দুটি ফজর রয়েছে, একটিতে খাদ্যগ্রহণ হারাম এবং সালাত (ফজরের) জায়েজ আরেকটিতে সালাত (ফজরের) হারাম এবং খাদ্যগ্রহণ জায়েজ।
(Narrated by al-Haakim and al-Bayhaqi from the hadeeth of Ibn ‘Abbaas; classed as saheeh by al-Albaani in Saheeh al-Jaami’, 4279).
দুটি ফজর রয়েছে, একটিতে ফজর হল শিয়ালের লেজের ন্যায়, যা সালাত (ফজরের) আদায়কে না জায়েজ ও খাদ্যগ্রহণকে হালাল করে। আরেকটিতে ফজর দিগন্তে অনুভূমিক ভাবে প্রসারিত হয় যা সালাতকে (ফজরের) জায়েজ এবং খাদ্যগ্রহণকে হারাম করে ।
(Narrated by al-Haakim and al-Bayhaqi from the hadeeth of Jaabir; classed as saheeh by al-Albaani in Saheeh al-Jaami’, 4278)
দুটি ফজর রয়েছে, একটিকে বলা হয় শিয়ালের লেজের ন্যায়, যা মিথ্যা ফজর যে খাড়াভাবে আগমন করে,অনুভূমিকভাবে নয়। আরেকটিতে অনুভূমিকভাবে আগমন করে, খাড়াভাবে নয়।
(Classed as saheeh by al-Albaani in al-Silsilah al-Saheehah, no. 2202).
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে. এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের
দিন সাওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে; তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে
পারবে না;
ঘোষণা দেয়া হবে,সাওম পালনকারীরা কোথায়?
তখন তারা দাঁড়াবে;
তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না;
রমযান মাস, এ মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানব জাতির জন্যপুরোপুরি হিদায়াত এবং দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত,যা সত্য-সঠিক পথ
দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুষ্পষ্ট করে দেয়;কাজেই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাসের
সাক্ষাত পাবে তার জন্য এই সম্পূর্ণ মাসটিতে রোযা রাখাঅপরিহার্য এবং যে ব্যক্তি রোগগ্রস্থ হয় বা সফরে থাকে, সে যেন অন্য
দিনগুলোর রোযার সংখ্যা পূর্ণ করে;আল্লাহ তোমাদের
সাথে নরম নীতি অবলম্বন করতে চান, কঠোর নীতি অবলম্বন করতে চান না;তাই তোমাদের এই পদ্ধতি জানানো হচ্ছে, যাতে তোমার রোযার
সংখ্যা পূর্ণ করতে পার এবংআল্লাহ তোমাদের
যে হিদায়াত দান করেছেন সে জন্য যেন তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে ও তার
স্বীকৃতি দিতে এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার.
আল্লাহ তা’আলা যখন সকল মাখলুককে সৃষ্টি করলেন তখন তিনি তাঁর নিকটে আরশে রক্ষিত কিতাবে
লিখলেনঃ আমার রাহমাত আমার গজবের উপর সর্বদাই বিজয়ী, আল্লাহ তা’আলা নিজের সম্পর্কে নিজেই লিখে থাকেন।
১০২) সে পুত্র যখন তার সাথে কাজকর্ম করার বয়সে পৌঁছুলো তখন (একদিন
ইবরাহীম তাকে বললো,“ হে
পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি তোমাকে আমি যাবেহ করছি,এখন তুমি বল তুমি কি মনে কর?” সে বললো,“ হে
আব্বাজান! আপনাকে যা হুকুম দেয়া হচ্ছে তা করে ফেলুন, আপনি আমাকে ইনশাআল্লাহ
সবরকারীই
১০৩) শেষ
পর্যন্ত যখন এরা দু’জন
আনুগত্যের শির নত করে দিল এবং ইবরাহীম পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিল৷
১০৪) এবং
আমি আওয়াজ দিলাম,“ হে
ইবরাহীম!
১০৫) তুমি
স্বপ্নকে সত্য করে দেখিয়ে দিয়েছো৷আমি সৎকর্মকারীদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি৷
১০৬)
নিশ্চিতভাবেই এটি ছিল একটি প্রকাশ পরীক্ষা৷”
১০৭) একটি
বড় কুরবানীর বিনিময়ে আমি এ শিশুটিকে ছাড়িয়ে নিলাম
১০৮) এবং
পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে চিরকালের জন্য তার প্রশংসা রেখে দিলাম৷
১০৯)
শান্তি বর্ষিত হোক ইবরাহীমের প্রতি৷
১১০) আমি
সৎকর্মকারীদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি৷
১১১)
নিশ্চিতভাবেই সে ছিল আমার মুসলিম বান্দাদের অন্তরভুক্ত৷
১১২) আর
আমি তাকে ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম, সে ছিল সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে একজন নবী৷
১১৩) বরকত দিলাম তাকে ও ইসহাককে,এখন এ দু’জনের বংশধরদের মধ্য থেকে কতক সৎকর্মকারী আবার কতক নিজেদের প্রতি
সুস্পষ্ট জুলুমকারী৷
সুরা সাফ-ফাতঃ ১০২-১১৩
ব্যাখ্যাঃ
এখানে এসে আমাদের সামনে এ প্রশ্ন দেখা
দেয় যে , হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর যে পুত্রকে কুরবানী করতে উদ্যত হয়েছিলেন
এবং যিনি স্বতর্ষ্ফূভাবে নিজেকে এ কুরবানীর জন্য পেশ করে দিয়েছিলেন তিনি কে ছিলেন
? সর্বপ্রথম এ প্রশ্নের জবাব আমাদের সামনে আসছে বাইবেল থেকেঃ
" ঈশ্বর ইব্রাহীমের
পরীক্ষা করিলেন৷ তিনি তাঁহাকে কহিলেন , হে ইব্রাহিম .................... তুমি আপন
পুত্রকে , তোমার অদ্বিতীয় পুত্রকে , যাহাকে তুমি ভালবাস , সেই ইসহাককে লইয়া মোরিয়া
দেশে যাও এবং তথাকার যে এক পর্বতের কথা আমি তোমাকে বলিব , তাহার উপর তাহাকে
হোমার্থে বলিদান কর৷ " (আদিপুস্তক ২২: ১- ২ )
এ বর্ণনায় একদিকে বলা
হচ্ছে , আল্লাহ হযরত ইসহাকের কুরবানী চেয়েছিলেন আবার অন্যদিকে একথা বলা হচ্ছে ,
তিনি একমাত্র পুত্র ছিলেন ৷ অথচ বাইবেলের নিজেরই অন্যান্য বর্ণনা থেকে চূড়ান্তভাবে
প্রমাণ হয় যে , হযরত ইসহাক একমাত্র পুত্র ছিলেন না৷ তাই বাইবেলের নিম্নোক্ত
বিস্তারিত বক্তব্যটি একবার দেখুনঃ
" আব্রামের স্ত্রী
সারী নিঃসন্তান ছিলেন, এবং হাগার নামে তার এক মিস্রীয় দাসী ছিল৷ তাহতে সারী
আব্রামকে কহিলেন দেখ সদাপ্রভূ আমাকে সন্ধ্যা করিয়াছেন , বিনয় করি , তুমি আমার
দাসীর কাছে গমন কর , কি জানি ইহা দ্বারা আমি পুত্রবতী হইতে পারিব৷ তখন আব্রাম
সারীর বাক্যে সম্মত হইলেন ৷ এইরূপে কানান দেশে আব্রাম দশ বৎসর বাস করিলে পর
আব্রামের স্ত্রী সারী আপন দাসী মিস্রীয় হাগারকে লইয়া আপন স্বামী আব্রামের সহিত
বিবাহ দিলেন৷ পরে আব্রাম হাগারের কাছে গমন করিলে সে গর্ভবতী হইল৷ " (আদি
পুস্তক ১৬: ১-৪ )
"সদাপ্রভূর দতূ
তাহাকে আরও কহিলেন , দেখ , তোমার গর্ভ হইয়াছে , তুমি পুত্র প্রসব করিবে , ও তাহার
নাম ইশ্মায়েল [ ঈশ্বর শুনেন ] রাখিবে৷" (আদিপুস্তক ১৬: ১১ )
" আর ঈশ্বর
আব্রাহামকে কহিলেন ,তুমি তোমার স্ত্রী সারীকে আর সারী বলিয়া ডাকিওনা, তাহার নাম
সারা [রানী ] হইল .............. তাহা হইতে এক পুত্রও তোমাকে দিব ; ..............
তুমি তাহার নাম ইস্হাক [হাস্য ] রাখিবে ,............ আগামী বৎসরের এই ঋতুতে সারা
তোমার নিমিত্তে যাহাকে প্রসব করিবে , ........... পরে আব্রাহাম আপনপুত্র
ইশ্মায়েলকে ও ............... গৃহে যত পুরুষ ছিল , সেই সকলকে লইয়া ঈশ্বরের
আজ্ঞানুসারে সেই তাহাদের লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন করিলেন৷ আব্রাহামের লিঙ্গাগ্রের ত্বক
ছেদন কালে তাঁহার বয়স নিরানব্বই বৎসর ৷ আর তাঁহার পুত্র ইশ্মায়েলের লিঙ্গাগ্রের
ত্বক ছেদন কালে তাহার বয়স তের বৎসর ৷ " (আদি পুস্তক ১৭:১৫ - ২৫ )
" আব্রাহামের একশত
বৎসর বয়সে তাঁহার পুত্র ইসহাকের জন্ম হয়৷" (আদি পুস্তক ২১:৫)
এ থেকে বাইবেলের বর্ণনার
বৈপরীত্য পরিষ্কার সামনে এসে যায়৷ একথা সুস্পষ্ট , ১৪ বছর পর্যন্ত হযরত ইসমাঈল (আ
) হযরত ইবরাহীমের (আ ) একমাত্র সন্তান ছিলেন৷ এখন যদি একমাত্র পুত্রের কুরবানী
চাওয়া হয়ে থাকে তাহলে তা হযরত ইসহাকের নয় বরং ইসমাঈলের কুরবানী ছিল ৷ কারণ তিনিই
ছিলেন একমাত্র সন্তান ৷ আর যদি হযরত ইসহাকের কুরবানী চাওয়া হয়ে থাকে তাহলে আবার
একথা বলা ঠিক নয় যে , একমাত্র সন্তানের কুরবানী চাওয়া হয়েছিল৷
এরপর আমরা ইসলামী
বর্ণনাগুলোর প্রসংগে আসতে পারি৷ সেখানে দেখি ভীষণ মতবিরোধ৷ মুফাসসিরগণ সাহাবা ও
তাবেঈগণের যে বর্ণনা উদ্ধৃত করেছন তাতে একটি দলের উক্তি এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে ,
তিনি ছিলেন হযরত ইবরাহীমের পুত্র হযরত ইসহাক৷ এ দলে রয়েছেন মনীষীগণঃ
দ্বিতীয় দলটি বলেন ,
তিনি ছিলেন হযরত ইসমাঈল৷ এ দলে রয়েছেন নিম্নোক্ত মনীষীগণঃ
হযরত আবু বকর (রা) ,
হযরত আলী (রা) , হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) ,হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) ,
হযরত আবু হুরাইরাহ (রা) , হযরত মু'আবীয়াহ (রা) ইকরামাহ , মুজাহিদ , ইউসুফ ইবনে
মেহরান , হাসান বাসরী , মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব আল কুরযী , শা'বী , সাঈদ ইবনুল
মুসাইয়াব , দ্বাহহাক , মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন (মুহাম্মাদ আল বাকের ) '
রাবী ' ইবনে আনাস , আহমাদ ইবনে হামবল এবং আরো অনেকে৷
এ দু'টি তালিকা
পর্যলোচনা করলে দেখা যাবে এর মধ্যে অনেকগুলো নাম উভয় তালিকায় পাওয়া যাচ্ছে৷ অর্থাৎ
একজন মনীষী বিভিন্ন সময় দু'টি ভিন্ন উক্তি করেছেন ৷ যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে
আব্বাস (রা) থেকে ইকরামাহ এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে , তিনি ছিলেন হযরত ইবরাহীমের
পুত্র হযরত ইসহাক৷ কিন্তু তাঁরই থেকে আতা ইবনে আবী রাবাহ একথা উদ্ধৃত করেছেনঃ (ইহুদীদের দাবী হচ্ছে , তিনি ছিলেন হযরত ইসহাক
কিন্তু ইহুদীরা মিথ্যা বলেছে ) অনুরূপভাবে হযরত হাসান বাসরী থেকে একটি বর্ণনায় বলা
হয়েছে , তিনি হযরত ইসহাকের কুরবানীর প্রবক্তা ছিলেন কিন্তু আমর ইবনে উবাইদ বলেন ,
হাসান বাসরীর এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ ছিল না যে , হযরত ইবরাহীমের (আ) যে পুত্রকে
যবেহ করার হুকুম হয়েছিল তিনি ছিলেন হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম৷
এ বর্ণনার বিভিন্নার ফলে
মুসলিম আলেমণের একটি দল পূর্ণ নিশ্চয়তা সহকারে হযরত ইসহাকের পক্ষে রায় দিয়েছেন৷
যেমন ইবনে জারীর ও কাযী ঈয়ায৷ অনেকে চূড়ান্তভাবে এ মত প্রকাশ করেছেন যে , হযরত
ইসমাঈলকেই যবেহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ যেমন ইবনে কাসীর ৷ আবার কেউ কেউ
সংশয়াপন্ন ৷ যেমন জালালুদ্দীন সুয়ূতী৷ কিন্তু গবেষণা ও অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে বিচার
করলে একথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে হযরত ইসমাঈলকেই যবেহ করার ব্যবস্থা করা
হয়েছিল৷ এর সপক্ষে নিম্নোক্ত যুক্তি রয়েছেঃ
একঃ ওপরে কুরআন মজীদের এ
বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে যে , স্বদেশ থেকে হিজরাত করার সময় হযরত ইবরাহীম (আ) একটি
সৎকমশীল পুত্রের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন৷ এর জবাবে আল্লাহ তাঁর একটি
ধৈর্যশীল সন্তানের সুসংবাদ দিয়েছিলেন৷ বক্তব্যের অন্তরনিহিত অর্থ পরিস্কার একথা
জানিয়ে দিচ্ছে যে , এ দোয়া ঠিক তখন করা হয়েছিল যখন তিনি ছিলেন সন্তানহীন৷ আর যে
সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল সেটি ছিল তাঁর প্রথম সন্তান৷ তারপর কুরআনের
বক্তব্যের ধারাবহিক বর্ণনা থেকে একথাও প্রকাশ হয় যে , সে শিশুটিই যখন পিতার সাথে
দৌড় ঝাঁপ করার যোগ্য হয়ে গেলো তখন তাকে যবেহ করার ইশারা করা হলো৷ এখন একথা
চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে , হযরত ইবরাহীমের (আ) প্রথম সন্তান ছিলেন হযরত ইসমাঈল ৷
হযরত ইসহাক প্রথম সন্তান ছিলেন না কুরআনে হযরত ইবরাহীমের সন্তানের ধারাবাহিকতার
বর্ণনা এভাবে দেয়া হয়েছেঃ
দুইঃ কুরআন মজীদে যেখানে
হযরত ইসহাকের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে সেখানে তাঁর জন্য " গোলামুন আলীমন "
(জ্ঞানবান বালক ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছেঃ
কিন্তু এখানে যে
সন্তানটির সুসংবাদ দেয়া হয়েছে তার জন্য " গোলামুন হালীমুন " (ধৈর্যশীল
বালক ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷ এ থেকে প্রমাণিত হয় , দুই পুত্রের দু'টি পৃথক
বৈশিষ্ট ছিল এবং যবেহ করার হুকুমটি জ্ঞানবান সন্তানের জন্য ছিল না , ছিল ধৈর্যশীল
সন্তানের জন্য৷
তিনঃ কুরআন মজীদে হযরত
ইসহাকের সুসংবাদ দেবার সাথে সাথেই এ সুসংবাদও দেয়া হয়েছিল যে , তাঁর গৃহে ইয়াকুবের
মতো পুত্র সন্তান জন্ম নেবেঃ
এখন একথা পরিস্কার যে ,
সন্তান জন্মের খবর দেবার সাথে সাথেই তার ওখানে একটি সুযোগ্য পুত্রসন্তানের জন্মের
ও খবর দেয়া হয়ে গিয়ে থাকে , তার ব্যাপারে যদি হযরত ইবরাহীমকে এ স্বপ্ন দেখানো হয়
যে , তিনি তাকে যবেহ করছেন , তাহলে হযরত ইবরাহীম কখনো একথা বুঝতে পারতেন না যে ,
তাঁর এ পুত্রকে কুরবানী করে দেবার ইংগিত করা হচ্ছে ৷ আল্লামা ইবনে জারীর এ
যুক্তিটির জবাবে বলেন , সম্ভবত এ স্বপ্নটি হযরত ইবরাহীমকে এমন এক সময় দেখানো হয়
যখন হযরত ইসহাকের গৃহে হযরত ইয়াকুবের জন্ম হয়ে গেছে৷
কিন্তু আসলে এটি ঐ
যুক্তির একটি অত্যন্ত দুর্বল জবাব৷ কুরআন মজীদের শব্দ হচ্ছেঃ " যখন ছেলেটি
বাপের সাথে দৌড় ঝাঁপ করার যোগ্য হয়ে গেলো" ঠিক এ সময়ই এ স্বপ্নটি দেখানো
হয়েছিল৷ যে ব্যক্তি মুক্ত মনে এ শব্দগুলো পড়বে তার সমানে ভেসে উঠবে আট দশ বছরের
একটি ছেলের ছবি৷ কোন জোয়ান ব্যক্তি যিনি সন্তানের পিতা তাঁর সম্পর্কে একথা বলা
হয়েছে বলে কেউ কল্পনা ও করতে পারবে না৷
চারঃ কুরআনে আল্লাহ সমস্ত
কাহিনী বর্ণণা করার পর শেষে বলছেন , " আমি তাকে ইসহাকের সুসংবাদ দিয়েছি ,
সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে একজন নবী৷ " এ থেকে পরিস্কার জানা যায় , যে পুত্রকে
যবেহ করার ইংগিত দেয়া হয়েছিল , এটি সে পুত্র নয়৷ বরং পূর্বে অন্য কোন পুত্রের
সুসংবাদ দেয়া হয়৷ তারপর যখন সে পিতার সাথে দৌড়াদৌড়ি ও চলাফেরা করার যোগ্যতা অর্জন
করে তখনই তাকে যবেহ করার হুকুম হয়৷ তারপর যখন হযরত ইবরাহীম এ পরীক্ষায় সফলকাম হয়ে
যান তখন তাঁকে আর এক সন্তান অর্থাৎ ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মের সুসংবাদ দেয়া হয়৷
ঘটনার এ বিন্যাস চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দান করে যে , যে পুত্রটিকে যবেহ করার হুকুম
হয়েছিল তিনি হযরত ইসহাক ছিলেন না৷ বরং তাঁর কয়েক বছর আগে সে পুত্রের জন্ম হয়েছিল৷
আল্লামা ইবনে জারীর এ সুস্পষ্ট যুক্তিটি এ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে , প্রথমে
কেবলমাত্র হযরত ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল , তারপর যখন তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি
লাভের জন্য কুরবানী করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন তখন তাঁর নবী হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হলো
কিন্তু এটি তার প্রথম জবাবটি থেকেও দুর্বলতার৷ সত্যই যদি ব্যাপার এটাই হতো , তাহলে
আল্লাহ এভাবে বলতেন নাঃ " আমি তাকে ইসহাকের সুসংবাদ দেই , সৎকর্মশীলদের মধ্য
থেকে একজন নবী৷ " বরং তিনি বলতেন , আমি তাকে এ এ সুসংবাদ দেই যে , তোমার এ
পুত্র একজন নবী হবেন সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে ৷
পাঁচঃ নির্ভরযোগ্য
বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে , হযরত ইসমাঈলের বিনিময়ে যে ভেড়াটি যবেহ করা হয়েছিল তার
শিং কা'বা ঘরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইরের (রা ) যামানা পর্যন্ত সংরক্ষিত ছিল৷
পরবর্তীতে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ যখন হরম শরীফে ইবনে যুবাইরকে (রা) অবরোধ করে এবং
কা'বা ঘর ভেঙে ফেলে তখন এ শিংও নষ্ট হয়ে যায়৷ ইবনে আববাস ও আমের শা'বী উভয়ই এ
মর্মে সাক্ষ দেন যে , তারা নিজেরা কা'বাঘরে এ শিং দেখেছিলেন (ইবনে কাসীর ) এ
দ্বারা প্রামাণিত হয় যে , কুরবানীর এ ঘটনা সিরিয়ায় নয় , মক্কা মু'আযযমায় সংঘটিত
হয়েছিল৷ এবং হযরত ইসমাঈলের সাথেই ঘটেছিল৷ তাইতো হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নির্মিত
কা'বাঘরে তার স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল৷
ছয়ঃ শত শত বছর থেকে
আরবীয় বর্ণনাসমূহে ও কিংবদন্তীতে একথা সংরক্ষিত ছিল যে , কুরবানীর এ ঘটনা ঘটেছিল
মিনায়৷ আর এটা শুধুমাত্র কিংবদন্তীই ছিল না বরং সে সময় থেকে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানা পর্যন্ত হজ্জের কর্মকাণ্ডের মধ্যে এ কাজটিও
নিয়মিতভাবে শামিল হয়ে আসছিল যে এ মিনা নামক স্থানে যেখানে হযরত ইবরাহীম কুরবানী
করেছিলেন প্রত্যেক ব্যক্তি সেখানে গিয়ে পশু কুরবানী করতো৷ তারপর যখন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগম হলো তখন তিনিও এ পদ্ধতি অব্যাহত রাখেন৷ এমন
কি আজো হজ্জের সময় যিলহজ্জের দশ তারিখে মিনায় কুরবানী করা হয়৷ সাড়ে চার হাজার
বছরের এ অবিচ্ছিন্ন কার্যক্রম একথার অনস্বীকার্য প্রমাণ পেশ করে যে , হযরত ইবরাহীম
আলাইহিস সালামের এ কুরবানীর উত্তরাধিকারী ছিল বনী ইসমাঈল , বনী ইসহাক নয়৷ হযরত
ইসহাকের বংশে এ ধরনের কোন রেওয়াজ কোন দিন জারি থাকেনি , যাতে সমস্ত জাতির একসাথে
কুরবানী করতো এবং তাকে হযরত ইবরাহীমের কুরবানীর স্মৃতি বলা হতো৷
" প্রকৃত ব্যাপার
তো আল্লাহই জানেন৷ তবে বাহ্যত মনে হয় , এ সমস্ত উক্ত (হযরত ইসহাকের আল্লাহর জন্য
কুরবানী হবার পক্ষে যেগুলো বলা হয়েছে ) কা'ব আহবার থেকে উদ্ধৃত হয়েছে৷ তিনি যখন
হযরত উমরের (রা) আমলে মুসলমান হন তখন মাঝে মধ্যে ইহুদী ও খৃষ্টানদের প্রাচীর
কিতাবসমূহের বাণী তাঁদেরকে পড়ে শুনাতেন এবং হযরত উমর (রা) সেসব শুনতেন৷ এ কারণে
অন্য লোকেরাও তাঁর কথা শুনতে শুরু করে এবং তিনি যেসব ভালো মন্দ বর্ণনা করতেন
সেগুলো তারা বর্ণনা করতে শুরু করে৷ অথচ এ উম্মতের জন্য তাঁর এ তথ্য সম্ভারের মধ্য
থেকে কোন জিনিসেরই প্রয়োজন ছিল না৷ "
মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব
কুরাযীর একটি রেওয়ায়াত এ প্রশ্নটির ওপর আরো কিছুটা আলোকপাত করে৷ তিনি বর্ণনা করেন
, একবার আমার উপস্থিতিতে হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীযের (র ) সামনে এ প্রশ্ন উত্থাপিত
হয় যে , আল্লাহর জন্যে যবেহ করা হয়েছিল কাকে , হযরত ইসহাককে না হযরত ইসমাঈলকে ? সে
সময় এমন এক ব্যক্তিও মজলিসে হাজির ছিলেন যিনি পূর্বে ইহুদী আলেমদের অন্তরভুক্ত
ছিলেন এবং পরে সাচ্চা দিলে মুসলমান হয়েছিলেন ৷ তিনি বলেন , " হে আমীরুল
মু'মেনীন ! আল্লাহর কসম , তিনি ইসমাঈল ছিলেন৷ ইহুদীরা একথা জানে কিন্তু আরবদের
প্রতি হিংসাবশত তারা দাবী করে যে , হযরত ইসহাককে আল্লাহর জন্য যবেহ করার ব্যবস্থা
করা হয়েছিল৷ (ইবনে জারীর ) এ দু'টি কথাকে মিলিয়ে দেখলে জানা যায় , আসলে এটা ছিল
ইহুদী প্রচারণার প্রভাব এবং মুসলমানদের মধ্যে এ প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল৷ আর মুসলমানরা
যেহেতু তাত্বিক বিষয়ে সবসময় বিদ্বেষ ও স্বার্থপ্রীতি মুক্ত থেকেছে তাই তাদের
অনেকেই প্রাচীর সহীফাগুলোর বরাত দিয়ে ঐতিহাসিক বর্ণনার ছদ্মবরণে ইহুদীরা যেসব
বর্ণনা পেশ করতো সেগুলোকে নিছক একটি তাত্বিক সত্য মনে করে গ্রহণ করে নেয় এবং একথা
চিন্তা করেনি যে , এর মধ্যে তত্বের পরিবর্তে বিদ্বেষ ও স্বার্থপ্রীতি সক্রিয়
রয়েছে৷