দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
শাবান মাস : বিবিধ আলোকপাত
শাবান হিজরী সালের অষ্টম মাসের নাম। এই নামকরণের কতিপয় কারণ পাওয়া যায়। যথা :
১। এ মাসে আরবরা দলবদ্ধ হয়ে পানির অনুসন্ধানে ছড়িয়ে পড়ত।
২ । যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য দলবদ্ধ হত।
শাবান মাসে রোযা পালন
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে এতো বেশি পরিমাণে রোযা পালন করতেন যে, আমাদের মনে হত, তিনি রোযা ত্যাগ করবেন না। আবার যখন রোযা ত্যাগ করতেন, আমাদের মনে হত, এবার আর রোযা পালন করবেন না। এবং আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে পরিপূর্ণ রোযা পালন করতে দেখিনি ; এবং শাবান মাসের মত এতো বেশি পরিমানে রোযা অন্য কোন মাসে পালন করতে দেখিনি। (বুখারী : ১৮৩৩, মুসলিম : ১৯৫৬)
ওলামায়ে কিরামের একটি দল, যাদের মাঝে আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারকও রয়েছেন, প্রাধান্য দিয়েছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে পরিপূর্ণ মাস রোযা পালন করেন নি। তবে অধিকাংশ সময় রোজা পালন করেছেন। এ পক্ষের জোড়ালো প্রমাণ পাওয়া যায়—
আয়েশা (রা.) -এর বর্ণনা থেকে জানা যায়, তিনি বলেন—আমার জানা মতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযান ছাড়া অন্য কোন মাসে পুরো মাস রোযা পালন করেন নি। (মুসলিম)
আয়েশা (রা.) হতে অপর একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে -
মদিনায় গমন করার পর রমযান ছাড়া অন্য কোন মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পুরো মাস রোযা পালন করতে আমি দেখিনি।
ছহীহ বুখারী এবং মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন—রমযান ছাড়া অন্য কোন মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো মাস রোযা রাখেন নি। বুখারী : ১৯৭১, মুসলিম : ১১৫৭
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস স্বয়ং রমযান ব্যতীত অন্য কোন মাসে পুরো মাস রোযা পালনকে অপছন্দ করতেন।
ইবনে হাজার (রহ.) বলেন—শাবান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর রোযা পালন ছিল নফল স্বরূপ। তবে, অন্যান্য মাস হতে এ মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোযা পালন করতেন।
উসামা বিন যায়েদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! শাবান মাসে আপনি অধিকহারে রোযা পালন করেন ; অন্য কোন মাসে তো এরূপ দেখি না ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন : শাবান, রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী মাস, এ মাসের ফযিলতকে মানুষ উপেক্ষা করে। এই মাসে বিশ্ব প্রতিপালকের কাছে আমল পেশ করা হয়। আর আমি পছন্দ করি যে, রোযা পালনাবস্থায় আমার আমল পেশ করা হোক। (নাসায়ী, ছাহীহ তারগীব তারহীব পৃষ্ঠা ৪২৫)
সূনানে আবু দাউদের এক বর্ণনায় এসেছে, শাবান মাসে রোযা রাখা এবং রমযানের সাথে মিলিয়ে নেয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অত্যন্ত প্রিয় ছিল। (ছহীহ সুনানে আবু দাউদ ৪৬১/২)
আল্লামা ইবনু রাজাব র. বলেন : শাবান মাসে রোযা পালন আসহুরুল হুরুমের— নিষিদ্ধ পবিত্র মাস—চেয়েও শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম নফল হল রমযান মাসের নিকটবর্তী দিবসের রোযা। আগে হোক কিংবা পরে। ফরয রোযার তুলনায় এ সকল রোযার স্থান ফরজ নামাযের আগে-পরে সুনড়বাতে মুয়াক্কাদাহর অনুরূপ। এগুলো ফরয সমূহের অসম্পূর্ণতাকে পরিপূর্ণতা দান করে। রমযানের আগে-পরে নফল রোযার কাজও তাই। সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ যেমন অন্যান্য সাধারণ নফল হতে শ্রেষ্ঠ তেমনিভাবে রমযান মাসের আগে-পরের রোযা অন্য সময়ের নফল রোযা হতে শ্রেষ্ঠ। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী :
শাবান মাস রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী হওয়ার কারণে মানুষ এ মাস সম্পর্কে উদাসীন থাকে। এ মাসের ফযিলতকে মানুষ উপেক্ষা করে, মাসটি রাজাব ও রমযানের মধ্যবর্তী মাস হওয়ার ফলে—এর মাধ্যমে মূলত বুঝানো হচ্ছে, শাবান মাসকে যেহেতু দুটি সম্মানিত মাস বেষ্টন করেছে, সে জন্য মানুষ ঐ দুই মাসের আমলে ব্যস্ত হয়ে শাবান মাসকে অবহেলা করে। পক্ষান্তরে, অনেক মানুষ মনে করে, শাবান মাসের রোযার তুলনায় রজব মাসের রোযার মর্যাদা অধিক। কারণ, রজব হচ্ছে নিষিদ্ধমাস। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি এমন নয়।
পূর্বের হাদীস থেকে আমরা আরো বুঝতে পারি, কতিপয় স্থান, সময়, এবং ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, প্রসিদ্ধ হলেও, এর বাইরেও শ্রেষ্ঠ বিষয় থাকতে পারে। এতে আরো প্রমাণ করে, মানুষ যে সব সময়ের ব্যাপারে উদাসীন ঐ সব সময়কে এবাদতের মাধ্যমে কাজে লাগানো পছন্দনীয়। যেমন, সালাফেসালেহীনের একটি জামাত মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে আমল করা খুব পছন্দ করতেন এবং তারা বলতেন, এ সময়টি মানুষের কাছে উপেক্ষিত। এমনিভাবে, বাজারে আল্লাহকে স্মরণ করা। কারণ, সেখানে মানুষ আল্লাহর যিকির হতে উদাসীন থাকে।
উদাসীন সময়গুলোতে আল্লাহর বন্দেগীর মাঝে অনেক উপকার রয়েছে। তন্মধ্যে—
(১) নেক কাজে গোপনীয়তা রক্ষা। নফল ইবাদতে গোপনীয়তা উত্তম, বিশেষত: রোযার ক্ষেত্রে। কারণ, এ হচ্ছে আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে গোপন বিষয়। এজন্য বলা হয়: রোযা পালনে লৌকিকতা প্রকাশ পায় না। কতিপয় সালাফে সালেহীন বছরের পর বছর রোযা পালন করতেন, অথচ কেউ জানতো না। বাড়ি হতে বাজারের উদ্দেশ্যে বের হতেন, হাতে দু’টুকরা রুটি—পথে তা দান করে দিতেন এবং রোযা পালন করতেন। পরিবারের লোক মনে করত তিনি খেয়েছেন। আর বাজারের লোক মনে করত তিনি বাড়িতে খাবার গ্রহণ করে এসেছেন। সালাফে সালেহীনের আরো পছন্দ ছিল যে, রোযাদার ব্যক্তি তার গোপন বিষয় প্রকাশ না করুক।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রোযার দিবসে তোমাদের ভোর যেন শরীরে তৈল মর্দনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। কাতাদাহ বলেন: রোযাদার ব্যক্তির পছন্দনীয় কাজ হল, সে তার শরীরে তৈল মালিশ করবে যাতে রোযার কারণে সৃষ্ট মলিনতা দূর হয়ে যায়।
এমনিভাবে অবহেলিত বা অমনোযোগী অলস সময়ে নেককাজ নিজের কাছে কষ্টকর মনে হয়। আর আমল শ্রেষ্ঠ হওয়ার কারণগুলোর মাঝে একটি হল অনিচ্ছা সত্ত্বেও নেক কাজ করা।
মাকাল বিন ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
কষ্টের মাঝে ইবাদত আমার নিকট হিজরতের সমতুল্য। মুসলিম : ২৯৮৪।
কারণ, তখন মানুষ প্রবৃত্তির পুজায় লিপ্ত থাকে। ঐ সময় নেক আমলের সাথে সম্পৃক্ত থাকা মানেই হচ্ছে সে একটি কঠিন কাজ সম্পাদন করছে।
শাবান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর অধিক পরিমাণ রোযা পালনের কারণ সম্পর্কে বিদ্বানদের বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়।
(১) সফর ও অন্যান্য ব্যস্ততায় প্রতি মাসের তিনটি নফল রোযা পালনে বিঘ্ন সৃষ্টি হত। তাই ঐ সব রোযা শাবান মাসে কাযা করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন নফল শুরু করলে তা পূর্ণ করতেন। কোন কারণে ছুটে গেলে পরে কাযা করতেন।
(২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণ রমযানের রোযা শাবানে কাযা করতেন। এ জন্য তিনিও তাদের সাথে নফল রোযা পালন করতেন।
বর্ণনা আয়েশা (রা.) থেকে পাওয়া যায়, তিনি বলেন : তিনি রমযানের রোযার কাযা শাবান মাস পর্যন্ত বিলম্ব করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় অন্য সময় তা সম্ভব হয়ে উঠত না।
(৩) সাধারণত মানুষ এ মাসের ফযিলত সম্পর্কে উদাসীন থাকে, তাই তাদের শিক্ষাদানের নিমিত্তে রোযা পালন করতেন। এ মতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কারণ, এ মতের পক্ষে উসামা বিন যায়েদের পূর্বে উলে−খিত হাদিসের সমর্থন পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়েছে : এটা ঐ মাস যা সম্পর্কে মানুষ উদাসীন থাকে, রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী মাস। নাসায়ী, ছহীহ তারগীব তারহীব পৃষ্ঠা : ৪২৫
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন শাবান মাস আসত তখন থেকে যাওয়া নফল রোযাগুলো আদায় করতেন, যাতে রমযান মাস আসার পূর্বেই নফল রোযাগুলো পরিপূর্ণ হয়। যেমনটি তিনি নফল নামায ও কিয়ামুল লাইল কারণ বশতঃ ছুটে গেলে কাযা করতেন। আয়েশা রা. এ সুযোগ ব্যবহার করে ঋতুস্রাবের কারণে রমযান মাসের যে সব রোযা বাদ যেত তা কাযা করতেন। অন্য সময় রাসূলের সাথে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন বলে সম্ভব হতো না।
অতএব, যাদের উপর অতীত রমযান মাসের রোযা বাকী আছে তার কাযা আদায়ের ব্যাপারে সতর্ক করা, সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। যে ব্যক্তি রমযান মাসের পূর্বে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কাযা আদায় করে নি, সে তাওবাহসহ কাযা আদায় করবে এবং প্রত্যেক দিনের জন্য একজন করে মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করবে। এটা ইমাম মালেক, ইমাম শাফী, ইমাম আহমদ রহ.-এর মত।
এমনিভাবে, শাবানে রোযা রাখা দ্বারা অন্য উপকারও আছে। তাহল, শাবানে রোযা পালনের মাধ্যমে রমযান মাসের রোযা পালনের অনুশীলন হয়। এতে রমযান মাসে রোযা পালনে কষ্ট অনুভব হয় না। বরং, এর মাধ্যমে রোযা রাখার অনুশীলন ও অভ্যাস সৃষ্টি হয়। ফলে রমযান মাসে রোযা পালনে উৎসাহ ও আনন্দ বৃদ্ধি পায়। শাবান যেহেতু রমযানের ভূমিকা, তাই রমযানের কতিপয় কাজ এ মাসেও করা যায়—রোযা পালন, কোরআন তিলাওয়াত, দান-ছদকা ইত্যাদি। সালমা বিন সোহাইল বলতেন—শাবান তিলাওয়াতকারীদের মাস। হাবীব বিন আবু সাবেত শাবান মাস সমাগত হলে বলতেন : এটা তিলাওয়াতকারীদের মাস। আমর বিন কায়েস আল মুলায়ী শাবান মাসে দোকান বন্ধ রাখতেন এবং কোরান তিলাওয়াতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করতেন।
শাবানের শেষ দিকে রোযাপালন
ইমরান বিন হোসাইন থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন : এই মাসের শেষ দিকে কি কোন রোযা পালন করেছ ? সে বলল, না। উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : যদি রোযা ভঙ্গ করে থাক তাহলে অন্তত দুই দিন রোযা পালন কর। বুখারী, মুসলিম।
বোখারির বর্ণনায় এসেছে, বর্ণনাকারী বলেন: আমার ধারণা এতে রমযান মাস উদ্দেশ্য ছিল।
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে তুমি কি শাবানের শেষ অংশে কোন রোযা পালন করেছ ? বুখারী-২০০/৪, মুসলিম-১১৬১
سرار সারার শব্দের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। প্রসিদ্ধ মত হলো মাসের শেষাংশকে সারার বলা হয়। মাসের শেষাংশে চাঁদ গোপন থাকায় আরব গণ মাসের শেষ অংশকে سرار বলতো। কারো আবু হুরায়রা রা. এর নিমড়ব বর্ণিত হাদিসে প্রশ্ন জাগতে পারে-
অর্থ- আবু হুরায়রা ( রা.) বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন রমযানের এক বা দুই দিন পূর্বে রোযা পালন শুরু করো না। তবে যে আগে থেকেই ঐ দিন রোযা রাখে (কাকতালীয়ভাবে ঐ দিন যদি রমযানের পূর্ব দিন হয়) তবে কোন অসুবিধা নেই। বুখারী- ১৯৮৩, মুসলিম- ১০৪৮২।
উভয় হাদিসের মাঝে কি ভাবে সমন্বয় করা হবে ?
বেশিরভাগ হাদিস বিশারদ বলেছেন- যে ব্যক্তিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি জানতেন এ ব্যক্তির অভ্যাস ছিল এ দিনগুলোতে রোযা পালন করার অথবা তার মানত ছিল তাই রোযা পালন করতে বলেছেন।
এ মাসয়ালার বিষয় বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। সংক্ষেপে বলা যায় শাবান মাসের শেষের দিন রোযা পালনের তিন অবস্থা-
(১) সতর্কতা মূলক রমযানের নিয়তে শাবানের শেষ দিন রোযা রাখা হারাম।
(২) মানতের নিয়তে অথবা রমযানের কাযা অথবা কাফ্ফারার রোযা পালন জামহুর ওলামা জায়েয বলেছেন।
(৩) সাধারণ নফল নিয়তে রোযা পালন অপছন্দনীয়। এটা ঐ সকল বিদ্বানদের মত,
যারা বলেছেন শাবান ও রমযানের মাঝে রোযা না রেখে খাবার গ্রহণের মাধ্যমে প্রার্থক্য করার জন্য। যদিও এ তারিখে রোযা পালন তার পূর্ব অভ্যাসের সাথে মিলে যায়। এমতের পক্ষে ইমাম হাসান রহ. রয়েছেন। ইমাম মালেক ও তার অনুসারীগণ অনুমতি দিয়েছেন এবং ইমাম শাফেয়ী আওযায়ী আহমদ প্রমুখ পূর্ব অভ্যাসগত হলে জায়েয বলেছেন। অন্যথায় নয়।
সংক্ষেপে বলা যায়, আবু হুরায়রার হাদীসের উপর অনেক আলেমই আমল করেন, এবং যার পূর্ব থেকে অভ্যাস নেই, সে রমযানের এক দুই দিন পূর্বে সতর্কতামূলক রোযা পালন করাকে তারা অপছন্দ করেন। কারো প্রশড়ব জাগতে পারে যাদের অভ্যাস নেই তাদের জন্য কেন নিষেধ করা হলো ?
উত্তর—(১) যাতে রমযানের রোযার সংখ্যা বৃদ্ধি না হয়। এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সন্দেহের দিন রোযা পালন করতে নিষেধ করেছেন এবং রোযা পালনকারীকে তার অবাধ্য বলে ঘোষনা করেছেন। সন্দেহের দিন কাকে বলা হয় ?
(ক) ঐ দিনকে, যাকে মানুষ সন্দেহ করে রমযান না কি শাবানের দিন।
(খ) যে ব্যক্তি সংবাদ দিয়েছে সে চাঁদ দেখেছে কিন্তু মানুষ তার কথা গ্রহণ করে নি, তার জন্য সন্দেহের দিন।
(গ) মেঘলা দিনকে অনেকে সন্দেহের দিন বলেছেন এবং রোযা পালনে নিষেধ করেছেন। এটা বেশীর ভাগ বিদ্বানদের মত।
(২) ফরজ ও নফল রোযার মাঝে পৃ ক করার জন্য। ফরজ ও নফলের মধ্যে পার্থক্য করা শরীয়তসম্মত। এজন্য ঈদের দিন রোযা পালন হারাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ নামাযকে অন্য কোন নামাযের সাথে মিশ্রণ করতে নিষেধ করেছেন। সালাম অথবা কথার মাধ্যমে পর্থক্য করতে বলেছেন। বিশেষত ফজরের পূর্বেকার সুন্নাত। এ জন্য ফজরের সুন্নাত ঘরে পড়া এবং আদায়ের পরে কিছুক্ষণ শয়ন করা বৈধ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখলেন এক ব্যক্তি নামায পড়ছে। এ দিকে ফজর নামাযের ইকামত হচ্ছে। রাসূল বললেন : ফজর কি চার রাকাত ? বুখারী-৬৬৩
অনেক অজ্ঞ লোক মনে করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানের পূর্বে রোযা রাখার নিষিদ্ধের আদেশ দ্বারা উদ্দেশ্য খাবার গ্রহণের জন্য সুযোগ দান। যাতে রমযান এসে খাবার গ্রহণের পথ বন্ধ করার পূর্বে আত্মা তার চাহিদা পুরণ করতে পারে। যারা এটা ধারণা করে, তাদের ধারণা ভুল।
আল্লাহ ভালো জানেন।
লেখক : কামাল উদ্দিন মোল্লা
সম্পাদনা : আব্দুলাহ শহীদ আব্দুর রহমান
be Organized by Holy Islam
O.H.I
For More Visit: