Saturday, October 15, 2011

রাসূলুল্লাহ যেভাবে হজ করেছেন-৭


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

রাসূলুল্লাহ যেভাবে হজ করেছেন-৭

আরাফায় যাত্রা ও নামিরাতে অবস্থান
৫৪- এরপর রাসূলুল্লাহ (সা)  রওয়ানা হলেন। কুরাইশদের এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ ছিল না যেতিনি মাশআরে হারাম (অর্থাৎ) মুযদালিফাতেই[1] অবস্থান করবেন এবং সেখানেই তাঁর অবস্থানস্থল হবে। কেননা কুরাইশরা জাহেলী যুগে এরকম করত।[2] কিন্তু রাসুলূল্লাহ (সা) মাশআরে হারাম অতিক্রম করে 

আরাফায় উপনীত হলেন এবং নামিরা নামক স্থানে তাঁর জন্য তাঁবু তৈরি করা অবস্থায় পেলেন। তিনি সেখানে অবতরণ করলেন।
৫৫- অতপর যখন সূর্য হেলে পড়লতখন তিনি কসওয়া নামক উটনীটি আনতে বললেন এবং তাতে সওয়ার হয়ে উপত্যকার মধ্যে এসে থামলেন[3]

আরাফার ভাষণ
৫৬- অতপর তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন এবং বললেন,

·     إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِى شَهْرِكُمْ هَذَا فِى بَلَدِكُمْ هَذَا.

নিশ্চয় তোমাদের রক্ত ও তোমাদের সম্পদ তোমাদের জন্য সম্মানিত। যেমন তোমাদের এই শহরেতোমাদের এই মাসেতোমাদের এই দিন সম্মানিত

·     أَلاَ إِنَّ كُلَّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَىَّ  هَاتَيْنِ  مَوْضُوعٌ.

জেনে রাখো! নিশ্চয় জাহিলিয়াতের প্রত্যেকটি বিষয় আমার এই দুই পায়ের তলে রাখা হল

·     وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعَةٌ وَ ِإنَّ أَوَّلَ دَمٍ أَضَعُهُ مِنْ دِمَائِنَا دَمُ إبْنِ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ. كَانَ مُسْتَرْضَعًا فِى بَنِى سَعْدٍ فَقَتَلَتْهُ هُذَيْلٌ.

জাহিলী যুগের যাবতীয় রক্তের দাবী রহিত করা হল। আমাদের রক্তের দাবীসমূহের মধ্যে প্রথম রক্তের দাবী যা রহিত করা হলতা ইবন রবীআ ইবনুল-হারিসের রক্তের দাবী। সে সাদ গোত্রে দুধ পানরত অবস্থায় ছিল। হুযাইল গোত্র তাকে হত্যা করেছিল

·     وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَإِنَّهُ مَوْضُوعٌ كُلُّهُ

জাহেলী যুগের সুদ রহিত করা হল। সর্বপ্রথম যে সুদের দাবী রহিত করছি তা হল আববাস ইব্‌ন আবদুল মুত্তালিবের সুদ। তার পুরোটাই রহিত করা হল

·     اتَّقُوا اللَّهَ فِى النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوْجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ

আর তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহকে আল্লাহর বাণী[4] দ্বারা হালাল করে নিয়েছ

·     وَإِنَّ لَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لاَ يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ فَإِنْ فَعَلْنَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ

নিশ্চয় তোমাদের ব্যাপারে তাদের ওপর দায়িত্ব হচ্ছেতারা যেন  তোমাদের বিছানাসমূহকে এমন কোন ব্যক্তি দ্বারা পদদলিত না করে যাকে তোমরা অপছন্দ কর (অর্থাৎ তারা যেন পরপুরুষদেরকে তাদের কাছে আসার অনুমতি না দেয়)। যদি তারা তা করেতবে তোমরা তাদেরকে মৃদুভাবে প্রহার কর।

·     وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ

আর তাদের ব্যাপারে তোমাদের উপর দায়িত্ব হচ্ছেউত্তম পন্থায় তাদের ভরণ-পোষণ ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করা

·     وَإِنِّى قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ كِتَابَ اللَّهِ

আমি তোমাদের মধ্যে এমন এক বিষয় রেখে যাচ্ছিযা তোমরা আঁকড়ে ধরলে আর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলোআললাহ্র কিতাব

·     وَأَنْتُمْ مَسْئُولُونَ عَنِّىْ فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُونَ. قَالُوا نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ رِسَالَاتِ رَبِّكَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ لِأُمَّتِكَ.
·      
আমার ব্যাপারে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবেতখন তোমরা কী বলবে তারা বললআমরা সাক্ষী দিচ্ছিনিশ্চয় আপনি আপনার রবের বাণীসমূহ পৌঁছিয়ে দিয়েছেনঅর্পিত দায়িত্ব আদায় করেছেনউম্মতকে উপদেশ দিয়েছেন

·     ثُمَّ قَالَ بِأُصْبُعِهِ السَّبَّابَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْكِبُهَا إِلَى النَّاس্ِর اللَّهُمَّ اشْهَدْ اللَّهُمَّ اشْهَدْ اللَّهُمَّ اشْهَدْ.

অতপর তিনি তাঁর শাহাদাত অঙ্গুলী আকাশের দিকে তুলে মানুষের দিকে ইশারা করে বললেনহে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুনহে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুনহে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন

দুই ওয়াক্ত সালাত একসাথে আদায় ও আরাফায় অবস্থান
৫৬- এরপর বিলাল রা. একবার আযান দিলেন।[5]

৫৭- অতপর ইকামত দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) (সবাইকে নিয়ে) যোহরের সালাত আদায় করলেন। বিলাল রা. পুনরায় ইকামত দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) আসরের 

সালাতও আদায় করলেন।

৫৮- তিনি উভয় সালাতের মাঝখানে অন্য কোন সালাত আদায় করেননি।
৫৯- অতপর রাসূলুল্লাহ (সা) ‘কাসওয়া নামক উটনীর[6] পিঠে আরোহন করলেন। এভাবে তিনি উকূফের স্থানে এলেন। তাঁর উটনী কসওয়ার পেট পাথরের[7] দিকে ফিরিয়ে রাখলেন। যারা পায়ে হেঁটে তাঁর সাথে এসেছিলেনতিনি তাঁদের সকলকে তাঁর সামনে রাখলেন এবং কিবলামুখী হলেন।[8]
৬০- সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানেই উকূফ করলেন। এমনিভাবে (পশ্চিম আকাশের) হলুদ আভা ফিকে হয়ে গেল এমনকি লালিমাও দূর হয়ে গেল[9]

৬১- আর তিনি বললেন,
قَدْ وَقَفْتُ هَهُنَا وَعَرَفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ
আমি এখানে উকূফ করলামকিন্তু আরাফার পুরো এলাকা উকূফের স্থান।[10]

৬২- এরপর তিনি উসামা ইব্‌ন যায়েদ রা. কে তাঁর উটনীর পেছনে বসালেন।

আরাফা থেকে প্রস্থান
৬৮- অতপর রাসূলুল্লাহ (সা) মুযদালিফার দিকে রওয়ানা হলেন। আর তিনি ছিলেন শান্ত-সুস্থির।[11] তিনি কাসওয়া নামক উষ্ট্রীর লাগাম শক্তভাবে টেনে 

ধরলেনএমনকি উষ্ট্রীর মাথা তাঁর হাওদার সাথে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। আর তিনি তাঁর ডান হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন,

أَيُّهَا النَّاسُ السَّكِينَةَ السَّكِينَةَ

হে লোকসকল! শান্ত হও শান্ত হওধীর-স্থিরভাবে এগিয়ে চল

৬৭- যখনই তিনি কোন বালুর টিলায় পৌঁছছিলেনতখনই তা অতিক্রম করার সুবিধার্থে উষ্ট্রীর রশি ঢিলা করে দিচ্ছিলেন। এমনিভাবে তাতে উঠে তা অতিক্রম করছিলেন।

চলবে...



[1]. আবূ দাউদইব্ন মাজা।


[2]. হজ পালনকারী সাহাবীগণকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ আরাফার ময়দানে অবস্থান করলেন এবং এ-ক্ষেত্রেও মুশরিকদের বিপরীত করলেন

কেননা মুশরিকরা মুযদালিফায় অবস্থান করতো এবং বলতো আমরা হারাম এলাকা ছাড়া


অন্য জায়গায় যাব না এবং সেখান থেকে প্রস্থান করব না। উল্লেখ্যআরাফা হারাম এলাকার বাইরে অবস্থিত। 


[3]. এ উপত্যকার নাম হচ্ছে উরনা। এটা আরাফা এলাকার বাইরে অবস্থিত। রাসূলুল্লাহ  এই উরনা উপত্যকা থেকে আরাফার ভাষণ 

দিয়েছেন।


[4]. আল্লাহর বাণীটি হচ্ছে﴿فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ তাহলে তোমরা বিয়ে কর মহিলাদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে 

(নিসা : ৩ )।


[5]. দারেমী।


[6]. ইবন মাজা।


[7]. এ পাথরটি জাবালে রহমতের নিচে বিছানো। জাবালে রহমত অবস্থিত আরাফার মাঝামাঝি স্থানে। ইমাম নাববী রহ. বলেনএটিই 


উকূফের মুস্তাহাব স্থান। অনেকে মনে করেন জাবালে রহমতে না ওঠলে উকূফ পূর্ণ হবে না- এটি সঠিক নয়। 


[8]. অন্য হাদীসে এসেছেতিনি উকূফ করেছেনউভয় হাত তুলে দুআ করেছেন। হাজ্জাতুন-নবী : ৭৩ পৃষ্ঠা।


[9]. সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে রাসূলুল্লাহ  এর প্রস্থান মুশরিকদের আচারের সাথে ভিন্নতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই ছিল। কেননা মুশরিকরা

 সূর্যাস্তের আগেই আরাফা ত্যাগ করতো।


 রাসূলুল্লাহ  বলেনআমাদের আদর্শ তাদের থেকে ভিন্ন।


[10]. আবূ দাউদনাসাঈমুসনাদে আহমদ।


[11]. আবূ দাউদনাসাঈ।

be Organized by Holy Islam 
O.H.I 
For More Visit:

বই পড়ুনঃ http://ohilibrary.blogspot.com