السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
চাঁদ
দেখা ও সন্দেহের দিন রোজা রাখা প্রসঙ্গে শরীয়তের বিধান
রোজা ইসলামি
শরিয়তের শুধু গুরুত্বপূর্ণ বিধানই নয় বরং ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সারা বছরে শুধু রমজান মাসেই রোজা রাখা ফরজ।
তবে রোজা ফরজ
হওয়ার সর্ম্পক কেবল চান্দ্র মাসের সাথে। আর ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুসারে মাসের হিসাবও হয় চাঁদের হিসাব অনুসারে। তাই রোজার শুরু এবং শেষ চাঁদ দেখা এবং না দেখার সাথেই সম্পৃক্ত। চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখতে হবে এবং চাঁদ দেখা গেলে রোজা ছাড়তে হবে ।
এটা দ্বীন ইসলামের বিশেষ
একটি বৈশিষ্ট্য। এ ধরনের বৈশিষ্ট্য ইসলামের সার্বজনীনতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করে, এবং তা
সমগ্র দুনিয়ার সকল মানুষের জন্য এবং সর্ব কালের জন্য প্রজোয্য বলে নির্দেশ করে।
কারণ, বর্তমান
দুনিয়ার মানুষ সাধারণত বস্তুর্নিভর। তাই তারা প্রত্যক্ষ কোন মাধ্যম
বা চাক্ষুষ কোন প্রমাণকে যত তাড়াতাড়ি বা সহজে মেনে নেয় অন্য কিছুকে ততটা মেনে নেয় না ।
ফলে আল্লাহ চাঁদ দেখার
সাথে ইসলামের অনেক ইবাদতকেই সম্পৃক্ত করেছেন।
عن ابن عمر رضي الله عنهما- قال: تراءى الناس
الهلال؛ فأخبرت رسول الله صلي الله عليه و سلم أني رأيـته، فصـامه وأمـر النـاس
بصـيامه رواه أبوداود(2342)
ইবনে ওমর রা.
হতে বর্ণিত : তিনি বলেন,
মানুষ সম্মিলিতভাবে চাঁদ দেখতে লাগল, তাদের
মাঝে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এসে সংবাদ প্রদান করি যে, আমি চাঁদ দেখেছি। এ সংবাদের উপর ভিত্তি করে রাসূল নিজে রোজা রাখেন, এবং
সকলকে রোজা রাখার নির্দেশ দেন। আবু দাউদ : ২৩৪।
ইবনে আব্বাস হতেও এ জাতীয় একটি হাদিসের বর্ণনা পাওয়া যায়, তিনি
বলেন :
جاء أعرابي إلى النبي صلي الله عليه وسلم
فقال: إني رأيت الهلال -يعني رمضان- فقال: أتشهد أن لا إله إلا الله؟. قال: نعم،
قال: أتشهد أن محمداً رسول الله؟، قال: نعم. قال: يا بلال أذِّن في الناس فليصوموا
غدا. رواه أبوداود:2340
এক গ্রাম্য
সজ্জন রাসূল সা.-এর দরবারে এসে আরজ করল : আমি রমজানের চাঁদ দেখেছি।
রাসূল বললেন : তুমি কি সাক্ষ্য প্রদান কর যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই ? লোকটি উত্তর দিল : হ্যা। রাসূল বললেন : তুমি কি সাক্ষ্য প্রদান কর যে, মোহাম্মদ আল্লাহর রাসূল? লোকটি উত্তর দিল: হ্যা। রাসূল অত:পর বেলাল রা.-এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন : হে বেলাল ! মানুষকে জানিয়ে দাও, তারা যেন আগামীকাল রোজা রাখে। আবুদাউদ :২৩৪০
হাদিসটি ইসলাম ধর্মের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরছে ; একজন সমাজকর্মী বা মানব সেবী তার প্রতিটি পদক্ষেপে এর প্রয়োজন উপলব্ধি করে এবং বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়। বিশেষত: যারা সাধারণ মানুষের মাঝে দাওয়াতের কাজ করেন এমন দায়ী ও সংস্কারকদের জন্য বিষয়টি অধিক প্রণিধানযোগ্য।
অর্থাৎ একজন সাধারণ মানুষ তার সততায় যদি কোন প্রকার প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, বুদ্ধি
বা জ্ঞানগত কোন দুর্বলতার ইঙ্গিত যদি না থাকে এবং ব্যক্তিস্বার্থ যদি তার মধ্যে না থাকে তখন তার কথায় বিশ্বাস করা এবং তার কথাকে মূল্যায়ন করা ও তার সংবাদ অনুসারে কোন সংবাদ দেয়া অসঙ্গত নয়। কারণ, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে-যাকে রুকনের মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে-সাধারণ এক গ্রাম্য ব্যক্তির কথা গ্রহণ করেছেন।
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় রমজান মাসের চাঁদ এক ব্যক্তির দেখাই যথেষ্ট। যদি কোন ব্যক্তি চাঁদ দেখার পর যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট এসে সংবাদ দেয় এবং কর্তৃপক্ষ তার সংবাদ যাচাই করার পর যদি তার সংবাদ গ্রহণযোগ্য মনে করে তখন তার সংবাদ দ্বারা রমজানের চাঁদ প্রমাণিত হবে এবং কর্তৃপক্ষ যখন ঘোষণা দেবে তখন জন সাধারণের জন্য রোজা রাখা ওয়াজিব হবে।
কোন কারণে
শাবান মাসের ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা না গেলে বা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় কোথাও হতে নির্ভরযোগ্য কোন সংবাদ পাওয়া না গেলে তখন অবশ্যই ত্রিশ দিন পূরণ করতে হবে এবং ত্রিশ দিন পুরো করার পর রোজা রাখবে।
এ ক্ষেত্রে
পঞ্জিকা অনুসারে বিধা প্রদান ইসলামি শরিয়ত গ্রহণ করে না। কারণ, ইসলাম
মাসের শুরু এবং শেষ নির্ধারণ করেছে চাঁদ দেখা এবং না-দেখার উপর ভিত্তি করে, ক্যালেন্ডারের হিসাবের উপর ভিত্তি করে নয়। সুতরাং যদি কোন দিক হতে চাঁদ দেখার সংবাদ না আসে তখন ত্রিশ দিন পূরণ করবে। রাসূল সা. বলেন -
صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته، وانسكوا لها؛
فإن غم عليكم فأكملوا ثلاثين، فإن شهد شاهدان فصوموا وأفطروا . النسائي:2116
তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ,
চাঁদ দেখেই ভঙ্গ কর। চাঁদ দেখাকে অভ্যাসে পরিণত কর। যদি চাঁদ দেখা না যায়,
তবে ত্রিশ দিন পূরণ কর। যদি দুই ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করে, তবে তোমরা রোজা রাখ,
এবং রোজা ভঙ্গ কর। নাসায়ি : ২১১৬।
الشهر تسع وعشرون ليلة، فلا تصوموا حتى تروه،
فإن غم عليكم فأكملوا العدة ثلاثين. البخاري: 1808
মাস হল ২৯ রাত্রি। তবে, চাঁদ না
দেখে তোমরা রোজা রেখ না। যদি চাঁদ না দেখা যায়, তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ কর। বুখারী
হাদিস নং ১৮০৮
উল্লেখিত হাদিসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় কোন কারণে চাঁদ দেখা না গেলে
অবশ্যই তাকে
ত্রিশদিন পূর্ণ করতে হবে। শরিয়ত বিষয়টিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ
বিশ্লেষণের পর এ
সংক্রান্ত অতি সাবধানতার পদ্ধতি অবলম্বন নিষ্প্রয়োজন।
সুতরাং রাসূল সা. এ বিষয়ে পরিপূর্ণ সমাধান দেয়ার পরও যেন কেউ সন্দেহের দিন রোজা
রাখাকে বুর্জুগী মনে না করে বরং রোজা রাখা হতে বিরত থাকে। কারণ এর মধ্যে কোন প্রকার তাকওয়া বা পরহেজগারী নিহিত নেই বরং তাকওয়া হল রাসূল সা.-এর সুন্নাতের অনুকরণ এবং তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ।
সন্দেহের দিন রোজা রাখার বিধান
উনত্রিশ তারিখে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে যদি আকাশে চাঁদ দেখা না যায় এবং কোথাও থেকে চাঁদ দেখার কোন সংবাদ না আসে, তখন শাবানের ত্রিশ তারিখকে
হাদিসের ভাষায় সন্দেহের দিন বলা হয় । এ দিন রোজা রাখা সম্পর্কে হাদিসে সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সন্দেহের দিনে রোজা পালন করে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বনের ব্যাপারে
নিষেধ করে এরশাদ করেছেন -
لا تصوموا قبل رمضان؛ صوموا للرؤية وأفطروا
للرؤية، فإن حالت دونه غياية فأكملوا ثلاثين. النسائي: 2130
তোমরা রমজান আগমনের পূর্বে রোজা পালন কর না, চাঁদ দেখে রোজা রাখ,এবং চাঁদ
দেখে রোজা ভঙ্গ কর। যদি আআশ মেঘে ঢেকে যায়, তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ কর। নাসায়ি : ২১৩০, হাদিসটি সহিহ। অপর স্থানে এসেছে -
لا تقدموا رمضان بصوم يوم ولا يومين، إلا رجل
كان يصوم صوماً فليصمه. مسلم: 1082
তোমরা একদিন, কিংবা দুইদিন পূর্বে রোজা রেখে রমজান মাসকে এগিয়ে নেবে না, তবে এমন ব্যক্তির জন্য বৈধ,
যে ব্যক্তি ঐ দিনগুলোতে নফল রোজা রাখায় অভ্যস্ত তখন তার জন্য ঐ দিন নফল রোজা রাখা বৈধ। অনেকে অতিরিক্ত সতর্কতা বশত এ দিন রোজা রাখে, যা আদৌ সঠিক নয়। কারণ রোজা শুরু এবং শেষ করাকে নির্ধারণ করেছে চাঁদ দেখা এবং না দেখার উপর। চাঁদ দেখা না গেলে রোজা রাখার কোন প্রয়োজন নাই। আম্মার ইবনে ইয়াসার রা. তাই, বলতেন :
من صام اليوم الذي يشك به الناس فقد عصى أبا
القاسم صلى الله عليه وسلم.الترمذي 686
মানুষের কাছে সংশয়পূর্ণ দিবসে যে ব্যক্তি রোজা পালন করবে, সে
নিশ্চয় আবুল কাছেম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্যতায় লিপ্ত হল।
তিরমিজি : ৬৮৬।
কোন ব্যক্তি চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি এবং তার
নিকট কোন
নির্ভরযোগ্য খবরও পৌঁছেনি এ অবস্থায় সে দোদুল্যমান নিয়ত
নিয়ে রোজা
রাখে-যেমন সে বলল, যদি দিনটি রমজান ভুক্ত হিসেবে
প্রমাণ হয়, তবে আমি
রমজানেরই রোজা হিসেবে তা পালন করলাম অন্যথায় তা নফল রোজা। এ
ধরনের নিয়ত করা
সঠিক নয়, এ রকম করলে তার রোজা হবে না। আর যদি নিয়ত করে-যদি রমজান হয়
তবে তা রমজানের রোজা। অন্যথায় কোন রোজাই নয়-তখন অগ্রগণ্য মতানুসারে তার রোজা সঠিক হবে।
কারণ, নিয়ত
সাধারণত তার জ্ঞানেরই অনুকরন করে। ফলে সে যখন বিশ্বাস করবে আগামি কাল রমজান মাসের শুরু তখন সে রোজার জন্য নিয়ত নির্দিষ্ট করে নিবে। কিন্ত যখন জানতে পারবে যে রমজান নয় তখন সে রোজা ভঙ্গ করে ফেলবে। আর যদি কেউ সে দিন নফল রোজা রাখার নিয়ত করে এবং এদিন নফল রোজা রাখার কোন ধারাবাহিকতা বা অভ্যাস নাই তাহলে তার রোজা হবে না। কারণ, পরস্পর বিরোধী দুটো নিয়্যত একই কাজে কার্যকর হতে পারে না।
ইসলামি শরিয়ত রোজা রাখা এবং ইফতার করার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সে সিদ্ধান্তকে যদি অনুকরণ করা হয় তবে বর্তমানে আমাদের দেশে পঞ্জিকা অনুসারে সৌর বাৎসরিক হিসাব গণনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত নতুন ফিরকা ও তার ফিতনার ভয়াবহতার মুখোমুখি হতে হবে না।
শরিয়ত, সন্দেহাতীতভাবে, তার ভিত
হল : রাসূল সা.হতে প্রমাণিত শরয়ি বর্ণনার প্রশ্নাতীত অনুকরণ, অনুসরণ, ও তা
নির্বিঘ্নে মান্য করা। আর এ ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই শরয়ি নস বিষয়টিকে
সংশ্লিষ্ট করেছে চাঁদ দেখার সাথে, পঞ্জিকার সাথে নয়।
অর্থাৎ যখন চাঁদ দেখা যাবে,
যদিও তা দৃষ্ট হয় নির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ-কেন্দ্র হতে, বা অন্য
কোন উপায়ে তবে, সে অনুসারে আমল করা আবশ্যক হিসেবে গণ্য হবে। কারণ, বিষয়টি
তখন রাসূলের উক্তির ব্যাপকতা -তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ, কিংবা
ভঙ্গ কর-এর আওতাভুক্ত হবে। আর যদি না দেখা যায়, তবে অবশ্যই ত্রিশ দিন পূর্ণ করা ওয়াজিব হবে।
বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে অনেক কিছুই এখন সহজ হয়ে গেছে। এখন যদি কেউ দূরবীনের সাহায্যে চাঁদ অনুসন্ধান করে তবে তা অবশ্যই নিষেধ নয়। তবে এমন নয় যে দুরবীন ছাড়া চলবে না এবং দুরবীন ব্যবহার করা জরুরি। কারণ, হাদিসের বাহ্যিক বর্ণনা দ্বারা আমরা অবগত হই যে, স্বাভাবিক দৃষ্টির উপর নির্ভর
করাই যথেষ্ট। সম্মিলিতভাবে,
চাঁদ দেখা আবশ্যক। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। ইবনে উসাইমিন : মাজমূঊ ফাতাওয়া : খণ্ড : ১৯, পৃষ্ঠা : ৩৬-৩৭
ঈদ ও রমজান জামাতের সাথে পালন করা জরুরি
এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে ইসলাম কখনো ফিরকাবন্দি দলাদলি এবং মতবিরোধকে সমর্থন করে না। ইসলাম ঐক্য ভ্রাতৃত্ব এবং শান্তি শৃঙ্খলাকেই সমর্থন করে এবং এ বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। বিশেষ করে ঈদ, রোজা, কোরবানি, হজ, ইত্যাদির
ক্ষেত্রে ইসলাম অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
বলতে গেলে এ
সকল বিধানের মূল লক্ষ্যই হল মুসলমানদের ঐক্যকে অটুট রাখা এবং তাদের পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় করা ও অনৈক্য দুর করা। সুতরাং কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এ সকল বিষয়ে একক কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত এক মাত্র সরকার বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ। অন্য কেউ তাদেরকে শুধু মাত্র সহযোগিতা করতে পারে। এ বিষয়ে রাসূল সা.বলেন,
الصوم يوم تصومون، والفطر يوم تفطرون،
والأضحى يوم تضحون. الترمذي: 697
অর্থ : যেদিন
সকলে রোজা পালন করবে,
সেদিনই রোজা পালন করতে হবে ; যেদিন সকলের ঈদুল
ফিতর পালন করবে, সেদিন ঈদুল ফিতর পালন করতে হবে । আর যেদিন সকলে কোরবানি
পালন করবে, সেদিনই কোরবানি বা ঈদুল আযহা উদযাপন করবে। (তিরমিজি : ৬৯৭- হাদিসটি সহিহ।)
হাদিসটির ব্যাখ্যা এই যে, রোজা রাখা, ভঙ্গ করা, ঈদ
উদযাপনের ক্ষেত্রে সকলের অনুবর্তী হওয়া এবং অধিকাংশ মানুষের অনুকরণ করাই কাম্য। এ
সকল বিষয়-প্রাধান্যপ্রাপ্ত মতানুসারে-ব্যক্তি বিশেষের প্রভাব বা দ্বারা নির্ধারিত হবে
না।
সুতরাং কেউ একা চাঁদ দেখার পর তা যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করে তখন তার উচিত হল সে বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাবে না বরং চুপচাপ থাকবে। সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিবে এবং অধিকাংশ মানুষ বা জামাতের অনুকরণ করবে। জামাত-চ্যুত হওয়াও, এ ক্ষেত্রে, বৈধ নয়। ব্যক্তি বিশেষ ভিন্ন মতের অধিকারী হলেও, সকলের অনুবর্তী হওয়াই তার জন্য ওয়াজিব।
কোন ব্যক্তি
একাকী রোজা বা ঈদের চাঁদ দেখল, এবং মানুষ তার কথা গ্রহণ করল না-তার
ক্ষেত্রে কীভাবে সমাধান প্রদান করা হবে, এ ব্যাপারে আলেমগণ তিন মতে বিভক্ত হয়েছেন। একদলের মত এই যে, সে রোজা রাখবে, এবং
যেহেতু সে নিজে চাঁদ প্রত্যক্ষ করেছে, তাই গোপনে রোজা ভঙ্গ করবে এবং
ঈদের চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে গোপনে আহার করবে। অপরদলের মত :
রোজা পালন করবে এবং সকলের সাথে সম্মিলিতভাবে পরদিন ঈদ
পালন করবে। তৃতীয় মত হল : সে রোজা রাখবে সম্মিলিতভাবে সকলের সাথে, এবং ঈদও
পালন করবে সকলের সাথে। তৃতীয় মতটি উপরোক্ত হাদিসের আলোকে উত্তম ও
গ্রহণযোগ্য মত। ইবনে তাইমিয়ার মাজমুঊ ফাতাওয়া দৃষ্টব্য। খণ্ড : ২৫, পৃষ্ঠা :
২১৪-২১৮।
ইসলামের দিক নির্দেশনাকে যদি অনুকরণ করা হয় তাহলে কোন প্রকার ফেৎনা-ফাসাদ
সৃষ্টি হয় না
বিশেষভাবে আলেম-ওলামা ইসলামের দায়ী এবং মসজিদের ইমাম ও খতিবগণ যদি চাঁদ দেখার ইসলামি বিধানকে অনুসরণ করেন তাহলে দেশে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা ও মত বিরোধ দেখা দেবে না। পারস্পরিক দন্দ্ব, রেষারেষি দুর হবে সমগ্র পৃথিবীর সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের পারস্পরিক দূরত্ব ও বিরোধ নিরসন করতে সহায়ক হবে।
এ বিষয়েটি
সমাধান করার জন্য যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে তাহল : চাঁদ দেখা এবং এর ঘোষণা দেয়ার বিষয়ে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বে দেয়া যেতে পারে। তারা যখন ইসলামি বিধান অনুযায়ী চাঁদ দেখা সম্পর্কে নিশ্চিত হবে তখন সমগ্র জাতিকে তা অবহিত করবে এবং তাদের দিক নির্দেশনা অনুসারে রোজা বা ঈদ পালিত হবে। আর যখন তারা ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুযায়ী চাঁদ দেখা নিশ্চিত হবে না তখন ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।
বিভিন্ন মতের মাঝে অধিক গ্রহণযোগ্য বক্তব্য অনুসারে এ সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয় যে ভৌগলিক পার্থক্যের কারণে চাঁদ কখনো এক স্থানে দেখা দেয়, অপর
স্থানে দেখা
দেয় না। যদিও অন্যান্য ভূমির সাথে পার্থক্য হয়, তবুই
নির্দিষ্ট ভূমির
অধিবাসীরা তাদের দেখার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করবে। কোন ভূমিতে এক ব্যক্তি যদি চাঁদ দেখে, তবে সকলের উপর রোজা রাখা বা ঈদ
পালন ওয়াজিব হয়ে
যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে কোরআনের বর্ণনা উল্লেখ করা
যেতে পারে।
কোরআনে এসেছে -
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ
الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ
شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ}[البقرة: 185]
অর্থাৎ, রমজান
মাস, যাতে কোরান নাজিল হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়েত ও সত-অসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। তোমাদের মাঝে যে মাস প্রত্যক্ষ করবে, সে যেন
রোজা রাখে।
রাসূল বলেছেন্ততোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ, এবং ভঙ্গ
কর। শরিয়ত প্রণেতার পক্ষ হতে মাসে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি চাঁদ
দেখার সাথে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। তবে, চাঁদ উদিত
হওয়ার স্থান ভূমিগত পার্থক্যের ফলে পৃথক হওয়াই স্বাভাবিক। দ্র : মাজমুঊ ফাতাওয়া ইবনে উসাইমিন : খণ্ড : ১৯, পৃষ্ঠা : ৪৪-৪৭।
আর যদি কোন
কারণে নিজেদের দেশে চাঁদ দেখা নিশ্চিত হতে না পারে তবে তাদের পার্শ্ববর্তী
কোন ইসলামি দেশে চাঁদ দেখা গেলে তাদের অনুকরণে আমল করা শরিয়ত সম্মত।
ফলে তারা যেদিন রোজা রাখবে সেদিন রোজা আর তারা যে দিন ঈদ করবে সেদিন ঈদ রাখা বাঞ্ছনীয়। কারণ যখন কোথাও হতে চাঁদ দেখা না যায়
তখন এ ছাড়া আর কোন করণীয় থাকে না । কিন্তু এক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন হল, এ ধরনের সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যদি কখনো দুর্বল প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেয়-যেমন সৌরবাৎসরিক পঞ্জিকা মতে রোজা রাখা বা ভঙ্গ করার আদেশ জারি করল, তখন আমাদের কি করণীয় ?
তবে এ
ক্ষেত্রে বাহ্যত: তাদের অনুসরণ করাই শ্রেয় ও অগ্রগণ্য। যারা দায়িত্বশীল বা কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। কারণ, প্রকাশ্য
মতবিরোধ এড়িয়ে যাওয়া খুবই জরুরি। হাদিসে এসেছে - الصوم يوم تصومون –অর্থাৎ যেদিন
সকলে রোজা পালন করবে, সেদিনই রোজা। এ হাদিসের উপর ভিত্তি করে উক্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করা যেতে পারে। তাছাড়া, শরিয়ত ও
মানবিক যুক্তির ভিত্তিতে বলা যায়, ইসলামের এ জাতীয় অমৌলিক মাসআলার ব্যাপারে বিরোধ এড়িয়ে ঐক্যের ভিত দৃঢ় করা কল্যাণকর ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ।
মাসের শুরু ও সমাপ্তির ব্যাপারে সংখ্যালঘু কিছু মুসলিম সমাজের মাঝে এ জাতীয় বিরোধ থাকা কোনভাবেই উচিত নয় । কারণ এতে কলহ-বিবাদ-দলাদলি এবং বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয় এবং অমুসলিমদের মাঝে মুসলমানদের প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং তাদের মতামত অর্থহীন হয়।
বিরুদ্ধবাদীদের সাথে কীরূপ আচরণ করা উচিত ?
এতদসত্ত্বেও বিচ্ছিন্ন কোন জামাত বা গোষ্ঠী তাদের হঠকারিতা পরিহার না করে এবং তারা তাদের মতামত অনুসারে বিচ্ছিন্নভাবে রোজা বা ঈদ পালন করে থাকেন তবে তাদের ব্যাপারে করণীয় দুটি :—
এক:-সবাই
এ বিষয়ে অবগত হতে হবে যে চাঁদের মাসআলাটি ইজতেহাদি মাসআলা, যার
মধ্যে মতামত প্রকাশের অবকাশ রয়েছে। কোন অবস্থাতেই মাসআলাটির মতপার্থক্য বা মতবিরোধের সুযোগকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও শত্রুতা সৃষ্টি এবং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বিনষ্টের কারণ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়। শরিয়তের অনুসরণ ও অনুবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে উম্মতের ঐক্য ; সুতরাং সুন্নত আঁকড়ে ধরার নিমিত্তে পারস্পরিক বিভেদ বা অনৈক্য সৃষ্টি হোক তা কীভাবে হতে পারে !
দ্বিতীয়ত:
-সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যারা সংখ্যালঘু, তারা
তাদের নিজেদের মতামতকে গোপন করবে, এড়িয়ে যাবে সকলকে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যারা
সংখ্যাগুরু, আক্ষরিক অর্থে যাদের হাতে নেতৃত্ব, অনর্থক নিজেদের সিদ্ধান্ত পেশ করে তাদের সাথে বিরোধে লিপ্ত হবে না এবং দেশে কোন প্রকার হৈ-চৈ করবে না এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না, তারা তাদের নিজেদের দলভারি করার চেষ্টা করবে না।
দু:খজনক হল, আমরা প্রায়শ: লক্ষ্য করি, অধিকাংশ বিরোধ বা মতবিরোধ, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি
ও জ্ঞানের গভীরতার অভাবেই হয়ে থাকে। প্রতিক্রিয়াশীলতা, যারা নির্দিষ্ট একটি এলাকার পক্ষ-বলয়ের হওয়ার ফলে সে এলাকার অনুবর্তী হয়, তৎপর হয় নিজেদের মতকে সকলের তুলনায় শ্রেয়তর হিসেবে প্রমাণ ও বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে এবং জড়িয়ে পড়ে ভ্রাতৃঘাতী বিরোধে। এভাবে, অনৈতিক উপায়ে তারা নিজেদের মতকে কোন প্রকার প্রামাণ্য ভিত্তির পরোয়া না করে পরিয়ে দেয় শরিয়তের টুপি,
উঁচিয়ে ধরে সকলের মাথার উপর ! আল্লাহর কাছে আমাদের সকাতর প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের দ্বীনের মর্ম উপলব্ধির তওফিক দান করেন, তওফিক দান করেন মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ণ অনুসরণের। মুসলমানদের ঐক্য-সম্প্রীতি-সৌহার্দ্যের জন্য নিরলস কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করেন।
আল্লাহর কাছে যা গচ্ছিত ও রক্ষিত আর পরকাল দিবসে অপেক্ষা করছে যে মহান নেয়ামত-তার প্রত্যাশী হে মোমিন ! ভেবে দেখ একবার নিজের অবস্থা, বিবেচনা
কর তোমার
করণীয়। রমজানের মহান সুযোগ, নিঃসন্দেহ, উম্মতের
জন্য গনিমত স্বরূপ! বৎসরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে যা মানুষের
এবাদতের সচেতন অনুভূতিকে জাগরূক রাখে ; শক্তি দান করে স্মৃতিকে, উদ্যমী
করে তার একান্ত পৃথিবী। এবাদতে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করতে সাহস জোগায়।
অপরদিকে, ইতিবাচক এ বিষয়গুলোর পাশাপাশি, নেতিবাচক নানা অপচিন্তা, কর্ম ও
পাপ হতে মুক্ত রাখে চিন্তা-চেতনা ও ভাবনাকে। চিত্তবৃত্তি, প্রবৃত্তিপুজা, অনর্থক
চাঞ্চল্য-মুক্ত রাখে ইত্যাদি হতে। তাই, রমজান
মাসে, আমরা দেখতে পাই,
মুসলমানদের এবাদতগাহগুলো লোকে লোকারণ্য-আত্মায়, মননে, কর্মে ও
সফেদ চিত্তবৃত্তিতে যারা পরিপূর্ণ মোমিন, পরিশুদ্ধ জাকের, আত্মশুদ্ধির
পরাকাষ্ঠা অতিক্রমকারী আল্লাহ-প্রেমিক। সুতরাং, হে
মুসলিম ভাই ! রমজান পূর্ণ প্রস্তুতি সহ স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হও, সুবর্ণ সময়গুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য নিজেকে গড়ে তোল। সময়গুলো কাজে লাগাবার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে-এসময় আত্মিক, মানসিক ও দেহগত যাবতীয় পাপ হতে কায়মনোবাক্যে তওবা করা,
পবিত্র করা নিজেকে গোনাহের তাবৎ অনুষঙ্গ হতে। এবাদত হুকুম-আহকাম বিষয়ে গভীর উপলব্ধি ও জ্ঞান লাভে সচেষ্ট হওয়া। নির্দিষ্ট কর্মপন্থা ও সূচী তৈরি করে সে অনুসারে সময় ও কর্ম বিন্যাস করে সর্বাত্মক ফায়দা হাসিলে উদ্যোগী হবে।
হে আল্লাহ, আমাদের
কল্যাণ ব্রতী হওয়ার তওফিক দান করুন, আপনার আনুগত্যে উৎসাহী ও আপনার ক্রোধের উদ্রেককারী যাবতীয় বিষয় পরিহারে আমাদের সহায়তা করুন। আমিন।
be Organized by Holy Islam
O.H.I
For More Visit: