঙ্গে যুদ্ধ করে ডাস্টবিনে। ফ্যাশন বদলের সঙ্গে সঙ্গেই আমার মেয়ের শীতবস্ত্র আর গ্রীষ্মের পোশাক বদল হয়। অথচ অদূরের গাঁয়েই কি-না শীতবস্ত্রের অভাবে গরীবের প্রাণ যায়।
এসব তো বিবেক বা মানবতার পরিচায়ক নয়। অমানবের চেয়ে মানব শ্রেষ্ঠ কেন? প্রাণের কারণে? কেবল বুদ্ধির কারণে? মোটেও না। প্রাণের বৈশিষ্ট্যে মানুষ ও জীব-জন্তু প্রায় অভিন্ন। মানুষ বুদ্ধিমান জীব বলে অন্য সব জীবজন্তু একেবারে বুদ্ধিহীন নয়। বরং বুদ্ধির সঙ্গে বিবেক এবং আপন চাহিদার সঙ্গে মানবিকতার সংশ্লেষই অন্য সব জীব-জন্তুর ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে। ইসলাম এ কারণে মানব সমাজে এমন বৈষম্য ও প্রভেদের কোনো সুযোগ রাখে নি। ইসলাম মানুষকে সর্বোচ্চ মানবিকতা, পরহিতৈষণা, সহমর্মিতা ও মহানুভবতার শিক্ষা দিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাঁর নবীকে প্রেরণ দয়া ও সহমর্মিতার প্রতীক হিসেবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا رَحۡمَةٗ لِّلۡعَٰلَمِينَ ١٠٧﴾ [الأنبياء: ١٠٧]
‘আর আমি আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।’ {সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭}
অনাহারীর কষ্টের ভাগিদার হতে এবং জনমদুখী বান্দার দুঃখে সমব্যথী হতে আল্লাহ তা‘আলা রমযানের সিয়াম ফরয করেছেন। দুঃখীর অভাব মোচনে যাকাত ফরয ও সাদাকুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। একই উদ্দেশে সালাত, সিয়াম ইত্যাদির ফিদইয়া ও লে‘আনের বিধান এবং কসম ইত্যাদির কাফফার বিধান প্রবর্তন করেছেন। দান-সদকা ও অন্যের জন্য খরচে উদ্বুদ্ধ করে অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। যেমন :
ক. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥ وَلَهُۥٓ أَجۡرٞ كَرِيمٞ ١١﴾ [الحديد: ١١]
‘এমন কে আছে যেআল্লাহকে উত্তম করয দেবেতাহলে তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।’ {সূরা আল-হাদীদ, আয়াত : ১১}
খ. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضۡعَافٗا كَثِيرَةٗۚ وَٱللَّهُ يَقۡبِضُ وَيَبۡصُۜطُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٢٤٥﴾ [البقرة: ٢٤٥]
‘কে আছেযে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবেফলে তিনি তার জন্য বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেনআর আল্লাহ সংকীর্ণ করেন ও প্রসারিত করেন এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরানো হবে।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৬১}
গ. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنۢبَتَتۡ سَبۡعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنۢبُلَةٖ مِّاْئَةُ حَبَّةٖۗ وَٱللَّهُ يُضَٰعِفُ لِمَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٢٦١﴾ [البقرة: ٢٦١]   
‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করেতাদের উপমা একটি বীজের মতযা উৎপন্ন করল সাতটি শীষপ্রতিটি শীষে রয়েছে একশ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়সর্বজ্ঞ।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৬১}
ঘ. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُصَّدِّقِينَ وَٱلۡمُصَّدِّقَٰتِ وَأَقۡرَضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا يُضَٰعَفُ لَهُمۡ وَلَهُمۡ أَجۡرٞ كَرِيمٞ ١٨﴾ [الحديد: ١٨]
‘নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম করয দেয়তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।’ {সূরা আল-হাদীদ, আয়াত : ১৮}
ঙ. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ وَٱسۡمَعُواْ وَأَطِيعُواْ وَأَنفِقُواْ خَيۡرٗا لِّأَنفُسِكُمۡۗ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٦ إِن تُقۡرِضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا يُضَٰعِفۡهُ لَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ ١٧﴾ [التغابن: ١٦،  ١٧]
‘অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করশ্রবণ করআনুগত্য কর এবং তোমাদের নিজদের কল্যাণে ব্যয় করআর যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়তারাই মূলত সফলকাম। যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাওতিনি তা তোমাদের জন্য দ্বিগুন করে দিবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহীপরম ধৈর্যশীল।’   {সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত : ১৬-১৭}
চ. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَقۡرِضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗاۚ وَمَا تُقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُم مِّنۡ خَيۡرٖ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيۡرٗا وَأَعۡظَمَ أَجۡرٗاۚ وَٱسۡتَغۡفِرُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمُۢ ٢٠﴾ [المزمل: ٢٠]
‘আর সালাত কায়েম করযাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রে পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীলপরম দয়ালু।’ {সূরা আল-মুযযাম্মিল, আয়াত : ২০}
ছ. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَفِيٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ حَقّٞ لِّلسَّآئِلِ وَٱلۡمَحۡرُومِ ١٩ ﴾ [الذاريات: ١٩] 
‘আর তাদের ধনসম্পদে রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক।’ {সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত : ১৯}
জ. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ فِيٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ حَقّٞ مَّعۡلُومٞ ٢٤ لِّلسَّآئِلِ وَٱلۡمَحۡرُومِ ٢٥ ﴾ [المعارج: ٢٤،  ٢٥] 
‘আর যাদের ধন-সম্পদে রয়েছে নির্ধারিত হকযাচ্ঞাকারী ও বঞ্চিতের’। {সূরা আল-মা‘আরিজ, আয়াত : ২৪-২৫}
এ ধরনের আরো অসংখ্য আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মানবের সেবা ও সমাজের কল্যাণের নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন। তেমনি মানবমুক্তি ও সমাজকল্যাণের মহান প্রতিভূ মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনভর এ শিক্ষা প্রচার করেছেন। মানবসেবা ও সমাজকল্যাণের চর্চা করেছেন আপন কর্মে যেমন, তেমনি নানা উপলক্ষ্যে নানাভাবে এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন আপন বাণী বা উক্তিসমগ্রে। কিয়ামত অবধি আগত মানবতার শান্তি ও কল্যাণে তিনি অনাগত সকল ঈমানদারের সামনে এ আদর্শ রেখে গেছেন।
নবুওয়ত লাভের প্রাক্কালে হিলফুল ফুযূল নামক সংস্থা গড়েছিলেন। সেখানে কিছু যুবককে নিয়ে তিনি এ মর্মে অঙ্গিকারাবদ্ধ হন, ‘আমরা নিঃস্ব ও অসহায় দুর্গতদের সেবা করব। অত্যাচারী প্রাণপণে বাধা দেব, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করব এবং বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনে সচেষ্ট হব।’ [বিশ্বনবী পৃ. : ৫৭]
আলী হাসান তৈয়ব
Collected From: http://www.islamhouse.com/




Tuesday, April 10, 2012

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আত্মরক্ষা


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-

 

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আত্মরক্ষা
হিজরতের সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মদীনার পানে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। মক্কাবাসীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ধরে নিয়ে আসার জন্য সর্বত্র গোয়েন্দা নিয়োগ করেছিল এবং এ ঘোষণাও দেয়া হয়েছিল যেযে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ধরে এনে দিতে পারবে তাকে একশত উট পুরস্কার দেয়া হবে। ফলে মক্কার প্রায় সকল মানুষইএ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
এমতাবস্থায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে চেনে এমন এক লোকের সাথে দেখা হয়ে যায়। কিন্তু ঐ ব্যক্তিটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনত না। আগত ব্যক্তিটি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলোআপনার সাথী লোকটি কেআবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু চাচ্ছিলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিচয় কেউ না পাকশত্রুরা তার অবস্থান সম্পর্কে অবগত না হোক। এমতাবস্থায় তিনি যদি সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিচয় দিয়ে দেন তবে মারাত্মক হুমকির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আর যদি পরিচয় না দেয়া হয় তাহলে অসত্য বলা ভিন্ন অন্য কোনো উপায় থাকে না। তাই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু অত্যন্ত কৌশলে বললেন, "তিনি আমার পথ প্রদর্শকযিনি আমাকে পথ দেখান।" [বুখারী: ৩৯১১] এখানে প্রশ্নকারী উত্তর শুনে ভাবলসাধারণত ভ্রমনের সময় যেমন পথপ্রদর্শক থাকে ঐ লোকটিও তাই। কিন্তু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু মনে মনে অর্থ করলেন যে তিনি আমায় দ্বীনের পথ দেখান, জান্নাতের এবং মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য অর্জনের পথ দেখান।
এখানে লক্ষ্যণীয় যেসরাসরি মিথ্যা বলা থেকে কিভাবে নিজেকে হিফাজত করা হয়েছে। এখানে এমন শব্দ বলা হয়েছে যাতে উপস্থিত সমস্যাও দূর হয়ে গেল এবং অসত্যও বলা হলো না। সার কথা এই যেকেউ যদি ইচ্ছা করে যে সে অসত্য বলবে না তাহলে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন।
মিথ্যা বলা পাপ এ বিষয়ে বাচ্চাদের মানসিকতা গড়ে তোলা।
বাচ্চাদেরকে সত্যবাদী করে গড়ে তুলতে হবেমিথ্যাকে যেন তারা ঘৃণা করে সেধরণের মানসিকতা গঠন করতে হবে। বাচ্চাদের সাথে এমনভাবে কথা বলতে হবে যেন তারা মিথ্যা বলার ইচ্ছাপোষণ থেকে বিরত হয়ে যায়। সত্যের প্রতি তাদের আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি হয়। এ জন্য বাচ্চাদের সামনে কেউ যেন কখনো মিথ্যার আশ্রয় না নেয়। কেননা বাচ্চারা মাতা পিতার অনুসরণ করে। মাতা পিতা মিথ্যা বললে বাচ্চারাও মিথ্যাকে স্বাভাবিক ভাববে। তারা মনে করবে মিথ্যা বলা কোনো অন্যায় নয়কোনো পাপ নয়।
বাচ্চাদেরকে ছোটবেলা থেকেই মিথ্যা থেকে দূরে রাখতে হবে। কেননা বাচ্চাদের হৃদয়ে যা অঙ্কিত হয় তা যেন পাথরে অনেপনীয়ভাবে অঙ্কিত হয়তা কখনো মুছে যায় না।
ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় নবুয়্যতের মর্যাদার পরে উচুস্থান হলো "সিদ্দীক" এর স্থান। সিদ্দীক শব্দের অর্থ হলো নিরেট সত্যবাদী। যার কথা ও কাজে বাস্তবতার বিরোধী কিছু থাকে নাথাকার সম্ভাবনা নেই।

কাজের মাধ্যমেও মিথ্যা প্রকাশ পায়
মিথ্যা যেমন মুখের কথায় প্রকাশ পায়তেমনি অনেক সময় কাজের মাধ্যমেও প্রকাশ পায়। অনেক সময় মানুষ এমন আচরণ করেযা বাস্তবে প্রকাশ্য মিথ্যা। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
(‌‌‌যা তাকে দেয়া হয়নি এমন বিষয় সম্পর্কে যদি কেউ (দেওয়া হয়েছে বলে) পরিতৃপ্তি প্রকাশ করে তাহলে সে যেন মিথ্যার পোশাক পরিধান করল।) [বুখারী: ৫২১৯মুসলিম: ২১২৯]
কোনো ব্যক্তি নিজের কাজের মাধ্যমে এমন ভাব প্রকাশ করে যা বাস্তবে সত্য নয়। তার উদ্দেশ্যবাস্তবে সে যা নয় তা কাজের মাধ্যমে বা অন্য কোন মাধ্যমে প্রকাশ করা। এটি গোনাহ। যেমন কোনো ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ধনী নয়। কিন্তু তার উঠা-বসা, চলা-ফেরায়আচার-আচরণে এমন অবস্থা প্রদর্শন করে যেসে অর্থশালীসম্পদশালী বলে প্রতিভাত হয়। একে বলে কাজের মাধ্যমে মিথ্যা প্রকাশ। এর বিপরীতে এমন ব্যক্তিও পাওয়া যায় যে বাস্তবে খাওয়া দাওয়ায় খুব ভালঅন্যান্য ক্ষেত্রেও খারাপ নয়। কিন্তু এমন ভাব প্রকাশ করে যেতার নিকট কোন কিছুই নেই। সে অত্যন্ত মুখাপেক্ষী ও দরিদ্র ব্যক্তি। অথচ সে ধনী। একে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাজের মিথ্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুতরাং কাজের ক্ষেত্রেও এমন কোনো আচরণ করা অনুচিত না যা অন্যের কাছে বাস্তবতাবিরোধী ধারণা সৃষ্টি করেযা মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত।
নামের পূর্বে বিভিন্ন উপাধির ব্যবহার
অনেককে দেখা যায়নিজের নামের পূর্বে এমনসব উপাধি লেখে যা বাস্তবসম্মত নয়। যেহেতু প্রচলন হয়ে আসছে এ জন্য কোন যাচাই ছাড়া লেখা শুরু করে দেয়। যেমন কেউ কারো নামের পূর্বে সৈয়দ লেখা আরম্ভ করে দিল। আসলে সে সৈয়দ নয়।
সৈয়দ তো বলা হয়পিতার বংশনামার দিক থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশধর হওয়া। অনেক মানুষ মায়ের দিক দিয়েও সৈয়দ লেখা আরম্ভ করে। এটি ভুল। যতক্ষণ পর্যন্ত সৈয়দ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হবেততক্ষণ তা লিখা উচিৎ নয়। আর নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি খুবই কঠিন।
নামের পূর্বে প্রফেসর বা মাওলানা লেখা
অনেককে দেখা যায় বাস্তবে সে প্রফেসর নয়কিন্তু নামের সাথে প্রফেসর লেখা আরম্ভ করে দেয়। মূলতপ্রফেসর একটি নির্দিষ্ট পরিভাষা যা বিশেষ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অথবা কেউ তার নামের পূর্বে শায়খ বা মাওলানা লিখা আরম্ভ করল। উদ্দেশ্যসে মাদরাসায় পড়ায় বা দ্বীনি কাজের সাথে জড়িত এ কথা প্রকাশ করা। অথচ সে কোনো দ্বীনি মাদারাসায় পড়া-লেখা করে নি। বর্তমানে অনেকেই আছে যারা নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা অর্জন করে নিঅথচ নামের পূর্বে মাওলানা লিখেশায়খ লিখে। এটা বাস্তবতার বিরোধী হওয়ায় মিথ্যা বলে গণ্য হবে। সমাজে একে মিথ্যা মনে করা হয় না। এবং গোনাহের কাজও মনে করা হয় না। এজন্য আমাদের এ সমস্ত অসত্য শব্দ প্রয়োগ থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ সমস্ত গোনাহ হতে হেফাজত করুন। আ-মী-ন।


মূলঃশামসুল হুদা আযীযুল হক
Collected From: http://www.islamhouse.com/


be Organized by Holy Islam 

O.H.I 

For More Visit:




Monday, April 9, 2012

মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-৫


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-

 

আদালতে মিথ্যা
আজকাল সমাজে এটি প্রচলিত হয়ে গেছে যেকেউ অন্য কোথাও মিথ্যা কথা না বললেও আদালত ভবনে মিথ্যা বলবেন-ই। সাধারণ মানুষকে তো এ পর্যন্ত বলতে শোনা যায় যেমিয়া! সত্য সত্য বলে দাও। মিথ্যা বলতে হয় তাহলে কিছুক্ষণ আদালতে দাঁড়াও।
উদ্দেশ্য হলো মিথ্যা বলার স্থান হলো আদালত ভবন। ওখানে গিয়ে মিথ্যা বল। এখানে পারস্পরিক আলোচনা হচ্ছেএখানে সত্য সত্য বলে দাও। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা সাক্ষীকে শিরক সমতুল্য অপরাধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রত্যয়নপত্র
কারো সম্পর্কে ভালভাবে না জেনে অথবা সত্য জানা থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা বক্তব্যযুক্ত সার্টিফিকেট প্রদান করাউদাহরণত সুস্থ্য থাকা সত্ত্বেও কাউকে অসুস্থ্য হওয়ার সার্টিফিকেট প্রদান করা অথবা পরীক্ষায় ফেল করা সত্ত্বেও পাশ হওয়ার সার্টিফিকেট প্রদান করাএসবই হল মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত।
আমার নিকট অনেক লোক তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রত্যয়ন পত্রের জন্য আসেন। সেখানে এ কথা উল্লেখ করতে হয় যে ওমুক প্রতিষ্ঠানটি বাস্তবিক অর্থেই প্রতিষ্ঠিত আছে। ওখানে অমুক ক্লাশ পর্যন্ত লেখা-পড়া হচ্ছে। এ ধরনের প্রত্যয়ন পত্রের উদ্দেশ্য দাতাদেরকে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব সম্পর্কে আশ্বস্ত করাতাদের কাছে প্রতিষ্ঠানটিকে গ্রহণযোগ্য করে উপস্থাপন করা। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য মনও চায় যেএকটি প্রত্যায়ন পত্র লিখে দিই।
কিন্তু এটা তো একটি সাক্ষীআর যখন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই তখন আমি কী করে একটি প্রত্যয়ন পত্র লিখতে পারিএটা তো প্রকাশ্য মিথ্যা সাক্ষী। তবে হ্যাঁ যদি প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে অবগত থাকি তাহলে আমার অবগতির মাত্রানুযায়ী আমি লিখে দিতাম।
বইয়ের ভূমিকা লেখা একটি সাক্ষী
অনেকেই বইয়ের ভূমিকা লিখে নেওয়ার জন্য আসেনতারা বলেন যেআপনি লিখে দিনএ বইটি ভাল ও সঠিক। অথচ কেউ যখন সম্পূর্ণরূপে কোনো বই না পড়বে অথবা তাতে আলোচিত বিষয়ের উপর পূর্ণভাবে অবগত না হবেততক্ষণ পর্যন্ত কিভাবে তা লিখে দেয়া সম্ভব যেএটা সঠিক বইকিভাবে বলল যেএর মধ্যে কোন ভুল নেই?
অনেক লোক এ ধারণাবশত ভূমিকা লিখে দেন যেএ ভূমিকার ফলে পুস্তক লেখকের ফায়দা হবেতার মঙ্গল হবে। অথচ ভূমিকা একটি সাক্ষীস্বরূপ এবং তার সাক্ষীতে ভুল থাকাটাকে মানুষ ভুল হিসেবে মনেই করবে না।
অনেকেই বলেনজনাব! আপনার কাছে তো সামান্য কাজের জন্যই এসেছি। একটু কষ্ট করে যদি দুই কলম লিখে দিতেনঅথবা একটি সার্টিফিকেট দিতেন তাহলে খুব উপকার হতোআপনারও কোনো ক্ষতি হতো নালোকটি অথবা বইটি সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে যদি না লিখে দেই তবেই সে মনে মনে বলতে শুরু করেএই মানুষটি তো খুব খারাপকাউকে একটি সার্টিফিকেট পর্যন্ত লিখে দিতে চান না।
অথচ কথা তো তা নয়। মূল বিষয় হচ্ছে, আল্লাহর নিকট জবান থেকে বের হয়ে-আসা প্রতিটি কথারই হিসেব দিতে হবে। যা কলম দ্বারা লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে তা তো আল্লাহর নিকট রেকর্ড হচ্ছেই। জিজ্ঞাসিত হতে হবে যেতুমি অমুক সুন্দর শব্দসমূহ যা মুখ থেকে বের করেছ তা কোন ভিত্তির উপর করেছতা স্বেচ্ছায় প্রনোদিত হয়ে করেছ না অনিচ্ছাকৃতভাবে করেছ।
মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা
প্রিয় পাঠক! আমাদের পরিবেশ মিথ্যার এক ভয়াবহ ব্যাধিতে আক্রান্ত। আর এ ব্যাধিটি দ্বীনদার ব্যক্তিশিক্ষিত ব্যক্তিনামাযীবুযুর্গদের সাথে সম্পর্ক রাখেনজিকির-আযকারে লিপ্ত এমন ব্যক্তিরাও মিথ্যাকে না জায়েয বা খারাপ মনে করেন না। একটি অসত্য সার্টিফিকেট দেয়াকেও তারা পাপ বলে ভাবছেন না। হাদীসে যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাফেকদের নিদর্শন বলতে গিয়ে বলেছেনযখন কথা বলে মিথ্যা বলে। এ সবই দ্বীনে ইসলামের অংশ। এগুলো দ্বীনের আওতাভুক্ত মনে না করা পথভ্রষ্টতার লক্ষণ। এ জন্য আমাদের এ সব থেকে পরিত্রাণ আবশ্যক।

অসত্য বলার অনুমতি
হ্যাঁ। এমন কিছু বাস্তবতা আছে, যেখানে অসত্য বলার অনুমতি রয়েছে। যেমন যেসকল ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার ব্যাপারে কেউ অপারগ হয়ে পড়ে। মিথ্যা বলা ছাড়া তার অন্য কোনো বিকল্প থাকে না। মিথ্যা না বললে নির্মম অত্যাচারের শিকার হতে হবে যা সহ্য করা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় শরিয়ত অসত্যের আশ্রয় গ্রহণকে অনুমতি দিয়েছে। এখানে কথা হচ্ছে প্রথমতসরাসরি অসত্য বলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবেবরং এমন ঘোর-প্যাচমূলক শব্দ বলতে হবে যাতে এ মুসিবত দূর হয়ে যায়। যাকে শরিয়তের পরিভাষায় তা'রীজ এবং তাওরিয়া বলা হয়। যার উদ্দেশ্য হল এমন শব্দ প্রয়োগ যাতে বাহ্যত শব্দটি অন্য অর্থ প্রকাশ করে। অর্থাৎ প্রশ্নকারীর দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরে যায়। আর বাস্তবে মনে মনে শব্দের মূল অর্থকেই চিত্রিত করে রাখতে হবে। ঠিক এভাবেই বহুমূখী অর্থ প্রকাশ করে এমন শব্দ বলে নিজেকে সরাসরি অসত্য বলা থেকে রক্ষা করবে।
মূলঃশামসুল হুদা আযীযুল হক
Collected From: http://www.islamhouse.com/


be Organized by Holy Islam 

O.H.I 

For More Visit:




Saturday, April 7, 2012

মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-৪


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-

 

অসত্য চারিত্রিক সার্টিফিকেট
বর্তমানে এর ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়েছে। এমনকি দ্বীনদার শিক্ষিত লোকেরাও এক্ষেত্রে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। মানুষ হয়ত নিজের নামে মিথ্যা চারিত্রিক সার্টিফিকেট সংগ্রহ করছেঅথবা অন্যদের লিখে দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কারো একটি চারিত্রিক সনদ প্রয়োজন। সে কারো নিকট এসে উপস্থিত হলো এবং একটি চারিত্রিক সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে ফেলল। লেখক হয়ত লিখে দিলেনআমি তাকে দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ দেখেছি। সে খুব ভাল লোক। তার চরিত্র খুবই সুন্দর।
আফসোসের বিষয় একবারের জন্যেও ভেবে দেখলেন না যে তিনি একটি নাজায়েয কাজ করলেনবরং এর উল্টো হয়ত তিনি ভেবে নিয়েছেন যে তিনি একটি ভাল কাজ করলেন। কেননা প্রার্থীর জন্য তা খুবই প্রয়োজন ছিল। সে অভাব তিনি পূরণ করে দিলেন। কারো অভাব দূর করে দেয়া পুণ্যের কাজ। এধরণের ভাবনা নিয়ে মিথ্যে একটি সনদ দিয়ে দিলেনঅথচ ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। অথবা কোনো পরিচয়-ই নেই। এহেন অবস্থায় সার্টিফিকেট দাতা যেমন গোনাহগার হবে তদ্রূপ গ্রহীতাও গোনাহগার হবে সমানভাবে।
চরিত্র সম্পর্কে অবগতির দু'টি পন্থা
উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সামনে এক ব্যক্তি এসে তৃতীয় একজন সম্পর্কে বলতে লাগল যেঅমুক ব্যক্তি খুব ভাল মানুষ। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে জিজ্ঞেস করলেনআচ্ছা বলুন তো আপনার কি ঐ ব্যক্তির সাথে কোনো লেনদেন হয়েছেলোকটি বললনা। পুনরায় প্রশ্ন করলেনআপনার কি তার সাথে কোনো ভ্রমন হয়েছেলোকটি বললনা। অতঃপর উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনতাহলে আপনি কিভাবে অবগত হলেন যেতার চাল-চলন ও চরিত্র খুব ভাল।
একজন মানুষের চরিত্র সম্পর্কে তখনই অবগতি লাভ করা যায় যখন তার সাথে কোনো লেন-দেন করা হয়। দ্বিতীয় পথ হলো তার সাথে ভ্রমন করা। আর ভ্রমনের সময় একজন মানুষ সম্পর্কে একটি চরিত্র-চিত্র ফুটে উঠে। তার চরিত্রতার কাজ-কর্মতার সঠিক অবস্থানতার আগ্রহ, তার চিন্তা-চেতনা সবকিছুই ভেসে উঠে।
আপনি যদি তার সাথে কোন লেন-দেন করতেন বা ভ্রমন করতেন কেবল তখনই তার সম্পর্কে আপনার এ ভাল মন্তব্য যথাযথ বলে মনে করা হত। কিন্তু যখন আপনার সাথে এ দু'টির একটিও সংগঠিত হয়নি তাই তার সম্পর্কে চুপ থাকাই শ্রেয়। ভাল-মন্দ কোনোটাই বলার দরকার নেই। তাই কারো সম্পর্কে কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে যেসে কেমনতখন উত্তরে কেবল ততটুকুই বলুন যতটুকু তার সম্পর্কে জানেন। আপনি যদি তাকে নামায পড়তে দেখেন তাহলে কেবল এতটুকু বলুন যে নামায পড়ার সময় তো মসজিদে তাকে দেখেছিতবে এতদভিন্ন অন্যান্য অবস্থা সম্পর্কে আমি অবগত নই।

সার্টিফিকেট একটি সাক্ষীস্বরূপ
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে -
إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
(তবে তারা ছাড়া যারা জেনে বুঝে সত্য সাক্ষী দেয়) [সূরা আয-যুখরুফ : ৮৬]
স্বরণ রাখা চাই, যিনি সার্টিফিকেট এর উপর স্বাক্ষর করছেন তিনি প্রকৃতপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করছেন। উপরে বর্ণিত আয়াতের আলোকে সাক্ষী দেয়া তখনই জায়েয হবে যখন সে ঐ বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকেফহাল হবে। অন্যথায় সাক্ষী দেয়া বৈধ নয়। বর্তমানে অহরহ এমন হচ্ছে যেকোনো ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার আদৌ কোনো ধারণা নেই অথচ তাকে একটি চারিত্রিক সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছেন। এটা তো প্রকাশ্য মিথ্যাগোনাহ। আর মিথ্যা সাক্ষী তো এমন ভয়ঙ্কর পাপ যেনবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শিরক এর সঙ্গে একত্রে উল্লেখ করেছেন।
মিথ্যা সাক্ষী শিরক সমতুল্য
হাদীসে এসেছেএকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেলান দিয়ে বসে ছিলেন এ অবস্থায় তিনি সাহাবাদের বললেনবড় গোনাহ সম্পর্কে কি আমি তোমাদের বলবসাহাবাগণ বললেনইয়া রাসূলাল্লাহ! বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনবড় গোনাহের অন্তর্ভুক্ত হল কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা তথা শিরক করামাতা-পিতার নাফরমানী করা। অতঃপর সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেনমিথ্যা সাক্ষী দেওয়া। (একথা তিনবার বললেন)।
এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলোপ্রথমত মিথ্যা সাক্ষীকে তিনি শিরক এর সমপর্যায়ভুক্ত করেছেনদ্বিতীয়তকথাটি তিনবার উল্লেখ করেছেন এবং হেলান দেয়া থেকে সোজা হয়ে বসে বলেছেন। কুরআন মাজীদেও একে শিরক এর সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে।
সার্টিফিকেট প্রদানকারীও গোনাহগার হবে
মিথ্যা সাক্ষী প্রদান করা, মিথ্যা বলার চেয়েও গুরুতর এবং ভয়ঙ্কর। কেননা এতে কয়েক প্রকার গোনাহ হয়ে থাকে। প্রথমতমিথ্যা বলার গোনাহ। দ্বিতীয়তঅন্যকে বিভ্রান্ত করার গোনাহ।
মিথ্যা সার্টিফিকেট যখন অন্যের নিকট পৌঁছবে তখন ঐ ব্যক্তি মনে করবে সে তো খুব ভাল লোক এবং সে কারণে তার সাথে হয়ত কোনো ভালো লেন-দেনও করে বসবে। ফলে তার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। আর সে ক্ষতিগ্রস্থতার দায়ভার ঐ মিথ্যা সার্টিফিকেটপ্রদানকারীর ওপরই বর্তাবে। সুতরাং মিথ্যা সাক্ষীর ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদেরকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। এটা কঠিন ও শক্ত গোনাহ।
মূলঃশামসুল হুদা আযীযুল হক
Collected From: http://www.islamhouse.com/
 (স্মরণ করি-২৩৩ পর্ব)


be Organized by Holy Islam 

O.H.I 

For More Visit:




Wednesday, April 4, 2012

মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-৩


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

মিথ্যার প্রচলিত আকার-প্রকৃতি-

 

বাচ্চাদের সাথে মিথ্যা বলা
একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে এক মহিলা একটি ছোট্ট বাচ্চাকে কোলে নেয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বাচ্চা কাছে যেতে চাচ্ছিল না। অতঃপর মহিলা বাচ্চাটিকে কাছে নেওয়ার জন্য বললেন : কাছে এসোতোমাকে একটি জিনিস দেব। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে বললেনসত্যিই কি তুমি তাকে কিছু দেবেনা এমনিই তাকে কাছে নেওয়ার জন্য বলছমহিলা বললেনআমার খেজুর দেওয়ার ইচ্ছা আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনযদি তোমার খেজুর দেয়ার ইচ্ছা না থাকত এবং শুধুমাত্র তাকে আহ্বান করাই উদ্দেশ্য হত তাহলে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যা বলার গুনাহ লেখা হত। [আবু দাউদ: ৪৯৯১]

এ হাদীস দ্বারা আমরা এ শিক্ষা পাই যে
বাচ্চাদের সাথেও মিথ্যা বলা যাবে না। তাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা যাবে না। নতুবা জীবনের শুরুতেইমিথ্যা বলা অন্যায় নয়এমন মনোভাব তাদের অন্তরে প্রোথিত হবে।
ঠাট্টাবশত মিথ্যা বলা
আমরা অনেক সময় হাসি-ঠাট্টাবশত মিথ্যা বলে থাকি। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এধরনের মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। একটি হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আফসোস করে বলেছেন: ঐ ব্যক্তির জন্য কঠিন শাস্তিকঠিন শাস্তিঅতঃপর কঠিন শাস্তি যে মিথ্যা বলেমানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে। [আবু দাউদ: ৪৯৯০]
হাসির গল্পআনন্দদায়ক কথা বা রসিকতারাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও করেছেন। কিন্তু কখনো তিনি এমন করেন নি যেযা অসত্য বা বাস্তবতা-বিরোধী সে ধরনের কোনো কথার আশ্রয় নিয়েছেন। হাদীসে এসেছেএকবার এক বৃদ্ধ মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এলেন। তিনি আবেদন পেশ করে বললেনহে আল্লাহর রাসূলআপনি আমার জন্য জান্নাত লাভের দোআ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে ওমুকের মা! বৃদ্ধারা বেহেশতে যাবে না।
একথা শুনে বৃদ্ধা খুবই উৎকন্ঠিত হলেনএমনকী ক্রন্দন শুরু করে দিলেন। তিনি ভাবলেন যে কক্ষনোই তার বেহেশতে যাওয়া হবে না। বৃদ্ধার অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাখ্যা করে বললেন যেকোনো বৃদ্ধমহিলা বৃদ্ধাবস্থায় বেহেশতে প্রবেশ করবে না। বরং আল্লাহ তাদেরকে নতুন সৃষ্টিতে রূপান্তরিত করবেন। অতঃপর পূর্ণযৌবনা-কুমারী হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এরপর তিনি কুরআনের এ আয়াতটি পড়ে শোনালেন, (নিশ্চয় আমি তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করবঅতঃপর তাদেরকে বানাব কুমারীসোহাগিনী ও সমবয়সী) [আল-মুজামুল আওসাত: ৫/৩৫৭নং ৫৫৪৫]
أن امرأة عجوزا جاءته تقول له : يا رسول الله ادع الله لي أن يدخلني الجنة فقال لها : يا أم فلان إن الجنة لا يدخلها عجوز وانزعجت المرأة وبكت ظنا منها أنها لن تدخل الجنة فلما رأى ذلك منها بين لها غرضه أن العجوز لن تدخل الجنة عجوزا بل ينشئها الله خلقا آخر فتدخلها شابة بكرا وتلا عليها قول الله تعالى : { إنا أنشأناهن إنشاء فجعلناهن أبكارا عربا أترابا } . وقد حسنه الشيخ الألباني في غاية المرام برقم 375
এখানে দেখা যাচ্ছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত সুন্দর কৌতুক করলেন। অথচ তা বাস্তবতাবিরোধী বা কোনো অর্থেই অসত্য নয়।
মূলঃশামসুল হুদা আযীযুল হক
Collected From: http://www.islamhouse.com/


be Organized by Holy Islam 

O.H.I 

For More Visit: