ভ্যালেনটাইন ডে
মনে নেই সে দিনের কথা, নিশ্চয় করে। তবে ভোর হবে নিশ্চিত। তাজা, শিশির স্নাত, একটি লাল গোলাপ রেখে দিল আমলের বুকের উপর। আকস্মিকতার আশ্রয়ে এভাবেই চমকে দিল নাওরা তার বান্ধবীকে। ঈষৎ স্মিত মুখে জানান দিল, ‘আজকের উপহার।’ কীসের উপহার ?
—‘আজ ভালোবাসা দিবস, ভ্যালেনটাইন ডে—জান না বুঝি ? এ দিনে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। গিফ্ট দেয় একে অপরকে। আজ সত্যিকার, প্রকৃত ভালোবাসা দিবস—ভ্যালেনটাইন ডে।’ ...নাওরা ইন্টারনেটে দেখা আরো অনেক স্মৃতির কথা শোনাচ্ছে। গর্বিত কণ্ঠ, একজন বিজ্ঞ পণ্ডিত। ‘সব সময় তার থেকে শিখি, অনেক দিন পর সুযোগ মিলেছে, আজ আমালকে নতুন জ্ঞান দেয়ার। আমাল নিশ্চুপ, কোনো প্রতিধ্বনি নেই তার মুখে। গভীর মনোযোগ দিয়ে নাওরার কথা শুনছে। ‘তুমি জান—ভ্যালেনটাইন-এর অর্থ কি ? তৃপ্তি মেশানো কণ্ঠে নাওরার প্রশ্ন। ‘এর অর্থ ভালোবাসা।’
হেসে দিল আমাল। এ ব্যাপারেও আমাল তার চেয়ে বেশি জানতো, জানতো না নাওরা। ভ্যালেনটাইন ডের অর্থ, উৎস, প্রভাব—নানান বিষয়ে অনেক কিছুই জানে সে। যা সচরাচর অন্য মেয়েরা জানে না। সে ভর্ৎসনা করে বলল, ‘উৎসব পালন করছ, অথচ সঠিক অর্থও জান না ? ভ্যালেনটাইন, একজন কৃশ্চিয়ানের নাম। সে খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর পাদরি ছিল।‘ আমাল ঘটনার বিবরণ দিল...। বলল, ‘ভ্যালেনটাইন ডে নিখাঁদ একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। একজন খ্রিস্টান পাদরিকে অমর করে রাখার নিমিত্তে তার স্মৃতিচারণ মাত্র। আমাল দুঃখ প্রকাশ করল। মেয়েদের যা শোনান হচ্ছে, তা সঠিক নয়। তাদের অনুসরণ অপরিণাম দর্শিতার পরিচয়।’
ভ্যালেনটাইন-ডে-র ইতিহাস :
আমাল : ক্যাথলিক বিশ্ব কোষে ভ্যালেনটাইন সম্পর্কে তিনটি ব্যাখ্যা মিলে। বিভিন্ন বইয়ে লেখা প্রসিদ্ধ ঘটনাটির স্বরূপ এই—
ভ্যালেনটাইন, রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস এর আমলের লোক। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রীয় বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে সম্রাট তার মৃত্যুর আদেশ প্রদান করে। কীসের অভিযোগ ? আমাল বলল, সে ছিল কৃশ্চিয়ান ধর্ম প্রচারক, সম্রাট ছিলেন রোমান দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। সম্রাট এ জন্যই তাকে মৃত্যু দণ্ড দিয়েছে।
আরেকটি বর্ণনা : সম্রাট লক্ষ্য করেছেন, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিনতম মুহূর্তে ধৈর্যের পরিচয় বেশি দেয়, বিবাহিত যুবকদের তুলনায়। অনেক সময় তারা স্ত্রী-পুত্রের টানে যুদ্ধে যেতেও অস্বীকৃতি জানায়। তাই যুগল বন্দী তথা যে কোনো পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেন্ট ভেলেনটাইন এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। গোপনে তার গির্জায় পরিণয় প্রথা চালু রাখে।
এ খবর জানাজানি হলে সম্রাট তাকে জেল বন্ধী করার নির্দেশ প্রদান করে। জেলের ভেতর-ই পরিচয় ঘটে জেলার-এর এক অন্ধ মেয়ের সাথে। সে ছিল চিকিৎসক। বন্দি অবস্থাতেই চিকিৎসা করে অন্ধ মেয়ের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেয়—বলে ইতিহাসের বর্ণনায় পাওয়া যায়। এভাবে ভেলেনটাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। মৃত্যুর আগে মেয়েটিকে লেখা এক চিঠিতে সে জানায়—ইতি তোমার ভ্যালেনটাইন। এর আগে-ই মেয়েটি ৪৬ জন সদস্যসহ তার কৃশ্চিয়ান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল।
তৃতীয় আরেকটি বর্ণনা : গোটা ইউরোপে যখন কৃশ্চিয়ান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালন করা হতো রোমিয় একটি কালচার। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি জারে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ঐ বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম বের হয়ে আসতো, সে পূর্ণ বৎসর ঐ মেয়েরে প্রেমে মগ্ন থাকত। সাথে সাথেই তাকে চিঠি লিখত, এ শিরোনামে, ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ তাদের মাঝে এ সম্পর্ক সারা বৎসর বিদ্যমান থাকত। বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো। এ কালচারটি কতক পাদরির গোচরীভূত হলে তাদেরকে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলে। তারা মনে করল, একে সমূলে উৎপাটন করাও অসম্ভব। তাই শুধু শিরোনামটি পাল্টে দিয়ে একে কৃশ্চিয়ান ধর্মায়ন করে দেয়া যায়। তাই নির্দেশ জারি করল, এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভেলেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে। কারণ, এটা কৃশ্চিয়ান নিদর্শন, এভাবেই তারা ধীরে ধীরে কৃশ্চিয়ান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হবে।
আরেকটি বর্ণনা : ভেলেনটাইনকে ‘আতারিত’জ্জযা রোমানদের বিশ্বাসে ব্যবসা, সাহিত্য, পরিকল্পনা ও দস্যুদের প্রভুজ্জ এবং ‘জুয়াইবেতার’জ্জযা রোমানদের সব চেয়ে বড় প্রভুজ্জসম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। সে উত্তরে বলে, এগুলো সব মানব রচিত প্রভু, প্রকৃত প্রভু হচ্ছে, ‘ঈসা মসিহ।’
আমাল : দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে! তারা যে সকল কথাবার্তা বলে, এর থেকে আল্লাহ পবিত্র, মহান ও অনেক ঊর্ধ্বে।
আমাল আরো বলল, জনৈক পাদরি বলেন, আমাদের পিতা-মাতারা এমন একটি ধর্মীয় নিদর্শনের বর্তমান পরিণতি দেখে ব্যথিত, বিষন্ন। যেমন, কিছু কিছু কার্ডে দু’টি পাখা বিশিষ্ট একটি শিশু বাচ্চার, অন্তরের চার পাশে তীর তাক করে ঘুর্ণয়মান ছবি যুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। ‘তুমি কি জান, এটা কীসের নিদর্শন বহন করে ?’ নাওরাকে জিজ্ঞাসা করল আমাল। এ নিদর্শনটিকে রোমানদের নিকট ভালোবাসার প্রভু মনে করা হয়।
সে আরো বলল, ভালোবাসা উদযাপন সম্পর্কীয় একটি চ্যানেল, ঐ নিদর্শনটির চার পাশে হৃদয়ের ছবি এঁকে মাঝে ক্রুশ চিহ্ন অঙ্কন করে দিয়েছে।
ভালবাসা দিবস উদ্যাপন করার বিধান :
আমাল এর সাথে যুক্ত হলো মাজেদা, সে ইয়াহুদ, নাসারাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদ্যাপনের বিধান সম্পর্কে অনেক কিছু জানাল। সে বলল : কিছু সমাজ, যেখানে প্রকৃত মহব্বত ও ভালোবাসা বিরাজিত ছিল, পারিবারিক সম্পর্কে যারা ছিল নিঃস্বার্থ। ডিশ ও ইন্টারনেটের কুপ্রভাবে সে সকল মুসলিম পরিবারের কতক মেয়েরাও পাশ্চাত্য কালচার গ্রহণ করা শুরু করে দিয়েছে। বিশেষ করে যারা তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নতি সাধনে সক্ষম হয়েছে এবং যারা ইসলামি সভ্যতায় ঈষৎ অভ্যস্ত। এটা মূলত মানসিক বিপর্যয়ের আলামত। সুতরাং ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন প্রতিটি লোকের এ সম্পর্কে সচেতন থাকা অপরিহার্য। কেউ যাতে তাদের তথাকথিত সভ্যতার ধোঁকায় পতিত না হয়।
সাহাবি আবু অকেদ বলেন, রসুল সা. খায়বার যাত্রায় মূর্তি পূজকদের একটি গাছ অতিক্রম করলেন। তাদের নিকট যে গাছটির নাম ছিল ‘জাতু আনওয়াত’। এর উপর তীর টানিয়ে রাখা হত। এ দেখে কতক সাহাবি রসুল সা.-কে বলল, হে আল্লাহর রসুল, আমাদের জন্যও এমন একটি ‘জাতু আনওয়াত’ নির্ধারণ করে দিন। রসুল সা. ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, ‘সুবহানাল্লাহ, এ তো মুসা আ.-এর জাতির মত কথা। ‘আমাদের জন্য একজন প্রভু তৈরি করে দিন, তাদের প্রভুর ন্যায়।’ আমি নিশ্চিত, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা পূর্ববর্তীদের আচার অনুষ্ঠানের অন্ধানুকরণ করবে। (তিরমিজি- সহিহ-)
মানুষের অন্তর যদিও অনুকরণ প্রিয়, তবুও মনে রাখতে হবে ইসলামি দৃষ্টিকোণ বিচারে এটি গর্হিত, নিন্দিত। বিশেষ করে অনুকরণীয় বিষয় যদি হয় আক্বীদা, এবাদত, ধর্মীয় আলামত অথবা জাতীয় কালচার, আর অনুকরণীয় ব্যক্তি যদি হয় বিধর্মী, বিজাতি। আফসোস! ক্রমশ মুসলমান ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসে দুর্বল হয়ে আসছে, আর বিজাতিদের অনুকরণ ক্রমান্বয়ে বেশি বেশি আরম্ভ করছে। স্বকীয়তা ও নিজস্ব কালচার বিনষ্টকারী অনেক প্রথার অনাকাক্সিক্ষত ছয়-লাব হয়ে গেছে আমাদের ভেতর। যার অন্যতম ১৪ ফেব্রুয়ারি বা ভালোবাসা দিবস। অথচ এ দিনটি কৃশ্চিয়ান সেন্ট/পাদরি ভ্যালেনটাইনকে অমর করে রাখার উপলক্ষ্য মাত্র। তাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যে এ দিনটি পালন করবে, সে নিশ্চিত ইসলাম বহির্ভূত, কাফের। তাকে স্মরণীয় করার ইচ্ছা না থাকলেও সে জঘন্য অপরাধী।
ইবনে কায়্যূম রহ. বলেন, ‘কাফেরদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে তাদের শুভেচ্ছা জানানো একটি কুফরি কাজ। কারো দ্বিমত নেই এতে। যেমন তাদের ধর্মীয় ঈদ, উৎসব ও রোজা উপলক্ষ্যে ‘ঈদ মোবারক’, ‘শুভেচ্ছা’ ইত্যাদি বলা। এগুলো কুফরি বাক্য না হলেও ইসলামি দৃষ্টিকোণ হতে হারাম। কারণ, এর অর্থ হল, একজন লোক ক্রুশ, মূর্তি ইত্যাদিকে সেজদা করছে, আর আপনি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। এটা একজন মদ্যপ ও হত্যাকারীকে শুভেচ্ছা জানানোর চেয়ে বেশি জঘন্য, আল্লাহর অভিসম্পাদের বড় কারণ। বক ধার্মিক অনেক লোক অবচেতন ভাবেই এ সকল অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, অথচ তারা জানেও না, কত বড় অপরাধ তারা করে যাচ্ছে। বেদআত, আর কুফরে লিপ্ত ব্যক্তিদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, ধন্যবাদ দিচ্ছে। এভাবেই আল্লাহর গোস্বা আর শাস্তিতে নিপতিত হচ্ছে।
আমাল : মাজেদা, ইসলামের ভেতর একটি বিধান আছে, ‘মুসলমানদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও কাফেরদের সাথে সম্পর্ক ছেদন’ এর সাথে তার ভূমিকা কি ?
মাজেদা : আমাদের পথিকৃৎ সাহাবা, নেককার পূর্ব পুরুষদের এটি একটি বৈশিষ্ট্য। তারা মোমিনদের সাথে সম্পর্ক কায়েম করতেন, কাফেরদের সাথে সম্পর্ক ছেদন করতেন। সুতরাং যারাই বিশ্বাস করে, ‘আল্লাহ এক, তিনি ছাড়া কোনো প্রভু নেই, মুহাম্মদ তার রসুল।’ তাদের উচিত ও কর্তব্য, মুসলমানদের মুহব্বত করা, কাফেরদের ঘৃণা করা, তাদের সাথে বৈরিভাব পোষণ করা, তাদের আচার অনুষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করা। এতেই আমরা নিরাপদ, এখানেই আমাদের কল্যাণ, অন্যথায় সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
উপরুন্ত, মুসলমানদের অনুষ্ঠানে একাত্মতা ঘোষণা করলে যেমন মুসলমানগণ খুশি হন, তাদের অন্তর সমূহ প্রফুল্ল বোধ করে। তদ্রুপ কাফেরদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করলে তারা খুশি হয়, তাদের সাথে ঋদ্ধতা বাড়ে। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ও ইমানদারগণ, তোমরা কৃশ্চিয়ান, ইহুদিদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। তারা একে অপরের বন্ধু। যে তাদের সাথে মিশে গেল, সে অবাধ্য, তাদেরই একজন। আল্লাহ অবাধ্যদের সৎ পথ দেখান না।’ (আল-মায়েদা : ১৫) আল্লাহ রসুল সা.কে লক্ষ্য করে বলছেন, ‘আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কেয়ামতের দিন বিশ্বাস করে, এমন কোনো জাতিকে আপনি তার সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যে আল্লাহ এবং তার রসুলের সাথে শত্র“তা পোষণ করে।’ (আল-মুজাদালা : ২২) আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমাদের আল্লাহ এবং তার রসুলের উপর ইমান থাকে, তবে তাদের ব্যাপারে আল্লাহর বিধানের বাইরে তোমরা কোনো করুণা দেখাবে না।’ (আন-নুর : ২)
তাদের সাথে সামঞ্জস্যের মারাত্মক দিক হল, এর দ্বারা তাদের অনুষ্ঠান প্রচার লাভ করে, প্রাধান্য বিস্তার করে অন্য সব অনুষ্ঠানের উপর। এর দ্বারাই রসুলের সুন্নত মিটে, বেদআতের প্রসার ঘটে। তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অথচ আমরা প্রতি রাকাতে পড়ি, ‘আমাদের সৎ পথ দেখান, যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন তাদের পথ, অভিশপ্ত ও বিভ্রান্তাদের পথ নয়।’ (আল-ফাতেহা : ৬-৭) আমরা কীভাবে এ কথাগুলো বলছি, অথচ স্বেচ্ছায় তাদের অনুকরণ করছি।
আমার কোনো বোন হয়তো বলবে, আমরা তাদের আক্বীদা বিশ্বাস গ্রহণ করি না, শুধু আপোশ মহব্বত, ভালোবাসা তৈরি করার নিমিত্তে এ দিনটি ব্যবহার করি। এটাও এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা। আমাল এর বক্তব্যে এ সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি, সে আরো জানিয়েছে, কীভাবে এক জন অপরিচিত মেয়ে একজন অপরিচিত ছেলের সাথে মাত্র একটি ফুল বিনিময় করে এ দিনটি উদ্যাপন করে। একজন সতী-সাধি পবিত্র মুসলিম নারী মানুষের এ ধরনের নোংরামির সাথে কখনো জড়িত হতে পারে না।
এ দিনটি উদ্যাপন কোনো স্বভাব সিদ্ধ ও স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বরং একজন ছেলেকে একজন মেয়ের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার পাশ্চাত্য কালচার আমদানিকরণ। আমরা সকলে জানি, তারা সমাজকে চারিত্রিক পদস্খলন ও বিপর্যয় হতে রক্ষা করার জন্য কোনো নিয়মনীতির ধার দ্বারে নয়। যার কুৎসিত চেহারা আজ আমাদের সামনে স্পষ্ট। আল্লাহর মেহের বাণীতে তাদের কালচারের বিপরীতে আমাদের অনেক আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে। আমাদের নিকট ‘মা’র আসন অন্য যে কোনো জাতির দৃষ্টি হতে অনেক ঊর্ধ্বে। যে কোনো সময় তাকে উপহার উপঢৌকন দিতে পারি। তদ্রুপ, পিতা, ভাই-বোন, স্ত্রী-পরিজনদেরকেও। তবে তাদের সাথে এর বিনিময় করব অন্য কোন দিন।
উপহার দেয়া ভাল, এর দ্বারা পরস্পর মহব্বত সৃষ্টি হয়। কিন্তু, এর সাথে কৃশ্চিয়ান কালচার, পাশ্চাত্য সভ্যতার মিশেল, মূলত তাদের সভ্যতা ও জীবন পদ্ধতির আমদানি।
মাজেদা : অবশ্য কতক ব্যবসায়ী অন্য আরেকটি কারণে এ দিনটি পেয়ে খুশি হন। তাদের ব্যবসা রমরমা ও জমাট হয়। প্রচুর পরিমাণ ফুল বিক্রি হয়। অসংখ্য কার্ড সেল হয়। যেহেতু তাদের সাথে সামঞ্জস্য বৈধ নয়, তাই তাদের কর্মে উৎসাহ, উদ্দীপনার সৃষ্টি করে, তাদের অনুষ্ঠানে প্রাণ সঞ্চার করে, এমন কাজও করতে নেই।
নাওরা অনুশোচনায় মুহ্যমান। হাত প্রসারিত করে ফুলটি সরিয়ে নিচ্ছে। অনুতপ্ত ও কৃতজ্ঞ কণ্ঠে বলল, এ উপদেশটিই আমার প্রয়োজন ছিল। এর দ্বারা আমি দৃষ্টি ফিরে পেয়েছি, কল্যাণের পথ চিনেছি, আল্লাহর জন্য মহব্বত ও ভালোবাসা শিখেছি। ‘ও আল্লাহ আমাদের সে সব লোকের অন্তর্ভুক্ত কর, যাদের ব্যাপারে তুমি বলেছো—‘যারা আমার জন্য পরস্পর মহব্বত করে, পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে, পরস্পর উপহার বিনিময় করে, তাদের জন্য আমার মহব্বত অবধারিত।’
আল্লাহ তুমি আমাদের জীবনকে প্রকৃত মহব্বত ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ করে দাও। যা আমাদেরকে আসমান-জমিনসম প্রশস্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে সহায়তা করবে। আমাদের স্বতন্ত্র ও ব্যক্তিত্ব তুমি হেফাজত কর। মুসলমানদের সংশোধন সুনিশ্চিত কর।
শাইখ উসাইমিন রহ. এর একটি ফতওয়া। ০৫/১১/১৪২০ হি.
প্রশ্ন : শেষ জমানায় এসে ভালোবাসা দিবসটি ব্যাপক প্রচার লাভ করেছে। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের ভেতর। এটি মূলত কৃশ্চিয়ানদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এ দিনে জামা, জুতো লাল রঙ্গের পরিধান করা হয়। পরস্পর লাল গোলাপ বিনিময় হয়। আপনার নিকট জানতে চাচ্ছি, এ ধরনের অনুষ্ঠান পালন করার বিধান কি ? এ সকল ক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য আপনাদের পরামর্শ কি?
উত্তর : প্রথমত : এটি নতুন আবিষ্কৃত (বেদআত) একটি ঈদ, ইসলামি শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই।
দ্বিতীয়ত : এ সকল আচার অনুষ্ঠান অন্তর কলুষিত করে দেয়। এ ধরনের অনুষ্ঠান উদ্যাপন আমাদের পথিকৃৎ পুবসূরিদের নীতি ও আদর্শ বিরোধী। সুতরাং এ দিন তাদের উৎসব অনুষ্ঠানের কোন কিছু গ্রহণ করা বৈধ নয়। পানাহার, পরিচ্ছদ, উপহার সামগ্রী কিংবা অন্য যে কোনো জিনিসে। মুসলমানদের উচিত, স্বীয় ধর্ম ও কালচারের ব্যাপারে তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট থাকা। অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তির অনুসরণ না করা। আল্লাহ! তুমি প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ফেৎনা হতে মুসলমানদের হেফাজত কর। তাদের তওফিক দান কর। তুমিই সকল মুসলিমের অভিভাবক।
Collected from: http://www.islamhouse.com/