Sunday, March 25, 2012

ইসলাম প্রচারক ভাই!প্রথমে তাওহীদের দাওয়াত দিন


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

ইসলাম প্রচারক ভাই!প্রথমে তাওহীদের দাওয়াত দিন


প্রশ্ন: মাননীয় শেখ, বর্তমানে  মুসলিম উম্মার আকীদা বিষয়ে অজ্ঞতা ও আকীদার গুরত্বপূর্ণ মাসায়েল সম্পর্কে ইলম না থাকার কারণে তাদের যে দূরাবস্থা তা আপনার অজানা নয়। এ ছাড়া বিভিন্ন মতাদর্শে উম্মতের বিভক্তি, অধিকাংশ স্থানে সালফে সালেহীনদের আকীদা বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলামের দাওয়াত দেয়া ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি উম্মতের অবস্থাকে আরও নাজুক করে তুলছে। বর্তমানে উম্মতের এ নাজুক পরিস্থিতি ও করুণ পরিণতি, মুখলিস বান্দা, সচেতন আলেমে দ্বীন দ্বীনের দাঈদের অন্তরে এ অবস্থার পরিবর্তন করা এবং উম্মতে মুহাম্মদীকে সংশোধন করার প্রতি এক ধরনের পিপাসা ও আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। এ সব দায়ী ও সংস্কারকরা তাদের বিশ্বাস ও নিয়ম-নীতিতে মতানৈক্য থাকার কারণে উম্মতের বর্তমান অবস্থার সংশোধন ও তাদের দাওয়াতের পদ্ধতি বিষয়েও বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করছে, এটি আপনি ভালোভাবেই জানেন। বর্তমানে বিভিন্ন আন্দোলন, ইসলামী দল ও জামাত যারা যুগ যুগ ধরে মুসলিম জাতিকে সংশোধন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আজও কোন সফলতা ও কামিয়াবি তারা দেখতে পায়নি। বরং এ সব দল, সংগঠন ও জামাতসমূহের আকীদা-বিশ্বাস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ, কর্ম কৌশল ও তিনি যে দ্বীন নিয়ে এসেছে তার পরিপন্থী এটি মুসলিম জাতির বিপর্যয় ও তাদের মধ্যে অনৈক্য এবং তাদের পরস্পর দ্ধন্ধের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে এ সব জামাত ও সংগঠনসমূহ মুসলিম জাতিকে এক প্রকার অনিশ্চিয়তা ও সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। বিশেষ করে যুবক শ্রেণী বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ও সংশোধন করার বিষয়ে তাদেরকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। একজন মুসলিম প্রচারক, যিনি নবী ও রাসূলের প্রদর্শিত আদর্শের অনুসারি, মুমীনদের পথের পথিক তিনি অবশ্যই জানেন বর্তমান অবস্থার সংশোধন করা এবং এ অবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টায় অংশগ্রহণ করা কত বড় দায়িত্ব ও আমানতদারি।
এ সব আন্দোলন ও দল সমূহের সাথে জড়িত হওয়ার বিষয়ে আপনার উপদেশ কি?
* বর্তমান অবস্থার উন্নতির জন্য উপকারি-ফলপ্রসু পন্থা ও উপায় কি?
* কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনর দরবারে একজন মুসলিম কিভাবে দায়মুক্ত হবে?
উত্তর: প্রথমে তাওহীদের উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। নবী ও রাসূলের মূলনীতি হল, তারা প্রথমে তাদের উম্মতকে তাওহীদের দাওয়াত দিতেন। প্রশ্নে উম্মতের যে করুণ পরিণতি ও দুরাবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা বলব, বর্তমান দূরাবস্থা জাহিলিয়্যাতের যুগে যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হিদায়েতের বাণী দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছিল, তখনকার দুরাবস্থা থেকে কোন ক্রমেই বেশি করুণ নয়। তখন মানবজাতির অবস্থা বর্তমান অবস্থার তুলনায় আরও অধিক খারাপ ও করুণ ছিল। বর্তমান সময়ে মানব জাতির জন্য ইতিবাচক দিক হল, এখন আমাদের সামনে রিসালাত ও পরিপূর্ণ দীন আছে। একটি অনুকরণযোগ্য হক জামাত আছে, যারা মানুষকে সহীহ ইসলাম ও আকীদার দিক আহ্বান করে এবং উত্তম আর্দশ ও মানবতার দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয়। তবে এ কথা দিবা-লোকের মত স্পষ্ট, জাহিলিয়্যাতের যুগের আরবদের অবস্থা ও বর্তমান যুগের অনেক মুসলিম জামাতের অবস্থা অভিন্ন। বরং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বর্তমান যুগের মুসলিমদের অবস্থা জাহিলিয়্যাতের যুগের কাফেরদের অবস্থা হতে আরও বেশি করুণ।
এর উপর ভিত্তি করে আমরা বলব, বর্তমান যুগের মুসলিমদের চিকিৎসা এটাই যেটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহিলিয়্যাতের যুগের লোকদের জন্য প্রয়োগ করে ছিলেন এবং তাদের ঔষুধও একই ঔষুধ। যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহিলিয়্যাতের যুগের লোকদের চিকিৎসা করেছেন, এ উম্মতের চিকিৎসা ও সংশোধন করতে হলে বর্তমানকালের ইসলাম প্রচারকদেরকেও একই চিকিৎসা প্রয়োগ করতে হবে। বর্তমান যুগের মানুষের মধ্যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ সম্পর্কে যে ভ্রান্তি ও ভুল ব্যাখ্যা রয়েছে, তা দূর করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ ও চিকিৎসা চালাতে হবে। তাদের দূরাবস্থা ও করুণ পরিণতি দূর করতে হলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে চিকিৎসা ও ঔষধ গ্রহণ করেছেন, তার হুবহু অনুকরণ করতে হবে। আমরা যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর বাণী সম্পর্কে একটু চিন্তা করি, তখন আমরা আমাদের এ কথার অর্থ, আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে পারব। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١]سورة الأحزاب:21].
অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আর্দশ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। [সূরা আহযাব, আয়াত: ২১]
মোট কথা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উত্তম আদর্শ। বর্তমানে মুসলিমদের সমস্যা সমাধান ও তাদের অধ:পতনের হাত হতে রক্ষা করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করার কোন বিকল্প নাই। কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর যত রকম সমস্যা হতে পারে, তার সমাধান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখে গেছেন। তিনিই আমাদের আদর্শ; তাকে আমাদের অনুকরণ করতে হবে। সুতরাং আমরা যখন উম্মতের সংশোধন করতে যাব, তখন তা দিয়েই শুরু করব, যা দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুরু করেছিলেন। প্রথমে মুসলিম জাতির আকীদার চিকিৎসা করতে হবে। তাদের মধ্যে যে সব ভ্রান্ত আকীদা ও বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে আছে, তা প্রথমে দূর করতে হবে। তারপর তাদের ইবাদত বন্দেগীর ইসলাহ করতে হবে, তারপর তাদের মুয়ামালা বা লেন-দেন ইত্যাদির সংশোধন করতে হবে। এখানে যে ধারাবাহিকতার কথা আলোচনা করা হয়েছে, তার অর্থ এ নয়, প্রথমটি দ্বারা শুরু করবে তারপর যেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটি, তারপর যেটি কম গুরুত্বপূর্ণ সেটি। এখানে সামগ্রিক বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, মুসলিম দীন প্রচারকরা আকীদার বিষয়ে দাওয়াত দেয়াকে অধিক পরিমাণে গুরুত্ব দিবে। এখান মুসলিম দ্বারা সাধারণত উদ্দেশ্য হল, দীনের দায়ী তথা যারা দীনের দাওয়াত ও প্রসারের কাজ করে। তবে এ ক্ষেত্রে দায়ী বা দীন প্রচারক না বলে ওলামা শব্দ বলাই অধিক সঙ্গত। কারণ, অতি দু:খের সাথে বলতে হয়, বর্তমানে ইসলাম প্রচারক বললে সব মুসলিম তথা যার মধ্যে সামান্যতম জ্ঞান, বুদ্ধি বা ইলম নাই তাকেও শামিল করা হয়; কারণ সবাই নিজেকে ইসলামের প্রচারক হিসেবে চালিয়ে দেয়।  একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি হল  যার নিজের কাছে কিছু নাই, সে কাউকে কিছু দিতে পারে না  এ মূলনীতি শুধু শরয়ী আলেম নয়, বরং সব জ্ঞানীদের নিকটও প্রসিদ্ধ। আমরা যদি তা নিয়ে আলোচনা করি, তখন আমরা বুঝতে পারব, বর্তমানে একটি বড় জামাত আছে, যখন আমরা দায়ী বা দীনের প্রচারক শব্দ উচ্চারণ করি, তখন লক্ষ লক্ষ মানুষের দৃষ্টি তাদের দিকে যায়, মানুষ মনে করে তারাই আল্লাহর পথের প্রচারক। এ বড় জামাত বলে আমি বুঝাচ্ছি, জামাতে তাবলীগ, বা তাবলীগ জামাত। অথচ তাদের অধিকাংশ লোকের অবস্থা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর বাণীর অনুরূপ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ١٨٧ ]سورة الأعرافمن الآية 187]. অথচ অধিকাংশ মানুষ জানে না। [সূরা আরাফ, আয়াত: ১৮৭]
তাদের দাওয়াতে পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা জানি তারা প্রথম যে বিষয়ে দাওয়াত দেয়া দরকার অর্থাৎ তাওহীদ তা হতে সম্পূর্ণ বিমুখ। তারপর যেটি গুরুত্বপূর্ণ অথাৎ ইবাদত এবং তারপর যেটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ মুয়ামালাত এ সবটির কোনটির কোন খবর নাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনকি সমগ্র নবী ও রাসূল যে বিষয়টি দ্বারা দাওয়াতের কাজ বা উম্মতের সংশোধন আরম্ভ করেন, তা থেকে তারা একেবারেই বিমূখ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ [سورة النحلمن الآية 36].
আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং পরিহার কর তাগুতকে। [সূরা নাহাল, আয়াত: ৩৬]
তারা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রুকন ও মৌলিক বিষয় হিসেবে মানুষের নিকট প্রসিদ্ধ সে সব গুরুত্বপূর্ণ রুকন ও মৌলিক বিষয়ের প্রতি তেমন কোন ভ্রূক্ষেপ করে না। অথচ সমস্ত রাসূলদের মধ্য হতে সর্বপ্রথম রাসূল নূহ আলাইহিস সালাম। তিনি প্রায় সাড়ে নয় শত বছর পর্যন্ত তার উম্মতদেরকে তাওহীদের প্রতি দাওয়াত দেন। আমাদের কারও নিকট এ কথা অজানা নয়, পূর্বের শরীয়তগুলো আমাদের শরীয়তের মত পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত ছিল না। আমাদের এ দ্বীন হল স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পরিপূর্ণ দ্বীন; যেখানে কোন অস্পষ্টতা নাই। এ দ্বীন হল, ইতিপূর্বে যত দীন দুনিয়াতে আর্ভিবাব হয়েছে, সব দ্বীন ও শরিয়তের সমাপ্তি। নূহ আ. তার কাওমের মধ্যে প্রায় সাড়ে নয় শত বছর অবস্থান করেন এবং তিনি এক মুহুর্তও আল্লাহর দ্বীন তথা তাওহীদের দাওয়াত হতে বিরত থাকেননি। রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা তিনি মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে দাওয়াত দিতে থাকতেন। তারপরও তার সম্প্রদায়ের লোকেরা তার দাওয়াতে সাড়া দেয়া বা দাওয়াত কবুল করা হতে বিরত থাকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে এরশাদ করেন,
﴿وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣ [سورة نوح: 23]
আর তারা বলে, তোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো না; বর্জন করো না ওয়াদ, সুয়াদ, ইয়াগুছ ইয়াউক ও নাসরকে। [সূরা নুহ, আয়াত: ২৩]
আল্লাহর বাণী দ্বারা প্রমাণিত হয়, ইসলামের দায়ীদের জন্য প্রথম কাজ হল, প্রথমে তাওহীদের দাওয়াতের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়া। এ কথাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে এরশাদ করে বলেন,
﴿ فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ  [سورة محمدمن الآية 19].
অতএব জেনে রাখ, নি:সন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১৯]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শও হল, তিনি বাস্তবে মানুষকে প্রথমে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেন, এবং যাদের দাওয়াতের জন্য প্রেরণ করেন তাদেরকে প্রথমে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেয়ার তালীম দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেয়া বিষয়ে প্রমাণ খোঁজার প্রয়োজন নাই। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কী জীবনে তার কাজ ও দাওয়াতই ছিল, একমাত্র এক আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি মানুষকে দাওয়াত দেয়া ও তার সাথে ইবাদাতে কাউকে শরীক না করা। তিনি মক্কার কাফেরদের শুধু তাওহীদের দিকে দাওয়াত দিতেন। আর তিনি কাউকে দাওয়াতের তালীম দিতে প্রথমে তাওহীদের দাওয়াত দেয়ার তালীম দিতেন। যেমন, বুখারি ও মুসলিমে আনাস বিন মালেক রা. এর হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুয়াজ রা.কে ইয়ামনের দিকে প্রেরণ করেন, তখন তিনি তাকে বলেন, তুমি তাদেরকে সর্ব প্রথম যে দাওয়াত দেবে তা যেন হয়, এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। যদি তারা এ দাওয়াতে সাড়া দেয়...[1]। হাদিসটি প্রসিদ্ধ ও সবারই জানা।
 « أن النبي  صلى الله عليه  و سلم عندما أرسل معاذًا إلى اليمن قال له: " ليكن أول ما تدعوهم إليهشهادة أن لا إله إلا الله، فإن هم أطاعوك لذلك»
মোট কথা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়টির দাওয়াত দিয়ে শুরু করেন, অনুরূপভাবে তার সাহাবীদেরকেও সে বিষয় দিয়ে দাওয়াত দেয়া শুরু করার নির্দেশ দেন। আর তা হল, তাওহীদের দাওয়াত। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আরবের মুশরিক যারা তাদের ভাষায় কি কথা বলা হত, তা তারা বুঝত- আর বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুসলিমদের মধ্যে বিশাল তফাত ও পার্থক্য আছে। বর্তমান যুগের মুসলিমদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার দাওয়াত দেয়ার কোন প্রয়োজন নাই। কারণ, বর্তমান যুগের মুসলিমরা তাদের বিশ্বাস, নিয়ম-নীতি ও মতামতের ভিন্নতা থাকা সত্বেও তারা মুখে লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ বলে। তারা সবাই মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ করে। কিন্তু তারা বাস্তবে কালিমায়ে তাইয়্যেবার অর্থ ও মর্ম কি তা বুঝে না। বাস্তবে তাদের জন্য কালিমায়ে তাইয়্যেবার অর্থ কি, তার মর্ম কি তা বুঝা অতীব জরুরি।  বর্তমান যুগের মুসলিম ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের মুসলিমদের মধ্যে এটি একটি মৌলিক পার্থক্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের মুশিরকদের যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার জন্য দাওয়াত দেয়া  হত, তখন তারা তা বলতে অস্বীকার করত এবং প্রত্যাখ্যান করত। কুরআনে বিষয়টিকে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় এবং মুশরিকরা কি কারণে প্রত্যাখ্যান করত, তা জানানো হয়।[2] 
কারণ, তারা এ কালিমার মর্মার্থ কি তা জানতো। এ কালিমার মর্মাথ হল, আল্লাহর সাথে কোন শরিক নির্ধারণ করো না, আর আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করো না। অথচ, তারা গাইরুল্লাহর ইবাদাত করে, গাইরুল্লাহকে ডাকে এবং গাইরুল্লাহর দ্বারা মানুষের থেকে সাহায্য কামনা করে। এ ছাড়াও তারা গাইরুল্লাহর জন্য মান্নত করত, গাইরুল্লাহকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করত, গাইরুল্লাহর নামে জবেহ করত, এবং গাইরুল্লাহর নিকট বিচার ফায়সালা নিয়ে যেত। তাদের পৌত্তলিকতা ও মুর্তি পুজাকে মাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করা ছিল খুব প্রসিদ্ধ। এতদসত্বেও তারা এ কথা ভালোভাবে জানত, আরবী ভাষা অনুযায়ী কালিমা তাইয়্যিবা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-র জন্য আবশ্যক হল, সব ধরনের গাইরুল্লাহ হতে দায়মুক্ত হওয়া এবং গাইরুল্লাহর ইবাদাত হতে বিরত থাকা। কারণ, কালিমা তাইয়্যিবার অর্থের সাথে গাইরুল্লাহর ইবাদাত করা, গাইরুল্লাহর নামে জবেহ করা এবং মুর্তি পুজা করা সবই সাংঘর্ষিক।



[1] বুখারি কিতাবুয যাকাত, ১৩৩১, তিরমিযি যাকাত, ৬২৫, নাসায়ি যাকাত ২৪৩৫ আবু দাউদ যাকাত ১৫৮৪, ইবনে মাযা যাকাত ১৭৮৩।
[2]  সূরা সাফ্ফাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ বাণীর প্রতি ইশারা করেন, যাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, {إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَوَيَقُولُونَ أَإِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ} (الصافات:35 - 36).

                                                                           মূলঃশাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী রহ.
Collected From: http://www.islamhouse.com/


be Organized by Holy Islam 

O.H.I 

For More Visit:




Saturday, March 3, 2012

ইন্টারনেট ইমান, আখলাক ও বুদ্ধি-বিবেকের পরীক্ষা


السلام عليكم

দৈনন্দিন পথনির্দেশিকা

ইন্টারনেট ইমানআখলাক ও বুদ্ধি-বিবেকের পরীক্ষা

ইন্টারনেট তথ্যজগতে একটি বিশাল আন্দোলন নিঃসন্দেহে। তবে এই তথ্যজগতটি ইমান আখলাক এমনকী  বিবেক-বুদ্ধি পরীক্ষার একটি বিশাল ময়দানও বটে। যা শুভ  ও কল্যাণকর তাও এখানে  পুরোরূপে উন্মুক্তযা অশুভ-অকল্যাণকর তাও এখানে নানা ব্যঞ্জনে উপস্থাপিত। যে ইন্টানেট ব্যবহার করে সে তার জিহ্বা নির্বাধভাবে ছেড়ে দিতে পারে,  সে তার দৃষ্টি যেখানে ইচ্ছা সেখানেই ঘুরাতে পারেসে তার হাত দিয়ে যা চায় তাই লিখতে পারে। তাকে নিবারণকারী কেউ নেইতাকে ধমক দেওয়ারও কেউ নেইনা আছে কেউ থামিয়ে দেয়ার।
সে যদি ঊর্ধ্বে উঠতে সক্ষম হয়পরিণামের প্রতি দৃষ্টি দেয়তার প্রতিপালক তাকে দেখছেন এই বিশ্বাস হৃদয়ে জাগ্রত রাখেতবে সে সফলতার সাথে প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সামনে এগুতে সক্ষম হবে।
আর যদি সে নিজের লাগাম ছেড়ে দেয়তার খায়েশ যেদিকে তাড়িত করে সেদিকে ধাবমান হয়ইমান ও তাকওয়ার প্রহরী তার হৃদয় থেকে বিতারিত হয়তাহলে আবর্জনার স্তুপে ঢুকে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা থেকে যায়আর এর অশম্ভাবী পরিণতি হল  অপদস্ততাসুভদ্রতার মৃত্যুনিকৃষ্টতা ও পঙ্কিলতায় নাক ঘর্ষণ।
ইন্টারনেট ও তার ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য কিছু  পথ-পদ্ধতি রয়েছেনিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হল।
১- ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার
বুদ্ধিমানের কাজ হল ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার করা। নিজেকে অতিরঞ্জিত আকারে বিশ্বাস না করাকেননা এ-ধরনের অতিবিশ্বাস নিজেকে  ফেতনায় নিপতিত করতে পারেযার করালগ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়া হয়ত অসম্ভব হয়ে ওঠবে।
যদি  কেউ ইন্টারনেটে  কোনো কিছু পেশ করতে চায়অথবা কোনো মন্তব্য ইত্যাদি করতে চায়তাহলে উচিত হবে প্রথমে বিবেচনা করে দেখাএর দ্বারা কোনো উপকার হবে কি-নাতাকে সতর্ক হতে হবে এর দ্বারা যেন মুমিনদের কোনো কষ্ট না পৌঁছে,  মুমিনদের কোনো ক্ষতি না হয়। অতঃপর মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়ানোর সকল  আকার-প্রকৃতি থেকে তাকে বিরত থাকতে হবে। অহেতুক কথা-বার্তা থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। মানুষের অনুভূতি নিয়ে তামাশায় লিপ্ত হওয়াএকে অপরকে অপবাদ দেওয়ার ডালি খুলে-বসাএকদলকে অন্যদলের উপর চড়াও করে দেওয়া ইত্যাদি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। 
কোনো মন্তব্য অথবা কারো কথা খণ্ডন করতে হলে ইলমনির্ভরআদবসদয়ভাব ও শালীন ভাষায় করা জরুরি। কোনো কিছুতে অংশ নিতে চাইলে তা যেন হয় নিজস্ব ও সরাসরি নামে। সরাসরি নিজের নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভয় হলে উচিত হবে এমন কোনো বিষয় না লেখা যা অবৈধঅশিষ্ট। যে দিন মানুষের অন্তরাত্মা উন্মুক্ত করে সবকিছু সম্মুখে নিয়ে আসা হবে সেদিন আল্লাহর  সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার বিষয়টি হৃদয়ে সজাক রাখতে হবে।
২- শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে দূরে থাকা
বুদ্ধিমানের উচিত শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে দূরে অবস্থান করাশয়তান মানুষকে  গোমরাহ করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে সারাক্ষণ। সকল পথ ও পদ্ধতি সে ব্যবহার করে যায় তার কর্মসিদ্ধির উদ্দেশ্যে। শয়তান মানুষের চিরশত্রযে শত্র মানুষকে গোমরাহ করার মাকসদ নিয়ে যাপন করে প্রতিটি মুহূর্ত। আল্লাহ তাআলা আল কুরাআনের একাধিক জায়গায় বলেছেন, { তোমরা শয়তানের পদাক্সক অনুসরণ করো নানিশ্চয় সে তোমাদের স্পষ্ট শত্র}
বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনোই তার শত্রর প্রতি আস্থা রাখে না। ফেতনার থাবায় নিজেকে কখনো সঁপে  দেবে না।  ফেতনায় পড়বে না বলে অধিক আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়বে নাজ্ঞানেদীন ও ইল্মে সে যে পর্যায়েই থাক না কেন।
বুদ্ধিমান ব্যক্তি বরং ফেতনা থেকে অবস্থান করে বহু দূরে। ফেতনার কাছাকাছি যাওয়া থেকে  সে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে। এসবের পরে যদি সে কখনো নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেতনায় নিপতিত হয়তবে তা থেকে নিস্কৃতির জন্য আল্লাহর সাহায্য আসে। আল্লাহর করুণা তার সঙ্গ দেয়। আর যদি সে নিজের উপর অতিমাত্রায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠেনিজের নখর দিয়ে নিজের  গোর নির্মাণ করে চলেতবে তার উপর থেকে আল্লাহর লুতফ-করুণা সরিয়ে নেওয়া হয়।  ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে একা।
ইউসুফ আলাইহিসসালাম নিজ থেকে ফেতনায় নিপতিত হন নিফেতনাই বরং তার মুখোমুখি হয়েছেআর তখন তিনি আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছেন। ফেতনার বিপদ থেকে  বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় চেয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে আল্লাহ যদি নারীদের ষড়যন্দ্র থেকে তাকে রক্ষা না করতেন তবে তিনি জাহেলদের দলভুক্ত হয়ে যেতেন। আল্লাহর উপর তাঁর প্রচণ্ড ভরসার কারণেই আল্লাহর করুণা তার সঙ্গ দিয়েছে,  ফলে তিনি ভয়াবহ বিপদ থেকে রেহাই পেতে সক্ষম হয়েছেন।
৩- সময় নির্ধারণ  ও উদ্দেশ্য নির্ণয়
ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার একটি উপায়সময় নির্ধারণ ও সুনির্দিষ্টভাবে  কীভাবে  কি কাজ করতে যাচ্ছে  তা নির্ণয় করে নেওয়াউদ্দেশ্য স্থির করে নেওয়া।
এর বিপরীতে অনির্দিষ্টভাবে যদি একটির পর একটি  পেইজ ওপেন করে চলেএক সাইটের পর অপর সাইট ভিজিট করে চলেতবে অযথা সময় নষ্ট ব্যতীত  অন্য কিছু আশা করা যায় না। যদি কোনো উপকার আহরণে সক্ষম  হয় তবে তা হবে খুবই ক্ষীণ। 
৪- পরিণাম দর্শন
ইন্টারনেটের  ফেতনা থেকে বাঁচার  জন্য বুদ্ধিমান ব্যক্তির উচিত হবে তার কৃতকর্মের পরিণামের প্রতি দৃষ্টি রাখা। নিজেকে দমন করানিজের প্রবৃত্তি-খায়েশের ঘারে লাগাম লাগানো। ইবনুল জাউযি রা. বলেন, ‘হে তাকওয়ার দ্বারা সম্মানের আসনে  সমাসীন ব্যক্তিতুমি তাকওয়ার সম্মানকে গুনাহের অপদস্ততার বিনিময়ে বিক্রি করো না। যে জিনিসের প্রতি তোমার খায়েশ জন্মেছে তা বর্জন করে তোমার প্রবৃত্তির তৃষ্ণা মেটাওযদিও তা কষ্টদায়ক হয়জ্বালা দেয়।
তিনি আরো বলেছেন, ‘প্রবৃত্তিকে দমনের শক্তিতে এমন স্বাদ বয়েছে যা সকল স্বাদকে অতিক্রম করে যায়তুমি কি দেখো নাযারা প্রবৃত্তিতে আরোপিত তারা কীভাবে অপদস্ত হয়কেননা তারা পরাজিত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি প্রবৃত্তিকে দমন করে তার  ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টোকেননা সে শক্তিমান হওয়ার স্বাক্ষর রাখেকারণ  প্রবৃত্তিকে দমন করায়  সে পারঙ্গমতার পরিচয় দেয়।
৫- যৌন আবেদনময়  সকল বিষয় থেকে দূরে থাকা আবশ্যক
যৌন আবেদন-সুরসুরি সৃষ্টিকারী সকল বিষয় থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে দূরে থাকতে হবে। খারাপ ও পর্নো সাইটগুলো অবশ্যই  বর্জন করতে হবে। যেসব ব্লগ-সাইটে ফাহেশ-অশালীন কথাবার্তা বলা হয়যেসব প্রবন্ধে প্রবৃত্তি উসকিয়ে দেওয়ার মেটার রয়েছেতা বর্জন  করা ইমান ও আখলাকের দাবি। আবেদনময় চিত্র-ছবিকামনা-বাসনা উসকিয়ে দেয় এমন  ফুটেজ থেকে দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজমানুষের মন- সৃষ্টিগতভাবে প্রবৃত্তির প্রতি আসক্তপ্রবৃত্তি যেদিকে টানে সেদিকেই সে চলতে শুরু করে। মানুষের মন বারুদ অথবা  প্রেট্রোলতুল্যযা জ্বলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। এসব বস্তু প্রজ্জ্বলনকারী বস্তু থেকে যতক্ষণ দূরে থাকেশান্ত থাকেজ্বলার আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকে। এর অন্যথা হলেই তা জ্বলে উঠেজ্বলে উঠা স্বাভাবিক।
মানুষের মনও অভিন্ন প্রকৃতির। মানুষের মন শান্ত-নিরব থাকে। তবে যখন তা  উসকিয়ে দেওয়ার মত  কোনো কিছুর নিকটবর্তী হয়দুষ্টপ্রবৃত্তিকে জাগিয়ে দেওয়ার মত  কোনো শ্রব্যদৃশ্যপাঠ্যঅথবা শুঁকার বিষয়ের স্পর্শে আসে তখন তার ঘুমন্ত প্রবৃত্তি দানবের মত জেগে ওঠেতার ব্যাধিগুলো আন্দোলিত হয়ে ওঠেতার খায়েশ-আসক্তি বাধভাঙ্গা জোয়ারের মত হয়ে হাজির হয়। তাই এসব প্রবৃত্তিউদ্দীক বিষয় থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরি।
চলবে
মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহী আল হামদ
অনুবাদক : আবু শআইব মুহাম্মাদ সদ্দিীক
Collected From: http://www.islamhouse.com/



be Organized by Holy Islam 

O.H.I 

For More Visit: