السلام عليكم
রামাদান ম্যানুয়াল-২১
বিষয়: যাদের সাথে
বিবাহ হারাম
সূরা নিসা: ১৯-২৩
يَاأَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُواْ النِّسَاء كَرْهًا وَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ
لِتَذْهَبُواْ بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ إِلاَّ أَن يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئًا
وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا (১৯) وَإِنْ أَرَدتُّمُ
اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنطَارًا فَلاَ تَأْخُذُواْ
مِنْهُ شَيْئًا أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَاناً وَإِثْماً مُّبِيناً (২০)
وَكَيْفَ تَأْخُذُونَهُ وَقَدْ أَفْضَى بَعْضُكُمْ إِلَى بَعْضٍ وَأَخَذْنَ
مِنكُم مِّيثَاقًا غَلِيظًا (২১) وَلاَ تَنكِحُواْ مَا نَكَحَ آبَاؤُكُم
مِّنَ النِّسَاء إِلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاء
سَبِيلاً (২২) حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ
وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالاَتُكُمْ وَبَنَاتُ الأَخِ وَبَنَاتُ
الأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللاَّتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ
وَأُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللاَّتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَآئِكُمُ
اللاَّتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُواْ دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلاَ جُنَاحَ
عَلَيْكُمْ وَحَلاَئِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلاَبِكُمْ وَأَن تَجْمَعُواْ
بَيْنَ الأُخْتَيْنِ إَلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا (২৩)
১৯) হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের
জন্য জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হয়ে বসা মোটেই হালাল নয়। ২৮ আর তোমরা যে মোহরানা
তাদেরকে দিয়েছো তার কিছু অংশ তাদেরকে কষ্ট দিয়ে আত্মসাৎ করাও তোমাদের জন্য হালাল নয়।
তবে তারা যদি কোন সুস্পষ্ট চরিত্রহীনতার কাজে লিপ্ত হয় (তাহলে অবশ্যই তোমরা তাদেরকে
কষ্ট দেবার অধিকারী হবে) ২৯ তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন করো। যদি তারা তোমাদের কাছে
অপছন্দনীয় হয়, তাহলে হতে পারে একটা জিনিস
তোমরা পছন্দ করো না কিন্তু আল্লাহ তার মধ্যে অনেক কল্যাণ রেখেছেন। ৩০ ২০) আর যদি তোমরা
এক স্ত্রীর জায়গায় অন্য স্ত্রী আনার সংকল্প করেই থাকো, তাহলে
তোমরা তাকে স্তুপীকৃত সম্পদ দিয়ে থাকলেও তা থেকে কিছুই ফিরিয়ে নিয়ো না। তোমরা কি মিথ্যা
অপবাদ দিয়ে ও সুস্পষ্ট জুলুম করে তা ফিরিয়ে নেবে? ২১) আর তোমরা তা নেবেই বা কেমন
করে যখন তোমরা পরস্পরের স্বাদ গ্রহণ করেছো এবং তারা তোমাদের কাছ থেকে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার
নিয়েছে। ৩১ ২২) আর তোমাদের পিতা যেসব স্ত্রীলোককে বিয়ে করেছে, তাদেরকে কোনক্রমেই বিয়ে করো না। তবে আগে যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে। ৩২ আসলে
এটা একটা নির্লজ্জতা প্রসূত কাজ, অপছন্দনীয় ও নিকৃষ্ট আচরণ।
৩৩ ২৩) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা,৩৪ কন্যা,৩৫ বোন,৩৬ ফুফু, খালা,
ভাতিজি, ভাগিনী ৩৭ ও তোমাদের সেই সমস্ত মাকে
যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছে এবং তোমাদের দুধ বোন৩৮ তোমাদের স্ত্রীদের মা৩৯ ও তোমাদের
স্ত্রীদের মেয়েদেরকে যারা তোমাদের কোলে মানুষ হয়েছে,৪০ সেই
সমস্ত স্ত্রীদের মেয়েদেরকে যাদের সাথে তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে,
অন্যথায় যদি (শুধুমাত্র বিয়ে হয় এবং) স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত
না হয়, তাহলে (তাদেরকে বাদ দিয়ে তাদের মেয়েদেরকে বিয়ে করলে)
তোমাদের কোন জবাবদিহি করতে হবে না, এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের
স্ত্রীদেরকেও। ৪১ আর দুই বোনকে একসাথে বিয়ে করাও তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। ৪২
তবে যা প্রথমে হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ৪৩
আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা
২৮.এর অর্থ হচ্ছে, স্বামীর মৃত্যুর পর তার পরিবারের লোকেরা তার বিধবাকে মীরাসী
সম্পত্তি মনে করে তার অভিভাবক ও ওয়ারিস হয়ে না বসে। স্বামী মরে গেলে স্ত্রী ইদ্দত পালন
করার পর স্বাধীনভাবে ইচ্ছা যেতে এবং যাকে ইচ্ছা বিয়ে করতে পারে।
২৯. তাদের চরিত্রহীনতার শাস্তি
দেবার জন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, তাদের সম্পদ লুট করে খাবার জন্য নয়।
৩০. অর্থাৎ স্ত্রী যদি সুন্দরী
না হয় অথবা তার মধ্যে এমন কোন ত্র“টি থাকে যে জন্য
স্বামী তাকে অপছন্দ করে তাহলে এ ক্ষেত্রে স্বামীর তৎক্ষণাৎ হতাশ হয়ে তাকে পরিত্যাগ
করতে উদ্যত হওয়া উচিত নয়। যতদূর সম্ভব তাকে অবশ্যই ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করতে
হবে। অনেক সময় দেখা যায়, স্ত্রী সুন্দরী
হয় না ঠিকই কিন্তু তার মধ্যে অন্যান্য এমন কিছু গুণাবলী থাকে, যা দাম্পত্য জীবনে সুন্দর মুখের চাইতে অনেক বেশী গুরুত্ব লাভ করে। যদি সে
তার এই গুণাবলী প্রকাশের সুযোগ পায়, তা হলে তার স্বামী রতœটি যিনি প্রথম
দিকে শুধুমাত্র স্ত্রীর অসুন্দর মুখশ্রী দেখে হতাশ হয়ে পড়ছিলেন, এখন দেখা যাবে তার চরিত্র মাধুর্যে তার প্রেমে আত্মহারা
হয়ে পড়ছেন। এমনিভাবে অনেক সময় দাম্পত্য জীবেনর শুরুতে স্ত্রীর কোন কোন কথা ও আচরণ স্বামীর
কাছে বিরক্তিকর ঠেকে এবং এ জন্য স্ত্রীর ব্যাপারে তার মন ভেঙে পড়ে। কিন্তু সে ধৈর্য্য
ধারণ করলে এবং স্ত্রীকে তার সম্ভাব্য সকল যোগ্যতার বাস্তবায়নের সুযোগ দিলে সে নিজেই
অনুধাবন করতে পারে যে, তার স্ত্রীর মধ্যকার দোষের তুলনায় গুণ
অনেক বেশী। কাজেই দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপার তাড়াহুড়ো করা মোটেই পছন্দনীয়
নয়। তালাক হচ্ছে সর্বশেষ উপায়। একান্ত অপরিহার্য ও অনিবার্য অবস্থায়ই এর ব্যবহার হওয়া
উচিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: অর্থাৎ তালাক জায়েয হলেও দুনিয়ার
সমস্ত জায়েয কাজের মধ্যে এটি আল্লাহর কাছে সবচাইতে অপছন্দনীয়।
অন্য একটি হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বিয়ে করো এবং
তালাক দিয়ো না। কারণ আল্লাহ এমন সব পুরুষ ও নারীকে পছন্দ করেন না যারা ভ্রমরের মতো
ফুলে ফুলে মধু আহরণ করে বেড়ায়”।
৩১. পাকাপোক্ত অংগীকার অর্থ
বিয়ে। কারণ এটি আসলে বিশ¡স্ততার একটি মজবুত
ও শক্তিশালী অঙ্গীকার ও চুক্তি এবং এরই স্থিতিশীলতা ও মজবুতীর ওপর ভরসা করেই একটি মেয়ে
নিজেকে একটি পুরুষের হাতে সোপর্দ করে দেয়। এখন পুরুষটি যদি নিজের ইচ্ছায় এ অঙ্গীকার
ও চুক্তি ভঙ্গ করে তাহলে চুক্তি করার সময় সে যে বিনিময় পেশ করেছিল তা ফিরিয়ে নেবার
অধিকার তার থাকে না। (সূরা বাকারার ২৫১ টীকাটিও দেখুন।)
৩২. সামাজিক ও তামাদ্দুনিক
সমস্যাবলীর ক্ষেত্রে জাহেলিয়াতের ভ্রান্ত পদ্ধতিগুলোকে হারাম গণ্য করে সাধারণভাবে কুরআন
মজীদে অবশ্যই একথা বলা হয়ে থাকে: “যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে”। এর দু’'টি অর্থ হয়। এক: অজ্ঞতা ও অজ্ঞানতার যুগে তোমরা যে সমস্ত
ভুল করেছো, সেগুলো পাকড়াও করা হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত
হচ্ছে এই যে, এখন যথার্থ নির্দেশ এসে যাবার পর তোমরা নিজেদের
কার্যকলাপ সংশোধন করে নাও এবং ভুল ও অন্যায় কাজগুলো পরিহার করো, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করো না। দুই: আগের যুগের কোন পদ্ধতিকে যদি এখন হারাম
গণ্য করা হয়ে থাকে, তাহলে তা থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া
সঠিক হবে না যে, আগের আইন বা রীতি অনুযায়ী যে কাজ ইতিপূর্বে
করা হয়েছে তাকে নাকচ করে দিয়ে তা থেকে উদ্ভুত ফলাফলকে অবৈধ ও তার ফলে যে দায়িত্ব মাথায়
চেপে বসেছে তাকে অনিবার্যভাবে রহিত করা হচ্ছে। যেমন এখন বিমাতাকে বিয়ে করা হারাম গণ্য
করা হয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে, এ পর্যন্ত যত লোক এ ধরনের বিয়ে
করেছে, তাদের গর্ভজাত সন্তানদেরকে জারজ গণ্য করা হচ্ছে এবং
নিজেদের পিতার সম্পদ সম্পত্তিতে তাদের উত্তরাধিকার রহিত করা হচ্ছে। অনুরূপভাবে যদি
লেনদেনের কোন পদ্ধতিকে হারাম গণ্য করা হয়ে থাকে,তাহলে তার
অর্থ এ নয় যে, এ পদ্ধিতে এর আগে যতগুলো লেনদেন হয়েছে,
সব বাতিল গণ্য হয়েছে এবং এখন এভাবে কোন ব্যক্তি যে ধন-সম্পদ উপার্জন
করেছে তা তার থেকে ফেরত নেয়া হবে অথবা ঐ সম্পদকে হারাম গণ্য করা হবে।
৩৩. ইসলামী আইন মোতাবিক এ
কাজটি একটি ফৌজদারী অপরাধ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখেন। আবু দাউদ, নাসাঈ ও মুসনাদে আহমাদে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই অপরাধকারীদেরকে মৃত্যুদন্ড ও সম্পত্তি
বাজেয়াপ্ত করার শাস্তি দিয়েছেন। আর ইবনে মাজাহ ইবনে আব্বাস থেকে যে রেওয়ায়াত উদ্ধৃত
করেছেন তা, থেকে জানা যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এ ব্যাপারে এই সাধারণ নির্দেশটি বর্ণনা করেছিলেন:
“যে ব্যক্তি মুহরিম
আত্মীয়ার মধ্য থেকে কারো সাথে যিনা করে তাকে হত্যা করো”।
ফিকাহবিদদের মধ্যে এ ব্যাপারে
মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম আহমাদের মতে এহেন ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে এবং তার ধন-সম্পত্তি
বাজেয়াপ্ত করা হবে। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেঈর মতে যদি সে কোন মুহরিম আত্মীয়ার সাথে যিনা করে
থাকে, তাহলে তাকে যিনার শাস্তি দেয়া হবে আর যদি বিয়ে করে থাকে
তাহলে তাকে কঠিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।
৩৪. মা বলতে আপন মা ও বিমাতা
উভয়ই বুঝায়। তাই উভয়ই হারাম এ ছাড়া বাপের মা ও মায়ের মা-ও এ হারামের অন্তর্ভূক্ত।
যে মহিলার সাথে বাপের অবৈধ
সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে সে পুত্রের জন্য হারাম কিনা এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। প্রথম
যুগের কোন কোন ফকীহ একে হারাম বলেন না। আর কেউ কেউ হারাম বলেছেন। বরং তাদের মতে, বাপ যৌন কামনা সহ যে মহিলার গা স্পর্শ করেছে সে ও পুত্রের
জন্য হারাম। অনুরূপভাবে যে মহিলার সাথে পুত্রের অবৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে,
সে বাপের জন্য হারাম কিনা এবং যে পুরুষের সাথে আবার মেয়ের অবৈধ সম্পর্ক
ছিল অথবা পরে হয়ে যায়, তার সাথে বিয়ে করা মা ও মেয়ে উভয়ের
জন্য হারাম কিনা, এ ব্যাপারেও প্রথম যুগের ফকীহদের মধ্যে মতবিরোধ
রয়েছে। এ প্রসংগে ফকীহদের আলোচনা অত্যন্ত দীর্ঘ। তবে সামান্য চিন্তা করলে একথা সহজেই
অনুধাবন করা যায় যে, কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন স্ত্রীলোকের
সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকে, যার ওপর তার পিতার বা পুত্রেরও
নজর থাকে অথবা যার মা বা মেয়ের ওপরও তার নজর থাকে, তাহলে এটাকে
কখনো সুস্থ ও সৎ সামাজিকতার উপযোগী বলা যেতে পারে না। যে সমস্ত আইনগত চুলচেরা বিশ্লেষণের
মাধ্যমে বিবাহ ও অবিবাহ, বিবাহ পূর্ব ও বিবাহ পরবর্তী এবং
সংস্পর্শ ও দৃষ্টিপাত ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্য করা হয়, কিন্তু
আল্লাহর শরীয়তের স্বাভাবিক প্রকৃতি তা মেনে নিতে মোটেই প্রস্তুত নয়। সোজা কথায় পারিবারিক
জীবনে একই স্ত্রীলোকের সাথে বাপ ও ছেলে অথবা একই পুরুষের সাথে মা ও মেয়ের যৌন সম্পর্ক
কঠিন বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ এবং শরীয়ত একে কোনক্রমেই বরদাশত করতে পারে না। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি কোন
মেয়ের যৌনাঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করে তার মা ও মেয়ে উভয়ই তার জন্যে হারাম হয়ে যায়”।
তিনি আরো বলেন: “আল্লাহ সেই ব্যক্তির চেহারা দেখাই পছন্দ করেন না,
যে একই সময় মা ও মেয়ে উভয়ের যৌনাঙ্গে দৃষ্টিপাত করে”।
এ হাদীসগুলো থেকে শরীয়তের
উদ্দেশ্য দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
৩৫. নাতনী ও দৌহিত্রীও কন্যার
অন্তর্ভূক্ত। তবে অবৈধ সম্পর্কের ফলে যে মেয়ের জন্ম হয় সেও হারাম কিনা, এ ব্যাপারে অবশ্যই মতবিরোধ আছে। ইমাম আবু হানীফা (র),
ইমাম মালেক (রা) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের (র) মতে সেও বৈধ কন্যার
মতোই মুহরিম। অন্যদিকে ইমাম শাফেঈর (র) মতে সে মুহরিম নয় অর্থাৎ তাকে বিয়ে করা যায়;
কিন্তু আসলে যে মেয়েটিকে সে নিজে তার নিজেরই ঔরসজাত বলে জানে,
তাকে বিয়ে করা তার জন্য বৈধ, এ চিন্তাটিও
সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ বিবেককে ভারাক্রান্ত করে।
৩৬. সহোদর বোন, মা-শরীক বোন ও বাপ-শরীক বোন-তিনজনই সমানভাবে এ নিদের্শের
আওতাধীন।
৩৭. এ সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রেও
সহোদর ও বৈমাত্রেয় বৈপিত্রেয়ের-ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই। বাপ ও মায়ের বোন সহোদর, মা-শরীক বা বাপ-শরীক যে পর্যায়েরই হোক না কেন তারা অবশ্যই
পুত্রের জন্য হারাম। অনুরূপভাবে ভাই ও বোন সহোদর, মা-শরীক
বা বাপ-শরীক যে কোন পর্যায়েরই হোক না কেন তাদের কন্যারা নিজের কন্যার মতই হারাম।
৩৮. সমগ্র উম্মাতে মুসলিমা
ও ব্যাপারে একমত যে, একটি ছেলে বা
মেয়ে যে স্ত্রীলোকদের দুধ পান করে তার জন্য ঐ স্ত্রীলোকটি মায়ের পর্যায়ভুক্ত ও তার
স্বামী বাপের পর্যায়ভুক্ত হয়ে যায় এবং আসল মা ও বাপের সম্পর্কের কারণে যে সমস্ত আত্মীয়তা
হারাম হয়ে যায় দুধ-মা ও দুধ-বাপের সম্পর্কের কারণেও সেসব আত্মীয়তাও তার জন্য হারাম
হয়ে যায়। এ বিধানটির উৎসমূলে রয়েছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ নির্দেশটি:
“বংশ ও রক্ত সম্পর্কের দিক দিয়ে যা হারাম দুধ সম্পর্কের দিক
দিয়েও তা হারাম”।
তবে কি পরিমাণ দুধ পানে দুধ
সম্পর্কের দিক দিয়ে বিয়ে করা হারাম হয়ে যায় সে ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। ইমাম আবু হানীফা
ও ইমাম মালেকের মতে যে পরিমাণ দুধ পান করলে একজন রোযাদারের রোযা ভেঙে যেতে পারে কোন
স্ত্রীলোকের সেই পরিমাণ দুধ যদি শিশু পান করে,তাহলে হারামের বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। কিন্তু ইমাম আহমাদের মতে তিনবার
পান করলে এবং ইমাম শাফেঈর মতে পাঁচবার পান করলে এ হারামের বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও
কোন্ বয়সে দুধ পান করলে বিবাহ সম্পর্ক হারাম হয়ে যায় সে ব্যাপারেও মতানৈক্য রয়েছে।
এ ব্যাপারে ফকীহগণ নিম্নোক্তমত পোষণ করেন:
এক: শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের
যে স্বাভাবিক বয়সকাল, যখন তার দুধ
ছাড়ানো হয় না এবং দুধকেই তার খাদ্য হিসেবে খাওয়ানো হয়, এসই
সময়ের মধ্যে কোন মহিলার দুধ পান করলে বিবাহ সম্পর্ক হারাম হয়ে যায়। নয়তো দুধ ছাড়ানোর
পর কোন শিশু কোন মহিলার দুধ পান করলে, তা পানি পান করারই পর্যায়ভুক্ত
হয়। উম্মে সালমা (রা) ও ইবনে আব্বাস (রা) এ মত পোষণ করেছেন। হযরত আলী (রা) থেকেও এই
অর্থে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। যুহরী, হাসান বসরী কাতাদাহ,
ইকরামাহ ও আওযাঈও এ মত পোষণ করেন।
দুই: শিশুর দুই বছর বয়সকালের
মধ্যে যে দুধ পান করানো হয় কেবল মাত্র তা থেকেই দুধ সম্পর্ক প্রমাণিত হয়। এটি হযরত
উমর (রা), ইবনে মাসউদ (রা), আবু হুরায়রা (রা) ও ইবনে উমরের (রা) মত। ফকীহগণের মধ্যে ইমাম শাফেঈ,
ইমাম আহমাদ, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ও সুফিয়ান সাওরী এই মত গ্রহণ করেছেন। ইমাম আবু হানীফারও
একটি অভিমত এরই স্বপক্ষে ব্যক্ত হয়েছে। ইমাম মালিকও এই মতের সমর্থন করেন। কিন্তু তিনি
বলেন: দু’বছর থেকে যদি
এক মাস দু’মাস বেশী হয়ে যায় তাহলে তার ওপরও ঐ দুধ পানের সময় কালের বিধান
কার্যকর হবে।
তিন: ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম
যুফারের বিখ্যাত অভিমত হচ্ছে, দুধপানের
মেয়াদ আড়াই বছর এবং এই সময়ের মধ্যে কোন স্ত্রীলোকের দুধ পান করলে দুধ-সম্পর্ক প্রমাণিত
হবে।
চার: যে কোন বয়সে দুধ পান
করলে দুধ সম্পর্ক স্থাপিত হবে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে বয়স নয়, দুধই আসল বিষয়। পানকারী বৃদ্ধ হলেও দুধ পানকারী শিশুর জন্য
যে বিধান তার জন্যও সেই একই বিধান জারী হবে। হযরত আয়েশা (রা) এ মত পোষণ করেন। হযরত
আলী (রা) থেকেই এরই সমর্থনে অপেক্ষাকৃত নির্ভুল অভিমত বর্ণিত হয়েছে। ফকীহদের মধ্যে
উরওয়াহ ইবনে যুবাইর, আতা ইবনে রিবাহ, লাইস ইবনে সা’দ ও ইবনে হাযম
এই মত অবলম্বন করেছেন।
৩৯. যে মহিলার সাথে শুধুমাত্র
বিয়ে হয়েছে তার মা হারাম কি না এ ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম
আহমাদ (রা:) তার হারাম হওয়ার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে হযরত আলীর (রা) মতে কোন
মহিলার সাথে একান্তে অবস্থান না করা পর্যন্ত তার মা হারাম হবে না।
৪০. সৎ বাপের ঘরে লালিত হওয়াই
এই ধরনের মেয়ের হারাম হওয়ার জন্য শর্ত নয়। মহান আল্লাহ নিছক এই সম্পর্কটির নাজুকতা
বর্ণনা করার জন্য এ শব্দাবলী ব্যবহার করেছেন। এ ব্যাপারে মুসলিম ফকীহগণের প্রায় ‘ইজমা’ অনুষ্ঠিত
হয়েছে যে, সৎ মেয়ে
বাপের ঘরে লালিত হোক বা না হোক সর্বাবস্থায়ই সে সৎ বাপের জন্য হারাম।
৪১. এই শর্তটি কেবলমাত্র এ
জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি
যাকে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে, তার বিধবা বা তালাক প্রাপ্তা
স্ত্রী ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম নয়। কেবল মাত্র নিজের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রীই বাপের জন্য
হারাম। এভাবে পুত্রের ন্যায় প্রপুত্র ও দৌহিত্রের স্ত্রীও দাদা ও নানার জন্য হারাম।
৪২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের নির্দেশ, খালা ও ভাগিনী
এবং ফুফু ও ভাইঝিকেও এক সাথে বিয়ে করা হারাম। এ ব্যাপারে একটা মূলনীতি মনে রাখা দরকার।
সেটি হচ্ছে, এমন ধরনের দু’টি মেয়েকে একত্রে বিয়ে করার হারাম যাদের একজন যদি পুরুষ হতো
তাহলে অন্য জনের সাথে তার বিয়ে হারাম হতো।
৪৩. অর্থাৎ জাহেলী যুগে তোমরা
জুলুম করতে। দুই বোনকে এক সাথে বিয়ে করতে। সে ব্যাপারে আর জবাবদিহি করতে হবে না। তবে
শর্ত হচ্ছে, এখন তা থেকে বিরত থাকতে
হবে। এরই ভিত্তিতে এ নির্দেশ দেয়া হয় যে, যে ব্যক্তি কুফরীর
যুগে দুই সহোদর বোনকে বিয়ে করেছিল তাকে এখন ইসলাম গ্রহণ করার পর একজনকে রাখতে ও অন্যজনকে
ছেড়ে দিতে হবে। মুসলিম
সামাজিক ও তামাদ্দুনিক সমস্যাবলীর
ক্ষেত্রে জাহেলিয়াতের ভ্রান্ত পদ্ধতিগুলোকে হারাম গণ্য করে সাধারণভাবে কুরআন মজীদে
অবশ্যই একথা বলা হয়ে থাকেঃ “যা হয়ে
গেছে তা হয়ে গেছে”৷ এর দু’টি অর্থ হয়৷ এক: অজ্ঞতা ও অজ্ঞানতার যুগে তোমরা যে সমস্ত
ভুল করেছো, সেগুলো পাকাড়াও করা হবে
না৷ তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে এই যে, এখন যথার্থ নির্দেশ
এসে যাবার পর তোমরা নিজেদের কার্যকলাপ সংশোধন করে নাও এবং ভুল ও অন্যায় কাজগুলো পরিহার
করো, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করো না৷
দুই: আগের যুগের কোন পদ্ধতিকে
যদি এখন হারাম গণ্য করা হয়ে থাকে, তাহলে
তা থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সঠিক হবে না যে, আগের আইন
বা রীতি অনুযায়ী যে কাজ ইতিপূর্বে করা হয়েছে তাকে নাকচ করে দিয়ে তা থেকে উদ্ভুত ফলাফলকে
অবৈধ ও তার ফলে যে দায়িত্ব মাথায় চেপে বসেছে তাকে অনিবার্যভাবে রহিত করা হচ্ছে৷ যেমন
এখন বিমাতাকে বিয়ে করা হারাম গণ্য করা হয়েছে৷ এর অর্থ এ নয় যে, এ পর্যন্ত যত লোক এ ধরনের বিয়ে করেছে, তাদের গর্ভজাত
সন্তানদেরকে জারজ গণ্য করা হচ্ছে এবং নিজেদের পিতার সম্পদ সম্পত্তিতে তাদের উত্তরাধিকার
রহিত করা হচ্ছে৷ অনুরূপভাবে যদি লেনদেনের কোন পদ্ধতিকে হারাম গণ্য করা হয়ে থাকে,
তাহলে তার অর্থ এ নয় যে, এ পদ্ধিতে এর আগে
যতগুলো লেনদেন হয়েছে, সব বাতিল গণ্য হয়েছে এবং এখন এভাবে কোন
ব্যক্তি যে ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে তা তার থেকে ফেরত নেয়া হবে অথবা ঐ সম্পদকে হারাম
গণ্য করা হবে৷
বিষয়ভিত্তিক হাদীস:
২১
عَنْ أَبِي حَمْزَةَ أَنَسِ بْنِ
مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ خَادِمِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم
عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: "لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ
حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ". [رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ ، وَمُسْلِمٌ]
আবু হামযাহ আনাস ইবন মালেক
রাদিয়াল্লাহু আনহু-রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাাল্লামের খাদেম-হতে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত
মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার ভাইয়ের জন্য
তা-ই পছন্দ করবে যাসে নিজের জন্য পছন্দ করে”। [বুখারী, মুসলিম]
মুখস্ত করণ: সপ্তম
আয়াত
১৯-২১ রামাদান: ৩
দিন
وَلَقَدْ
آتَيْنَا لُقْمَانَ الْحِكْمَةَ أَنِ اشْكُرْ لِلَّهِ وَمَن يَشْكُرْ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ
لِنَفْسِهِ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ (১২) وَإِذْ قَالَ
لُقْمَانُ لابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ
لَظُلْمٌ عَظِيمٌ (১৩
১২) আমি লুকমানকে দান করেছিলাম
সূক্ষ্মজ্ঞান। যাতে সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়। যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে তার
কৃতজ্ঞতা হবে তার নিজেরই জন্য লাভজনক। আর যে ব্যক্তি কুফরী করবে, সে ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ অমুখাপেক্ষী এবং নিজে নিজেই
প্রশংসিত। ১৩) স্মরণ করো যখন লুকমান নিজের ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছিল, সে বললো, “হে পুত্র! আল্লাহর
সাথে কাউকে শরীক করো না। নিশ্চয়ই শির্ক অনেক বড় জুলুম। সূরা লোকমান: ১২-১৩
মুখস্থকরণ: চতুর্থ
হাদীস
২০-২৪ রামাদান
عَنْ أَبِي
الْعَبَّاسِ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ
إلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ! دُلَّنِي
عَلَى عَمَلٍ إذَا عَمِلْتُهُ أَحَبَّنِي اللَّهُ وَأَحَبَّنِي النَّاسُ؛ فَقَالَ:
"ازْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُحِبُّك اللَّهُ، وَازْهَدْ فِيمَا عِنْدَ النَّاسِ
يُحِبُّك النَّاسُ" . [حديث حسن، رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَغَيْرُهُ بِأَسَانِيدَ
حَسَنَةٍ]
আবুল আব্বাস সাহল ইবন সা’দ আস-সা’ঈদী (রা) হতে
বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে বলল:
হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কাজ বলুন যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন, লোকেরাও আমাকে ভালবাসে। তখন তিনি বললেন: দুনিয়ার প্রতি অনুরাগী হবে না,
তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন; আর মানুষের
কাছে যা আছে তার ব্যাপারে আগ্রহী হবে না, তাহলে মানুষও তোমাকে
ভালবাসবে”। [ইবনে মাজাহ]