السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
হযরত আলী (রা.) ওফাত দিবস
হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রা.) থেকে বর্ণিত;
রাসুলুল্লাহ(সা.) (খায়বার যুদ্ধের সময়) বললেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা অর্পণ করব যার হাতে আল্লাহ খায়বার দুর্গ জয় করাবেন;
লোকেরা শুধু এ চিন্তায় কাটিয়ে দিল যে, তাদের মধ্যে কাকে আগামীকাল ঐ পতাকা প্রদান করা হবে?
পরদিন সকালে লোকেরা রাসুলুল্লাহ(সা.)এর কাছে উপস্থিত হল; আমাদের প্রত্যেকেই এ আশা পোষণ করছিল যে পতাকা তার হাতেই অর্পণ করা হবে;
রাসুলুল্লাহ(সা.) বললেন, আলী ইবনে আবু তালিব কোথায়?
লোকজন বলল, হে আল্লাহর রাসুল! সে চক্ষু রোগাক্রান্ত;
তিনি বললেন, কাউকে পাঠিয়ে দিয়ে তাকে আমার কাছে হাজির করাও;
তারপর আলী (রা.) যখন আসলেন রাসুলুল্লাহ(সা.) তার চোখে (মুখের) লালা লাগিয়ে দিলেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন; এতে তিনি সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন যেন কোন জ্বালা-যন্ত্রণাই তার ছিল না;
তারপর রাসুলুল্লাহ(সা.) তাকে পতাকা প্রদান করলেন;
আলী(রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল তাদের বিরুদ্ধে আমরা সেই পর্যন্ত যুদ্ধ করে যাব, যে পর্যন্ত তার (আমাদের মত মুসলমান) না হবে;
রাসুলুল্লাহ(সা.) বললেন,
তুমি তোমার নীতি রক্ষা করে চলবে; যখন তুমি তাদের সীমান্তে উপনীত হবে তখন সর্বপ্রথম তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান জানাবে; তারপর ইসলামের মধ্যে আল্লাহর যে সকল হক(বিধি-বিধান), তাদের উপর ওয়াজিব সে সম্পর্কে তাদেরকে জানাবে; আল্লাহর কছম, তোমার এ আহ্বান দ্বারা যদি একটি লোককেও আল্লাহ হেদায়াত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য লাল উট হতেও অধিক উত্তম
Shahi Bukhari Volume 5, Book 57, Number 51
খলীফা নিযুক্ত হওয়ার পর ভাষণ
খলীফা হওয়ার পর তার প্রথম ভাষণে তিনি বলেছিলেন,
“ভাইসব! আমি তোমাদেরই মত একজন মানুষ; তোমাদের যা অধিকার আমারও তাই; তোমাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয় তা আমার ওপরও অর্পিত হয়; আমি তোমাদের নবীর নীতি অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবো এবং তারই আইন চালু করবো; শোন! (এর আগে অন্যায়ভাবে) যাকে যত জায়গা-জমি এবং আল্লাহর ধন থেকে যাকে যা দেওয়া হয়েছে তা বাইতুল মালে ফেরত নেয়া হবে; কেননা, বাস্তবকে কোন জিনিস পরিবর্তিত করতে পারে না;এমন কি যদি আমি দেখি যে, এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিয়ে কিংবা বাঁদী খরিদ করার কাজে ব্যয়িত হয়েছে তবুও আমি তা ফেরত আনবো; কারণ, ন্যায়নীতি যার পক্ষে দুঃসহ হবে, জুলুম ও অত্যাচার তার পক্ষে আরও বেশী দুঃসহ হবে.”
“ভাইসব! হুশিয়ার হয়ে যাও! কিছুদিন আগে যাদের ওপর দুনিয়ার স্বার্থ প্রবল হয়ে পড়েছিল এবং তারা বড় বড় দালান-কোঠা, উট-ঘোড়া, দাস-দাসী ও চাকর-নফরের মালিক হয়েছিল- তাদেরকে যখন আমি এই সব কিছু থেকে বঞ্চিত করবো এবং তাদের আসল অধিকারের আওতায় ফিরিয়ে আনবো- তখন যেন তারা বলতে আরম্ভ না করে থাকে যে, আবু তালেবের বেটা আমাদেরকে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে; জেনে রাখ! রাসুলুল্লাহ (সা)-র সাহাবী, মুহাজের ও আনসারদের মধ্য থেকে কেউ যদি এরুপ মনে করে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) এর নৈকট্য ও সাহচর্য লাভের দরুন অন্যান্যদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্ব ও অগ্রাধিকার রয়েছে তার জানা উচিত যে, এই শ্রেষ্ঠত্ব ও অগ্রাধিকারের স্বীকৃতি শুধু আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে;
জেনে রাখ! যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসুলের দাওয়াতে সাড়া দেবে, আমাদের জাতীয়তাকে গ্রহণ করবে, আমাদের সত্য দ্বীনের মধ্যে প্রবেশ করবে এবং আমাদের কিবলামুখী হবে, সে আমাদের দেওয়া যাবতীয় অধিকার লাভ করবে এবং তার নির্ধারিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে বাধ্য হবে;
তোমরা সকলে আল্লাহর দাস এবং এ সম্পদ আল্লাহর সম্পদ; এটা তোমাদের মধ্যে সমানভাবে বন্টন করা হবে; এ ব্যাপারে কাউকে কারো ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হবে না; আল্লাহভীরু লোকদের জন্য আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান রয়েছে.
রাষ্ট্রনায়কের সহজ-সরল জীবনের নমুনা
হযরত আলী(রা) এই লক্ষ্য নিয়ে খেলাফতের মসনদে আসীন হলেন যে তিনি জনগণ এবং সরকারকে পুনরায় ইসলামের আসল রাজনৈতিক আদর্শে প্রতিষ্ঠিত করবেন; তার অবস্থা ছিল এই যে, তার স্ত্রী স্ব-হস্তে গম পিষতেন এবং তা-ই তিনি আহার করতেন; একবার তিনি নিজের এক বস্তা গমের ওপর বায়তুল মালে জমা দেয়ার উদ্দেশ্যে সরকারী সিল মোহর অংকিত করেছিলেন; বললেন,
“আমি নিজের পেটে শুধু তাই প্রবেশ করাতে চাই যার হালাল হওয়া সম্পর্কে আমি নিশ্চিত”
কখনো কখনো এমন অবস্থাও হয়েছে যে, তাঁকে খাদ্য বস্ত্র খরিদ করার জন্য নিজের তরবারী পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে; কুফায় তিনি শ্বেত-প্রাসাদে অবস্থান করা পছন্দ করেন নি; বরং গরীব লোকদের মত কুঁড়ে ঘরে বসবাস করতেন.
তিনি কি ধরণের জীবন যাপন করতেন সে সম্পর্কে নজর ইবনে মানসুরের বর্ণনা প্রণিধানযোগ্য;
তিনি বলেন- “আমি হযরত আলীর কাছে গিয়ে দেখি, তার সামনে দুর্গন্ধযুক্ত টক দুধ এবং শুকনো রূটি রয়েছে; আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “আমিরুল মু’মিনীন! আপনি কি এ সব জিনিস খান?”
তিনি জবাব দিলেন,
“রাসুলুল্লাহ(সা) এর চেয়ে শুকনো রুটি এবং মোটা কাপড় পরিধান করতেন; আমি যদি তাঁর নীতি অনুসরণ করে না চলি তাহলে আমার আশংকা হয় যে, হয়তো রাসুলুল্লাহর (সা) সঙ্গী হতে পারব না”
এমনিভাবে হারুন ইবনে আনতারা বর্ণনা করেছেন যে, আমি খাওরানাক নামক স্থানে হজরত আলীর সাথে সাক্ষাত করতে চাই; তখন ছিল শীতকাল; হজরত আলীর (রাঃ) গায়ে একটি ছিন্ন পুরনো চাদর ছিল এবং তিনি থর থর করে কাঁপছিলেন;
আমি বললাম, “আমিরুল মু’মিনীন! আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য এই সম্পদে আল্লাহ কিছু অধিকার নির্ধারিত করেছেন; তা সত্ত্বেও আপনি নিজের প্রতি এরুপ কঠোর আচরণ করছেন; ”
আলী (রা) বললেন,
“আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের হক নষ্ট করবো না; এটা আমার সেই চাদর যা আমি মদিনা থেকে এনেছিলাম”
হযরত আলী (রা)-র জ্ঞানের ছোট্ট একটি উদাহরণ
আমরা জানি দশম শতাব্দীর আগে রসায়ন কোন বিজ্ঞান ছিল না; মানুষ রসায়ন শাস্ত্রকে অনেকটা যাদুবিদ্যার সমতুল্য মনে করত; তবে এ বিষয়ে হযরত আলী(রা) স্পষ্ট জ্ঞান রাখতেন তার প্রমাণ আছে; এ সম্পর্কে তার একটি উক্তি রসায়ন শাস্ত্র সন্মন্ধে একটি স্পষ্ট ধারণার জন্ম দেয়; তিনি একজনকে বলেছিলেন,
“পারদ ও অভ্র একত্র করে যদি বিদ্যুতের মতো কোন বস্তুর সাথে মিশিয়ে দিতে পারো তাহলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অধীশ্বর হতে পারবে”
সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নিদর্শন
সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাসুলের অন্যতম সাহাবী ও ইসলামী রাষ্ট্রের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) সর্বদা সচেতন থাকতেন.
বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতার অপব্যবহারকে তিনি জঘন্য অপরাধ বলে মনে করতেন. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি মুসলিম-অমুসলিমের মধ্যে কোনরুপ ভেদনীতিকে প্রশ্রয় দিতেন না.
এই ব্যাপারে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা এখানে উল্লেখযোগ্য.
একদিন জনৈক অমুসলিম আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী(রা.)-র লৌহবর্মটি চুরি করে নিয়ে গেল. রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও তিনি সরাসরি কোন পুলিশী ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন না. বরং তিনি নিয়মানুযায়ী কাজীর (বিচারক) বিচারপতি শোরাইহর কাছে অভিযোগ দায়ের করলেন.*
তিনি দাবী করেন যে, ওই বর্ম তার;
বিচারপতি শোরাইহ অমুসলিমকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আমীরুল মু’মিনীনের দাবী সম্পর্কে তার বক্তব্য কি?
অমুসলিম বললো,“বর্ম নিশ্চয়ই আমার, তবে আমীরুল মু’মিনীনকেও আমি মিথ্যুক বলতে চাই না”
শোরাইহ বললেন, “আপনার কাছে প্রমাণ আছে কি?”
তাকে অভিযোগের স্বপক্ষে দুজন সাক্ষী হাজির করার আদেশ দিলেন. হযরত আলী(রা.) তার দুই পুত্র হযরত হাসান (রা.) ও হযরত হুসাইন (রা.)-কে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করলেন. কিন্তু বিচারক অভিযোগকারীর নিকটান্তীয় বলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ না করে বরং মামলাটিই খারিজ করে দিলেন.
হযরত আলী(রা.) বিচার মেনে নিলেন. তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও বিচার মেনে নেয়ায় অমুসলিম ব্যক্তি হতবাক হয়ে গেল.
সে কয়েক পা গিয়ে ফিরে এল আর বলতে লাগলো, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, যে ধর্মের খলিফা স্বয়ং আমাকে বিচারকের কাছে পেশ করে এবং বিচারক তার বিরুদ্ধে রায় দেন; নিঃসন্দেহে তা সত্য ধর্ম ”
এ বলেই সে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা করলো;
অতঃপর সে বললো, “আমীরুল মু’মিনীন! আল্লাহর শপথ করে বলছি, এ বর্ম আপনার; আপনি যখন সিফফিন অভিমুখে যাত্রা করেন তখন আমি সেনাবাহিনীর পিছন পিছন চলছিলাম; এ বর্ম আপনার বাদামীর রংয়ের উটের ওপর থেকে পড়ে গেছে.”
হযরত আলী (রাঃ) বললেন, “তুমি যখন ঈমান এনেছ তখন এটা তোমাকেই উপহার দিলাম”
(আবকারিয়াতুল ইমাম-উস্তাদ আব্বাস মাহমুদ আল আক্কাদ)
(তথ্যসুত্র খেলাফতে রাশেদাঃ মাওলানা আব্দুর রহীম-পৃষ্ঠা নং ১৭২ টীকা নং-১; ইসলামের স্বর্ণযুগে সামাজিক ন্যায়নীতিঃ শহীদ সাইয়েদ কুতুব, বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান-নুরুল ইসলাম )
* দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.) আমল থেকে ইসলামী রাষ্ট্রে বিচার ব্যবস্থা প্রশাসন বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল.
তথ্যসুত্র-আসহাবে রাসুলের জীবনকথা
Bangla reading problem visit:
be Organized by Holy Islam
O.H.I
For More Visit:
O.H.I
For More Visit: