Tuesday, July 19, 2011

শাবান মাসের শেষার্ধে রোজা রাখার বিধান


السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

শাবান মাসের শেষার্ধে রোজা রাখার বিধান



প্রশ্ন: শাবান মাসের পনের তারিখের পর নফল রোযা রাখার বিধান কি?  আমি শুনেছি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবানের পনের তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পর নফল রোযা হতে নিষেধ করেছেন
উত্তর:
আবু হুরাইরা রা: হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেক অতিবাহিত হয় তখন তোমরা রোযা রেখোনা।
(আবু দাউদ হাদিস -৩২৩৭, তিরমিযি হাদিস ৭৩৮, ইবনে মাযা হাদিস-১৬৫১)
আল্লামা আলবানী রহ. সহীহ তিরমিযি নামক কিতাবে  হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন
(পৃ: ৫৯০)
হাদিসটি দ্বারা সুপষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, শাবানের পনের দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ১৬ তারিখ থেকে রোযা রাখা নিষিদ্ধ
তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, এ বিষয়ে বিপরীতমূখী হাদিসও বৃদ্ধমান আছে,  যেগুলো রোযা রাখা  জায়েয হওয়াকে প্রমাণ করে
যেমন বোখারি-১৯১৪, মুসলিম-১০৮২ নং হাদিসে বর্ণনা করেন, আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন: তোমরা রমজানের একদিন বা দুইদিন পূর্ব থেকে রোযা রাখা আরম্ভ করে রমজান মাসকে এগিয়ে এনো নাতবে কারো পূর্ব থেকেই ঐ দিনে রোযা রাখার অভ্যাস থাকলে তার বিষয়টি ব্যতিক্রম, তার জন্য রোযা রাখাই উচিত, সে যেন রোযা রাখে
হাদিসটি দ্বারা প্রমাণিত হয় অর্ধ শাবানের পর রোযা রাখতে অভ্যস্ত এমন ব্যক্তির জন্য রোযা রাখা জায়েয আছেযেমন- কোন ব্যক্তির অভ্যাস হলো প্রতি সোমবার অথবা বৃহস্পতিবারে রোযা রাখাঘটনাক্রমে শাবানের ২৯ তারিখ সোমবার অথবা বৃহস্পতিবার, তখন তার জন্য তার অভ্যাসানুযায়ি সেদিন নফল রোযা রাখাতে কোন অসুবিধা নাইঅথবা কোন ব্যক্তি একদিন পরপর রোযা রাখতো তার জন্যও রোযা রাখাতে কোন অসুবিধা নাই
ইমাম বোখারি - ৯৭০ এবং ইমাম মুসলিম ১১৫৬-নং হাদিসে আয়েশা রা.হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণ শাবান মাস রোযা রাখতেনতিনি শাবান মাসে রোযা রাখতেন তবে খুব কম সংখ্যক দিনই রোযা থেকে বিরত থাকতেন
ইমাম নববী বলেন  كَانَ يَصُومُهُ إِلا قَلِيلا  এ বাক্যটি প্রথম বাক্যের ব্যাখ্যা স্বরূc| পুরো শাবান মাস রোযা রাখতেন এ কথা দ্বারা অধিকাংশ সময় রোযা রাখতেন বলাই উদ্দেশ্যঅন্যথায় তিনি একে বারে ধারাবাহিকভাবে পূর্ণ মাস কখনোই রোযা রাখতেন না
হাদিসটি দ্বারা প্রমাণিত হয় অর্ধ শাবানের পরও রোযা রাখা জায়েয আছেতবে শর্ত হলো অর্ধ শাবনের পূর্বের ধারাবাহিকতা বা যোগসূত্রতা থাকতে হবে
ইমাম শাফেয়ী রহ. উল্লেখিত সব হাদিসের উপরই আমল করেন; তিনি বলেন, অর্ধ শাবানের পর রোযা রাখা বৈধ হবে না। তবে যদি কারো রোযা রাখার অভ্যাস থাকে অথবা যোগসুত্র থাকে তাহলে তার বিষয়টি ব্যতিক্রমতার জন্য তার অভ্যাস অনুযায়ী অথবা যোগসুত্রতা ধরে রোযা রাখা বৈধএ মতটি -হাদিসের মধ্যে নিষেধটি হারাম বর্ণনার নিষেধ-শাফেয়ীদের অধিকাংশের মতে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এবং বিশুদ্ধ মত
আবার কারো মতে যেমন - রোয়ানি রহ. - এখানে নিষেধটি হারামের জন্য নয় বরং নিষেধটি মাকরুহের জন্য নির্ধারিত। (আল মাজমু-৬/৩৯৯-৪০০) ফতহুল বারী ৪/১২৯
ইমাম নববী এ অধ্যায়ের আলোচনা করতে গিয়ে রিয়াজুস্‌সালিহীনের পৃ: ৪১২ বলেন,
وذهب جمهور العلماء إلى تضعيف حديث النهي عن الصيام بعد نصف شعبان ، وبناءً عليه قالوا : لا يكره الصيام بعد نصف شعبان .
অর্থাৎ ; জমহুর ওলামার মতে অর্ধ শাবানের পর রোযা রাখা নিষেধ হওয়া সর্ম্পকিত হাদিসগুলো দুর্বলফলে তারা বলেন অর্ধ শাবানের পর রোযা রাখা মাকরুহ নয়
قال الحافظ : وَقَالَ جُمْهُورُ الْعُلَمَاءِ : يَجُوزُ الصَّوْمُ تَطَوُّعًا بَعْدَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَضَعَّفُوا الْحَدِيثَ الْوَارِدَ فِيهِ, وَقَالَ أَحْمَدُ وَابْنُ مَعِينٍ إِنَّهُ مُنْكَرٌ اهـ من فتح الباري . وممن ضعفه كذلك البيهقي والطحاوي .
হাফেজ রহ. বলেন,  জমহুরে ওলামাদের মতে অর্ধ শাবানের পর নফল রোযা রাখা জায়েয আছেআর নিষেধাজ্ঞা m‡¤^vwjZ হাদিসগুলোকে তারা দূর্বল হাদিস বলে আখ্যায়িত করেনআহমাদ বিন nv¤^j এবং ইবনে মুঈন রহ. উভয়ে বলেন এ সব হাদিস মুনকার ... ফতহুল বারী হতে সংগৃহীতএ ছাড়া ইমাম বাইহাকী রহ. এবং ইমাম তাহাবী রহ. ও হাদিস গুলোকে দূর্বল বলে সাব্যস্ত করেন
আল্লামা ইবনে কুদামাহ রহ. বলেন, হাদিসটি সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেন,
হাদিসটি সমালোচনা মুক্ত নয়আমরা আব্দুর রহমান বিন মাহদির নিকট প্রশ্ন করলে তিনি হাদিসটিকে সহীহ আখ্যা দেননি এবং তার থেকে তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোন হাদিস বর্ণনা করেননিআর ইমাম আহমাদ বলেন আলা রহ. একজন নির্ভর যোগ্য বর্ণনাকারি তার থেকে বর্ণিত এ একটি হাদিসকেই প্রত্যাখান করা যেতে পারে
আলা হলো আব্দুর রহমানের ছেলে সে হাদিসটি তার পিতা হতে এবং তার পিতা আবু হুরাইরা রা. হতে হাদিসটি বর্ণনা করেন
ইবনুল কাইয়ুম রহ. তাহজিবুসসুনান কিতাবে যারা হাদিসটিকে দূর্বল বলেছেন তাদের কথার উত্তর দিয়েছেনতার উত্তরের সারাংশ নিম্নরুপ:
মুলত: ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ি হাদিসটি সহীহআলা রহ. বর্ণনাকারির একা (তাফাররুদ) দ্বারা হাদিসটি সম্পর্কে কোন মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়কারণ, তিনি একজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারিইমাম মুসলিম তার মুসলিম শরিফ কিতাবে -আলা তার পিতা হতে এবং তার পিতা আবুহুরাইরা হতে- এ সনদে অনেক হাদিস বর্ণণা করেছেনসুতরাং আলা রহ. এর তাফাররুদ কোন দোষনীয় বিষয় নয়
এ ছাড়াও অনেক হাদিস এ রকম পাওয়া যায় যে, নির্ভর যোগ্য বর্ণনাকারি এখানে একাতা সত্ত্বেও উম্মাত এ ধরনের  হাদিসকে গ্রহণ করেছে এবং তদনুযায়ি আমল করে আসছেনসুতরাং, হাদিসটি অগ্রাহ্য হওয়ার মত যৌক্তিক কোন কারণ বিদ্যমান না থাকায় গ্রহণ করাই হলো ইনসাফ। 
অত:পর তিনি বলেন, তবে এ ক্ষেত্রে দুই ধরনের হাদিস পাওয়া যাওয়ায় দ্ধন্ধের যে অবকাশ দেখা দিয়েছে মূলত; এখানে কোন দ্ধন্ধই নাইকারণ, যে সব হাদিসে রোযা রাখার কথা এসেছে এসব হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যে ব্যাক্তি রোযা রাখতে অভ্যস্ত অথবা পূর্বের যোগসুত্র ধরে রোযা রাখেন তাকেই বোঝানো হয়েছেঅর্থাৎ তার জন্য অর্ধ শাবানের পরে এ ধরনের রোযা রাখাতে কোন অসুবিধা নাইআর আলা বর্ণনা কারির হাদিসে যে নিষেধ পাওয়া যাচ্ছে, তা হলো ঐ ব্যাক্তির ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি নতুনভাবে রোযা রাখা আরম্ভ করে এবং তার পূর্ব রোযা রাখার কোন যোগসুত্রও নাই। ...
বিন বায রহ.কে অর্ধ শাবানের পর রোযা রাখা নিষেধ m¤^vwjZ হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, হাদিস সহীহ যেমনটি আল্লামা নাসের উদ্দিন আল আলবানি বলেছেনআর হাদিসের উদ্দেশ্য হলো অর্ধ শাবানের পর নতুনভাবে রোযা রাখতে আরম্ভ করাতবে যদি কেউ অধিকাংশ মাস রোযা রাখে অথবা পুরো মাস রোযা রাখে সে অবশ্যই সুন্নাতের অনুসারি বলে গণ্য হবেমাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া শেখ বিন বাজ-১৫/৩৪৯
শেখ ইবনে উসাইমিন রহ. রিয়াদুস্‌সালেহীন কিতাবের ব্যাখায় লিখেন, এমনকি যদি ধরে নেয়া হয় যে হাদিসটি সহীহ তবে হাদিসের নিষেধটি হারামের জন্য নয় বরং এখানে নিষেধটি শুধু মাকরুহ বুঝানোর জন্য অধিকাংশ আহলে ইলম এ মতটিকেই গ্রহণ করেছেনকিন্তু যদি কেউ রোযা রাখতে অভ্যস্ত তবে তার জন্য অর্ধ শাবানের পর রোযা রাখা মাকরুহ হবে না। 
উত্তরের সারাংশ: মোট কথা শাবান মাসের দ্বিতীয়র্ধে রোযা রাখা নিষেধযদি কেউ রোযা রাখে তবে তার রোযা হয়তো মাকরুহ হবে অথবা কারো মতে হারাম হবেএকমাত্র যে ব্যক্তি রোযা রাখতে পূর্ব থেকে অভ্যস্ত অথবা যার পূর্ব থেকে যোগসূত্র আছে,তার রোযা মাকরুহ বা হারাম হবে নাআল্লাহই সর্ব জ্ঞাত
এখানে নিষেধের হিকমত হল, লাগাতার রোযা রাখার দ্বারায় হয়তবা রমজানের রোযা রাখতে দূর্বল হয়ে যাবে, ফলে তার রমজানের রোজা রাখা ব্যাহত হবে
যদি বলা হয়, অনেক সময় এমন হয়, মাসের শুরুতে রোযা রাখার কারণে সে বেশি দূর্বল হয়ে যাওব তখন কি করা যাবে ?
উত্তরে বলা হবে, যে ব্যাক্তি শুরু থেকে রোযা রাখে সে রোযা রাখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে ফলে তার জন্য রোযা রাখতে কষ্ট কম হবে
মোল্লা আলী কারী বলেন, এখানে নিষেধটা মাকরুহে তানজিহিএতেই উম্মাতের জন্য অনুগ্রহ যাতে  সে রমজানের রোযা রাখতে র্দূবল হয়ে না যায়এবং ¯^v”Q‡›` রমজানের রোযা রাখতে পারেআর যে শাবানের পুরো রোযা রাখবে সে রমজানের রোজা রাখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে এবং তার থেকে কষ্ট দুর হয়ে যাবেআল্লাহই ভালো জানেন


be Organized by Holy Islam 
O.H.I 

For More Visit: