Sunday, May 6, 2012

দশ মিনিটে আপনি কি করতে পারেন?


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

দশ মিনিটে আপনি কি করতে পারেন?


http://www.quraneralo.com/wp-content/uploads/2012/04/4992108691_fc9650e456.jpg
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হলযা নিয়মিত করা হয়। তা অল্পই হোক না কেন। [সহীহ বুখারী ৬০২০ ইফা]
আমার নিজের অবস্থা ও যারা সময় অপচয় করে তাদের অবস্থা দেখে আমার ইচ্ছে হল আল্লাহ তায়ালাকে ইবাদত ও আনুগত্যের কাজে নিজেদেরকে অনুপ্রাণিত করতে একটি সুপরিচিত আমল সমূহের তালিকা তৈরি করিযে আমলের কারণে আল্লাহ আমাদের জন্য সম্মান ও বিশাল পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন। এই তালিকাটি আমাদের সময়কে আরও ভালভাবে ব্যবহার করা ও প্রতিটি ঘণ্টায় পাওয়া সুযোগ গুলো কাজে লাগানোর কথাও মনে করিয়ে দেবে। তালিকা তৈরির উদেশ্য শুধু আমলগুলোকে সামনে তুলে ধরা নয়বরং এটাও দেখানো যে ভাল কিছু করার জন্য আয়োজনপরিকল্পনা এবং সময় বাঁচানোটাও কতটা জরুরী।

প্রথমেই আসুন সময় নিয়ে কথা বলিযে ব্যপারে আমরা অনেকেই উদাসীন থাকি ও অপচয় করিএবং খুব কম লোকই যার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে। সময় হল সম্পদের মতযা খরচ ও সামলানোর কাজেও যত্নবান হতে হয়। যদিও সম্পদকে পুঞ্জিভুত করা যায়জমিয়ে রেখে দেওয়া যায়এমনকি বাড়ানোও যায়কিন্তু সময়ের ব্যপারে তেমনটি হয় না। সারা পৃথিবীর সম্পদ ব্যয় করেও একটি মিনিটও ফিরিয়ে আনা যায় না। যেহেতু সময় নির্দিষ্টএগিয়েও নেয়া যায় নাআবার পিছিয়েও নেয়া যায় নাআবার সময়ের মূল্য নির্ভর করে কিভাবে এর ব্যবহার করা হয়েছে তার উপর- তাই প্রত্যেকের উচিৎ কম হোক বা বেশি হোক সময় বাচাঁনো। প্রত্যেকের উচিত সময়ের ব্যপারে উদাসীন না হয়ে এর সর্বোত্তম উপায়ে সদ্ব্যবহার করা।

সময় বাঁচাতে হলে তা কোথায় ও কিভাবে খরচ হচ্ছে তার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের মাধ্যমে ব্যয় করাই হল সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার। আনুগত্যের কাজে ব্যয় করা সময়ের ব্যাপারে কাউকে কখনও অনুশোচনা করতে হয় না। একমাত্র অনুশোচনার বিষয় হতে পারে যদি কেউ নেক আমলের আগে নিয়্যত না করে থাকে। কাজেই ভাই ও বোনেরাআগে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করুনআন্তরিকভাবে নিয়ত করুনসময় বাঁচানোর চেষ্টা ও একটি মিনিটও অপব্যয় না করার সাবধানতা দিয়ে শুরু করুন।
সম্মানিত ভাই ও বোনেরা,
বিষয়টি সহজ করার জন্য আমি দশ মিনিট সময়-কাল নির্ধারণ করেছি (এখানে উল্লিখিত নেক আমল গুলো করার জন্য)যাতে করে কেউ এগুলো শুরু করার পর তিনি সব সময়ই আল্লাহর রহমতে ভাল কাজে নিয়মিতভাবে নিয়োজিত থাকতে পারেন। আর এ সব কাজ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সেই হাদিসের বক্তব্যও অনুসরণ করে যে,
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হলযা নিয়মিত করা হয়। তা অল্পই হোক না কেন। [সহীহ বুখারী ৬০২০ ইফা]
ইমাম নববী (রঃ) এ হাদীসের ব্যাপারে বলেছেনএকটানা নিয়মিত আমল করার ব্যাপারে একটি তাকিদ এ হাদীস খানাবিঘ্নিত কোনও বড় আমলের চেয়ে একটি সামান্য কাজও উত্তম যা নিয়মিত করা হয়। এটা এজন্য যে ছোট ছোট আমল যাতে আছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার প্রতি আনুগত্য স্মরণতাক্বওয়ানিষ্ঠাএকাগ্রতা- নিয়মিত করা এসবের একত্রিত ফলই হবে  বিঘ্নিত বড় কাজের চেয়ে বেশি।

প্রিয় ভাই-বোনেরাসঠিক কাজে দশ মিনিট ব্যয়ের যে নেয়ামাত তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি। প্রতিদিন একশত বার সুবহানআল্লাহ বলে আল্লাহর প্রশংসা করার অর্থ হচ্ছে বছরে ৩৬,৫০০ বার করা। ভাই ও বোনেরাআমলের খবর নিন। আপনি বছরে আল্লাহর এই পরিমান জিকির করতে পারবেন যদি আপনি তাসবীহটি নিয়মিত পাঠ করেন আর এভাবে সময়ের সদ্ব্যবহার করে থাকেন।

এমনি ভাবেকেউ যদি নিয়মিত দশ মিনিট কুরআন তেলাওয়াত করেসে প্রতি দুই মাসে একবার করে খতম করতে পারে। আপনি কি এভাবে করেননিজেকে প্রশ্ন করুনরমজান মাস ছাড়া কি কোরআন খতম করা হয়প্রিয় ভাই-বোনেরাপ্রতিদিন এই বিশেষ দশ মিনিটকে একটি বার মাত্র একাগ্র চিত্তে আনুগত্যের মধ্যেই সীমিত করবেন না। আপনি হয়ত এরকম সময়  ফজরের নামাজের পরেবা সূর্যোদয়ের পরেযোহরের পর অথবা ঘুমানোর আগেও দিনে কয়েকবার বের করতে পারেন।
তেমনিকেউ যদি প্রতিদিন আল্লাহ তায়ালার কিতাবের একটি করে আয়াত মুখস্ত করতে পারেনতিনি মাত্র আট বছরেই সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করে ফেলবেন।

উপরে উল্লেখিত আমলগুলোর বেশিরভাগই জিহ্বার কাজকাজেই যেকোনো সময় যেকোনো অবস্থায় সওয়াব অর্জন করা সম্ভব। সুতরাং যে আল্লাহর আনুগত্যে লিপ্ত থাকতে চায়নেক কাজের দরজাগুলো তার জন্য খোলাই আছেএবং সে তার দিনটিকেএমনকি সমস্ত জীবনকেই এই দশ মিনিটের মতো করে নিতে পারেন।

প্রিয় ভাই ও বোনেরাএটি আপনাদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ। এইভাবে দশ মিনিট করে চর্চার মাধ্যমে আপনি নিয়মিত নেক আমল চালিয়ে যাওয়ার মাধুর্য আস্বাদন করতে পারবেনএবং এটি আপনার সমস্ত জীবনকে সার্থক করার জন্য সময়ের সদ্ব্যবহারের লক্ষ্যে একটি উপযুক্ত পদক্ষেপও হবে। এই দশ মিনিটের সময়টুকু আমাদেরকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজে লাগাতে পারব। কারণ আল্লাহ বলেছেন-
আর জ্বিন ও মানবকে আমি শুধু আমার উপাসনা করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ [সূরা আল যারিয়াতঃ ৫৬]
ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) বলেনপরিশেষে বান্দা যখন আল্লাহর পথ থেকে সরে যায় এবং পাপে জর্জরিত হয় (পৃথিবীতে)সে প্রকৃত জীবনের (আখিরাতে) দিন গুলি হারিয়ে ফেলে। দিনগুলি হারিয়ে ফেলার ফল সে দেখতে পাবেযে দিন বলবে,
সে বলতে থাকবেহায়! আমাকে যদি আবারও দুনিয়াতে [কিছু ভাল কাজে] পাঠানো হত [অর্থাৎ সত্যিকারস্থায়ী জীবন হল আখিরাতে]। [আল-ফাজর :২৪]
দশ মিনিটেই করে ফেলা যায় এমন কিছু কাজ:
·         কুরআন তেলাওয়াত করা (বুঝে)
·         নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দুরূদ-সালাম পাঠ করা
·         আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে স্মরণ করা
·         সুবহানআল্লাহআলহামদুলিল্লাহ্‌ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা
·         শিশুদের ইসলাম শিক্ষা দেওয়া
·         দোয়া করা
·         আত্ম-সমালোচনা করা
·         ইসলামি বই পড়া
·         অপরের কষ্ট দূর করা ও প্রয়োজন পূরণ করা
·         আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা
·         দাওয়াহ মূলক ওয়াজ/বক্তব্য শোনা
·         আল্লাহর উদ্দেশ্যেই মুমিনদের সাথে সাক্ষাৎ করা
·         ফরজ ইবাদাতের পর জিকির করা
·         মানুষের মাঝে শান্তি স্থাপন করা
·         সৎ-উপদেশ দেওয়া
·         আত্মীয়দের ফোন করা
·         নিজের অসিয়্যত লেখা
·         সাদকাহ করা
·         দ্বীনি বিষয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করা
·         দরিদ্রকে আহার করানো
·         ইস্তিখারার নামাজ পড়া
·         ইয়াতিমের যত্ন নেওয়া
·         পরিবারে সাহায্য করা
·         জ্ঞান অন্বেষণ করা
·         সৎ কার্যের আদেশ দেয়া
·         সিজদা করা
·         ইসলামি জ্ঞান প্রচার করা
·         আল্লাহর পথে ডাকা
·         সাদকায়ে জারিয়াহ (অবিরত পুরষ্কার পাওয়া যাবে এমন দান) প্রদান করা
·         সন্তানকে শিক্ষাদান ও যত্ন নেয়া
·         মুয়াজ্জিনের  আযানের জবাব দেওয়া
·         তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা
এখন আপনিই সিদ্ধান্ত নিন আপনার দশ মিনিট আপনি কি কি করে কাজে লাগাবেন।
সূত্র: মাযা তাফয়াল ফী আশারা দাক্বায়িক
লেখকঃ আব্দুল মালিক আল-কাসিম
Collected From: http://www.quraneralo.com/

O.H.I 

For More Visit: