Saturday, June 25, 2011

মু’মিন হতে যা দরকার


السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

মুমিন হতে যা দরকার

আলী (রা) বর্ণিত;
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দাহ মুমিন হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত চারটি জিনিসের উপর ঈমান না আনবেঃ

.  সে সাক্ষী দিবে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই।
.  নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ দ্বীনে হাক্ব দিয়ে আমাকে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন,
৩.  মৃত্যূ ও মৃত্যূর পরে হাশরের ময়দানে উঠার উপর ঈমান আনা এবং
৪.  তাকদ্বীরের উপর ঈমান আনা।

[তিরমিযী ২১৪৫ ইবনু মাজাহ ৮১ মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং ১০৪]



be Organized by Holy Islam 

O.H.I 

For More Visit:

Wednesday, June 22, 2011

রজব নিয়ে অলীক ভাবনা


السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
রজব নিয়ে অলীক ভাবনা


বলা যায়মুসলমান মাত্রই অবগত যেআল্লাহ যে চারটি মাসকে সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে একটি হল রজব মাসযা হিজরি সনের সপ্তম মাস। এ চার মাস সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ (التوبة :36)
অবশ্যই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস বারটিতার মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস। এ সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাংএতে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করবে না। (সূরা তাওবা : ৩৬)
বোখারি ও মুসলিম বর্ণিত হাদিসে এসেছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন :
إن الزمان قد استدار كهيئته يوم خلق الله السماوات والأرض، السنة اثنا عشر شهرا، منها أربعة حرم، ثلاث متواليات : ذو القعدة، ذو الحجة، والمحرم، ورجب مضر الذي بين جمادى وشعبان.
যে দিন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে সে দিন থেকেই সময় তার নিজ আবর্তে ঘুরে ঘুরে চলছে। বছর হল বারোটি মাসে। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত (নিষিদ্ধ)। এর তিনটি হল ধারাবাহিক জিলকদজিলহজ ও মুহররম আর চতুর্থটি হল মুদার বংশের রজব। যা জমাদিউসসানী ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী।
মাস চতুষ্টয়কে সম্মানিত হিসেবে নাম করার কারণ :
 বিষয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। বলা হয় যেএ সকল মাসের সম্মানের কারণে এবং এ সকল মাসে পাপ কাজ অপেক্ষাকৃত গুরুতর হওয়ার কারণে এ মাসসমূহকে নিষিদ্ধ বা সম্মানিত মাস হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।
ইবনে আবি তালহাইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন : আল্লাহ তাআলা চারটি মাসকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেননিষিদ্ধ মাস বলে ঘোষণা দিয়েছেনএ সকল মাসে পাপ কাজকে অধিকতর অন্যায় এবং সৎকর্ম অধিকতর পুরস্কার লাভের মাধ্যম বলে জানিয়ে দিয়েছেন। অনেকের মত হল-এ চার মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে এর নাম হুরুম বা নিষিদ্ধ মাস বলে নাম রাখা হয়েছে।
রজব মাসের নাম রজব কেন ?
ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেনরজব মানে সম্মান করা।
জাহেলি যুগে রজব মাসের সম্মান :
জাহেলি যুগের মানুষ রজব মাসকে সম্মান করতবিশেষ করে মুদার বংশের লোকেরা। এ জন্য অনেকে বলত মুদার বংশের রজব। এ পরিভাষা হাদিসেও এসেছে।
ইবনে আসীর আন-নিহায়া গ্রন্থে বলেনরজবকে মুদার বংশের সাথে সম্পর্কিত করা হয় এ কারণে যে তারা অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মাসকে বেশি মর্যাদা দিত। এ মাসে যুদ্ধ করাকে নিষিদ্ধ বলে জানত। এ মাসে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল-তারা সে যুদ্ধকে হরবুল ফুজ্জার (পাপীদের যুদ্ধ) বলে আখ্যায়িত করেছিল এবং উক্ত যুদ্ধ ইতিহাসে এ নামেই পরিচয় পেয়েছে।
তারা বিশ্বাস করতরজব মাসের দশ তারিখে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুআ করলে তা কবুল করা হয়। এবং বাস্তবে দুআ কবুলও হত। এ বিষয়টি উমার ইবনে খাত্তাবের কাছে আলোচিত হলে তিনি বললেনআল্লাহ এর মাধ্যমে তাদের একজনকে অন্যজন থেকে নিরাপত্তা দিতেন। আসলে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতকে তাদের শাস্তির চূড়ান্ত সময় হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততায় ক্লিষ্ট।
জাহেলি যুগের মানুষ রজব মাসে প্রতিমা ও তাদের দেব-দেবীদের উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করত এবং এ পশুর রক্ত তারা মাথায় মাখত। এটাকে বলা হত আতীরা। পরবর্তীতে ইসলাম একে নিষিদ্ধ করেছে।
আনাস ইবনে মালেক বর্ণিত হাদিসে এসেছে -
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل رجب قال: أللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان. وإسناده ضعيف
যখন রজ মাস এসে যেত তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেনহে আল্লাহ আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করেন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দেন। এ হাদিসটি সনদ-সূত্রে দুর্বল।
রজব মাসে প্রচলিত বেদআত ও কুসংস্কারসমূহ:
আশ্চর্যের বিষয় হল মানুষ এ মাসে বিভিন্ন বেদআতি আমল চালু করেছে। যে সম্পর্কে ইসলামে কোন নির্দেশনা নেই। এ সকল বিষয়ে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. ইবনুল কায়্যিম রহ. ইমাম শাতেবীইবনে রজব হাম্বলী রহ. তারতুশী রহ. ও ইবনে হাজার রহ. প্রমুখ আলেমগণ সতর্ক করেছেন। আমি তাদের লেখাগুলো থেকেই এ বিষয় কিছু আলোচনা করব।
বর্তমান যুগের শায়খ আলী মাহফুজশায়খ ইবনে বাযশায়খ আলবানীশায়খ উসাইমীনও শায়খ ফাওযান প্রমুখ আলেমগণও সতর্ক করেছেন। সমাজে রজব মাস সম্পর্কে যে সকল কুসংস্কার ও বেদআত রয়েছে তার মাঝে অন্যতম -
প্রথমত : বেদআতি নামাজ :
১-সালাতুল আলফিয়্যাহ বা এক সহস্র নামাজ : এ নামাজ রজব মাসের প্রথম তারিখে এবং শাবান মাসের পনেরো তারিখের রাতে পড়া হয়।
২-সালাতে উম্মে দাউদ : যা পড়া হয় রজব মাসের পনেরো তারিখে। এর কথা ইমাম ইবনু তাইমিয়া ইকতেজায়ে সিরাতিল মুসতাকিম কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
৩-সালাতুর রাগায়েব-যাকে সালাতে ইসনা আশারা (বারো নামাজ) বলেও অবিহিত করা হয় যা রজব মাসের প্রথম জুমআর রাতে এশার পর পড়া হয়। এটি এমন এক বেদআতি সালাত যা আবিষ্কার করা হয়েছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চারশত বছর পর। প্রত্যেক রাকাআতে সূরা ফাতেহা একবারসূরা কদর তিনবার ও সুরা ইখলাস বারো বার করে এক সালামে পড়া হয়।এর কথা ইবনে রজব রহ. তার লাতায়েফুল মাআরিফ কিতাবে আলোচনা করেছেন।
দ্বিতীয়ত : বেদআতি রোজা
১-কেউ কেউ রজব মাসের প্রথমদ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন এ রোজা পালন করে। রজব মাসের রোজা সম্পর্কিত যত হাদিস এসেছে তার সবগুলোই বানোয়াট। এর কয়েকটি এ রকম -
(ক) যে সম্মানিত মাসের বৃহস্পতিশুক্রও শনি-এ তিন দিনের রোজা রাখবে আল্লাহ তার জন্য নয় শত বছরের ইবাদত লিখে রাখবেন।
(খ) রজব মাসের প্রথম তারিখ রোজা রাখলে তিন বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। দ্বিতীয় দিনে রোজা রাখলে দুই বছরের কাফফারা ও এর পর প্রতিটি রোজা এক মাসের কাফফারা বলে ধরে নেয়া হয়।
(গ) রজব আল্লাহর মাসও শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস।
উপরের এ তিনটি হাদিসই মিথ্যাজাল বা বানোয়াট।
আবার কেউ রজব মাসের সপ্তম তারিখে রোজা পালন করে এবং এ রাতে সালাতুর রাগায়েব আদায় করে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন রজব মাসের সম্মানে যে সকল রোজা ও নামাজ আদায় করা হয় সবগুলো নব-আবিষ্কৃত বা বেদআত। এ গুলোর ব্যাপারে আলেমগণ নিষেধ করেছেন কাঠোরভাবে।
কেউ কেউ পুরো রজব মাসে রোজা রাখেন। এও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম কখনো রজব মাস-ব্যাপী রোজা পালন করেননি।
ইমামগণ রজব মাস ব্যাপী রোজা পালন করতে নিষেধ করেছেন। উমার রা. থেকে বর্ণিত আছে যেরজব মাসে কাউকে রোজা রাখতে দেখলে তিনি তকে প্রহার করে খাবার গ্রহণ করতে বাধ্য করতেন। এবং বলতেনরজব আবার কিজাহেলি যুগে রজব মাসকে সম্মান করা হত ইসলাম তা প্রত্যাখ্যান করেছে।’ তিনি এ মাসে রোজা রাখাকে মাকরূহ মনে করতেন।
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে-তিনি রজব মাসের রোজা রাখতে নিষেধ করতেন।
আবু বুকরাতা রা. থেকে বর্ণিত যেতিনি একদিন দেখলেন তার পরিবার রজব মাসে রোজা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি তা দেখে বললেনতোমরা কি রজবকে রমজান বানাতে যাচ্ছ ?
হাফেজ ইবনে হাজার তার তাবয়ীনুল আজব বিমা ওয়ারাদা ফি ফজলে রজব’ নামক কিতাবে বলেন রজব মাসের ফজিলততার রোজা ও বিশেষ নামাজ সম্পর্কে কোন বিশুদ্ধ হাদিস নেই।
তৃতীয়ত: রজব মাসে মসজিদে নববী ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা জিয়ারত :
মসজিদে নববী জিয়ারত ও এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজা জিয়ারত অবশ্যই সওয়াবের কাজ-সন্দেহ নেই। কিন্তু তা রজব মাসে করলে সওয়াব বেশি হবে এমন ধারণা করা ঠিক নয়। কোরআন ও সুন্নাহর সহিহ প্রমাণাদি ব্যতীত কোন অনুমোদিত ইবাদত কোন সময় বা দিনের সাথে বিশিষ্ট করা বেদআত। যে সময়কে আল্লাহ বা তার রাসূল কোন ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করেননি তা অন্য কেহ করলে অবশ্যই বেদআত হবে। (আহকামূল জানায়েজ ও বিদউহা : আলবানী)
চতুর্থত: লাইলাতু মিরাজ উদযাপন :
রজব মাসের সাতাশ তারিখের রাতে লাইলাতুল মিরাজ উদযাপন করা হয়ে থাকে। ধারণা করা হয় এ রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজে গমন করেছিলেন। লাইলাতুল মিরাজ উদযাপন বেদআত। এটা উদযাপন করা জায়েজ নেই। কারণ কয়েকটি :
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন তারিখে মিরাজে গমন করেছিলেন এ বিষয়ে কোন চূড়ান্ত তারিখের ব্যাপারে ইমাম ও আলেম উলামাদের কোন ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মিরাজের তারিখ সম্পর্কে রয়েছে বহু মত। ঠিক কোন রাতে মিরাজ সংগঠিত হয়েছিল এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণ নেই। এমনকি তা রজব মাসে হয়েছিল কিনা এ বিষয়েও রয়েছে যথেষ্ট বিতর্ক।
দুই. যদি ধরে নেয়া হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মিরাজ রজব মাসের সাতাশ তারিখেই সংগঠিত হয়েছিল তবুও তো এ রাতে লাইলাতুল মিরাজ উদযাপন জায়েজ হবে না। কারণ লাইলাতুল মিরাজ উদযাপনের বিষয়টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল থেকে সমর্থিত নয়। এমনকি তার সাহাবায়ে কেরাম ও তাবিয়ীদের থেকেও নয়। যা আল্লাহ বা তাঁর রাসূল থেকে সমর্থিত নয় তা ইবাদত হিসাবে উদযাপন করা সওয়াব তো নয়ই বরং গুনাহের কাজ।
 রাতে উপলক্ষ করে মসজিদে জমায়েত হওয়াবিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করামিলাদ মাহফিলরোজা পালনআলোকসজ্জা-ইত্যাদি সকল কর্মকাণ্ডই বেদআত। এগুলো থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে।
 প্রসঙ্গে আমি পাঠকের অবগতির জন্য সাউদী আরবের প্রধান মুফতি শায়খ আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.-এর ফতোয়া উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। তিনি তার ফতোয়াতে বলেন:
লাইলাতুল মিরাজ উদযাপন সম্পর্কে কোন সহিহ হাদিস নেই। রজব মাসের ব্যাপারেও নয়এর বাহিরেও নয়। মিরাজের তারিখ নির্ধারণের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন কিছুই প্রমাণিত নেই।
আল্লাহ যে মানুষকে মিরাজের তারিখ সংরক্ষণ করার সামর্থ্য দেননি এর মাঝে অবশ্যই কোন হিকমত ও কল্যাণ রয়েছে। যদি তারিখটি সংরক্ষিত থাকত তবুও কি ইবাদত-বন্দেগির এমন কিছু করা জায়েজ হত যা আল্লাহ বা তাঁর রাসূল করতে বলেননিতার সাহাবাগণ করেননি যদি লাইলাতুল মিরাজ উদযাপন ভাল কাজ হতো তবে আল্লাহর রাসূল অবশ্যই করতেন বা করতে বলে যেতেন অথবানিদেনপক্ষেঅনুমোদন প্রদান করতেন। এবং তিনি কোন একটি পালন করে গেলে তার সাহাবায়ে কেরাম তা অবশ্যই আমাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। তারা রাসূলুল্লাহর বাণী পৌঁছে দিতে কোন ধরনের কার্পণ্য করেছেন-এমন নজির নেই। তারা ইসলাম ধর্মের সকল বিষয়ে যত্ন সহকারে আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। যদি লাইলাতুল মিরাজ উদযাপন ধর্মীয় কোন কাজ হত তবে তারা তা উদযাপনে আমাদের চেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন।
সারকথা: বেদআত ধর্মকে বিকৃত করার একটি মারাত্মক হাতিয়ার। এবং মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট করার একটি বড় মাধ্যম। আল্লাহ যাকে সামর্থ্য দান করেন সেই বেঁচে থাকতে পারে এ ব্যাধি থেকে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে ইখলাস অনুযায়ী এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রদর্শিত পদ্ধতিতে ইবাদত-বন্দেগি সহ সকল কাজ করার তাওফিক দান করুন!
ওয়েব গ্রন্থনা : আবুল কালাম আযাদ আনোয়ার


বিস্তারিত পড়ুনঃ

Tuesday, June 21, 2011

আকীকা এবং এ সংক্রান্ত বিধানাবলি


السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

আকীকা এবং এ সংক্রান্ত বিধানাবলি

যে সুন্নতগুলোর তাৎপর্য অনেক কিন্তু আমরা তার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেই না আকীকা তার অন্যতম। ইসলাম পূর্বকাল থেকে চলে আসা এই আমলের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তিনি একে অনুমোদন করেছেন, নিজে করেছেন এবং অন্যদের করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। কিন্তু এ সুন্নতটি আজ বিস্মৃতপ্রায়। মুসলিমগণ এর আমল বাদ দিয়ে এর স্থলে চালু করেছেন নানা বিজাতীয় ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন রীতিনীতি।
অথচ ইসলামী মনস্তত্ত্ব বিবেচনায় আকীকার গুরুত্ব অপরিসীম। এর প্রতি আমরা উন্নাসিকতা দেখিয়ে নিজেদেরই বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি। হাদীসের ইঙ্গিত থেকে যেমন অনুমিত হয়, এর সঙ্গে শিশুর পার্থিব ও অপার্থিব কল্যাণ জড়িত। আমরা দেখি নব জাতকের এটা-সেটা রোগ-বালাই লেগেই থাকে। রোজই তার চিকিৎসার পেছনে, পথ্য ও ওষুধ কিনতে গিয়ে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়। হাজার হাজার টাকা আমরা অসন্তুষ্টি আর অভিযোগ নিয়ে শিশুর অসুখ-বিসুখের পেছনে ব্যয় করতে পারি অথচ আকীকার মতো চমৎকার একটি আমল করতে পারি না, একটি বা দু’টি ছাগল জবাইয়ের মাধ্যমে। যার মাধ্যমে অনেক বিপদাপদ থেকেই বেঁচে যেতে পারে আমাদের প্রিয় আত্মজ।
সাধারণ মুসলিম তো নস্যি মোটামুটি দীনদার ও ইসলামের আদর্শ চর্চাকারী ভাইয়েরাও এ সুন্নতটিকে বড় অযত্ন অনাদরে উপেক্ষা করেন। হয়তো গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে না জানার কারণে অথবা যাপিত জীবনে হাজারো সুন্নতের প্রতি উদাসীনতারই অংশ হিসেবে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
এ নিবন্ধের মাধ্যমে আমি আমাদের অনাদর ও উপেক্ষায় অনালোচিত ও অচর্চিত এই সুন্নতের কথাই সবাইকে স্মরণ করে দেবার প্রয়াস পেতে চাই। নিচের বিন্যাসে আমি এ সংক্রান্ত বেশ-কিছু বিষয় তুলে ধরতে চেয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থের সাহায্য নিয়েছি। বিশেষভাবে যে কিতাবটির কথা না বললে অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দেয়া হয়, তা হলো- ড. হিসামুদ্দীন আফফানা কর্তৃক সংকলিত ‘আহকামুল আকীকা’ নামক গ্রন্থ এবার চলুন মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক :
আকীকা কাকে বলে :
আকীকা শব্দের অর্থ কাটাসন্তান ভূমিষ্ঠ হলে যে প্রাণীকে জবাই করা হয় তাকে আকীকা বলে। চাই তা ছেলে হোক বা মেয়ে। কেননাএ প্রাণীর হলক তথা গলা কাটা করা হয় 
প্রাক-ইসলামী যুগে আকীকা :
আকীকার প্রথা জাহেলী যুগ থেকেই চালু ছিল। মাওয়ারদী বলেন, ‘আকীকা বলা হয় ওই ছাগলকে ইসলাম পূর্বযুগে আরবা যা সন্তান ভূমিষ্ট হলে জবাই করত
অলীউল্লাহ দেহলভী রহ. বলেন, ‘জেনে রাখুনআরবরা তাদের সন্তানের আকীকা করতো। আকীকা তাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয় এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছিল। এতে ছিল ধর্মীয়নাগরিক ও আত্মিক অনেক উপকারী দিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই তা অব্যাহত রাখেন এবং মানুষকে এতে উদ্বুদ্ধ করেন। এর প্রমাণ আমরা দেখতে আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণিত হাদীসে। আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেনআমার বাবা বুরাইদাকে বলতে শুনেছিতিনি বলেন,
«كُنَّا فِي الْجَاهِلِيَّةِ إِذَا وُلِدَ لِأَحَدِنَا غُلاَمٌ ذَبَحَ شَاةً وَلَطَخَ رَأْسَهُ بِدَمِهَا ، فَلَمَّا جَاءَ اللَّهُ بِالإِسْلاَمِ كُنَّا نَذْبَحُ شَاةً ، وَنَحْلِقُ رَأْسَهُ وَنُلَطِّخُهُ بِزَعْفَرَانٍ».
জাহেলী যুগে আমাদের নিয়ম ছিলযখন আমাদের কারো পুত্র সন্তান জন্ম নিতোসে একটি ছাগল জবাই করতো এবং এর রক্ত তার মাথায় লাগিয়ে দিতো। কিন্তু আল্লাহ যখন ইসলাম নিয়ে আসলেনতখন আমরা একটি ছাগল জবাই করতাম এবং তার মাথা নেড়ে করতাম আর তার তাকে জাফরান দিয়ে মাখিয়ে দিতাম’ [আবূ দাউদ : ২৮৪৩বাইহাকী : ১৯৭৬৬মুস্তাদরাক : ৭৫৯৪]
মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা আকীকা সংক্রান্ত যে হাদীস বর্ণনা করেনতা থেকেও এমনটি প্রতিভাত হয়। তিনি বলেন,
«وَكَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَةِ يَجْعَلُونَ قُطْنَةً فِى دَمِ الْعَقِيقَةِ وَيَجْعَلُونَهُ عَلَى رَأْسِ الصَّبِىِّ فَأَمَرَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ يُجْعَلَ مَكَانَ الدَّمِ خَلُوقًا».
জাহেলী যুগের লোকেরা আকীকার রক্তে তুলা ভেজাতো এবং তা শিশুর মাথায় রাখতো। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন তুলার স্থলে জাফরান তথা সুগন্ধি রাখা হয়’ [বাইহাকীসুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬৭] 
আল্লামা সুয়ূতী রহ. উল্লেখ করেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর জন্মের সপ্তম দিনে তাঁর আকীকা করেন। তিনি বলেন, ‘ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে ইবন আসাকির বর্ণনা করেনআব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুবলেন,
لما ولد النبي صلى الله عليه و سلم عق عنه عبد المطلب وسماه محمدا فقيل له ما حملك على أن سميته محمدا ولم تسمه باسم آبائه فقال أردت أن يحمده الله في السماء ويحمده الناس في الأرض
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জন্মগ্রহণ করেনআব্দুল মুত্তালিব তার আকীকা করেন এবং তার নাম রাখেন মুহাম্মদ। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো কিসে আপনাকে তাঁর নাম বাবা-দাদার নামের সঙ্গে না মিলিয়ে রেখে মুহাম্মদ রাখতেতিনি বললেনআমি চেয়েছি যাতে তার প্রশংসা আল্লাহ করেন আসমানে আর মানুষে করে যমীনে’ [শাহরহুয যারকানী আলা মুয়াত্তা মালেকপৃ. ৫৫৮ইবন আব্দিল বারআল-ইস্তিয়াব] 
তেমনি মূসা আলাইহিমুস সালামের শরীয়তেও আকীকার প্রচলন ছিল। হাদীসে যেমন বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«إِنَّ الْيَهُودَ تَعُقُّ عَنِ الْغُلاَمِ وَلاَ تَعُقُّ عَنِ الْجَارِيَةِ فَعُقُّوا عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَيْنِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ»
ইহুদীরা পুত্র সন্তানের আকীকা করতো কিন্তু কন্যা সন্তান হলে তার আকীকা করতো না। অতএব তোমরা পুত্র সন্তানের জন্য দুটি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকীকা করো’ [বাইহাকীসুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬০মুসনাদ বাযযার : ৮৮৫৭]
ইসলামে  আকীকা :
আকীকার বিধান প্রবর্তিত হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম ও উক্তি- উভয়প্রকার হাদীসের মাধ্যমে। এ সম্পর্কে অনেক আছারও বর্ণিত হয়েছে অনেক। নিচে এর কিছু তুলে ধরা হচ্ছে :
প্রথমত. সুন্নাহ কাওলী বা মৌখিক হাদীস :
১. সালমান বিন আমের দাব্বী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিতিনি বলেন,
«مَعَ الْغُلَامِ عَقِيقَةٌ فَأَهْرِيقُوا عَنْهُ دَمًا وَأَمِيطُوا عَنْهُ الْأَذَى»
পুত্র সন্তানের সঙ্গে আকীকা রয়েছে। সুতরাং তার পক্ষে রক্ত প্রবাহিত করো এবং তার থেকে কষ্ট দূর করো [বুখারী : ৫০৪৯তিরমিযী : ১৫১৫মুসনাদ আহমদ : ১৭৯০৭]
২. সামুরা বিন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা  থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«كُلُّ غُلاَمٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُحْلَقُ وَيُسَمَّى»
প্রত্যেক শিশুই তার আকীকা জরুরী। জন্মের সপ্তম দিনে তার জন্য জবাই করা হবে এবং তার মাথা নেড়ে করা হবে আর নাম রাখা হবে। [আবূ দাউদ : ২৮৪০মুসনাদ আহমদ : ২০০৯৫]
৩. উম্মে কুরয আল-কাবিয়া রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহ  থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি,
«عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ».
ছেলে সন্তানের পক্ষে সমবয়সী দুটি ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষে একটি ছাগল (দিয়ে আকীকা করা যাবে)’ [আবূ দাউদ : ২৮৩৬মুসনাদ আহমদ : ২৭৪০৯]
৪. উম্মে কুরয আল-কাবিয়া রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার অপর এক বর্ণনায় রয়েছেতিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেনউত্তরে তিনি বলেন,
«عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ وَاحِدَةٌ وَلاَ يَضُرُّكُمْ ذُكْرَانًا كُنَّ أَمْ إِنَاثًا».
ছেলে সন্তানের পক্ষে সমবয়সী দুটি ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষে একটি ছাগল (দিয়ে আকীকা দেয়া যাবে) আর ওই ছাগলগুলো পাঠা হোক বা পাঠ তাতে তোমাদের কোনো অসুবিধা নাই’ [তিরমিযী : ১৫৯৯মুসনাদ আহমদ : ২৭৩৭৩] 
৫. হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেনআয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা তাঁকে অবহিত করেছেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عَنِ الْغُلامِ شَاتَانِ ، وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ»
পুত্র সন্তানের জন্য দুটি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল’ [ইবন হিব্বান : ৫৩১০ইবন আবী শাইবা : ২৪৭২৯।]
৬. একই হাদীসের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে,
«عَنْ يُوسُفَ بْنِ مَاهَكَ ، أَنَّهُمْ دَخَلُوا عَلَى حَفْصَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ فَسَأَلُوهَا عَنِ العَقِيقَةِ ، فَأَخْبَرَتْهُمْ أَنَّ عَائِشَةَ أَخْبَرَتْهَا ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَهُمْ عَنِ الغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ ، وَعَنِ الجَارِيَةِ شَاةٌ».
ইউসুফ বিন মাহাক থেকে বর্ণিত যেতিনি হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার কাছে গেলেন এবং তাঁকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেনতখন তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা থেকে জানালেন যেতিনি তাঁকে এ মর্মে অবহিত করেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ছেলে হলে সমবয়সী দুটি ছাগল ও মেয়ে হলে একটি ছাগল দিয়ে আকীকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন [তিরমিযী : ১৫১৩]
৭. আসমা বিনতে ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা থেকে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْعَقِيقَةُ حَقٌّ ، عَنِ الْغُلامِ : شَاتَانِ ، وَعَنِ الْجَارِيَةِ : شَاةٌ».
পুত্র সন্তানের পক্ষ থেকে প্রায় সমবয়সী দুটি ছাগল হক এবং কন্যা সন্তানের পক্ষ থেকে একটি [আল-আদাদ ওয়াল-মাছানী : ৩৩৫৩মুসনাদ আহমদ : ২৭৫৮২]
৮. ইয়াযীদ বিন আব্দুল্লাহ মুযানী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন 
«يُعَقُّ عَنِ الْغُلاَمِ ، وَلاَ يُمَسُّ رَأْسُهُ بِدَمٍ».
পুত্র সন্তানের পক্ষে আকীকা করা হবে আর তার মাথায় রক্ত স্পর্শ করা হবে না’ [ইবন মাজা : ৩১৬৬আল-আদাদ ওয়াল-মাছানী : ১১০৮]
৯. আমর বিন শুয়াইব তার বাবা আর বাবা তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে,
«أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- أَمَرَ بِتَسْمِيَةِ الْمَوْلُودِ يَوْمَ سَابِعِهِ وَوَضْعِ الأَذَى عَنْهُ وَالْعَقِّ».
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মের সপ্তম দিবসে নবজাতকের নাম রাখাতার আবর্জনা দূর করা (তথা নেড়ে করা) ও আকীকার নির্দেশ দিয়েছেন’ [তিরমিযী : ২৮৩২]
১০. ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু  থেকে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا كان يوم سابعه فأهريقوا عنه دما وأميطوا عنه الأذى وسموه».
যখন তার (নবজাতকের জন্মের) সপ্তম দিন আসবেতখন তার পক্ষে রক্ত প্রবাহিত করো আর তার আবর্জনা (মাথার চুল) দূর করো এবং তার নাম রাখো’ [তাবরানীআল-মুজামুল আওসাত : ১৮৮৩]
১১. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা আকীকা সংক্রান্ত যে হাদীস বর্ণনা করেনতা থেকেও এমনটি প্রতিভাত হয়। তিনি বলেন,
«وَكَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَةِ يَجْعَلُونَ قُطْنَةً فِى دَمِ الْعَقِيقَةِ وَيَجْعَلُونَهُ عَلَى رَأْسِ الصَّبِىِّ فَأَمَرَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ يُجْعَلَ مَكَانَ الدَّمِ خَلُوقًا.
জাহেলী যুগের লোকেরা আকীকার রক্তে তুলা ভেজাতো এবং তা শিশুর মাথায় রাখতো। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন তুলার স্থলে জাফরান তথা সুগন্ধি রাখা হয়’ [বাইহাকীসুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬৭]
১২. হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«إِنَّ الْيَهُودَ تَعُقُّ عَنِ الْغُلاَمِ وَلاَ تَعُقُّ عَنِ الْجَارِيَةِ فَعُقُّوا عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَيْنِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ».
ইহুদীরা পুত্র সন্তানের আকীকা করতো কিন্তু কন্যা সন্তান হলে তার আকীকা করতো না। অতএব তোমরা পুত্র সন্তানের জন্য দুটি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকীকা করো [বাইহাকীসুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬০মুসনাদ বাযযার : ৮৮৫৭]
দ্বিতীয়ত. সুন্নাহ ফিলী বা কর্মগত হাদীস :
১. ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু  থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
عَقَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْحَسَنِ ، وَالْحُسَيْنِ بِكَبْشَيْنِ كَبْشَيْنِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার জন্য দুটি দুটি করে ভেড়া দিয়ে আকীকা করেন’ [নাসায়ী : ১২১৯]
২. আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদা থেকে বর্ণিততিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেন,
عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্য আকীকা করেছেন’ [মুজামুল কাবীর : ২৫১০নাসায়ী : ৪২১৩মুসনাদ আহমদ : ২৩০৫১]
৩. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ يَوْمَ السَّابِعِ وَسَمَّاهُمَا وَأَمَرَ أَنْ يُمَاطَ عَنْ رَأْسِهِمَا الأَذَى.
‘(জন্মের) সপ্তম দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনের আকীকা দিয়েছেনতাঁদের নাম রেখেছেন এবং তাঁদের মাথা থেকে কষ্ট (চুল) দূর করেছেন [বাইহাকী : ১৯০৫৫সহীহ ইবন হিব্বান : ৫৩১১।]
৪. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ شَاتَيْنِ يَوْمَ السَّابِعِ وَأَمَرَ أَنْ يُمَاطَ عَنْ رَأْسِهِ الأَذَى. وَقَالَ« : اذْبَحُوا عَلَى اسْمِهِ وَقُولُوا بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُمَّ لَكَ وَإِلَيْكَ هَذِهِ عَقِيقَةُ فُلاَنٍ.
হাসান ও হুসাইনের (জন্মের) সপ্তম দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি ছাগল দিয়ে আকীকা দেন এবং তার মাথার কষ্ট দূর করার নির্দেশ দেন। আর তিনি বলেন, ‘তাঁর (আল্লাহর) নামে জবাই করো এবং বলোবিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবারহে আল্লাহআপনার কাছে অমুকের জন্য এ আকীকা’ [বাইহাকী : ১৯৭৭২মুসনাদ আবী ইয়ালা : ৪৫২১]
৫. আব্দুল্লাহ ইবন উমরা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু  থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَقَّ عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ عَنْ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا كَبْشَيْنِ اثْنَيْنِ مِثْلَيْنِ مُتَكَافِئَيْنِ.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন- উভয়ের প্রত্যেকের জন্যই প্রায় একইরকম সমবয়সী দুটি করে ভেড়া দিয়ে আকীকা দেন’  [হাকেমমুস্তাদরাক : ৭৫৯০]
৬. আলী বিন আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْحَسَنِ بِشَاةٍ وَقَالَ « يَا فَاطِمَةُ احْلِقِى رَأْسَهُ وَتَصَدَّقِى بِزِنَةِ شَعْرِهِ فِضَّةً . قَالَ فَوَزَنَتْهُ فَكَانَ وَزْنُهُ دِرْهَمًا أَوْ بَعْضَ دِرْهَمٍ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছাগল দিয়ে হাসানের আকীকা দিলেন এবং বললেন, ‘হে ফাতেমাএর তার মাথার চুল ফেলে দাও এবং তার চুলের ওজনে রুপা সদকা করো। তিনি বলেনঅতপর ফাতেমা তা পরিমাপ করলোএর ওজন হলো এক দিরহাম বা এক দিরহামের কিছু পরিমাণ’ [তিরমিযী : ১৬০২হাকেমমুস্তাদরাক : ৭৫৮৯]
নেড়ে করতে হবেকাযা করা যাবে না
উপরের হাদীসগুলোতে থেকে আমরা যেমন জানলামশিশু জন্মের সপ্তম দিনে তার মাথা নেড়ে করতে বলা হয়েছে। তবে কাযা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আর তা হলো, ‘বাচ্চার মাথা এমনভাবে নেড়ে করা যে তার মাথার বিভিন্ন স্থান অমুণ্ডিত থাকে। [ইবনুল আছীরনিহায়া : কাযা‘ অধ্যায় 
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু  থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- نَهَى عَنِ الْقَزَعِ. قَالَ قُلْتُ لِنَافِعٍ وَمَا الْقَزَعُ قَالَ يُحْلَقُ بَعْضُ رَأْسِ الصَّبِىِّ وَيُتْرَكُ بَعْضٌ».
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাযা‘ থেকে বারণ করেছেন। তিনি বলেননাফেকে আমি জিজ্ঞেস করলামকাযা‘ কীতিনি বললেনবাচ্চার মাথার কিছু অংশ মুণ্ডানো আর কিছু অমুণ্ডিত রাখা। [মুসলিম : ৩৯৫৯বুখারী : ৫৪৬৫ইবন মাজা : ৩৬২৭আহমদ : ৪৯২৮]
উদ্দেশ্যনেড়ে করতে হবে পুরো মাথা জুড়ে। কারণমাথার কিছু অংশ নেড়ে করা আর কিছু না করা ইসলামী ব্যক্তিত্বের পরিপন্থীযার মাধ্যমে একজন মুসলিম অন্য জাতি-গোষ্ঠী থেকে এবং বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী হয়। এই কাযার মাধ্যমে মূলত কাফেরদের সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন হয়। আর তাদের সাদৃশ্য ধারণ জায়িয নয়
হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান বিন আউফ থেকে বর্ণিতমুয়াবিয়া বিন সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু  যে বছর হজ করেনতিনি মিম্বরে বসলেনআমার ভৃত্যের হাতে থাকা চুল থেকে একগুচ্ছ চুল নিলেন এবং বললেন,
يَا أَهْلَ الْمَدِينَةِ أَيْنَ عُلَمَاؤُكُمْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَنْهَى عَنْ مِثْلِ هَذِهِ وَيَقُولُ «إِنَّمَا هَلَكَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ حِينَ اتَّخَذَ هَذِهِ نِسَاؤُهُمْ».
হে মদীনাবাসীকোথায় তোমাদের আলিমগণ? (তিনি কি তোমাদের বারণ করেন নি?) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন করা থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, ‘বনী ইসরাঈল ধ্বংস হয়েছিল যখন তাদের নারীরা এটাকে (কাযা‘) ধারণ করেছিল [মুসলিম : ৫৭০০বুখারী : ৩৪৬৮আবূ দাউদ : ৪১৬৯]  
(এ থেকে বুঝা যায়মাথার চুল কিছু মুণ্ডানো আর কিছু রেখে দেওয়া তাদের শরীয়তে হারাম ছিল।)
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু  থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى صَبِيًّا قَدْ حُلِقَ بَعْضُ شَعَرِهِ وَتُرِكَ بَعْضُهُ فَنَهَى عَنْ ذَلِكَ وَقَالَ : « احْلِقُوا كُلَّهُ ، أَوِ اتْرُكُوا كُلَّهُ».
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শিশুকে দেখলেন তার (মাথার) কিছু চুল নেড়ে করা হয়েছে আর কিছু অবশিষ্ট রাখা হয়েছে। তাকে দেখে তিনি এ থেকে বারণ করলেন এবং বললেনতোমরা (মাথা) পুরোটাই মুণ্ডাও অথবা পুরোটাই অমুণ্ডিত রাখো’ [মুসনাদ আহমদ : ৫৬১৫আব্দুর রাযযাকমুসান্নাফ : ১৯৫৬৪১] 
কেন এই আকীকার বিধান
সন্দেহ নেই আকীকার রয়েছে নানা তাৎপর্য ও কল্যাণময় দিক। যেমন :
এক. অলীউল্লাহ দেহলভী রহ. বলেন, ‘এতে আছে ধর্মীয়নাগরিক ও আত্মিক অনেক উপকারী দিক। এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বহাল রাখেনএর আমল করেন এবং মানুষকে এতে উদ্বুদ্ধ করেন। এসব কল্যাণময় দিকের মধ্যে রয়েছেযেমন :
ক. ভদ্রোচিত পন্থায় সন্তানের বংশ পরিচয় প্রকাশ করা। কারণ বংশ পরিচয় প্রকাশ না করলেই নয়। যাতে অনভিপ্রেত কথা না শুনতে হয়। আর এমনটি কখনো সুন্দর দেখায় না যে কেউ পথে পথে ঘুরে মানুষকে বলে বেড়াবেন যে এ আমার সন্তান
খ. খ্রিস্টানদের যখন কোনো সন্তান হতোতারা তাকে হলুদ পানি দিয়ে হরিদ্রা বানিয়ে দিত। তারা এর নাম দিয়েছিল মামুদিয়া। তারা বলতোএর মধ্য দিয়ে শিশুটি খ্রিস্টান হয়ে যাবে। এ নামের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখেই নাযিল হয়েছিল
﴿ صِبۡغَةَ ٱللَّهِ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ صِبۡغَةٗۖ وَنَحۡنُ لَهُۥ عَٰبِدُونَ  [البقرة :138]
‘(বল,) আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করলাম। আর রং এর দিক দিয়ে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক সুন্দরআর আমরা তাঁরই ইবাদাতকারী’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৩৮}
অতএব তাদের ওই রীতির বিপরীতে হানীফীদেরও কোনো কাজ থাকা বাঞ্ছনীয়। যে থেকে বুঝা যাবে শিশুটি হানীফী তথা ইসমাঈল ও ইবরাহীম আলাইহিমাস সালামের অনুসারী। আর তাঁদের সন্তানদের মধ্যে বংশানুক্রমে আগত কাজগুলোর মধ্যে সবচে প্রসিদ্ধ পুত্র কুরবানীর বিষয়টি। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আপন পুত্র ইসমাঈলকে কুরবানী করেন। আর আল্লাহ তাআলাও তাঁকে নিয়ামতে ভূষিত করেন। তাঁর সন্তানকে মহান যবেহের মাধ্যমে মুক্ত করেন এবং তাঁদের বিধান হজকে দেন কিয়ামতাবধির জন্য স্থায়িত্বযার মধ্যে রয়েছে মাথা নেড়ে করা এবং পশু যবেহ করা। ফলে এই আকীকা ও মাথা মুণ্ডনের মধ্য দিয়ে তাঁদের সঙ্গে সাদৃশ্য গ্রহণ হবে। হানীফী মিল্লতের প্রতি ইঙ্গিতও হবে আবার ঘোষণাও হবে যে সন্তানটির সঙ্গে এ উম্মতের কাজই করা হয়েছে
গ. এ কাজ তাকে শিশুটির জন্মের পর মুহূর্তেই তাকে এ কল্পনায় নিয়ে যাবে যে সে তার সন্তানকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে দিলযেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম করেছিলেন তাঁর পুত্র ইসমাঈলকে
দুই. সন্তান দেয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। কেননাসন্তানই অন্যতম সেরা নেয়ামত। আর এ সন্তান হলো পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ ٱلۡمَالُ وَٱلۡبَنُونَ زِينَةُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ  [الكهف :46]
সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা...’ {সূরা আল-কাহফ, আয়াত : ৪৬}
আল্লাহ তাআলা মানুষকে এ প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যে সে সন্তান ভূমিষ্ট হলে আনন্দিত হয়। তাই মানুষের কাছে তার স্রষ্টা ও দাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশই কাম্য। এ জন্যই হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু  থেকে সদ্য সন্তানের পিতা হওয়া ব্যক্তিকে অভিবাদন জানিয়ে এমন বলার কথা বর্ণিত হয়েছে,
باركَ اللّه لكَ في الموهوب لك وشكرتَ الواهبَ وبلغَ أشدَّه ورُزقت برّه.
তোমাকে যা দান করা হয়েছে আল্লাহ তাতে বরকত দিন। তুমি দানকারীর শুকরিয়া আদায় করোসে তার বয়স পুরো করুক এবং তোমাকে তার পুণ্য প্রদান করা হোক [মুসনাদ ইবনুল জাদ : ১৪৪৮ইবন আদীআল-কামেল : ৭/১০১ইনব আবিদ্দুনইয়াআল-ইয়াল : ১/২০১][1]
অতএব বুঝা গেলআকীকা হলো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও তাঁর নৈকট্য লাভের একটি উত্তম উপায়
তিন. এতে আছে সন্তানের মুক্তি এবং তার বিনিময় প্রদান। যেমন আল্লাহ তাআলা ইসমাঈল যবীহের বিনিময়ে ভেড়া কুরবানী দিয়ে দেন। জাহেলী যুগের লোকেরাও এটা করত এবং তারা এটাকে আকীকা বলত। আর শিশুর মাথায় তারা রক্ত লাগিয়ে দিত। ইসলাম সেই নিয়মটিকে সমর্থন করে এবং নবজাতকের মাথায় রক্ত লাগানো নিষিদ্ধ করে দেয়
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জানিয়ে দেন যেনবজাতকের জন্য যা-ই যবেহ করা হবে তা হতে হবে কুরবানী ও হজের হাদীর মতো ইবাদত হিসেবে। তিনি বলেন, 
«مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَنْسُكَ عَنْ وَلَدِهِ فَلْيَنْسُكْ عَنْهُ عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافَأَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ».
যে তার সন্তানের জন্য কোনো কুরবানী দিতে চায়তবে যেন পুত্র হলে দুটি সমবয়সী ছাগল এবং কন্যা হলে একটি ছাগল গিয়ে ইবাদত (তথা আকীকা) করে [নাসায়ী : ৪২২৯শরহু মাআনিল আছার : ১০১৫]
অর্থাৎ তিনি এটাকে কুরবানী হিসেবে করতে বললেনআল্লাহ তাআলা যেটাকে ইসমাঈল আলাইহিস সালামের জন্য কুরবানী ও বিনিময় হিসেবে দিয়েছিলেন। আর আল্লাহ তাআলার পক্ষে অসম্ভব নয় যে তিনি সন্তানের জন্যতার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও দীর্ঘায়ু জন্য এ বিধান দিয়েছেন। যাতে ওই যবেহকৃত পশুর প্রতিটি অঙ্গ এ শিশুর বিনিময় হয়
চতুর্থ. এ কথার সংবাদ ও ঘোষণা দেয়া যে এ ব্যক্তি সন্তানের পিতা হয়েছে এবং সন্তানের নাম অমুক রেখেছে। ফলে তার পরিজনপ্রতিবেশি ও বন্ধ-বান্ধব এ সংবাদ জানবে এবং তাকে মোকারকবাদ দিতে আকীকায় উপস্থিত হবে। এতে করে মুসলিম ভাইদের মাঝে সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হবে
পঞ্চম. এতে ইসলামের সামাজিক দায়িত্বগুলোর একটি প্রকারের চর্চা হয়। কেননাযিনি তার সন্তানের জন্য আকীকা হিসেবে পশু জবাই করেন এবং তা বন্ধ-বান্ধবপ্রতিবেশি ও গরীব-মিসকীনদের জন্য পাঠিয়ে দেন বা তাদের দাওয়াত করেন। আর এটি গরীবদের অভাব মোচন ও দারিদ্র হ্রাসে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখে
পশু যবেহ করা তার মূল্য দান করার চেয়ে উত্তম যদিও তা বেশি হয়
এসব তাৎপর্য ও উপকারিতার কারণেই আকীকা হিসেবে পশু যবেহ করা এর মূল্য দান করার চেয়ে উত্তম যদিও তা পরিমাণে বেশি হয়। কারণ তা একটি সুন্নত এবং প্রবর্তিত ইবাদতযা পিতামাতার ওপর আল্লাহর নতুন নিয়ামতের ওপর শুকরিয়া স্বরূপ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কুরবানী করার মতো অনুপম তাৎপর্য নিহিত রয়েছেআল্লাহ তাআলা যার বদলে ভেড়া কুরবানী করে দেন। আকীকা যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেবার মধ্য দিয়ে সন্তানকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচানোর হিকমতও রয়েছেযেমন সে গর্ভে আসার সময় (স্বামী-স্ত্রীর মিলনকালে দুআ পড়ার মাধ্যমে) শয়তানের দুষ্ট প্রভাব থেকে নিরাপদ হয়
আকীকা সংক্রান্ত করণীয়
প্রথম. আকীকার গোশত ব্যবহার
আকীকার পশু যবেহ করার পর এর ব্যবহার ঠিক কুরবানীর পশুর মতোই। ফলে তা তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একভাগ পরিবারএকভাগ সাদাকা ও একভাগ হাদিয়ার জন্য 
ইমাম নাববী রহ. বলেন,
[ ويستحب أن يأكل منها ويتصدق ويهدي كما قلنا في الأضحية ]
মুস্তাহাব হলো আকীকার গোশত থেকে (নিজেরা) খাওয়া, (গরীবদের মাঝে) সদকা করা এবং (বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনকে) হাদিয়া পাঠানো। যেমন আমরা বলেছি এসেছি কুরবানীর পশুর ক্ষেত্রে। [নাসায়ী : ৪২২৯শরহু মাআনিল আছার : ১০১৫]
অধিকাংশ আলেম আবার আকীকার গোশত কাঁচা সদকা না করে তা রান্না করে সদকা করা এবং রান্নার তা গরীবদের কাছে তা পাঠিয়ে দেয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে যদি না পাঠিয়ে তাদেরকে বাড়িতে এনে দাওয়াত করে খাওয়ানো তাহলে সেটা আরও উত্তম। যদি আকীকার গোশত দিয়ে দাওয়াতের আয়োজন করা হয়তাহলে তাতে ধনী-গরীবআত্মীয়-পরিজনবন্ধু-প্রতিবেশী সবাইকে শরীক করতে যাবে। এক কথায় তিনি যেভাবে চান এটাকে কাজে লাগাবেন
প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবন সীরীন রহ. বলেন,
[ إصنع بلحمها كيف شئت ]
আকীকার গোশত যেভাবে ইচ্ছে কাজে লাগাতে পারেন’ [আল-মাজমূ‘ : ৮/৪৩০]
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর সঙ্গে রান্নার কথাও যোগ করেন
[ فقد قيل له : تطبخ العقيقة ؟ قال : نعم . قيل له : يشتد عليهم طبخها . قال : يتحملون ذلك ].
তাকে জিজ্ঞেস করা হলোআকীকার গোশত কি রান্না করা হবেতিনি বললেন, ‘হ্যা। তাকে বলা হলোতাদের জন্য এটা রান্না করা কঠিন হবে। তিনি বললেন, ‘তারা সেটা সহ্য করবে
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন,
[وهذا لأنه إذا طبخها فقد كفى المساكين والجيران مؤنة الطبخ وهو زيادة في الإحسان وفي شكر هذه النعمة ، ويتمتع الجيران والأولاد والمساكين بها هنيئة مكفية المؤنة فإن من أهدي إليه لحم مطبوخ مهيأ للأكل مطيب كان فرحه وسروره به أتم من فرحه بلحم نيء يحتاج إلى كلفة وتعب ].
এটা এজন্য যেতিনি যখন গোশত রান্না করে দেবেনগরীবমিসকিন ও প্রতিবেশিদের আর রান্নার কষ্ট ও খরচটুকু বহন করতে হবে না। একটি ভালো কাজে তা নতুন মাত্রা যোগ করবে। নিয়ামতের শুকরিয়ায় এটি অতিরিক্ত হিসেবে বরিত হবে। প্রতিবেশিসন্তানাদি ও অভাবীরা এর মাধ্যমে আরও বেশি আনন্দিত হবে। কারণ যদি কাউকে রান্না করা এবং খাবারের জন্য একেবারে প্রস্তুত কোনো গোশত কাউকে দেওয়া হয় তবে তিনি ওই গোশত পাওয়া থেকে অবশ্যই অধিক খুশি হবেনযাতে পাকানো ও রান্নার কষ্ট সহ্য করার প্রয়োজন রয়েছে [তুহফাতুল মাওদূদ : ৫৯-৬০] 
ইমাম মালিক রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি তার সন্তানের আকীকা করেন। তিনি আকীকা কীভাবে করেছেন আমাদের জন্য তার বিবরণ দিয়েছেন। তদীয় মাবসূত’ গ্রন্থে তিনি লিখেন, 
عققت عن ولدي وذبحت ما أريد أن أدعو إليه إخواني وغيرهم ، وهيأت طعامهم ، ثم ذبحت شاة العقيقة فأهديت منها للجيران ، وأكل منها أهل البيت ، وكسروا ما بقي من عظامها فطبخت ، فدعونا إليها الجيران فأكلوا وأكلنا ، قال مالك : فمن وجد سعة فأحب له أن يفعل هذا ومن لم يجد فليذبح عقيقة ثم ليأكل وليطعم منها
আমি আমার সন্তানের আকীকা দিয়েছি। প্রথমে যেসব ভাই ও অন্যদের দাওয়াত দিয়েছি তাদের যা খাওয়াবার ইচ্ছে করেছি তা জবাই করলাম। তারপর তাদের খাবার প্রস্তুত করলাম। এরপর আকীকার ছাগল জবাই করলাম। তা থেকে প্রতিবেশিদের হাদিয়া দিলাম। পরিবারের লোকেরা গোশত খেল। হাড়-হাড্ডি যা অবশিষ্ট ছিল সেগুলো টুকরো করে রান্না করলাম। তারপর প্রতিবেশিদের আবার সেগুলো খাওয়ার দাওয়াত দিলাম। তারা খেল আর আমরাও খেলাম। মালিক রহ. বলেনঅতএব যার অর্থের প্রাচুর্য রয়েছেআমি চাই তিনি এমন করবেন। আর যার নাইতিনি আকীকা জবাই করবেন এবং সেখান থেকে খাবেন ও খাওয়াবেন’ [আল-মুনতাকা : ৩/১০৪]
দ্বিতীয়. আকীকার চামড়া ও এর বর্জ্যসংক্রান্ত বিধান 
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ.-এর মতে আকীকার চামড়ামাথা এবং ইত্যাকার অংশগুলো বিক্রি করা হবে তারপর তার মূল্য সাদাকা করা হবে। আকীকার বর্জ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
الجلد والرأس والسقط يباع ويتصدق به
চামড়ামাথা এবং বর্জ্য বিক্রি করা হবে এবং তা সদকা করা হবে’ [তুহফাতুল মাওদূদ : ৭০; কাশশাফুল কিনা‌ : ৩/৩১]
এদিকে ইমাম মালিক রহ.-এর যে কোনো অংশ বিক্রির বিপক্ষে। তিনি বলেন,
ولا يباع من لحمها شيء ولا جلدها
আকীকার গোশত বা চামড়ার কোনো অংশই বিক্রি করা হবে না [আল-মুয়াত্তা বিহামিশিল মুনতাকা : ৩/১০৩] 
ইবন রুশদ বলেন,
وأما حكم لحمها وجلدها وسائر أجزائها فحكم لحم الضحايا في الأكل والصدقة ومن البيع
আকীকার গোশতচামড়া এবং এর যাবতীয় অংশের বিধান খাওয়াসদকা করা ও বেচার দিক থেকে কুরবানীর পশুর মতোই’ [বিদায়াতুল মুজতাহিদ : ১৩৭৭]
এককথায় আকীকার গোশত ও এর অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার তেমনি যেমন কুরবানীর পশুর গোশত ও তার অন্যান্য অংশের ব্যবহার করতে হয়।
আকীকা সংক্রান্ত আরও কিছু মাসআলা :
# অধিকাংশ আলিমের মতে আকীকা সুন্নত। তবে কেউ কেউ আকীকা ওয়াজিব বলেছেন।
# জন্মের সপ্তম দিনে আকীকা দেয়াটাই সুন্নতের পূর্ণ আনুগত্যের দাবী। তবে এরপরেও যে কোনো সময় আকীকা দেয়া যাবে। কারণ, হাদীসে সপ্তম দিনের কথা বলা হয়েছে, তবে তা হবে না- এমন কিছু বলা হয়নি।
# ছেলের আকীকা হিসেবে দুটি এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল জবাই করা সুন্নত। তবে কষ্টসাধ্য হলে একটি ছাগল দিয়েও ছেলের আকীকা দেয়া যাবে। কারণ, উভয় ধরনের হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের জীবনের প্রতিটি পর্বকে তাঁর রাসূলের সুন্নতের রঙ্গে রাঙাবার এবং সকল অপসংস্কৃতি ও কুসংস্কার থেকে দূরে থাকবার তাওফীক দিন। আমীন। 


 



be Organized by Holy Islam 
O.H.I