রমাদান ম্যানুয়েল-২৬:
যাকাতুল ফিতর
আমাদের প্রতি
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একটি অনুগ্রহ এই
যে তিনি আমাদের ইবাদত-বন্দেগিতে কোন ক্রটি হলে তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা
রেখেছেন। যেমন নফল নামাজ দ্বারা ফরজ নামাজের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন।
এমনিভাবে সিয়াম পালনে যে সকল ক্রটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকে তার ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার জন্য
যাকাতুল ফিতর আদায়ের বিধান দিয়েছেন। সাথে সাথে দরিদ্র ও অনাহার ক্লিষ্ট মানুষেরা
যেন ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থাও দিয়েছেন। কেউ যেন অর্থাভাবে ঈদের
খুশি থেকে বঞ্চিত না থাকে সে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইসলামি সমাজকে এ বিধান দিয়েছেন।
এ ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে থাকে। তিনিই তো
সিয়াম পূর্ণ করা ও রমজানের রাতে কিয়ামসহ অন্যান্য নেক আমল এবং কল্যাণকর কাজ করার
তওফিক দিয়েছেন।
যাকাতুল ফিতরের বিধান :
হাদিসে এসেছে—
عن
ابن عباس رضى
الله عنهما قال:
فرض رسول الله
صلى الله عليه
وسلم زكاة الفطر
طهرة للصائم من
اللغو والرفث وطعمة
للمساكين، فمن أداها
قبل الصلاة فهي
مقبولـة، ومن أداها
بعد الصلاة فهي
صدقة من الصدقات.
رواه أبو داود
‘ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম পালনকারীর জন্য সদকাতুল ফিতর
আদায় অপরিহার্য করে দিয়েছেন। যা সিয়াম পালনকারীর অনর্থক কথা ও কাজ পরিশুদ্ধকারী
ও অভাবী মানুষের জন্য আহারের ব্যবস্থা হিসেবে প্রচলিত। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের
পূর্বে তা আদায় করবে তা সদকাতুল ফিতর হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পর আদায় করবে তা সাধারণ সদকা বলে গণ্য হবে। (আবু দাউদ)
অতএব সদকাতুল
ফিতর ওয়াজিব। আল্লাহর রাসূল স. যা কিছু ওয়াজিব করেছেন তা পালন করা উম্মতের জন্য
অপরিহার্য। আল্লাহর রাব্বুল আলামিন বলেন:—
مَنْ
يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا . (النساء
:৮০)
‘যে রাসূলের আনুগত্য করল সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল। এবং যে মুখ ফিরিয়ে
নিল আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক পাঠাইনি।’ (সূরা আন-নিসা : ৮০)
অতএব রাসূল যা
নির্দেশ দিয়েছেন তা মূলত আল্লাহরই নির্দেশ। আল্লাহ বলেন:—
أَطِيعُوا
اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ. (النساء : ৫৯)
‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর রাসূলের।’ সূরা আন-নিসা: ৫৯
যাকাতুল
ফিতর কার উপর ওয়াজিব ?
যার কাছে ঈদের দিন স্বীয় পরিবারের একদিন ও একরাতের
ভরন-পোষণের খরচ বাদে এক সা’ পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী থাকবে তার উপরই সদকাতুল ফিতর ফরজ হবে। যার উপর
সদকাতুল ফিতর ফরজ তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন তেমনি নিজের পোষ্যদের পক্ষ
থেকেও আদায় করবেন।
যাকাতুল ফিতর এর পরিমাণ :
যা কিছু প্রধান
খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত যেমন গম, যব, ভুট্টা, চাউল,
খেজুর ইত্যাদি থেকে এক সা’ পরিমাণ দান
করতে হবে। হাদিসে এসেছে—
عن ابن عمر رضى الله عنهما قال : فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم زكاة الفطر من رمضان، صاعا من تمر أو صاعا من شعير. رواه البخاري ومسلم
ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম অপরিহার্য করে দিয়েছেন রমজানের জাকাতুল ফিতর হিসেবে এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ গম।’ (বোখারি ও মুসলিম)
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের
সা’-র হিসেবে
: এক সা’-তে ২ কেজি ৪০ গ্রাম।
কখন আদায় করবেন যাকাতুল ফিতর ?
সদকাতুল ফিতর
আদায় করার দুটো সময় রয়েছে। একটি হল উত্তম সময় অন্যটি হল বৈধ সময়। উত্তম সময় হল ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্বে
আদায় করা। যেমন হাদিসে এসেছে—
عن ابن عمر رضى الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم أمر بزكاة الفطر قبل خروج الناس إلى الصلاة. رواه مسلم
‘ইবনে উমার থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. ইদগাহে যাওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ
দিয়েছেন। ( মুসলিম)
সদকাতুল ফিতর
আদায় করার সুযোগ দেয়ার জন্যইতো ঈদুল ফিতরের সালাত একটু বিলম্বে আদায় করা
মোস্তাহাব। সদকাতুল ফিতর আদায় করার বৈধ সময় হল: যদি কেউ ঈদের দু একদিন পূর্বে
সদকাতুল ফিতর আদায় করে দেয় তবে আদায় হয়ে যাবে। সহি বোখারিতে আছে আব্দুল্লাহ ইবনে
উমর এ রকম আদায় করতেন। তবে কোন সংগত কারণ ব্যতীত ঈদের সালাতের পরে আদায় করলে
সদকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় হবে না বরং সাধারণ নফল সদকা হিসেবে আদায় হবে। ওজর বা
বিশেষ অসুবিধায় কেউ যদি ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করতে না পারে তবে সে ঈদের
সালাতের পর আদায় করবে।
যাকাতুল ফিতর কাকে দেবেন ?
নিজ শহরের অভাবী
ও দরিদ্র মানুষদের মাঝে সদকাতুল ফিতর আদায় করবেন। যারা জাকাত গ্রহণের অধিকার রাখে
এমন অভাবী লোকদেরকে সদকাতুল ফিতর প্রদান করতে হবে। একজন দরিদ্র মানুষকে একাধিক
ফিতরা দেয়া যেমন জায়েজ আছে তেমনি একটি ফিতরা বণ্টন করে একাধিক মানুষকে দেয়াও
জায়েজ।
O.H.I
For More Visit:
বই পড়ুনঃ