السلام عليكم
দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা
সম্পদে নারীর উত্তরাধিকার : ইসলামই
দিয়েছে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা
মানব সমাজ যদি হয়ে থাকে নারী পুরুষের একটি সংমিশ্রিত রূপ, তবে সন্দেহ নেই নারী সে সমাজের ভারসাম্যের প্রতীক ও নিয়ন্ত্রণকারী সত্বা। নারী পরম
শ্রদ্ধেয় মা, আদরের বোন, প্রেমময় স্ত্রী কিংবা স্নেহভাজন কন্যা হিসেবে পুরুষের অর্ন্তজগতকে নিয়ন্ত্রণ করে অঘোষিতভাবে। মহান আল্লাহর
সৃষ্টির সহজাত প্রক্রিয়ায় নারী ব্যতীত বা নারীর সক্রিয় উপস্থিতি ছাড়া একটি সুন্দর, ভারসাম্যপূর্ণ ও সৃজনশীল সমাজ আশা করা
যায় না। এজন্যেই মানব জাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান ইসলাম নারীকে
যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছে । তাকে বসিয়েছে
মর্যাদার সুমহান আসনে এবং নিশ্চিত করেছে তার সামগ্রিক অধিকার। সন্তানকে মার সাথে সর্বোচ্চ সদাচরণ ও সেবার আদেশ দেওয়া
হয়েছে। স্বামীকে দেওয়া হয়েছে স্ত্রীর ভরণ-পোষণসহ সার্বিক অধিকার
আদায়ের আদেশ এবং কন্যা সন্তানের
সঠিক লালন পালন ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে প্রবলভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে তার পিতাকে। অথচ জাহেলি যুগে
সেই মা-বোন-স্ত্রী-কন্যারাই চরম লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার হতো। এ নির্জলা সত্যের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস।
কিন্তু যারা ইসলামকে সঠিকভাবে জানে না বা জেনেশুনেও বিবেক যাদের শিকলবন্দি এবং দৃষ্টি যাদের একচোখা তারা প্রতিনিয়ত নারীকে
ব্যবহার করে আসছে তাদের
বিভিন্ন অসৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে। বিভিন্ন সময় তথাকথিত নারী
আন্দোলনের নামে ইসলামকে সরাসরি নারীর মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করে আসছে। সম্প্রতি ৮৮% মুসলিম অধ্যুষিত প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদশেও একটি বিশেষ ইস্যুকে সামনে রেখে আমাদের রক্ষণশীল ইসলামপ্রিয়
নারী সমাজকে ইসলামের বিপক্ষে
দাঁড় করানোর অপচেষ্টা শুরু হয়ছে বিভিন্ন কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠির মাধ্যমে। বিশ্ব নারী
দিবসে পশ্চিমা বিশ্বের জন্য তারা উপহার স্বরূপ ‘নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণ’
নামে একটি খসড়া প্রস্তাব সামনে নিয়ে আসে। যাতে অন্যান্য দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি সম্পদের উত্তরাধিকারে নারীকে
পুরুষের সমান সম্পত্তি দান এবং আল-কুরআনের শাশ্বত বিধান ‘এক ছেলে পাবে দুই
মেয়ের অংশ সমান’ বিধানটি বিলুপ্ত করার
দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এরপরের ঘটনা মোটামুটি সবার জানা। এ প্রস্তাবটি পাশ হতে পারেনি বটে কিন্তু যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ নাটকের অবতারণা করা হয় তা অনেকাংশে সফল হয়েছ। সরলমনা ইসলামি জ্ঞানহীন ও ধর্মহীন শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজ (বিশেষত: নারী
সমাজ) ইসলামকে তাদের অধিকার
হরণকারী একটি জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে এবং এর ঢেউ ধর্মপরায়ণ
রক্ষণশীল মুসলিম সমাজেও এসে লেগেছে।
বক্ষ্যমান নিবন্ধে আমরা নারীর উত্তরাধিকারে ইসলামি বিধানের যৌক্তিকতা এবং কথিত নারীবাদীদের দাবির অসারতা তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
ইসলামি উত্তরাধিকার বিধানের বৈশিষ্ট্য ও মূলনীতি:
ইসলামি উত্তরাধিকার বিধানে নারীর অধিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে ইসলামি উত্তরাধিকারের কিছু বৈশিষ্ট্য ও মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। যেহেতু আলোচ্য বিষয়ের সাথে এর যোগসূত্র রয়েছে তাই আলোচানা
অপ্রাসঙ্গিক হবে না। এতে অনেক সংশয়েরও অবসান
ঘটবে।
প্রথমত:
ইসলাম সুষম বন্টনে বিশ্বাসী–সম বন্টনে নয় :
অবস্থা ও অবস্থান ভেদে মানুষের প্রকৃতিগত প্রয়োজন ও চাহিদা ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন ধরা যাক সরকারি তহবিল থেকে বন্টনের জন্য কিছু জিনিস আসলো। বন্টনের ক্ষেত্রে দেখা গেলো এক পরিবারে দশ জন সদস্য অন্য পরিবারে
মাত্র দুইজন। বিবেকবান মাত্রই এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারবে, সমান অধিকারের নামে উভয়জনকে সমপরিমাণ দেওয়া কোন মতেই ন্যায় বিচার হবে না। বরং এক্ষেত্রে ন্যায় বিচার হবে প্রয়োজনানুসারে বন্টন করা। যাকে বলা হয়
সুষম বন্টন। তেমনিভাবে ইসলাম
সমবন্টনকে ইনসাফের মূল ভিত্তি মনে করে না বরং ইসলাম মনে করে সুষম বন্টনই ইনসাফ ও ন্যায়
বিচারের মূল ভিত্তি। এর আলোকে বন্টনের ক্ষেত্রে কখনো
সমান হবে, আবার কখনো
অবস্থা ভেদে বিশাল পার্থক্য হতে পারে। উত্তরাধিকার বিধানেও ইসলাম এ নীতিকেই অবলম্বন করেছে।
দ্বিতীয়ত :
ইসলামের উত্তরাধিকার আইন পুরুষ বা নারী কেন্দ্রিক নয়, তেমনিভাবে উত্তরাধিকার
সূত্রে সম্পদের অংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারী–পুরুষের ব্যবধানও মূখ্য বিষয় নয়। সুতরাং একথা বলার সুযোগ নেই যে ইসলামি উত্তরাধিকার আইন পুরুষকেন্দ্রিক বা নারীকেন্দ্রিক।
তৃতীয়ত:
অংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনটি দিককে সামনে রাখা হয় :
১. মৃত ব্যক্তির সাথে ওয়ারিসের নিকটাত্মীয়তা। যে ওয়ারিস মৃত ব্যক্তির যত কাছের আত্মীয় হবে তার অংশ তত বেশী হবে। যেমন ভাই বোনের তুলনায় ঔরসজাত সন্তানেরা বেশি পাবে এবং এটিই ইনসাফের দাবী।
২. নতুন প্রজন্ম বা বংশধর প্রবীণদের তুলনায় বেশি পাবে। যেমন সন্তান-সন্ততি পিতা মাতার তুলনায় বেশী পাবে এবং এটিই যুক্তির দাবী। যেহেতু নতুনদের
সামনে রয়েছে ভবিষ্যতের এক বিশাল জীবন।
৩. আর্থিক প্রয়োজনীয়তা ও সামাজিক দায়ভার: অংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি লক্ষণীয় দিক হলো অংশীদার ওয়ারিসের সামাজিক দায়ভার ও আর্থিক প্রয়োজনীয়তা। যেমন একটি পরিবারের সার্বিক খরচ নির্বাহ করার দায়িত্ব পুরুষের। স্ত্রীর ভরণপোষণ, সন্তান-সন্ততিদের খরচ যোগান দান এবং পিতা-মাতার সার্বিক সেবা-শুশ্রূষা এসব তো পুরুষেরই দায়িত্ব। সামাজিক ও নৈতিক কর্তব্য। এসবদিক লক্ষ্য রেখে ইসলাম অংশ নির্ধারণে তারতম্য করেছে। যেমন মেয়ের তুলনায় ছেলের আর্থিক বাধ্য-বাধকতা ও সামাজিক কর্তব্য বেশি। তাই ইসলাম ছেলের জন্য মেয়ের দ্বিগুণ অংশ নির্ধারণ করেছে।
৩. আর্থিক প্রয়োজনীয়তা ও সামাজিক দায়ভার: অংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি লক্ষণীয় দিক হলো অংশীদার ওয়ারিসের সামাজিক দায়ভার ও আর্থিক প্রয়োজনীয়তা। যেমন একটি পরিবারের সার্বিক খরচ নির্বাহ করার দায়িত্ব পুরুষের। স্ত্রীর ভরণপোষণ, সন্তান-সন্ততিদের খরচ যোগান দান এবং পিতা-মাতার সার্বিক সেবা-শুশ্রূষা এসব তো পুরুষেরই দায়িত্ব। সামাজিক ও নৈতিক কর্তব্য। এসবদিক লক্ষ্য রেখে ইসলাম অংশ নির্ধারণে তারতম্য করেছে। যেমন মেয়ের তুলনায় ছেলের আর্থিক বাধ্য-বাধকতা ও সামাজিক কর্তব্য বেশি। তাই ইসলাম ছেলের জন্য মেয়ের দ্বিগুণ অংশ নির্ধারণ করেছে।
চতুর্থত:
দুর্বলদেরকেও অবহেলা করা হয়নি:
জাহেলি সমাজে নারী ও শিশুকে ওয়ারিস গণ্য করা হতো না, তারা যুদ্ধে যেতে পারে না শুধুমাত্র
এই অজুহাতে। এক কথায় দুর্বলের উপর সবলের খবরদারি। কিন্তু ইসলাম সে অমানবিক বৈষম্য দূর করে তাদেরকেও তাদের প্রাপ্য
যথাযথভাবে দান করেছে।
পঞ্চমত:
আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় করাও উত্তরাধিকার বিধানের অন্যতম লক্ষ্য,
মিরাছের সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে ইসলাম রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় করার উপর গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
وأولوا الأرحام بعضهم أولى ببعض في كتاب الله
আর রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়রা একে অপরের কাছে আল্লাহর কিতাবের ঘোষণা মতে অধিক
হক্বদার।
লেখক :
মুহাম্মদ আফীফ ফুরকান
http://www.islamhouse.com/
http://www.islamhouse.com/
(স্মরণ করি-২৪৫ পর্ব)
WAMY BANGLADESH
Pioneer Organization for Distinguished Youth
এটি
ওয়ার্ল্ড এসেম্বলী অফ মুসলিম ইয়ুথ (ওয়ামী), বাংলাদেশ অফিসের মিডিয়া ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে একটি কার্যক্রম ।
কুরআন ও হাদীসের মহান বাণী, সম সাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূ- নিয়ে সাজানো ।
উদ্দেশ্য সর্বস্তরের
মানুষের সাথে সম্পর্কের দৃঢ়
বন্ধন তৈরী করা। বিস্তারিত
জানতে মেইল করুন wamybangladesh@gmail.com অথবা
ভিজিট করুন http://www.ohioftruth.blogspot.com/
or http://www.facebook.com/Daily.OHI