রমাদান
ম্যানুয়েল-২৩:
রমজানের শেষ ১০
দিনে লাইলাতুল কদর অন্বষণে চেষ্টা করা
সূধীপাঠক বৃন্দ! রমজানের শেষ ১০ দিনে রয়েছে বরকতপূর্ণ
রাত, লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তায়ালা এ মাসকে
অন্য সব মাসের ওপর বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতের প্রতি এ রাতের
মর্যাদা ও কল্যাণ দান করে অনুগ্রহ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এ রাতের ব্যাপারে
বলেন,
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ
مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ. فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ.
أَمْراً مِنْ عِنْدِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ. رَحْمَةً مِنْ رَبِّكَ إِنَّهُ
هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ. رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا
إِنْ كُنْتُمْ مُوقِنِينَ. لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ رَبُّكُمْ
وَرَبُّ آبَائِكُمُ الْأَوَّلِينَ(الدخان:৩-৮)
‘নিশ্চয় আমি এটি নাজিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত
হয়, আমার নির্দেশে। নিশ্চয় আমি রাসূল প্রেরণকারী। তোমার রবের
কাছ থেকে রহমত হিসেবে; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। যিনি আসমানসমূহ, জমীন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর রব; যদি তোমরা দৃঢ় বিশ্বাস
পোষণকারী হও। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন। তিনি
তোমাদের রব এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদের রব।’
মহান আল্লাহ তাআলা
এ রাতের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন, যেহেতু
এতে অত্যাধিক কল্যান, বরকত ও মর্যাদা রয়েছে। যথা এ বরকতময়
রাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যে কুরআন সত্য ও মিথ্যার মধ্যে
পার্থক্য নিরুপনকারী। এ রাতের গুরুত্বের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ
الْقَدْرِ. وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ. لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ
مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ. تَنَزَّلُ الْمَلائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ
رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ. سَلامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ(القدر:১-৫)
‘নিশ্চয় আমি এটি আমি নাজিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে।’ তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল
কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরইল)
তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সে রাত ফজরের সূচণা
পর্যন্ত।’
কদর শব্দটি সম্মান ও মর্যাদার অর্থে ব্যবহৃত হয়। আবার
নির্ধারণ করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। লাইলাতুল কদর অত্যধিক সম্মানিত
ও মহত্বপূর্ণ। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা যা কিছু হবে তা নির্ধারণ করেন এবং প্রত্যেকটি ব্যাপারে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
হাজার মাসের চেয়ে
উত্তম কথাটির অর্থ, এ রাতের মর্যাদা,
সম্মান অত্যধিক, যা হাজার মাসের সম্মান ও
মর্যাদার সমান। যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে এ রাতে নামাজ আদায় করবে তার
পূর্বেকার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
ফেরেশতা ও রুহ
নাজিল হবার অর্থ : ফেরেশতারা আল্লাহর এক প্রকার বান্দা, তারা রাতে দিনে আল্লাহর ইবাদতে দণ্ডায়মান থাকে। তারা লাইলাতুল
কদরে কল্যাণ, বরকত ও রহমত নিয়ে পৃথিবীর বুকে আগমন করে। রুহ
বলতে জিব্রাইল (আ:) কে বুঝায়, এ রাতের বিষেশ মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রেখে তাকেও অবতরণ করার নির্দেশ
দেয়া হয়েছে।
শান্তি বর্ষণ
করার অর্থ : লাইলাতুল কদর এমন রাত, যে রাতে কোন ভীত সন্ত্রস্ত বান্দা যদি আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির
প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশের শান্তির
বাণী শুনান।
ফজর উদয় হবার
পূর্ব পর্যন্তের অর্থ : ফজর উদয়ের মাধ্যমে লাইলাতুল কদরের সমাপ্তি ঘটে।
মুদ্দাকথা, এ সূরার আলোকে আমরা লাইলাতুল কদরের নিচের বৈশিষ্ট্যসমূহ চিহ্নিত করতে পারি :
(১) আল্লাহ তায়ালা এ রাতে কুরআন নাজিল করেছেন, যা
মানুষের জন্য সঠিক পথ নির্দেশিকা এবং যাতে দুনিয়া ও আখিরাতের বিশেষ কল্যান নিহিত রয়েছে।
(২) এ রাতের গুরুত্ব ও মহত্ব অত্যধিক যা অন্য কোন রাতের ব্যাপারে বলা হয়নি।
(৩) এ রাত এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতে ইবাদত করার মাধ্যমে এক হাজার
মাস ইবাদত করার সমান সাওয়াব অর্জন করা যায়।
(৪) এ রাতে ফেরেশতারা দুনিয়ার বুকে অবতরণ করে কল্যাণ, বরকত ও রহমত বর্ষণ করতে থাকে।
(৫) এটা শান্তি বর্ষণের রাত। যে বান্দা আল্লাহর ইবাদতে এ রাতটি অতিবাহিত
করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্ত করে শান্তির বাণী শুনিয়ে দেন।
(৬) আল্লাহ এ রাতে মদীনায় একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাজিল করেছেন। যা কিয়ামত পর্যন্ত
তেলাওয়াত করা হবে।
এছাড়া এ রাতের
ফজিলত সমন্ধে বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবূ হুরায়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا
وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
‘যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে লাইলাতুল
কদরে দণ্ডায়মান থাকবে তার পূর্বেকার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’
ঈমানের অর্থ, আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং আল্লাহ কদর রাতে নামাজ আদায়কারীর
জন্য যে সাওয়াব নির্ধারণ করেছেন তার ওপর বিশ্বাস রাখা।
ইহতিসাবের অর্থ, পুরস্কারের আশা করা ও সওয়াব কামনা করা। তবে যে ব্যক্তি-ই
এ রাতে এবাদত করবে, সে-ই সওয়াব পাবে। তার সওয়াবের ধারণা থাক
বা না-থাক। এ ধরনের নেকী অর্জনের জন্য সওয়াবে ধারণা থাকা শর্ত নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ
الْقُرْآن البقرة: من الآية
‘রমজান এমন একটি মাস যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে।’
আবুযর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে লইলাতুল কদর সম্পর্কে
বলূন, এটা কি রমজানে না অন্য কোন মাসে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, এটা রমজান মাসেই। আবুযর আবার প্রশ্ন করলেন, এটা কি নবীগণ যতদিন জীবিত আছেন ততদিন
অবশিষ্ট থাকবে? নাকি এটা কিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা কিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে। তবে এ রাতের মর্যাদা ও পুরস্কার আল্লাহ
বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্নভাবে দিয়ে থাকেন।
লাইলাতুল কদর
রমজানের শেষ ১০ দিনে নিহিত রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
تحروا ليلة القدر في العشر الأواخر من رمضان.
‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর।’
তবে বেজোড় রাতগুলোতে
লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
تحروا ليلة القدر في الوتر من العشر والأواخر
من رمضان.
‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর
অন্বেষণ কর।’
এটা রমজানের ২৭
তারিখ রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কতক
সাহাবি রমজানের শেষ ১০ রাতের ২৭ তারিখ রাতে লাইলাতুল কদর হিসেবে স্বপ্নে দেখেছিল। এ
কথা শ্রবনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকেও
তোমাদের মত ২৭ তারিখ রাতকেই লাইলাতুল কদর হিসেবে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। অতএব তোমাদের
মধ্যে যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরকে নির্দিষ্ট করতে চায় সে যেন ২৭ তারিখ রাতকে নির্বাচন
করে নেয়।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
التمسوها العشر الأواخر فإن ضعف أحدكم أو عجز
فلا يغلبن على السبع البواقي.
‘তোমরা রমজানের শেষ
১০ রাতে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর। যদি তোমাদের কেউ দূর্বল থাকে অথবা অক্ষম হয় তাহলে
সে যেন ২৭ তারিখ রাতে ইবাদত করে।’ উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর
শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদেরকে লাইলাতুল কদর জ্ঞান করে যে রাতে দাড়িয়ে থাকতে বলেছেন, তা হচ্ছে রমজানের ২৭ তম রাত।’
দুখান : ৩-৮
সূরায়ে কদর : ১-৫
বাকারা : ১৮৫
বুখারী ও মুসলিম
বুখারী
সাওম/রোজা সংক্রান্ত বই |
||
ক্রম
|
বই
|
লেখক
|
১
|
আব্দুর রহমান বিন আব্দুল আযীয আস-সুদাইস
|
|
২
|
সিয়াম রাসুলুল্লাহর(স)
রোযা
|
ডাঃ জাকির নায়েক
|
৩
|
শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
|
|
৪
|
সংকলনঃ মুহাম্মদ নাসীল শাহরুখ
|
|
৫
|
আলী হাসান তৈয়ব
|
|
৬
|
অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলাম
|
|
৭
|
ফয়সাল বিন আলী আল বা'দানী
|
|
৮
|
আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
|
|
৯
|
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন
|
|
১০
|
আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
|
|
১১
|
জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
|
|
১২
|
সংকলনঃ আবুল কালাম আজাদ
|
O.H.I
For More Visit:
বই পড়ুনঃ